ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা করেছিলেন, ২০২৬ সালের মধ্যে দেশকে মাওবাদী-মুক্ত করা হবে। তারপর থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাওবাদী দমন অভিযান শুরু হয়। সেই অভিযানের অংশ হিসাবেই বুধবার (২১ মে) ছত্তিশগড়ে নারায়ণপুরের অবুঝমাঢ়ে নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের গুলির লড়াই চলে।

দুর্গম পাহাড়ি এলাকা অবুঝমাঢ় মাওবাদীদের শক্ত ঘাঁটি বলেই পরিচিত। গোপন সূত্রে পুলিশের কাছে খবর ছিল, অবুঝমাঢ়ে লুকিয়ে রয়েছেন এক মাওবাদী কমান্ডার। প্রথমে তার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। তবে পরে জানা যায়, ওই কমান্ডার হলেন বাসভরাজু।

বুধবার ‘অপারেশন ব্ল্যাক ফরেস্ট’ অভিযানের পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, “দেশকে নকশালবাদ থেকে মুক্ত করতে এটি একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য। আজ ছত্তিশগড়ের নারায়ণপুরে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে ২৭ জন মাওবাদীর মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন সিপিআই-মাওবাদীর সাধারণ সম্পাদক নাম্বালা কেশব রাও ওরফে বাসভরাজু। নকশালবাদের বিরুদ্ধে তিন দশকের লড়াইয়ে এই প্রথম আমাদের বাহিনীর অভিযানে সাধারণ সম্পাদক পদমর্যাদার কোনো মাওবাদী নেতার মৃত্যু হয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ভারতের সঙ্গে কোনো চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়নি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

চিকেন নেক নিয়ে পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশ মমতার

মাওবাদী শীর্ষনেতার মৃত্যুর পরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সামাজিক যোগাযাগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘এই অসাধারণ সাফল্যের জন্য আমাদের বাহিনীর জন্য গর্ব হচ্ছে। আমাদের সরকার মাওবাদী আতঙ্ক দূর করতে এবং আমাদের জনগণের জন্য শান্তি ও অগ্রগতির জীবন নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’’

গত ২১ এপ্রিল থেকে কারেগুট্টা পাহাড় এলাকায় নতুন করে শুরু হয় মাওবাদী দমন অভিযান ‘অপারেশন ব্ল্যাক ফরেস্ট’। কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআরপিএফের জঙ্গলযুদ্ধে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কমান্ডো বাহিনী ‘কোবরা’র পাশাপাশিছত্তিশগড়ের সশস্ত্র পুলিশ ও ডিস্ট্রিক্ট রিজ়ার্ভ গার্ড বাহিনী, মহারাষ্ট্র পুলিশের সি-৬০, তেলঙ্গানা পুলিশের মাওবাদী দমন বাহিনী রয়েছে ওই দলে। মাঝে এক দিনের জন্য অভিযান বন্ধ রাখা হয়েছিল। তবে তারপর এই অভিযান ফের শুরু হয়। মাওবাদী পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মিকে নির্মূল করাই এই অভিযানের উদ্দেশ্য। গত মাসে নিরাপত্তা বাহিনী ৩১ জন মাওবাদী জঙ্গিকে হত্যা করতে সক্ষম হয়।

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

ভাবির দেওয়া তথ্যে ডাকাতির ছক, স্ত্রীসহ ডাকাত প্রধান গ্রেপ্তার

নড়াইলে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের প্রধান তুষার শেখ ওরফে গোল্ড হৃদয়কে (৩৬) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব ও পুলিশ। রবিবার (৬ জুলাই) ভোরের দিকে ঢাকার আজমপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তুষারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডাকাতি করা স্বর্ণালংকার উদ্ধার এবং তার দ্বিতীয় স্ত্রী রোকেয়া বেগম ওরফে জান্নাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

গতকাল রবিবার রাত ৮টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান লোহাগড়া থানার ওসি মো. শরিফুল ইসলাম।

