দেশের অভ্যন্তরীণ পথে উড়োজাহাজ পরিচালনায় ২০২৪ সালে সেরা বিমান সংস্থার পুরস্কার পেয়েছে বেসরকারি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস। আর দেশি-বিদেশি সব ধরনের বিমান সংস্থার মধ্যে সেরা এয়ারলাইন নির্বাচিত হয়েছে দুবাইভিত্তিক এমিরেটস এয়ারলাইন। এ ছাড়া কার্গো পরিবহনে সেরা বিমান সংস্থা হয়েছে সৌদিয়া কার্গো।

গত শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘শেয়ারট্রিপ-মনিটর এয়ারলাইন অব দ্য ইয়ার-২০২৪’ অনুষ্ঠানে এই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। এ বছর মোট ২৩টি শ্রেণিতে বিভিন্ন বিমান সংস্থাকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

ভ্রমণ ও পর্যটনবিষয়ক পাক্ষিক দ্য বাংলাদেশ মনিটর পরিচালিত আকাশপথে নিয়মিত ভ্রমণ করা ব্যক্তিদের কাছ থেকে অনলাইনে মতামত জরিপের ভিত্তিতে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এতে লিড স্পনসর ছিল অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি-শেয়ারট্রিপ। এ ছাড়া পার্টনার হিসেবে ছিল ইস্টার্ন ব্যাংক, জিডিএস কোম্পানি স্যাবর বাংলাদেশ, প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল ঢাকা ও অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি বাইটিকিটস।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আয়োজকেরা জানান, চলতি বছর অনলাইনে পরিচালিত মতামত জরিপে তিন হাজারের বেশি নিয়মিত আকাশভ্রমণকারী অংশ নিয়েছেন। তাঁদের মতামতের ভিত্তিতে ২৩টি শ্রেণিতে বিমান সংস্থাগুলোকে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জপদক দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের ভ্রমণশিল্পের উন্নয়ন ও প্রসারে অবদান রাখায় গ্যালাক্সি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান তৌফিক উদ্দীন আহমেদকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়।

পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.

ফাহিমুল ইসলাম। আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মনিটরের সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম, জুরি কমিটির চেয়ারম্যান এম. সাদিকুল ইসলাম, শেয়ারট্রিপের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী সাদিয়া হক, স্যাবর বাংলাদেশের কান্ট্রি জেনারেল ম্যানেজার ও সিইও মো. সাইফুল হক, প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক আসিফ আহমেদ প্রমুখ।

তিন শ্রেণিতে সেরা ইউএস-বাংলা

২০২৪ সালে অভ্যন্তরীণ পথে ফ্লাইট পরিচালনায় সেরা (স্বর্ণ পুরস্কার) বিমান সংস্থা হয়েছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস। এই শ্রেণিতে নভো এয়ার রৌপ্য ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্রোঞ্জ পুরস্কার পেয়েছে। এ নিয়ে পরপর তিনবার অভ্যন্তরীণ পথে সেরা বিমান সংস্থা হয়েছে ইউএস-বাংলা। গত বছর আরও দুটি শ্রেণিতে সেরা হয়েছে ইউএস-বাংলা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ পথে ইন-ফ্লাইট সার্ভিস প্রদান এবং ২০২৩ সালের তুলনায় উন্নত কার্যক্রমের জন্য প্রতিষ্ঠানটি স্বর্ণপদক পেয়েছে। এই দুই শ্রেণিতে রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পুরস্কার পেয়েছে যথাক্রমে এয়ার অ্যাস্ট্রা ও নভোএয়ার এবং বিমান বাংলাদেশ ও কুয়েত এয়ারওয়েজ।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম জানান, ‘বর্তমানে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের বহরে মোট ২৪টি উড়োজাহাজ রয়েছে। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক গন্তব্য মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটি দৈনিক গড়ে ৮০টির বেশি ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের মাধ্যমে তাঁদের আস্থা অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে এই পুরস্কার পেয়েছে ইউএস-বাংলা। পরপর তিন বছর এ পুরস্কার পাওয়া আমাদের ধারাবাহিক প্রচেষ্টারই ফসল।’

দেশীয় বিমান সংস্থাগুলোর মধ্যে গত বছর অভ্যন্তরীণ পথে সময়মতো বিমান ছাড়ার জন্য সেরা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে যথাক্রমে নভোএয়ার, ইউএস-বাংলা ও এয়ার অ্যাস্ট্রা। সবচেয়ে বেশি গ্রাহকবান্ধব বিমান সংস্থা হয়েছে এয়ার অ্যাস্ট্রা, নভোএয়ার ও ইউএস-বাংলা। আর বিমানবন্দরে বিভিন্ন সেবার জন্য সেরা হয়েছে যথাক্রমে এয়ার অ্যাস্ট্রা, ইউএস-বাংলা ও নভোএয়ার।

আরও যারা পুরস্কার পেয়েছে

২০২৪ সালে বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী দেশি-বিদেশি সব ধরনের বিমান সংস্থার মধ্যে সেরা (স্বর্ণ) হয়েছে দুবাইভিত্তিক এমিরেটস এয়ারলাইন। সেই সঙ্গে কাতার এয়ারওয়েজ রৌপ্য ও সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস ব্রোঞ্জ পুরস্কার পেয়েছে। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বিমান সংস্থাগুলোর মধ্যে সেরা হয়েছে থাই এয়ারওয়েজ, শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস ও মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস। দীর্ঘ দূরত্বের আন্তর্জাতিক পথে ফ্লাইট পরিচালনায় সেরা হয়েছে বিমান বাংলাদেশ, কাতার এয়ারওয়েজ ও টার্কিশ এয়ারলাইনস। সাশ্রয়ী মূল্যে যাত্রী পরিবহন করে, এই শ্রেণিতে সেরা হয়েছে এয়ার এশিয়া, ফ্লাই দুবাই ও এয়ার অ্যারাবিয়া।

