তিনি অধিনায়ক। সিদ্ধান্ত নেওয়ার সব অধিকার একমাত্র তারই। অথচ ছোট্ট ক্রিকেটীয় জীবনে এমন এক সিদ্ধান্ত ভিয়ান মুল্ডার নিয়েছেন যা ইতিহাসে বিরল। 

টেস্ট ক্রিকেটের বয়স ১৪৮ বছর। মুল্ডারের ক্রিকেট জীবন মাত্র ৬ বছরের। অথচ ছোট্ট জীবনে মুল্ডার পুরো ক্রিকেট বিশ্বের অভিনন্দন পেয়ে গেলেন। হয়তো দাঁড়িয়ে কেউ স্যালুট দেননি। তবে হৃদয়ের অন্তস্থল পেয়েছেন কুর্ণিশ। শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায়, সম্মানে। 

মুল্ডার প্রথমবারের মতো টেস্ট অধিনায়কত্ব করছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বুলাওয়েতে। প্রথম ইনিংসেই চমকে দিলেন সবাইকে। সেঞ্চুরি করলেন। সেটাকে রূপ দিলেন ডাবলে। আগ্রাসন দেখিয়ে পেয়ে গেলেন ট্রিপল। সুযোগ ছিল কোয়াড্রপল সেঞ্চুরিও তুলে নেওয়ার। 

কিন্তু পুরো ক্রিকেট বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে মুল্ডার ৩৬৭ রানে ইনিংস ঘোষণা করলেন। মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার আগে মুল্ডারের রান ছিল ৩৬৭। ৪০ মিনিটের বিরতি। তখন ক্রিকেট বিশ্বের চোখ বুলাওয়েতে।

২০০৪ সালে লারা ৪০০ করেছিলেন। সেটা হুমকির মুখে। মুল্ডার কী ভেঙে দেবেন? রোমাঞ্চ, উত্তেজনা ছড়িয়ে যাচ্ছিল চারপাশে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ‌্যমে শুরু হয়ে গিয়েছিল, মুল্ডার বন্দনা। লারার ছবিও ভেসে আসছিল বারবার।

কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংস ঘোষণা করায় মুল্ডার আর ব্যাটিংয়ে আসলেন না। ইনিংস ঘোষণা করেছেন মুল্ডার নিজেই।

এই যাত্রায় টিকে গেল টেস্ট ক্রিকেটের একমাত্র কোয়াড্রপল সেঞ্চুরি ‘৪০০’। অধিনায়ক হয়েও কেন এমন সিদ্ধান্ত মুল্ডারের? জানতে উৎসুক ছিল পুরো দুনিয়া। তার মুখ থেকেই শুনুন বাকিটা,  

‘‘ব্রায়ান লারা একজন কিংবদন্তি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি ৪০০ বা ৪০১ বা এর আশেপাশে একটা রান করেছিলেন। রেকর্ডটি তার পাশেই মানায়, তিনি বিশেষ একজন। আবার যদি এমনটা করার সুযোগ আমি পাই, তখনও ঠিক এটাই করব।’’ 

ইনিংস ঘোষণা করে লারার প্রতি সম্মান দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতিহাসের অক্ষয় কালিতে নিজের নাম তুলেছেন মুল্ডার। তার চেয়ে অভিজত্যের ফরম্যাটে বড় ইনিংস আছে যথাক্রমে মাহেলা জয়বর্ধানে (৩৭৪), ব্রায়ান লারা (৩৭৫), ম্যাথু হেইডেন (৩৮০) ও ব্রায়ান লারার (৪০০*)।

৩৬৭ রানে অপরাজিত থাকা ইনিংসটি নিয়ে মুল্ডারের প্রতিক্রিয়া শুনলে বোঝা যাবে, যতটুকু তিনি পেয়েছেন সেটাও তার কল্পনার বাইরে, 

“অনুভূতি অবশ্যই বিশেষ। ট্রিপল সেঞ্চুরির কথা তো বাদই, সত্যি বলতে কখনও ডাবল সেঞ্চুরির স্বপ্নও আমি দেখিনি। তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে এই ম্যাচে দলকে জয়ের জন্য একটা ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে পেরেছি।”

টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি মুল্ডারের দখলে। ৪১০ মিনিট ক্রিজে কাটিয়ে ৪৯ চার ও ৪ ছক্কা মেরেছেন। ১০৯.

