দায়িত্বশীল আচরণ করলে ভয় নেই, সীমা লঙ্ঘনকারীদের দেখা হবে ভিন্নভাবে: এনবিআর চেয়ারম্যান
Published: 7th, July 2025 GMT
সাম্প্রতিক আন্দোলন নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, কর্মকর্তারা দায়িত্বশীল আচরণ করলে কারও ভয়ের কোনো কারণ নেই। তবে বড় আকারে সীমা লঙ্ঘনকারীদের হয়তো ভিন্নভাবে দেখা হবে।
আহ সোমবার রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঢাকা কাস্টম হাউস পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান। এর আগে, তিনি কাস্টমস হাউসের কাজে স্বচ্ছতা আনতে তিনটি সফটওয়্যার উদ্বোধন করেন।
এনবিআরের সাম্প্রতিক আন্দোলনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কর্মকর্তাদের অভয় দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেকে দায়িত্বশীল আচরণ ও নিজ নিজ দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করলে তাদের ভয়ের কোনো কারণ থাকতে পারে না। আর কেউ কেউ হয়তো অনেক বড় আকারেই সীমা লঙ্ঘন করেছেন, সেটা হয়তো ভিন্নভাবে দেখা হবে।
এনবিআরের অবসর ও বদলি সংক্রান্ত বিষয়ে আব্দুর রহমান খান বলেন, কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলো সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত। এটা সবাইকে বুঝতে হবে। যদি এনবিআর কর্তৃপক্ষের কারণে এসব ঘটতো তাহলে কি মাত্র পাঁচজনের ক্ষেত্রে হতো। আন্দোলনে কি শুধু পাঁচজনে গিয়েছেন? এনবিআর ব্যবস্থা নিলে তো অনেকের বিরুদ্ধেই নিতো। কিন্তু সেরকম কিছু তো ঘটেনি।
আমদানি-রপ্তানিতে শাটডাউন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি ছিল সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। তবে প্রত্যেকে মিলে চেষ্টা করবে এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে। রাজস্ব কর্মকর্তারাই রাজস্ব আদায় করবে। এত সমস্যার মধ্যেও কিন্তু কর্মকর্তারাই রাজস্ব আদায় করেছে। সুতরাং রাজস্ব আদায় নিয়ে যে ভয় রয়েছে তা কেটে যাবে। অল্প সময়ে সব ঠিক হয়ে যাবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে এতদিন ভিন্ন পদ্ধতিতে শুল্ক-কর পরিশোধ করতে হতো। সেটি সরাসরি সরকারের কোষাগারে যেতো না। এটাকে পুরোপুরি অনলাইন করা হয়েছে। এখন থেকে অটোমেটেড চালানের মাধ্যমে শুল্ক-কর দেওয়া যাবে। ২৪ ঘণ্টার যেকোনো সময় যেকোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড কিংবা মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস থেকে সরাসরি শুল্ক-কর পেমেন্ট করে পণ্য খালাস করা যাবে। এতে করদাতাদের সুবিধা হবে। তাছাড়া রাজস্ব আয়টাও সরাসরি সরকারের কোষাগারে যাবে। বর্তমানে ঢাকা আইসিডি, চট্টগ্রাম ও পানগাঁও কাস্টম হাউজে শুল্ক-কর অনলাইন চালানের মাধ্যমে পরিশোধ করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ শুল্ক-কর পরিশোধের কাজ এই চালানোর মধ্যে চলে আসবে।
প্রবাসীরা বিদেশ থেকে ফেরার সময় নানা রকমের ঝামেলা পড়েন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশেষ করে প্রবাসীদের সঙ্গে টুকটাক জিনিসপত্র থাকে। সেগুলো নিয়ে তাদের ঝামেলা পোহাতে হয়। এর থেকে তাদের মুক্ত করতে একটা সফটওয়্যার ডেভেলপ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ব্যাগেজ রুলসের আওতায় যেসব পণ্য খালাস হবে সেগুলোকে দ্রুত এবং ঝামেলামুক্তভাবে খালাস করা হবে।
এ বছর ব্যাগেজ রুলসে একটা বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে জানিয়ে আব্দুর রহমান বলেন, এটি বাস্তবায়নে ব্যাগেজসংক্রান্ত একটা সফটওয়ার চালু করা হয়েছে। এখন থেকে প্রবাসীরা বিনা ট্যাক্সে বছরে ১০ ভরির মত স্বর্ণ আনতে পারবেন। পাশাপাশি এতদিন প্রবাসীরা বিদেশ থেকে একটা মোবাইল আনলেও কর দিতে হতো। এখন থেকে বছরে একটা মোবাইল বিনা ট্যাক্সে আনতে পারবেন। তবে যারা শ্রম ও জনশক্তি অধিদপ্তরের তথা বিএমইটি কার্ডধারী তারা দুটি মোবাইল আনতে পারবেন। এসব কাজ এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে।
এছাড়া বিভিন্ন সময়ে কাস্টমস হাউজে কিছু জিনিসপত্র আটক করা হয়। যেটাকে ডিটেনশন বলে। এই ডিটেনশন মেমোকেও অটোমেটেড করা হয়েছে। যেন আটক পণ্য কীভাবে অ্যাসেসমেন্ট করা হয়েছে সেসব তথ্য যথাযথভাবে সংরক্ষিত থাকে। সেজন্য একটা সফটওয়্যার চালু করা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনব আর কর মকর ত শ ল ক কর প রব স ন বল ন
এছাড়াও পড়ুন:
মার্কিন-ইসরায়েলি ত্রাণকেন্দ্রে খাবার নিতে এসে প্রাণ গেছে ৭৪৩ ফিলিস্তিনির
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এবং ইসরায়েল–সমর্থিত সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের আশপাশে ভিড় করা মানুষের ওপর নির্বিচার হামলার অভিযোগ বাড়ছে। সেখানে কয়েক সপ্তাহে ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রায় সাড়ে ৭০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
