জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেমেছিলাম, যে পরিবর্তন দেখতে চেয়েছিলাম, সেই পরিবর্তন এখনও দেখতে পাচ্ছি না। বরং আমাদের সামান্য যে চাওয়া ছিল, জুলাই ঘোষণাপত্র এবং জুলাই সনদ– সেটি নিয়েও টালবাহানা করা হচ্ছে।’

সিরাজগঞ্জ শহরে পথসভা: ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’র সপ্তম দিন সোমবার বিকেলে সিরাজগঞ্জ শহরের বাজার স্টেশন এলাকার স্বাধীনতা স্কয়ারে পথসভায় এসব কথা বলেন তিনি। প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম গণঅভ্যুত্থানের পর নিরপেক্ষ প্রশাসন চাই, বিচার ব্যবস্থা চাই। আমরা আগে দেখতাম, তারা একটা দলের হয়ে কাজ করত। আমরা চাই না এখনও তারা সেটা করুক। আমরা দেখেছি, আয়নাঘর থেকে শুরু করে কত কিছু করা হয়েছে। তাহলে আমরা বিচার ও সংস্কার ছাড়া কীভাবে নির্বাচনের দিকে যাবো? বিচার না হলে কীভাবে আমরা শহীদ ভাইবোনদের পরিবারের সামনে গিয়ে দাঁড়াব?

সিরাজগঞ্জের সম্ভাবনাময় তাঁতশিল্পকে অবজ্ঞা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আগামীতে এগুলোকে তুলে ধরা হবে, নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করা হবে।’

আমরা কোনো আপস করব না: পাবনায় পথসভায় নাহিদ ইসলাম: সোমবার রাত ১১টায় পাবনা শহরের ট্রাফিক মোড়ে আয়োজিত পথসভায় নাহিদ ইসলাম বলেন, দেশের স্বার্থে আসুন ঐক্যবদ্ধ হই। দেশের উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমরা কোনো আপস করব না। জনগণকে সাথে নিয়ে রাজপথে থাকবো যৌক্তিক দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত। পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ এনসিপির পদযাত্রা উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণকে সাথে নিয়ে ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটিয়েছিলাম। সেই আন্দোলনে আমরা কারও সঙ্গে আপস করিনি, ভবিষ্যতেও করব না।

গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণ করে তিনি বলেন, আমার ভাই-বোনেরা শহীদ হয়েছেন। তাদের শহীদি মর্যাদা ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকতে হবে। এজন্য প্রয়োজন জুলাই সনদ। এই দাবিতে আমরা অনড় অবস্থানে।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, ডা.

তাসলিমা জারা, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, নাটোর জেলা যুগ্ম সমন্বয়কারী আব্দুর মান্নাফসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা। পথসভা শেষে নেতাকর্মীরা কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন।

এর আগে দুপুরে নাটোর শহরের মাদ্রাসা মোড়ের স্বাধীনতা চত্বরে পথসভায় নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের পতন হলেই হবে না, দেশের মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন। সে জন্য জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে হবে, গণঅভ্যুত্থানের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। গণঅভ্যুত্থানে যে ভাইবোনেরা নেমে এসেছিল, যেসব মানুষ শহীদ হয়েছিল, তাদের সেই শহীদি মর্যাদা রাষ্ট্রকে দিতে হবে। সংবিধানে স্বীকৃতি থাকতে হবে। এর জন্য আমাদের প্রয়োজন জুলাই ঘোষণাপত্র এবং জুলাই সনদ।’

নাটোরে এনসিপির কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। হুঁশিয়ারি দিতে চাই। মাত্র এক বছর আগে কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে যারা ক্ষমতায় দীর্ঘায়িত হতে চেয়েছিল, তাদের আজকের বাংলাদেশে ঠাঁই হয়নি। যদি এখনও আমরা সেই স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন থেকে শিক্ষা না নিই, তবে তাদের পরিণতিও সেই দিকেই যাবে।’

এ সময় এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে রোববার পদযাত্রার ষষ্ঠ দিনে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে যান নাহিদ ইসলামসহ এনসিপির অন্য নেতারা। এ ছাড়া এদিন তারা নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার কুজাইল বাজার সফর করেন। রোববার নওগাঁ শহরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি)

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ত য় ন গর ক প র ট এনস প ন হ দ ইসল ম প বন গণঅভ য ত থ ন স র জগঞ জ এনস প র পথসভ য়

এছাড়াও পড়ুন:

পুরোনো খেলায় নতুন প্লেয়ার হতে আসিনি, খেলার নিয়ম বদলাতে এসেছি: নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পর আমরা বলেছি—নতুন বাংলাদেশ লাগবে, নতুন সিস্টেম লাগবে। পুরোনো খেলায় আমরা অংশগ্রহণ করব না। চাঁদাবাজির ও সন্ত্রাসের রাজনীতিতে আমরা নেই। আমরা পুরোনো খেলায় নতুন প্লেয়ার হতে আসিনি, আমরা খেলার নিয়ম বদলাতে এসেছি। রাজনীতির নিয়ম বদলাতে হবে। দেশের হাল ধরতে ভালো, গ্রহণযোগ্য ও তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতিতে নিয়ে আসতে হবে।’