৮৮ স্ট্রাইক রেটে ব‌্যাটিং করেছেন। ২২ গজে লম্বা এই সময় কাটানোর পেছনে নিজের মনোযোগ ধরে রাখার কৌশলও জানালেন মুল্ডার, 

‘‘মনসংযোগ হারিয়ে ২৪৭ রানে বোল্ড হয়ে যাই, তখন নেতিবাচক অনেক কিছুই ঘটছিল। তবে অনেক ইতিবাচক ব্যাপারও ভাবছিলাম। দুই ডেলিভারির মাঝের বিরতিতে নিজের গান গাইছিলাম। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছিলাম। কেবল বর্তমান নিয়ে ভাবার এবং খুব বেশি দূর না তাকানোর চেষ্টা করছিলাম।”

প্রবাদ আছে, কীর্তিমানের মৃতু‌্য নেই। লারা টেস্ট ক্রিকেটের একমাত্র ৪০০ করে অমরত্বের স্বীকৃতি তো পেয়েছেনই। মুল্ডার কী পিছিয়ে থাকবেন? কিংবদন্তির প্রতি তার পাহাড় সমান সম্মান, ইতিহাসের প্রতি তার অকুন্ঠ শ্রদ্ধা, আবেগের বিচ্ছুরণ, ক্রিকেট দর্শন…সব কিছু মিলিয়ে মুল্ডার অনন‌্য, অসাধারণ, অকল্পনীয়। কতজনই বা এমনভাবে ভাবতে পারেন?

ঢাকা/ইয়াসিন

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না, মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন: সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, 'আমাদের একটা অভ্যাস হয়ে গেছে একটা নেতিবাচক সংবাদ দেখলেই যাচাই-বাছাই না করে শেয়ার করে দেওয়া হয়। অত্যন্ত ভিত্তিহীন সংবাদও আমরা শেয়ার করে দেই।'

সিইসি বলেন, 'দয়া করে সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না। এই মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন। তথ্যটা যেন আগে যাচাই করে তারপরে শেয়ার করেন।'

আজ সোমবার রাজধানীর ভাটারায় আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নে (এজিবি) এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন সিইসি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভুয়া সংবাদের প্রচার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপপ্রয়োগ রোধে করণীয় সম্পর্কে তিনি এসব কথা বলেন।

থানা আনসার কোম্পানি/প্লাটুন সদস্যদের আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণের (৪র্থ ধাপ) সমাপনী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিইসি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো সংবাদ দেখা মাত্রই নাগরিকদের যাচাইবাছাই করতে আহ্বান জানান সিইসি। নিশ্চিত হওয়ার আগে শেয়ার না করতে বলেন তিনি।

জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে আনসার ভিডিপির ভূমিকাকে মূল শক্তি বলে উল্লেখ করেন সিইসি। তিনি বলেন, 'এনারাই অধিক সংখ্যায় নিয়োজিত থাকেন। এবং আমাদের হিসেব করতে গেলে প্রথম এদেরকেই হিসেব করতে হয় যে, কতজন আনসার ভিডিপি সদস্য আমরা মোতায়েন করতে পারব। মূল কাজটা আঞ্জাম (সম্পাদন) দিতে হয় কিন্তু আনসার এবং ভিডিপির সদস্যদের।'

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ। নির্বাচনকালীন জনগণের নিরাপত্তা, ভোট কেন্দ্রের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণে আনসার বাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে বলে জানান তিনি। নির্বাচনে দেশজুড়ে প্রায় ৬ লাখ আনসার ও ভিডিপি সদস্য দায়িত্বপালন করবেন বলেন মহাপরিচালক।

অনুষ্ঠানে মহড়ায় ঢাকা মহানগর আনসারের চারটি জোনের অধীন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩২০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য অংশ নেন।  আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা টহল, দায়িত্ব বণ্টন ও জরুরি প্রতিক্রিয়া অনুশীলনে অংশ নেন।

মহড়ায় ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জামাদি নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া, ভোটারদের শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে ভোট প্রদানে সহায়তা, জাল ভোট প্রতিরোধ, প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা এবং সেনা, বিজিবি, র‍্যাব ও পুলিশের সঙ্গে দ্রুত সমন্বয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন জোনের অধিনায়ক এবং প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