গড়াই নদীর এপারে রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার কসবামাজাইল ইউনিয়ন। ওপারে একদিকে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার গয়েশপুর, অন্যদিকে ঝিনাইদহের শৈলকুপার ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়ন। তিন জেলার মিলনস্থলে নির্মিত হচ্ছে ৬৫০ মিটার দীর্ঘ গড়াই সেতু। ২০২০ সালে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রথম মেয়াদে কাজ শেষ না হওয়ায় চলছে দ্বিতীয় মেয়াদ। এ মেয়াদেও কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এ ছাড়া সংযোগ সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়নি এখনও। স্থানীয়রা বলছেন, সেতুটি হলে বদলে যেতে পারে তিন জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের ভাগ্য। তারা চান দ্রুত এটির নির্মাণকাজ শেষ করা হোক। 
রাজবাড়ীর এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্পের (সিআইবিআরআর) আওতায় তিন জেলার মানুষের যোগাযোগ সুবিধার জন্য ৬৩ কোটি ৯১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা ব্যয়ে গড়াই নদীর ওপর সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ৩ জুন। সেতুটির নির্মাণকাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর হাবিবুল আলম ও এমএম বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারিং। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ৩ জুন। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের জন্য ৬ দশমিক ৩৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা প্রয়োজন। এর মধ্যে রাজবাড়ী অংশে ৩ দশমিক ৬৬৫ একর, ঝিনাইদহ অংশে ২ দশমিক ৫২ একর এবং মাগুরা অংশে দশমিক ১৮ একর।
সম্প্রতি কসবামাজাইল ইউনিয়নের নাদুরিয়ায় গিয়ে দেখা গেছে, নাদুরিয়া বাজার থেকে পূর্ব দিকে চলে গেছে একটি মেঠোপথ। পথটি যেখানে শেষ হয়েছে, সেখানে নির্মাণ হচ্ছে গড়াই সেতু। এ প্রান্তে রমজান আলী নামে এক কৃষকের বসতঘরের উপরে সেতুর এক প্রান্ত। অর্থাৎ এখান থেকেই সেতুর শুরু। সেতুর মাথা থেকে উত্তর দিকে রয়েছে আরও তিনজনের বসতঘর ও ফসলি জমি। যেখান দিয়ে সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক হওয়ার কথা, যা প্রায় এক হাজার মিটার লম্বা। অ্যাপ্রোচ সড়কটি পাংশা-লাঙ্গলবাদ সড়কে গিয়ে মেশার কথা। এ সড়কের কাজ এখনও শুরু হয়নি। দক্ষিণ দিকে গড়াই নদীর ওপর দিয়ে নির্মাণাধীন সেতুটি যেখানে গিয়ে শেষ হবে, তার এক দিকে মাগুরার শ্রীপুর; অন্যদিকে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার সীমান্ত। এ প্রান্তে সেতুটির বেশির ভাগ দৃশ্যমান হয়েছে। গড়াই নদী যেখান দিয়ে বয়ে গেছে সেখানে সেতু এখনও দৃশ্যমান হয়নি। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গড়াই সেতুর নির্মাণ শুরু হলেও জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি। রাজবাড়ীর পাংশা প্রান্তে অন্তত ২০ জনের জমি রয়েছে। তবে বেশি জমি রয়েছে মন্টু বিশ্বাস নামে একজন কৃষকের। 
মন্টু বিশ্বাস জানান, যেখানে গড়াই সেতু নির্মাণ হচ্ছে সেখানকার বেশির ভাগ জমি তাঁর। কিন্তু জমি এখনও অধিগ্রহণ হয়নি। তবে লিজের কিছু টাকা পেয়েছেন। কয়েকবার নোটিশ পেয়েছেন। জমির দাম সরকার কত টাকা নির্ধারণ করেছে, তাও তিনি জানেন না। অধিগ্রহণের টাকা না পেলে তারা অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ করতে দেবেন না। 
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী বিজন কৃষ্ণ বাড়ৈ বলেন, বছরে মাত্র ছয় মাস কাজ করা যায়, বর্ষায় ছয় মাস কাজ বন্ধ রাখতে হয়। গত সাড়ে চার বছরের মধ্যে আড়াই বছরই তারা কাজ করতে পারেননি। এসব কারণে সময়মতো কাজ সম্পন্ন করা যায়নি। প্রথম মেয়াদে কাজ সম্পন্ন করতে না পারায় চলতি বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭৯ থেকে ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তবে দ্বিতীয় মেয়াদেও কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এজন্য তৃতীয় একটি পক্ষের সঙ্গে তারা কথা বলছেন। যাদের সহযোগিতায় বাকি কাজ সম্পন্ন করা হবে। সেক্ষেত্রে ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে কাজ শেষ হতে পারে। সেতুর ৫২টি গার্ডারের মধ্যে ৩৬টি বসানো হয়েছে। স্প্যান ও পাইলের কাজ শেষ।  
রাজবাড়ী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ইউসুফ হোসেন বলেন, জমি অধিগ্রহণের জন্য সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করতে দেরি হচ্ছে। একবার অধিগ্রহণের সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বরাদ্দ না পাওয়ায় তা আর হয়নি। দ্বিতীয় দফায় অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে। মাগুরা ও ঝিনাইদহ অংশে জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অ য প র চ সড়ক গড় ই স ত ঝ ন ইদহ র জন য হওয় র দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

দলগুলো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে ব্যর্থ হলে সরকার নিজের মতো সিদ্ধান্ত নেবে

জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিক-নির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, তাহলে সরকার তার মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে।

আজ সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের ‘জরুরি সভায়’ এই সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পরে সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের সিদ্ধান্ত জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আদিলুর রহমান খান ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে বলা হয়েছে, সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাস হলে আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে।

তবে গণভোট কবে হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সরকার সিদ্ধান্ত নেবে গণভোট কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে, নাকি আগে হবে। এসব সুপারিশ জমা দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে আজ জরুরি বৈঠকে বসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