কারাবন্দী সাংবাদিকদের জামিন চেয়েছেন দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত অর্ধশতাধিক সাংবাদিক। তাঁরা বিভিন্ন গণমাধ্যমকে হুমকি ও সাংবাদিকদের হয়রানির প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

আজ সোমবার ৫১ জন সাংবাদিকের সই–সংবলিত একটি বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়। বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন বেঙ্গল নিউজ টোয়েন্টিফোরের সম্পাদক তৈমুর ফারুক তুষার।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দেশ এখন মব সন্ত্রাসের কাছে জিম্মি। গণমাধ্যমও এই জিম্মি দশার বাইরে নয়। সাংবাদিকদের নামে হত্যা মামলা, চাকরিচ্যুতি, সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে হামলা, সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের মতো ঘটনাগুলোর কারণে সাংবাদিক সমাজ এক ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। দেশের একাধিক শীর্ষ সংবাদপত্রের কার্যালয়ের সামনে মব সন্ত্রাসীরা গরু জবাই করে জিয়াফতের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে চিহ্নিত মব সন্ত্রাসীরা এসব ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না। এটি ধারণা করা অমূলক নয়, ক্ষমতাধর কোনো মহল এসবে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে।’

সাংবাদিকদের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দেশি–বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং অধিকারকর্মীদের দাবি অনুসারে, গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। গত ১১ মাসে সারা দেশে ঢালাও হত্যা মামলাসহ নানা হয়রানিমূলক মামলার আসামি করা হয়েছে অন্তত ৪১২ জন সাংবাদিককে, গ্রেপ্তার করা হয় ৩৯ জনকে। ১৬৮ সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়।

জাতীয় প্রেসক্লাবসহ সারা দেশের প্রেসক্লাবগুলো থেকে ১০১ জন সাংবাদিকের সদস্যপদ স্থগিত, বাতিল কিংবা বহিষ্কার করা হয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হয়েছেন তিন শতাধিক সাংবাদিক। শতাধিক সাংবাদিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। গত ১১ মাসে সহস্রাধিক সাংবাদিক চাকরিচ্যুত হয়েছেন। ‘মব সন্ত্রাসের’ মাধ্যমে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো দখল করা হয়েছে। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) কার্যালয় ১১ মাস ধরে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

দেশের প্রত্যেক নাগরিকের আইনি প্রতিকার বা জামিন পাওয়ার অধিকার রয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, অজ্ঞাত কারণে কারাগারে বন্দী সাংবাদিকেরা সে অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিনা বিচারে মাসের পর মাস কারাবন্দী আছেন সাংবাদিকেরা। এগুলো মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের বিচার, সাংবাদিক হয়রানির নিন্দা এবং কারাবন্দী সাংবাদিকদের জামিনের দাবি জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত এবং সাংবাদিকদের হয়রানি বন্ধ করুন। গণমাধ্যমকে যারা প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে, ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। রাজনৈতিক ট্যাগ দিয়ে সাংবাদিকদের কণ্ঠ থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা পরিহার করুন।’

বিবৃতিতে সই করেছেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাবেক সভাপতি আবু জাফর সূর্য, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভ, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন, বাংলা ইনসাইডারের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ বোরহান কবির, জাতীয় অর্থনীতির সম্পাদক কিবরিয়া চৌধুরী, ল রিপোর্টার্স ফোরামের সাবেক সভাপতি শামীমা আক্তার, ডিইউজের কোষাধ্যক্ষ সোহেলী চৌধুরী, ডিআরইউর সাবেক নারীবিষয়ক সম্পাদক ঝর্ণা মনি, ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি জাকির হোসেন, স্বাধীনতা সাংবাদিক পরিষদের সদস্যসচিব হামিদ মোহাম্মদ জসিম, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সাঈদুজ্জামান সম্রাট, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, গাজীপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক র বন দ হয়র ন ড ইউজ

এছাড়াও পড়ুন:

ফেসবুকে নাঈম লিখলেন, ‘ভালোবাসা চাই, ঘৃণা নয়’

খারাপ সময়ে সমর্থকদের পাশে থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলাদেশ দলের ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম। ক্রিকেট মাঠে বাংলাদেশ শিগগিরই ঘুরে দাঁড়াবে, এমন আশাই করছেন নাঈম।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ধবলধোলাই হয়ে গতকাল রাতে দেশে ফেরেন বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়েরা। বিমানবন্দরে তাদের দুয়ো দেয় কিছু মানুষ, ‘ভুয়া’, ‘ভুয়া’ স্লোগান তোলে তারা।

এই ঘটনা নিয়ে গত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম। তিনি লিখেছেন, ‘আমরা যারা মাঠে নামি, আমরা শুধু খেলি না—আমরা দেশের নামটা বুকে নিয়ে নামি। লাল-সবুজ পতাকাটা শুধু শরীরে নয়, রক্তে মিশে থাকে। প্রতিটা বল, প্রতিটা রান, প্রতিটা শ্বাসে চেষ্টা করি সেই পতাকাটাকে গর্বিত করতে।’

‘হ্যাঁ, কখনো পারি, কখনো পারি না। জয় আসে, পরাজয়ও আসে—এটাই খেলাধুলার বাস্তবতা। জানি, আমরা যখন হেরে যাই, তখন আপনাদের কষ্ট হয়, রাগ হয়—কারণ, আপনারাও এই দেশটাকে আমাদের মতোই ভালোবাসেন।’

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে সুযোগ পেলেও ভিসা জটিলতায় শুরু থেকে যোগ দিতে পারেননি নাঈম। দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছালেও তিনি মাঠে নামেন শেষ ম্যাচে। তবে ২৪ বল খেলে ওই ম্যাচে নাঈমের ব্যাট থেকে আসে ৭ রান।

আরও পড়ুনআরও নতুন তিন লিগে নাম লেখালেন সাকিব১ ঘণ্টা আগে

ব্যর্থ হলেও ক্রিকেটাররা সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করেন দাবি করে নাঈম লিখেছেন, ‘আজ যেভাবে আমাদের প্রতি ঘৃণা (প্রকাশ করা হয়েছে), গাড়িতে আক্রমণ করা হয়েছে, তা সত্যিই কষ্ট দেয়। আমরা মানুষ, ভুল করি, কিন্তু কখনো দেশের প্রতি ভালোবাসা-চেষ্টার ঘাটতি রাখি না। প্রতিটা মুহূর্তে চেষ্টা করি দেশের জন্য,মানুষের জন্য, আপনাদের মুখে হাসি ফোটাতে।’

সমর্থকদের কাছে ভালোবাসা প্রত্যাশা করেন জানিয়ে নাঈম আরও লিখেছেন, ‘ভালোবাসা চাই, ঘৃণা নয়। সমালোচনা হোক যুক্তিতে, রাগে নয়। কারণ আমরা সবাই একই পতাকার সন্তান। জয় হোক, পরাজয় হোক—লাল-সবুজ যেন আমাদের সবার গর্ব থাকে, ক্ষোভের নয়। আমরা লড়ব, আবার উঠব—দেশের জন্য, আপনাদের জন্য, এই পতাকার জন্য।’

আরও পড়ুনবাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচের পর জরিমানা গুনলেন জাদরান১৪ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