সাংবাদিক এহসান মাহমুদের প্রতি অসম্মানজনক আচরণের প্রতিবাদ ৩২ নাগরিকের
Published: 7th, July 2025 GMT
জুলাই গণ–অভ্যুত্থান স্মরণে ১ জুলাই ঢাকায় বিএনপির অনুষ্ঠানে সাংবাদিক ও লেখক এহসান মাহমুদ যে আচরণের শিকার হয়েছেন, সেটিকে ‘অসম্মান ও অসদাচরণ’ আখ্যায়িত করে দেশের ৩২ জন নাগরিক বলেছেন, এহসান মাহমুদের প্রতি যে আচরণ করা হয়েছে, তা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মুক্তচিন্তা এবং স্বাধীন মতপ্রকাশ ও সাংবাদিকতার ওপরই একধরনের আক্রমণ। এই আচরণের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ৩২ নাগরিক এসব কথা বলেছেন। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান ও সামিনা লুৎফা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ-আল মামুন ও ইফতিখারুল আলম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আর রাজী, মোশরেকা অদিতি হক ও সায়মা আলম, লেখক রাখাল রাহা, সালাহ উদ্দিন শুভ্র ও জিয়া হাশান, কবি হাসান রোবায়েত, মোহাম্মদ রোমেল, মৃদুল মাহবুব, রাজু আলাউদ্দিন ও কাজল শাহনেওয়াজ, সংস্কৃতিকর্মী অমল আকাশ, প্রকাশক মোহাম্মদ নাজিমউদ্দিন ও সাঈদ বারী, সাংবাদিক দেলোয়ার হাসান ও ইসমাঈল হোসেন এবং অ্যাকটিভিস্ট সাইয়েদ আব্দুল্লাহ।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে এহসান মাহমুদসহ অনেক লেখক, শিল্পী, অ্যাকটিভিস্ট জান বাজি রেখে রাজপথে দাঁড়িয়েছেন, দমন-পীড়নের মুখে থেকেও আপস করেননি। দীর্ঘ এই লড়াইয়ে তাঁদের ব্যক্তিজীবন যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, পেশাগত জীবন ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের কোপানলে পড়ে এহসান মাহমুদ বারবার চাকরি হারালেও অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মহান জুলাই অভ্যুত্থানের স্মরণে ১ জুলাই রাজধানীতে একটি রাজনৈতিক দল আয়োজিত অনুষ্ঠানে অসম্মান ও অসদাচরণের শিকার হয়েছেন সাংবাদিক এহসান মাহমুদ। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলনে সোচ্চার থেকেছেন এবং সত্যের পক্ষে কলম ধরেছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে এ ধরনের আচরণ আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই চালানো লেখক, শিল্পী, গণতন্ত্রকামী নাগরিক ও সমমনাদের স্তম্ভিত করেছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমাদের বিশ্বাস, এই ঘটনা জুলাই অভ্যুত্থানকে বিতর্কিত করার বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রয়াসের অংশ। সেই বিপ্লবের সাহসী যোদ্ধাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এবং ইতিহাসকে বিকৃত করতে এ ধরনের অপপ্রচার ও অসম্মানের আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে।’
প্রকাশক সমিতির প্রতিবাদসাংবাদিক ও লেখক এহসান মাহমুদের সঙ্গে অসদাচরণের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি। এতে বলা হয়, তরুণ লেখক ও সাংবাদিক এহসান মাহমুদের সম্মানহানির জন্য সম্প্রতি একটি পরিকল্পিত ও হীন অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। দেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের জুলাই স্মরণে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠান চলাকালে তাঁর সঙ্গে যে অসদাচরণ করা হয়েছে, তা ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অপমানজনক এবং একজন মুক্তমনা সাংবাদিকের কণ্ঠরোধ করার ঘৃণ্য প্রয়াস। আমরা এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও ঘোর নিন্দা জানাই। এহসান মাহমুদের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করছি এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় সব বিবেকবান নাগরিককে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি সাঈদ বারী ও সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হাসানের পাঠানো এই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এহসান মাহমুদ দীর্ঘদিন ধরে লেখালেখি ও সাংবাদিকতার মাধ্যমে সত্য উচ্চারণ করে আসছেন। ফ্যাসিবাদবিরোধী অবস্থান নেওয়া ও খুনি হাসিনার সরকারের অন্যায়-নিপীড়নের বিরুদ্ধে তাঁর সরব ও সাহসী ভূমিকা সর্বজনবিদিত। এই কারণেই তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, বারবার ভয়ভীতি ও হয়রানির মুখে পড়তে হয়েছে। কিন্তু কোনো অপচেষ্টা তাঁকে সত্যের পথ থেকে সরিয়ে রাখতে পারেনি। তিনি সমমনাদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অসদ চরণ অসম ম ন প রক শ চরণ র
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।
এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।
এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।
সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।
আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।
শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।
পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’