তুলা আমদানির ওপর আরোপিত ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল।

সোমবার (৭ জুলাই) সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ আশা প্রকাশ করেন।

শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘‘বাজেটে তুলা আমদানির ওপর ২ শতাংশ এআইটি (অগ্রিম আয়কর) আরোপ করার বিষয়ে আমাদের ক্ষোভের জায়গাটা উপদেষ্টাকে জানিয়েছি। এটা যে আমাদের শিল্পের জন্য বোঝা, তিনিও সেটা বুঝতে পেরেছেন এবং নোট নিয়েছেন। আশা করছি, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হবে।’’

আরো পড়ুন:

বাজেট: সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ল ১০ হাজার কোটি টাকা

বাজেটের ত্রুটি সংশোধনের আহ্বান

বৈঠকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো.

আবদুর রহমান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরীসহ এ খাতের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে এই বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি অর্থ উপদেষ্টা। তবে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি পর্যালোচনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

সেই সঙ্গে বলা হয়েছে, আয়কর খাত থেকে রাজস্ব বাড়াতে সরকার একই কর ১৫২টি পণ্যে আরোপ করেছে। শুধুমাত্র এই খাতে এআইটি প্রত্যাহার করা হলে অন্যান্য খাতও বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। তাই এআইটি প্রত্যাহারের পরিবর্তে সরকারের পক্ষ থেকে অন্যান্য নীতি সহায়তার মাধ্যমে বিষয়টি সমন্বয়ের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে স্পিনিং শিল্পের প্রধান কাঁচামাল তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সুতার ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট/ মূসক) ৬৭ শতাংশ বাড়িয়ে প্রতি কেজিতে ৩ টাকা থেকে ৫ টাকা করায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

বিটিএমএ এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছে। গত ১ জুলাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল এসব করকে ‘আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত’ বলে উল্লেখ করেছেন।

ঢাকা/হাসনাত/রাজীব

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট আমদ ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

দুদক সংস্কার নিয়ে বিএনপির অবস্থান বিভ্রান্তিকর: সংস্কার কমিশন

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের ৪৭টির মধ্যে ২৯তম সুপারিশ নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিয়েছেন। তবে তার বক্তব্যকে বিভ্রান্তিকর, স্ববিরোধী ও হতাশাজনক হিসেবে উল্লেখ করেছে দুদক সংস্কার কমিশন।

সোমবার (৭ জুলাই) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দুদকের তদন্ত কার্যক্রমে অপ্রয়োজনীয় দীর্ঘসূত্রতা ও প্রশাসনিক জটিলতা এবং অনেক ক্ষেত্রে স্থবিরতা দূর করার লক্ষ্যে এসব সুপারিশ করা হয়েছে।

ওই সংবাদ সম্মেলনে ৪৭টি সুপারিশের ৪৬টিতেই বিএনপির সম্মতি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করায় বিএনপিকে ধন্যবাদ জানিয়েছে দুদক সংস্কার কমিশন। তবে দুর্নীতির তদন্তের স্বার্থে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রাপ্তির জন্য আদালতের আদেশ নেওয়ার বিদ্যমান বাধ্যবাধকতা বাতিল করার জন্য কমিশনের ২৯ নম্বর সুপারিশ সমর্থন করতে বিএনপির ব্যর্থতা উদ্বেগজনক।

আরো পড়ুন:

কমিশনারসহ এনবিআরের আরো ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদক

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে দুদকের অভিযান

বিশেষ করে, এ বাধ্যবাধকতা না রাখলে দুদকের কার্যক্রম বিলম্বিত হবে মর্মে যেভাবে বিএনপির পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, তা নিতান্তই বিভ্রান্তিমূলক ও স্ববিরোধী। কারণ এ বাধ্যবাধকতাই দুদকের দ্বায়িত্ব পালনে বিলম্বসহ অনেক ক্ষেত্রে অকার্যকরতার অন্যতম কারণ, যা দুদকের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও দুদক সংস্কার কমিশনের কাজের অংশ হিসেবে গবেষণা ও সংশ্লিষ্ট অংশিজনের নিকট প্রাপ্ত তথ্য-পরামর্শ বিশ্লেষণে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

দুদক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশ ২৯-এ বলা হয়েছে, ‘আয়কর আইন, ২০২৩-এর ধারা ৩০৯ সংশোধনপূর্বক এটি নিশ্চিত করতে হবে যে, দুদক কর্তৃক চাহিত কোনো তথ্যাদি বা দলিলাদির ক্ষেত্রে এই ধারা প্রযোজ্য হবে না।’

