ব্যাংকের শেয়ারে ভর করে দুই মাসের মধ্যে শেয়ারবাজারে সর্বোচ্চ লেনদেন
Published: 7th, July 2025 GMT
দুই মাসের ব্যবধানে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আজ সোমবার সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে। এদিন ঢাকার বাজারে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৫৭৩ কোটি টাকা। লেনদেনের পাশাপাশি আজ ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় পৌনে ২ শতাংশ বা ৮২ পয়েন্ট বেড়েছে। তাতে ডিএসইএক্স সূচকটি বেড়ে আবারও ৫ হাজার পয়েন্টের মাইলফলক ছুঁই ছুঁই অবস্থায় চলে গেছে।
কয়েকটি ব্যাংকসহ ভালো মৌলভিত্তির কিছু কোম্পানির শেয়ারের ওপর ভর করে ঢাকার বাজারে আজ লেনদেন ও সূচকের বড় উত্থান দেখা গেছে। এর আগে সর্বশেষ গত ৫ মে ডিএসইতে সর্বোচ্চ ৫৮৪ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। লেনদেন বৃদ্ধির পাশাপাশি ডিএসইএক্স সূচকও প্রায় আড়াই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। সোমবার দিন শেষে ডিএসইএক্স সূচকটি বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৯৭৬ পয়েন্টে। এর আগে সর্বশেষ গত ২৭ এপ্রিল ডিএসইএক্স সূচকটি সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৯৯৫ পয়েন্টের অবস্থানে ছিল। সেই হিসাবে প্রায় আড়াই মাস পর ডিএসইএক্স সূচকটি বেড়ে পৌনে ৫ হাজারে পৌঁছেছে।
ব্রোকারেজ হাউস লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে সোমবার সূচকে বড় উত্থানে বড় ভূমিকা ছিল ব্যাংক খাতের শেয়ারের। এদিন যে ১০টি কোম্পানি সূচকের উত্থানে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে, তার মধ্যে ৭টিই ছিল ব্যাংক। সূচকের উত্থানে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখা কোম্পানি ১০টি ছিল যথাক্রমে ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, বেক্সিমকো ফার্মা, সিটি ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মা, ইস্টার্ন ব্যাংক, ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, আইএফআইসি ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক। শুধু এই ১০ কোম্পানির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধিতেই আজ ডিএসইএক্স সূচকটি বেড়েছে প্রায় ৪৩ পয়েন্ট। এর মধ্যে সাত ব্যাংকের শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধিতে ডিএসইএক্স সূচকটি বেড়েছে প্রায় ৩১ পয়েন্ট।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দাম সোমবার দেড় টাকা বা প্রায় সাড়ে ৩ শতাংশ বেড়েছে। তাতে ডিএসইএক্স সূচকটি বেড়েছে ৯ পয়েন্ট। একইভাবে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারের দাম ২ টাকা ২০ পয়সা বা প্রায় ৪ শতাংশ বেড়েছে। তাতে ডিএসইএক্স সূচকটি বেড়েছে ৯ পয়েন্ট। সেই হিসাবে ইসলামী ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধিতেই ডিএসইএক্স সূচকটি ১৮ পয়েন্ট বেড়েছে।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক দিন পর শেয়ারবাজারে ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোর শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের কিছুটা আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে বাজারে দরপতনের কারণে ভালো মৌলভিত্তির অনেক শেয়ারের দাম অবমূল্যায়িত পর্যায়ে ছিল। এখন এসব শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়তে থাকায় লেনদেনেও ভালো কোম্পানির আধিপত্য বেড়েছে। এটি সার্বিকভাবে বাজারের জন্য খুবই ইতিবাচক দিক। কারণ, ভালো কোম্পানির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে সূচক ও লেনদেন বাড়লে তা অনেকটাই টেকসই হয়।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক দিনের টানা মূল্যবৃদ্ধির ফলে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দাম আজ দিন শেষে বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫ টাকা ৬০ পয়সা। গত ৬ কার্যদিবসে ব্যাংকটির শেয়ারের দাম সাড়ে ১২ টাকা বা ৩৮ শতাংশ বেড়েছে। তাতে গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ দামে উঠেছে ব্যাংকটির শেয়ার। একইভাবে গত কয়েক দিনের উত্থানের পর ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারের দাম বেড়ে আজ দিন শেষে দাঁড়ায় ৫৬ টাকায়। গত ৯ মাসের মধ্যে এটিই ব্যাংকটির শেয়ারের সর্বোচ্চ দাম। এই মূল্যবৃদ্ধির পর সর্বশেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬–এ। বাজারবিশ্লেষকেরা বলছেন, ৬ পিই রেশি যেকোনো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগের জন্য খুবই আকর্ষণীয়।