আজ শনিবার দুপুর দেড়টায় বগুড়া শহরের সাতমাথার মুক্তমঞ্চে জুলাই পদযাত্রা শেষে এক পথসভায় এ কথাগুলো বলেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে টালবাহানা হচ্ছে। জুলাই ঘোষণাপত্র অবশ্যই সংবিধানে যুক্ত হবে। জুলাই কোনো আবেগের বিষয় নয়, জুলাইয়ের পথেই আগামীর বাংলাদেশ পরিচালিত হবে।’

আওয়ামী লীগের প্রতি ইঙ্গিত করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘মুজিববাদীরা পলাতক। তারা ভারতে পালিয়েছে, কারণ এটা কোনো বাংলাদেশি দল ছিল না, এটা ছিল ভারতীয় পার্টি। গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ আর কোনো বিদেশি ইশারায় চলবে না। নির্বাচন, রাজনীতি—সবকিছু নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের জনগণ। আগামী ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নতুন বাংলাদেশের শপথ হবে, ঘোষণা করা হবে জুলাই ঘোষণাপত্র।’

আওয়ামী লীগ শাসনামলের ১৬ বছরে বগুড়ার প্রতি বৈষম্যের অভিযোগ তুলে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বগুড়ার নাম শুনলেই চাকরি দেওয়া হতো না, সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হতো না, বরং মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা হতো। অথচ এই বগুড়া একসময় বাংলার রাজধানী ছিল। পুণ্ড্র সভ্যতার সূচনা হয়েছিল এখান থেকেই। শিক্ষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য আর জ্ঞানবিজ্ঞানের আঁতুড়ঘর ছিল বগুড়া। আমরা সেই পুরোনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চাই, বগুড়ার উন্নয়নে কাজ করতে চাই। এনসিপি কোনো বৈষম্য চায় না। বগুড়াবাসীর ন্যায্য অধিকার আদায়ে লড়াই করবে। আমরা চাই, যার যা প্রাপ্য তা নিশ্চিত হোক। নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।’

বগুড়ার প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, বগুড়ার প্রশাসন নিরপেক্ষ আচরণ করছে না। এ জেলায় দলবাজ প্রশাসন ও পুলিশের কোনো স্থান হবে না। প্রশাসন, পুলিশ ও আদালতকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। যদি কেউ পুরোনো কায়দায় দলবাজ প্রশাসন চালাতে চায়, তাহলে তার পরিণতিও হবে ২০১৮ সালের ভোট ডাকাতির দায়ে অভিযুক্ত ডিসিদের মতো।

সভায় উপস্থিত ছিলেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসাইন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, নাহিদা সারওয়ার ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাকিব মাহদী।

এর আগে শনিবার বেলা ১১টায় বগুড়ার পর্যটন মোটেলে শহীদ পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে এনসিপি। সেখানে নাহিদ ইসলাম বলেন, বিচার, সংস্কার; তারপর নির্বাচন।

পথসভায় সাধারণ মানুষের উপস্থিতি

পথসভায় কেউ এসেছেন কৌতূহলে, কেউ বক্তব্য শুনতে। শহরের নিউমার্কেট এলাকার বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ্ব জোবেদুর রহমান বলেন, তিনি এনসিপির সমর্থক নন, তবে নেতারা বগুড়াবাসীর জন্য কী বলেন তা শোনার আগ্রহেই এসেছেন।

বগুড়া থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরের কাহালু উপজেলার বীরকেদার গ্রামের কৃষক ইউনুস আলী বলেন, নাহিদের বক্তব্য মোবাইলে শুনেছেন। এবার সরাসরি শুনতেই এসেছেন। শ্যামবাড়িয়া এলাকার কাঠ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যবসার কাজে শহরে এসে পথসভায় নেতাদের বক্তব্য শুনছি।’

মালগ্রাম এলাকার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘জুলাই আন্দোলন থেকেই তরুণদের কার্যক্রমে মুগ্ধ হয়ে পড়েছি। দল গঠনের পর এনসিপির সমর্থক হিসেবে কর্মসূচিতে এসেছি। তবে অন্য দলের মতো নতুনদের এই দলের কেউ যাতে স্রোতে গা না ভাসায় এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। গতানুগতিক রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডের মতো বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়ালে মানুষ এনসিপিকেও প্রত্যাখ্যান করবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পরিবর্তন আমরা এখনো দেখতে পাচ্ছি না: নাহিদ ইসলাম
  • কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে যারা ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করেছে, বাংলাদেশে তাদের ঠাঁই হয় নাই : নাহিদ ইসলাম
  • নির্যাতন হলে সীমান্ত অভিমুখে লংমার্চ দিতে বাধ্য হব: নাহিদ ইসলাম
  • শেখ হাসিনা ঢুকলে আমগাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হবে: আখতার
  • সীমান্তে দাদাদের বাহাদুরির দিন শেষ: নাহিদ ইসলাম
  • জামায়াত যেনতেন নির্বাচন চায় না: শফিকুর রহমান
  • ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ঘটিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ব: নাহিদ ইসলাম
  • ৩ আগস্ট দেশ পুনর্গঠনে ইশতেহার ঘোষণা হবে: নাহিদ ইসলাম
  • পুরোনো খেলায় নতুন প্লেয়ার হতে আসিনি, খেলার নিয়ম বদলাতে এসেছি: নাহিদ ইসলাম