মে মাসের শেষ দিক থেকে গাজায় ত্রাণ বিতরণ শুরু করে জিএইচএফ। শনিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, জিএইচএফের কেন্দ্রগুলোতে হামলায় অন্তত ৭৪৩ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৪ হাজার ৮৯১ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের দেওয়া যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার জন্য কাতারে প্রতিনিধিদল পাঠাচ্ছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে আলোচনা চললেও গাজায় ইসরায়েলের হামলা থামেনি। রোববার ভোরেও গাজাজুড়ে ইসরায়েলের হামলায় ২৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
জিএইচএফ ইতিমধ্যে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। একাধিক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সংস্থাটির কর্মীদের পাশাপাশি ইসরায়েলি বাহিনীও ত্রাণ নিতে আসা মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছে।
এই সপ্তাহের শুরুতে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে কয়েকজন মার্কিন ভাড়াটে কর্মীর বরাত দিয়ে বলা হয়, জিএইচএফের ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রগুলোতে সহায়তা নিতে আসা ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি ও স্ট্যান গ্রেনেড ছোড়া হয়েছে। তাঁরা আরও বলেন, সেখানে অস্ত্রে সজ্জিত কর্মীরা যেন যা খুশি তাই করছেন। তাঁদের আচরণে তেমনটাই মনে হয়েছে।আল–জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ সংখ্যার বিষয়ে বলেন, মর্মান্তিক বিষয় হলো তাঁরা সবাই ত্রাণ নিতে ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে গিয়েছিলেন এবং খাবারের প্যাকেটের জন্য অপেক্ষায় করছিলেন।
হানি মাহমুদ গাজা নগরী থেকে সংবাদ সংগ্রহ করছেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলের অবরোধে সৃষ্ট চরম সংকটের মধ্যে যখন ফিলিস্তিনিরা পরিবারের সদস্যদের জন্য একটু খাবার সংগ্রহ করতে মরিয়া, ঠিক তখনই ত্রাণ নিতে আসা মানুষের ওপর হামলা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। হিসাব করে খাবার খাচ্ছে। অনেক পরিবারই খাবার খেতে পারছে না। অনেক মা নিজে না খেয়ে সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন।’
এই সপ্তাহের শুরুতে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে কয়েকজন মার্কিন ভাড়াটে কর্মীর বরাত দিয়ে বলা হয়, জিএইচএফের ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রগুলোতে সহায়তা নিতে আসা ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি ও স্ট্যান গ্রেনেড ছোড়া হয়েছে। তাঁরা আরও বলেন, সেখানে অস্ত্রে সজ্জিত কর্মীরা যেন যা খুশি তাই করছেন। তাঁদের আচরণে তেমনটাই মনে হয়েছে।
আমার সন্তানেরা টানা তিন দিন না খেয়ে ছিল। তাই আমি বাধ্য হয়ে ওই (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে গিয়েছিলাম।’মজিদ আবু লাবান, জিএইচএফ ত্রাণকেন্দ্রে ত্রাণ নিতে গিয়ে আহত ফিলিস্তিনিজিএইচএফ এপির প্রতিবেদনকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে এবং বলেছে, তাদের কাছে নিজেদের কার্যক্রম স্থলগুলোর নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জুনের শেষ দিকে ট্রাম্প প্রশাসন জিএইচএফের জন্য ৩ কোটি ডলার অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে ত্রাণ নিতে গিয়ে আহত হওয়া মজিদ আবু লাবান বলেন, ‘আমার সন্তানেরা টানা তিন দিন না খেয়ে ছিল। তাই আমি বাধ্য হয়ে ওই (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে গিয়েছিলাম।’
আরও পড়ুনআগামী সপ্তাহেই গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে পারে: ট্রাম্প০৫ জুলাই ২০২৫গাজায় নিহত ২৭গাজায় ২০ মাসের বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলছে। রোববার ভোরেও গাজাজুড়ে ইসরায়েলের হামলায় ২৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজা নগরীর কাছের এলাকা তুফাতে হামলায় তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আল-আহলি আরব হাসপাতাল। দক্ষিণের খান ইউনিসে একটি তাঁবুতে ইসরায়েলের ড্রোন হামলায় দুজন নিহত হন এবং আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। আগের দিন শনিবার ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৭৮ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে ইসরায়েল।
উত্তরে গাজা সিটির কাছের এলাকা শেখ রাদওয়ানে একটি বাড়িতে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন। বাস্তুহারা অনেক ফিলিস্তিনি ওই বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুনগাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত হামাস০৫ জুলাই ২০২৫