ঢাকার বাজারে সোমবার লেনদেন ও মূল্যবৃদ্ধিতেও ছিল ব্যাংক খাতের শেয়ারের আধিপত্য। এদিন ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষে থাকা তিন কোম্পানিই ছিল ব্যাংক খাতের। কোম্পানিগুলো হলো ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও মিডল্যান্ড ব্যাংক। এই তিন ব্যাংকের সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৬৯ কোটি টাকা, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের প্রায় ১২ শতাংশ। এদিন মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির মধ্যেও তিনটি ছিল ব্যাংক খাতের কোম্পানি। কোম্পানিগুলো হলো রূপালী ব্যাংক, এবি ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। এর মধ্যে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে ছিল রাষ্ট্রমালিকানাধীন রূপালী ব্যাংক। এটির শেয়ারের দাম গতকাল ২ টাকা ১০ পয়সা বা ১০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ২৩ টাকা ১০ পয়সায়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ড এসইএক স স চকট ল নদ ন র প ড এসইর স মব র ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
স্বামীকে ২১ কোটি টাকার শেয়ার উপহার দিচ্ছেন স্ত্রী
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত একটি কোম্পানির চেয়ারম্যান তাঁর স্বামীকে প্রায় ২১ কোটি টাকার শেয়ার উপহার দিচ্ছেন। মুন্নু সিরামিকের উদ্যোক্তা পরিচালক আফরোজা খানম তাঁর স্বামী মঈনুল ইসলামকে এই শেয়ার উপহার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আজ সোমবার আফরোজা খানমের পক্ষ থেকে স্বামীকে শেয়ার উপহার দেওয়ার এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দেওয়া এক ঘোষণায় বলা হয়েছে, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সিরামিক খাতের কোম্পানি মুন্নু সিরামিকের উদ্যোক্তা আফরোজা খানম কোম্পানিটির প্রায় ২৬ লাখ শেয়ার উপহার দেবেন।
ঢাকার শেয়ারবাজারে আজ সোমবার মুন্নু সিরামিকের প্রতিটি শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৭৯ টাকা। সেই হিসাবে ২৬ লাখ শেয়ারের বাজারমূল্য দাঁড়ায় ২০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
ডিএসইতে প্রকাশিত ঘোষণায় আরও বলা হয়েছে, আফরোজা খানম মুন্নু সিরামিকের একজন উদ্যোক্তা। বর্তমানে তিনি কোম্পানিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। আফরোজা খানম মুন্নু গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা হারুনুর রশীদ খান মুন্নুর মেয়ে। আর মঈনুল ইসলাম মুন্নু সিরামিকের একজন সাধারণ শেয়ারধারী। সাধারণ শেয়ারধারী হলেও তিনি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে নেই।
শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নিয়ম অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির পরিচালক হতে হলে ওই পরিচালকের হাতে কোম্পানিটির ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার থাকা বাধ্যতামূলক।
ডিএসইতে দেওয়া শেয়ার উপহারের ঘোষণায় দেখা যাচ্ছে, আফরোজা খানম তাঁর স্বামীকে যে পরিমাণ শেয়ার উপহার দিচ্ছেন, তা কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৭ শতাংশের বেশি। ফলে উপহারের এই শেয়ার নিয়েই মঈনুল ইসলাম চাইলে কোম্পানিটির পরিচালক হতে পারবেন। কারণ, উপহারের এই শেয়ারে তিনি ন্যূনতম শেয়ার ধারণের শর্ত পূরণ করবেন। জানা যায়, মূলত স্বামীকে কোম্পানির পরিচালক করতেই স্ত্রীর পক্ষ থেকে এই শেয়ার উপহার দেওয়া হচ্ছে। চলতি মাসের মধ্যে উপহারের এই শেয়ার হস্তান্তর সম্পন্ন করা হবে।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৩ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় মুন্নু সিরামিক। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের ৩৭ দশমিক ৪৩ শতাংশই ছিল এটির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে। সাধারণ শেয়ারধারীদের হাতে ছিল ৪৮ দশমিক ১৮ শতাংশ শেয়ার। বাকি শেয়ার ছিল প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে। কোম্পানি মাঝারি মানের কোম্পানি হিসেবে ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত। সর্বশেষ গত জুনে সমাপ্ত আর্থিক বছরের জন্য শেয়ারধারীদের প্রতি শেয়ারের বিপরীতে ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল।
সর্বশেষ গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছর কোম্পানিটি প্রায় ৮৩ লাখ টাকা মুনাফা করেছে। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল প্রায় দেড় কোটি টাকা।