জীববৈচিত্র্য, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাসহ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপদ পৃথিবীর জন্য পরিবেশ সুরক্ষা অপরিহার্য। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ‘রক্ষা করি পরিবেশ, গড়ি সুন্দর বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যে সুহৃদ সমাবেশ শুরু করেছে ‘পরিবেশ সুরক্ষায় সচেতনতা’ কার্যক্রম। কর্মসূচির আওতায় ৬ জুলাই বিকেলে নওগাঁয় সুহৃদরা আয়োজন করে মানববন্ধন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম।
‘প্রকৃতির প্রতি যত্ন নাও, সে তোমাকে ভালোবাসবে। উপেক্ষা কর, সে রুষ্ট হবে।’ এই প্রবাদ এখন আর কাব্য নয়, হয়ে উঠেছে কঠিন বাস্তবতা। নওগাঁ শহরে নিরুপদ্রব দুপুরে হঠাৎ করেই যেন বদলে গেল বাতাসের সুর। শহরের সিও অফিস চকবাড়িয়া এলাকার প্রশিকা বিদ্যানিকেতন প্রাঙ্গণে জড়ো হতে শুরু করেন সুহৃদরা। কারও হাতে ঝাঁটা, কারও ব্যানার, আবার কারও হাতে ঝুড়ি। চোখেমুখে প্রত্যয় প্রকৃতি সুরক্ষার আহ্বান নিয়ে নেমে এসেছেন তারা। নিঃশব্দে নিরুচ্চার তবে হৃদয় থেকে উৎসারিত এক প্রতীকী আন্দোলন গড়ে তোলার প্রবল প্রচেষ্টা। পরিবেশ সুরক্ষায় নানা কর্মসূচি আজ তাদের প্রসঙ্গ।
সচেতনতায় মানববন্ধন
ব্যস্ত শহরের কোলাহলের মাঝে এক মুহূর্তের জন্য থমকে যায় সময়। যেন শহরও কৃতজ্ঞতায় মাথা ঝুঁকিয়ে বলে তোমরা সত্যিই ভিন্ন কেউ। পরিবেশ সুরক্ষায় প্রাণবন্ত কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন সুহৃদ সমাবেশের নওগাঁর সভাপতি মৌদুদুর রহমান কল্লোল। আয়োজন সমন্বয় করেন সুহৃদ সমন্বয়ক কাজী কামাল হোসেন। পরিবেশের প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশ নেন সহসভাপতি মুরাদ হাসান, সুবল চন্দ্র মণ্ডল, পুতুল রানী ব্যানার্জি এবং সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী চন্দন কুমার দেব। চন্দন কুমার দেব বলেন, নদী শুকিয়ে যায়, গাছ হারিয়ে যায়, বাতাস বিষিয়ে ওঠে এই গল্প আমাদের নয়, আমরা লিখতে চাই ভিন্ন ইতিহাস।’
এই আয়োজনে আশার উৎস ছিলেন প্রশিকা বিদ্যানিকেতনের শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা। শিক্ষক উজ্জ্বল কুমার, মুনিরা আক্তার, রুমা পারভীন, খাইরুন নাহার খুশি, তনুকা আক্তার, ফারজানা আক্তার তাদের চোখে ছিল আগামীর স্বপ্ন। শিশুরাও এ কাজে সহযোগিতা করেছে প্রাণ খোলে। এ যেন এক জীবন্ত পাঠশালা, যেখানে শিক্ষার্থীরা পাঠ নিচ্ছে সচেতনতার, দায়িত্ববোধের এবং সহমর্মিতার।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান
মানববন্ধনের পর হঠাৎ করেই দেখা গেল দৃশ্যপটের পরিবর্তন। মানুষগুলো এবার তুলে নিল ঝাড়ু ও ঝুড়ি। কেউ রাস্তা ঝাড়ছেন, কেউ ডাস্টবিনে ফেলছেন ময়লা। পথচারীদের অনুরোধ করা হচ্ছে ‘আপনার একটুখানি সচেতনতা অনেক দূষণ বাঁচাতে পারে।’
সদস্যদের কেউ কেউ নিজের হাতেই আবর্জনা তুলে ফেলেন ডাস্টবিনে, যেন কথাকে কাজে রূপ দেওয়ার এক নিঃশব্দ ঘোষণা। শিশুরা দেখছে আর শিখছে। ‘আমরা নদীর ওপর শহর গড়েছি, বন উজাড় করে বাসাবাড়ি বানিয়েছি। অথচ ভুলে গেছি এই গাছ, এই পানি, এই মাটি ছাড়া আমরা কেউই টিকে থাকতে পারব না। এখনই যদি সচেতন না হই, হয়তো আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য একটি বিষাক্ত পৃথিবী রেখে যাব।’ তারা জানান, পরিবেশদূষণের সবচেয়ে বড় কারণ প্লাস্টিকের অব্যবস্থাপনা, সচেতনতার অভাব এবং নাগরিক দায়িত্বে গাফিলতি। আমাদের সচেতন হতে হবে। পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।
বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি
কর্মসূচির অন্যতম পর্ব হচ্ছে বৃক্ষরোপণ। স্কুলভিত্তিক সচেতনতামূলক সেমিনার, শহরের বিভিন্ন এলাকায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান, গাছের চারা রোপণ এবং পরিবেশবান্ধব পণ্য ব্যবহার ও কাজে মানুষকে সচেতন করা। পরিবেশ রক্ষার অন্যতম নিয়ামক গাছ। তাই দেশজুড়ে সুহৃদদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নওগাঁর সুহৃদরাও বৃক্ষরোপণ শুরু করেছেন। এই কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন স্থানে বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