২০২৪ সালে বাংলাদেশে সেরা বিজনেস ক্লাস সুবিধার বিমান সংস্থা হয়েছে কাতার এয়ারওয়েজ, এমিরেটস ও ক্যাথে প্যাসিফিক। আর ইকোনমি ক্লাসে সেরা হয়েছে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস, এমিরেটস ও কাতার এয়ারওয়েজ। সার্বিকভাবে গ্রাহক অভিজ্ঞতার দিক থেকেও সেরা হয়েছে এই তিন বিমান সংস্থা। এ ছাড়া ফ্লাইটের অভ্যন্তরে বিনোদন, খাবার ও অন্যান্য পরিষেবার জন্যও বিমান সংস্থাগুলোকে পৃথকভাবে পুরস্কৃত করা হয়।

অন্যদিকে কার্গো পরিবহনে ২০২৪ সালে সেরা বিমান সংস্থা হয়েছে যথাক্রমে সৌদিয়া কার্গো, ক্যাথে প্যাসিফিক ও এমিরেটস। সেরা এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ শ্রেণিতে সেরা হয়েছে এমটিবি এয়ার লাউঞ্জ (স্বর্ণ), ইবিএল স্কাই লাউঞ্জ (রৌপ্য) ও সিটি ব্যাংকের অ্যামেক্স লাউঞ্জ (ব্রোঞ্জ)। সেরা ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিং ও লজিস্টিকস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হয়েছে এক্সপো ফ্রেইট, এমজিএইচ ও ডিএসভি।

এ বছর গ্রাহকদের বিবেচনায় ১২টি এয়ারলাইনকে বাংলাদেশে জনপ্রিয় এয়ারলাইন ব্র্যান্ড হিসেবে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এগুলো হচ্ছে এমিরেটস, কাতার এয়ারওয়েজ, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস, বিমান বাংলাদেশ, সৌদিয়া, ক্যাথে প্যাসিফিক, টার্কিশ এয়ারলাইনস, এয়ার ইন্ডিয়া, থাই এয়ারওয়েজ, মালয়েশিয়া এয়ারলাইনস, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস ও গালফ এয়ার।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ক র প য় ছ ২০২৪ স ল ইউএস ব স বর ণ ফ ল ইট পর চ ল র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন

যশোরের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুতের (রস সংগ্রহের উপযোগী করা) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে চৌগাছা উপজেলার হায়াতপুর গ্রামে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনুর আক্তার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, রস-গুড় সংগ্রহের জন্য গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খেজুরগাছ প্রস্তুত করা হবে। এ বছর জেলায় অন্তত তিন লাখের বেশি গাছ প্রস্তুত করা হবে। যশোরে খেজুরের রস ও গুড়ের ১০০ কোটির বেশি টাকার বাজার রয়েছে। অন্তত ছয় হাজার কৃষক এই পেশায় যুক্ত।

যশোরের খেজুর গুড় জিআই পণ্য হলো যেভাবে

২০২২ সালে চৌগাছার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) ইরুফা সুলতানা খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণে খেজুর গুড়ের মেলা, গাছিদের প্রশিক্ষণ, গাছি সমাবেশ, গাছিদের সমবায় সমিতি গঠন, খেজুরগাছ রোপণ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। একই বছর জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য যশোরের খেজুর গুড়ের আবেদন করেন তিনি। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সেটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়।

শতকোটি টাকার বাজার ধরতে ব্যস্ত গাছিরা

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যশোরের প্রায় ছয় হাজার গাছি খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে খেজুরগাছ প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। খেজুরগাছ সংরক্ষণ, রোপণ, গাছিদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনাসহ নানাভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে গুড় উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যশোর জেলায় খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫টি। এর মধ্যে রস আহরণের উপযোগী গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি। গাছ থেকে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৩ হাজার লিটার রস ও ২ হাজার ৭৪২ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারদর অনুযায়ী প্রতি লিটার রসের দাম ৩৫ টাকা ও গুড়ের কেজি ৩৪০ টাকা। সেই হিসাবে রস ও গুড়ের বাজার দর ৯৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রামের গাছি আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার দাদা খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দাদার সঙ্গে বাবাও যুক্ত ছিলেন। বাবার পেশায় আমিও যুক্ত হয়েছি। বাবা আর আমি এবার ৩০০টি খেজুরগাছ থেকে রস-গুড় তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। গতবছর ভালো দাম পেয়েছি। এবারও ভালো দাম পাব বলে আশা করি।’

গাছিরা জানান, কার্তিক মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই খেজুরগাছ ছেঁটে রস ও গুড় তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেন তাঁরা। শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকদের অন্যতম আয়ের উৎস এটি। এখানকার কারিগরদের দানা পাটালি তৈরির সুনাম রয়েছে। পাটালি ও ঝোলা গুড় তৈরি ছাড়াও চাষিরা শীতের ভোরে ফেরি করে কাঁচা রস বিক্রি করেন। কাঁচা রস প্রতি মাটির ভাঁড় ১৫০-২০০ টাকা, দানা গুড় ৩৫০-৪০০ টাকা আর পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।

অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কেনারহাটের উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর আমাদের কাছে ভোক্তার চাহিদা ছিল সাড়ে ছয় হাজার কেজি পাটালি গুড়। সরবরাহ করতে পেরেছিলাম দুই হাজার কেজি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি, শীত কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পাটালি গুড় সরবরাহ করতে পারিনি। এ বছর ইতিমধ্যে অর্ডার আসতে শুরু করেছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা
  • বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নের মৃত্যু
  • শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা
  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন