অভ্যন্তরীণ পথে গত বছরের সেরা বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলা
Published: 7th, July 2025 GMT
দেশের অভ্যন্তরীণ পথে উড়োজাহাজ পরিচালনায় ২০২৪ সালে সেরা বিমান সংস্থার পুরস্কার পেয়েছে বেসরকারি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস। আর দেশি-বিদেশি সব ধরনের বিমান সংস্থার মধ্যে সেরা এয়ারলাইন নির্বাচিত হয়েছে দুবাইভিত্তিক এমিরেটস এয়ারলাইন। এ ছাড়া কার্গো পরিবহনে সেরা বিমান সংস্থা হয়েছে সৌদিয়া কার্গো।
গত শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘শেয়ারট্রিপ-মনিটর এয়ারলাইন অব দ্য ইয়ার-২০২৪’ অনুষ্ঠানে এই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। এ বছর মোট ২৩টি শ্রেণিতে বিভিন্ন বিমান সংস্থাকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
ভ্রমণ ও পর্যটনবিষয়ক পাক্ষিক দ্য বাংলাদেশ মনিটর পরিচালিত আকাশপথে নিয়মিত ভ্রমণ করা ব্যক্তিদের কাছ থেকে অনলাইনে মতামত জরিপের ভিত্তিতে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এতে লিড স্পনসর ছিল অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি-শেয়ারট্রিপ। এ ছাড়া পার্টনার হিসেবে ছিল ইস্টার্ন ব্যাংক, জিডিএস কোম্পানি স্যাবর বাংলাদেশ, প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল ঢাকা ও অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি বাইটিকিটস।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আয়োজকেরা জানান, চলতি বছর অনলাইনে পরিচালিত মতামত জরিপে তিন হাজারের বেশি নিয়মিত আকাশভ্রমণকারী অংশ নিয়েছেন। তাঁদের মতামতের ভিত্তিতে ২৩টি শ্রেণিতে বিমান সংস্থাগুলোকে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জপদক দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের ভ্রমণশিল্পের উন্নয়ন ও প্রসারে অবদান রাখায় গ্যালাক্সি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান তৌফিক উদ্দীন আহমেদকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়।
পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.
তিন শ্রেণিতে সেরা ইউএস-বাংলা
২০২৪ সালে অভ্যন্তরীণ পথে ফ্লাইট পরিচালনায় সেরা (স্বর্ণ পুরস্কার) বিমান সংস্থা হয়েছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস। এই শ্রেণিতে নভো এয়ার রৌপ্য ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্রোঞ্জ পুরস্কার পেয়েছে। এ নিয়ে পরপর তিনবার অভ্যন্তরীণ পথে সেরা বিমান সংস্থা হয়েছে ইউএস-বাংলা। গত বছর আরও দুটি শ্রেণিতে সেরা হয়েছে ইউএস-বাংলা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ পথে ইন-ফ্লাইট সার্ভিস প্রদান এবং ২০২৩ সালের তুলনায় উন্নত কার্যক্রমের জন্য প্রতিষ্ঠানটি স্বর্ণপদক পেয়েছে। এই দুই শ্রেণিতে রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পুরস্কার পেয়েছে যথাক্রমে এয়ার অ্যাস্ট্রা ও নভোএয়ার এবং বিমান বাংলাদেশ ও কুয়েত এয়ারওয়েজ।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম জানান, ‘বর্তমানে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের বহরে মোট ২৪টি উড়োজাহাজ রয়েছে। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক গন্তব্য মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটি দৈনিক গড়ে ৮০টির বেশি ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের মাধ্যমে তাঁদের আস্থা অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে এই পুরস্কার পেয়েছে ইউএস-বাংলা। পরপর তিন বছর এ পুরস্কার পাওয়া আমাদের ধারাবাহিক প্রচেষ্টারই ফসল।’
দেশীয় বিমান সংস্থাগুলোর মধ্যে গত বছর অভ্যন্তরীণ পথে সময়মতো বিমান ছাড়ার জন্য সেরা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে যথাক্রমে নভোএয়ার, ইউএস-বাংলা ও এয়ার অ্যাস্ট্রা। সবচেয়ে বেশি গ্রাহকবান্ধব বিমান সংস্থা হয়েছে এয়ার অ্যাস্ট্রা, নভোএয়ার ও ইউএস-বাংলা। আর বিমানবন্দরে বিভিন্ন সেবার জন্য সেরা হয়েছে যথাক্রমে এয়ার অ্যাস্ট্রা, ইউএস-বাংলা ও নভোএয়ার।
আরও যারা পুরস্কার পেয়েছে
২০২৪ সালে বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী দেশি-বিদেশি সব ধরনের বিমান সংস্থার মধ্যে সেরা (স্বর্ণ) হয়েছে দুবাইভিত্তিক এমিরেটস এয়ারলাইন। সেই সঙ্গে কাতার এয়ারওয়েজ রৌপ্য ও সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস ব্রোঞ্জ পুরস্কার পেয়েছে। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বিমান সংস্থাগুলোর মধ্যে সেরা হয়েছে থাই এয়ারওয়েজ, শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস ও মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস। দীর্ঘ দূরত্বের আন্তর্জাতিক পথে ফ্লাইট পরিচালনায় সেরা হয়েছে বিমান বাংলাদেশ, কাতার এয়ারওয়েজ ও টার্কিশ এয়ারলাইনস। সাশ্রয়ী মূল্যে যাত্রী পরিবহন করে, এই শ্রেণিতে সেরা হয়েছে এয়ার এশিয়া, ফ্লাই দুবাই ও এয়ার অ্যারাবিয়া।
২০২৪ সালে বাংলাদেশে সেরা বিজনেস ক্লাস সুবিধার বিমান সংস্থা হয়েছে কাতার এয়ারওয়েজ, এমিরেটস ও ক্যাথে প্যাসিফিক। আর ইকোনমি ক্লাসে সেরা হয়েছে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস, এমিরেটস ও কাতার এয়ারওয়েজ। সার্বিকভাবে গ্রাহক অভিজ্ঞতার দিক থেকেও সেরা হয়েছে এই তিন বিমান সংস্থা। এ ছাড়া ফ্লাইটের অভ্যন্তরে বিনোদন, খাবার ও অন্যান্য পরিষেবার জন্যও বিমান সংস্থাগুলোকে পৃথকভাবে পুরস্কৃত করা হয়।
অন্যদিকে কার্গো পরিবহনে ২০২৪ সালে সেরা বিমান সংস্থা হয়েছে যথাক্রমে সৌদিয়া কার্গো, ক্যাথে প্যাসিফিক ও এমিরেটস। সেরা এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ শ্রেণিতে সেরা হয়েছে এমটিবি এয়ার লাউঞ্জ (স্বর্ণ), ইবিএল স্কাই লাউঞ্জ (রৌপ্য) ও সিটি ব্যাংকের অ্যামেক্স লাউঞ্জ (ব্রোঞ্জ)। সেরা ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিং ও লজিস্টিকস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হয়েছে এক্সপো ফ্রেইট, এমজিএইচ ও ডিএসভি।
এ বছর গ্রাহকদের বিবেচনায় ১২টি এয়ারলাইনকে বাংলাদেশে জনপ্রিয় এয়ারলাইন ব্র্যান্ড হিসেবে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এগুলো হচ্ছে এমিরেটস, কাতার এয়ারওয়েজ, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস, বিমান বাংলাদেশ, সৌদিয়া, ক্যাথে প্যাসিফিক, টার্কিশ এয়ারলাইনস, এয়ার ইন্ডিয়া, থাই এয়ারওয়েজ, মালয়েশিয়া এয়ারলাইনস, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস ও গালফ এয়ার।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ক র প য় ছ ২০২৪ স ল ইউএস ব স বর ণ ফ ল ইট পর চ ল র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
আরো পড়ুন:
নাফিসা কামালসহ ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা
সাজিদ হত্যার তদন্তে সিআইডিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
জসীম উদ্দিন খান জানান, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।
বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন জানান, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।
অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