গ্রেপ্তার তুষার শেখ লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়নের নোয়াও গ্রামের ওয়াদুদ শেখের ছেলে। রোকেয়া বেগম ওরফে জান্নাত খাগড়াছড়ির ইসলামপুরের নূর মাঝির মেয়ে। 

আরো পড়ুন:

মুরাদনগরে নারী নির্যাতন ও ভিডিও ছড়ানোর নেপথ্যে ‘দুই ভাইয়ের বিরোধ’

রাজশাহীতে অপহৃত কিশোরী উদ্ধার

ওসি মো. শরিফুল ইসলাম জানান, গত ২৬ জানুয়ারি লোহাগড়া উপজেলার ঘাঘা গ্রামে প্রবাসী বাবলু শেখের বাড়িতে ডাকাতি হয়। ডাকাত দল প্রবাসীর স্ত্রী শেফালী বেগমকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন লুট করে। এ ঘটনায় শেফালী বেগম বাদী হয়ে লোহাগড়া থানায় মামলা করেন।

শেফালী বেগমের বাড়িতে ডাকাতির চারদিন পর একই উপজেলার নোয়াগ্রামে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আবুল হাসান বিশ্বাসের বাড়িতে ডাকাতি হয়। সেখানে পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন লুট করে ডাকাত দল। পরে ভুক্তভোগীর পরিবার থানায় মামলা করেন।

তিনি জানান, দুইটি ডাকাতি মামলায় তদন্ত শুরু করে লোহাগড়া থানা পুলিশ। তদন্তে আন্তঃজেলা ডাকাল দলের প্রধান তুষার শেখ ওরফে গোল্ড হৃদয়ের সম্পৃক্ততা পায় পুলিশ। তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্যে অবস্থান শনাক্তের পর রবিবার ভোরের দিকে ঢাকার আজমপুর এলাকায় অভিযান চালায় র‍্যাব-৪ ও পুলিশ। সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তুষারকে।

তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে লোহাগড়া উপজেলার নোয়াগ্রামের তুষারের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে তুষারের দ্বিতীয় স্ত্রী রোকেয়া বেগম ওরফ জান্নাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডাকাতির সময় লুণ্ঠিত একটি স্বর্ণের চেইন ও কানের একজোড়া দুল উদ্ধার হয়।

তুষার শেখ গণমাধ্যমকে বলেন, “আদালতে মামলার হাজিরা দিতে গেলে সেখানে আসমা বেগম নামে এক ভাবির সঙ্গে পরিচয় হয়। ভাবি কয়েকটি বাড়ির তথ্য দেন। তার ফোন নম্বর রাখি এবং বাড়িগুলোতে নজর রাখতে বলি। সুযোগ বুঝে আসমার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘাঘা গ্রামে প্রাবাসী বাবলু শেখের বাড়িতে ডাকাতির পরিকল্পনা করি।” 

“রাতে বাড়ি থেকে রওনা দিয়ে পাঁচুড়িয়া গিয়ে নড়াগাতীর জাকির এবং ওদুদসহ কয়েকজন মিলে রাত ১টার দিকে প্রবাসীর বাড়িতে ঢুকি। সেখান থেকে টাকা, স্বর্ণ লুট করে নিয়ে আসি”, যোগ করন তিনি।

এই ডাকাত বলেন, “পরে নোয়াগ্রামে আসমার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শাকিল, রহমতকে সঙ্গে নিয়ে সাবেক সেনা সদস্যের বাড়িতে গ্রিল কেটে ঢুকি। সেখান থেকে নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও স্বর্ণ নিয়ে পালিয়ে যাই। পরে যার যার ভাগের টাকা বুঝিয়ে দেই।”

তুষার বলেন, “আসমাকে ১০ হাজার করে টাকা দিয়েছি। বাকিদের সমান ভাগ। স্বর্ণ ও গহনা বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করেছি। দুই ডাকাতির পর আর কোনো জায়গায় কিছু করিনি।”

লোহাগড়া থানার ওসি মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, “তুষার শেখের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলছে। তদন্তের স্বার্থে আপাতত সব প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধারে এবং ডাকাত দলের বাকি সদস্যদের ধরতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।”

ঢাকা/শরিফুল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