আয়কর আইনের অধীন প্রস্তুতকৃত বিবৃতি, দাখিলকৃত রিটার্ন বা হিসাব বিবরণী বা দলিলাদি উক্ত আইনের ৩০৯ ধারায় গোপনীয় বলে বিবেচিত এবং আদালতের আদেশ ব্যতিরেকে এনবিআর দুদককে এসব তথ্যাদি বা দলিলাদি প্রদান করতে পারে না। এই আইন প্রণয়নের আগে দুদক এনবিআর থেকে যেসব তথ্যাদি বা দলিলাদি আদালতের আদেশ ব্যতিরেকেই পেতে পারত, এই আইন প্রণয়নের পর তা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

এই সুপারিশে দ্বিমত পোষণ করে আদালতের অনুমতির প্রক্রিয়া বহাল রাখার পক্ষে বিএনপির অবস্থান নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, “দুদকের কার্যক্রমে অহেতুক বিলম্ব রোধ করার জন্য আদালতের অনুমতি নেওয়ার বিদ্যমান বিধান অব্যাহত রাখার যুক্তি দিয়েছে বিএনপি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আদালতের অনুমতির বিধান রাখার ফলে দুর্নীতির তদন্তে দীর্ঘসূত্রতা ও জটিলতা বৃদ্ধি এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রতিহত করার সুযোগ তৈরি হয়, যা দুদকের অকার্যকরতার অন্যতম কারণ।”

তিনি আরো বলেন, “সুপারিশ-২৯ এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, এ অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আইনগত প্রতিবন্ধকতা দূর করে এনবিআর-এর তথ্যে দুদকের অবাধ ও বিলম্বহীন অভিগম্যতা নিশ্চিত করা। আয়কর সংক্রান্ত তথ্যের গোপনীয়তার যুক্তিও ভিত্তিহীন। কারণ এ তথ্য দুর্নীতির তদন্তের স্বার্থে দুদকের প্রাপ্য, ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘন বা কোনো অযাচিতভাবে প্রকাশের জন্য নয়। তাছাড়া, যে তথ্য এনবিআরের কাছে থাকতে পারে, তা এনবিআরেরই সহযোগী সংস্থা দুদককে পেতে হলে আদালতের আদেশ লাগবে— কোনো যুক্তিতেই তা গ্রহণযোগ্য নয়।”

এনবিআরও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা থেকে এ ধরনের অভিগম্যতা পেয়ে থাকে। কমিশন জোরালোভাবে বিশ্বাস করে, উল্লিখিত সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে দুর্নীতিবিরোধী তদন্তের গতি, কার্যকারিতা এবং নিরপেক্ষতা বাড়াবে—যা দুদকের স্বাধীনতা ও কার্যকরতার অভীষ্ট অর্জনের পূর্বশর্ত এবং আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

কমিশন আশা করে, বিএনপি এ বিষয়ে তার অবস্থান পুনর্বিবেচনা করবে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি কার্যকর ও শক্তিশালী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

 ড. জামান আরো বলেন, “এই সুপারিশের উদ্দেশ্য কোনো ব্যক্তির গোপনীয়তা লঙ্ঘন নয়, বরং দুদকের তদন্ত কার্যক্রমে অপ্রয়োজনীয় দীর্ঘসূত্রতা ও প্রশাসনিক জটিলতা দূর করা। কমিশন বিশ্বাস করে, এনবিআর ও দুদকের মধ্যে সমন্বয় এবং তথ্য আদান-প্রদান দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধে ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অপরিহার্য এবং চলমান রাষ্ট্রসংস্কার উদ্যোগের অবিচ্ছেদ্য অংশ।”

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ২৯ নম্বর সুপারিশের বিরুদ্ধে বিএনপির অবস্থান হতাশাজনক
  • তুলা আমদানিতে অগ্রিম আয়কর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহারের আশা বিটিএমএ’র 
  • দুদক সংস্কার নিয়ে বিএনপির অবস্থান বিভ্রান্তিকর: সংস্কার কমিশন
  • তুলা আমদানিতে অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার চান উদ্যোক্তারা
  • তুলা আমদানিতে কর বসিয়ে প্রতিবেশী দেশের স্বার্থ রক্ষা কি না, প্রশ্ন বস্ত্রকলমালিকদের