আসুন, নিঃশব্দে নিজের কাছে নিজেকে প্রশ্ন করি– ‘আমি কী করছি পরিবেশ রক্ষার জন্য, আমরা কি চারপাশ পরিষ্কার রাখছি, বৃক্ষরোপণ করছি পর্যাপ্ত, প্লাস্টিক ব্যবহারে সংযমি হয়েছি? এমন প্রশ্নের উত্তর যদি হয় ‘না’ তবে আজ থেকেই শুরু করি।’ এমন আহ্বানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় আয়োজন। v
সমন্বয়ক, সুহৃদ সমাবেশ, নওগাঁ
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স হ দ সম ব শ পর ব শ র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
কক্সবাজারে নদীবন্দরের সীমানা নিয়ে উত্তেজনা, বিক্ষোভে পিছু হটল বিআইডব্লিউটিএ
কক্সবাজার শহরে নদীবন্দরের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। আজ রোববার দুপুরে শহরের বাঁকখালী নদীর কস্তরাঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ে পিছু হটেন বিআইডব্লিউটিএর (বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ) কর্মকর্তারা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আজ কস্তুরাঘাট এলাকায় নদীবন্দরের সীমানা নির্ধারণে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা আসবেন—এমন খবরেই সকাল থেকেই স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হতে থাকেন। সকাল ৯টা থেকে বদরমোকাম, কস্তুরাঘাট ও পেশকারপাড়ার লোকজন গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ শুরু করেন। এতে ওই এলাকার যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা ১১টার দিকে একই জায়গায় কয়েক শ নারী-পুরুষ এক হয়ে মানববন্ধন করেন। পরে দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ, র্যাব, আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা কস্তুরাঘাট এলাকায় পৌঁছান। এরপর উত্তেজনা আরও বাড়ে। শেষ পর্যন্ত সীমানা নির্ধারণের কাজ বন্ধ করেই ফিরে যায় বিআইডব্লিউটিএ।
বিআইডব্লিউটিএ ও জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত ১ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর বাঁকখালী নদীর ওই অংশে উচ্ছেদ অভিযানে ৪৯৬টি অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে প্রায় ৬৩ একর জমি উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার জমি আবার দখলের ঝুঁকি থাকায় কাঁটাতারের বেড়া ও সীমানা পিলার দেওয়ার উদ্যোগ নেয় বিআইডব্লিউটিএ।
যা বলছেন বিক্ষোভকারীরা
অবরোধকারীদের দাবি, উচ্ছেদ হওয়া স্থানের মধ্যে ব্যক্তিমালিকানাধীন খতিয়ানভুক্ত জমিও রয়েছে। পারুল আক্তার নামের এক নারী বলেন, ‘আমাদের খতিয়ান আছে, খাজনাও দিচ্ছি। ক্ষতিপূরণ না দিয়ে বা আলোচনা না করে ঘরবাড়ি ভাঙা ও কাঁটাতার দেওয়া চলবে না।’
সাবিনা ইয়াছমিন নামের আরেক নারী বলেন, অনেক পাকা ভবন যখন তৈরি হলো, তখন কেউ থামাননি। এখন হঠাৎ উচ্ছেদ করা হয়েছে। এতে অনেকেই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ক্ষতিপূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা এ জায়গায় স্থায়ী কোনো অবকাঠামো হতে দেবেন না।
স্থানীয় বাসিন্দাদের এ মানববন্ধনে বিএনপি ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও অংশ নেন। তাঁদের একজন কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও জেলা মহিলা দলের সভাপতি নাসিমা আকতার। তিনি বলেন, বাঁকখালী নদীর দখল নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের পৃথক তিনটি মামলা রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ নিয়েও হাইকোর্টে তিনটি মামলা হয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি না করে ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করে জায়গাজমিতে কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে ফেলা অন্যায়। আলোচনার মাধ্যমে সংকটের নিরসন না করলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
কর্মসূচিতে থাকা জেলা যুবদলের প্রচার সম্পাদক ও আইনজীবী মো. ইসমাইল বলেন, বিআইডব্লিউটিএর উচ্ছেদ করা জমিতে অসংখ্য মানুষের খতিয়ানভুক্ত জমি রয়েছে। উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে তিনিসহ ৭৭ জন মামলা করেছেন।