বাজারে হরেক রকম দেশি মাছ, চাহিদা বেশি, দামও বেশি
Published: 7th, July 2025 GMT
এখন বর্ষাকাল। নতুন পানি এসেছে নদী-নালা, খাল-বিল, খেত, হাওর-বাঁওড়ে। মুক্ত জলাশয়ে এখন পাওয়া যাচ্ছে দারকিনা, পুঁটি, মলা, ঢেলা, চেলা, চান্দা, খলসে, গজার, বোয়াল, চিতল, বাগাড়, আইড়সহ নানা প্রজাতির মাছ। গ্রামগঞ্জ হয়ে এসব মাছ আসছে রাজধানীসহ বড় বড় শহরে।
গত দুদিন ঘুরে ঢাকার কারওয়ান বাজার, মিরপুর-৬ নম্বরের কাঁচাবাজার, মিরপুর-২ নম্বরের বড়বাগ বাজার ও হাতিরপুল বাজারেও মুক্ত জলাশয়ের এসব মাছ দেখা গেছে।
রাজধানীর খুচরায় মাছ বিক্রির বেশ বড় বাজার মিরপুর-৬ নম্বরের কাঁচাবাজার। গত শনিবার দেখা যায়, এই বাজারের হরিদাস রাজবংশীর দোকানে পুঁটি, বোয়াল, ট্যাংরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। পুঁটিগুলো টাটকা, আকারে বেশ বড়। তিনি প্রতি কেজি পুঁটি এক হাজার টাকা দর হাঁকাচ্ছিলেন। তাঁর দোকান থেকে আধা কেজি পুঁটি দর-কষাকষি করে ৪০০ টাকায় কেনেন ব্যবসায়ী মো.
শাহীন প্রথম আলোকে বলেন, সব সময় ভালো ট্যাংরা, পুঁটি, বোয়াল পাওয়া যায় না। এখন নদী, বিল, হাওরের মাছ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি অল্প অল্প করে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কিনলেন।
বর্ষার এই মৌসুমে দেশি মাছের প্রতি মানুষের আগ্রহও বেশি। মিরপুর-৬ নম্বরের কাঁচাবাজার থেকে বড় আকারে এক কেজি বেলে মাছ ১ হাজার ৩০০ টাকায় কেনেন বেসরকারি চাকরিজীবী মো. টিটু। এ ছাড়া এক হাজার টাকা কেজির চিংড়ি মাছ ৩০০ গ্রাম এবং ২ হাজার ৩০০ টাকা দরের ইলিশ ৭০০ গ্রাম কিনেছেন তিনি। টিটু প্রথম আলোকে বলেন, দেশি মাছের দাম অনেক বেশি। বাসার লোকজন বেলে মাছ খেতে চাচ্ছিল, দাম বেশি সত্ত্বেও এক কেজি কিনলেন।
এই বাজারের হরিদাস রাজবংশীর দোকানে পুঁটি, বোয়াল, ট্যাংরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। পুঁটিগুলো টাটকা, আকারে বেশ বড়। তিনি প্রতি কেজি পুঁটি এক হাজার টাকা দর হাঁকাচ্ছিলেন। তাঁর দোকান থেকে আধা কেজি পুঁটি দর-কষাকষি করে ৪০০ টাকায় কেনেন ব্যবসায়ী মো. শাহীন।বড় মাছের সমাহারবাজারে নানা প্রজাতির ছোট মাছের পাশাপাশি বড় মাছও লক্ষণীয়। কারওয়ান বাজারের বাচ্চু মিয়ার দোকানে অনেক মাছের মধ্যে একটি রুই মাছ পাওয়া গেল ১২ কেজি ওজনের। প্রতি কেজি ১ হাজার ৬০০ টাকা হিসেবে এই মাছটি ১৯ হাজার ২০০ টাকা হাঁকাচ্ছিলেন তিনি। তাঁর দোকানে চার কেজি ওজনের চিতলও ছিল। প্রতি কেজি এক হাজার টাকা করে চার হাজার টাকা দাম চান একটি চিতল মাছের। তাঁর কাছে ছয় কেজি ওজনের আইড় মাছও দেখা গেল। ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে এই আইড় মাছের দাম ৭ হাজার ২০০ টাকা বলে জানান তিনি। বাচ্চু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, নদীর মাছ এগুলো। সব সময় এমন মাছ পাওয়া যায় না। তাই দাম বেশি।
তাঁর পাশেই মাছ নিয়ে বসে ছিলেন মো. কামরুজ্জামান। সাত কেজি ওজনের একটি বাগাড় মাছের দাম চাইছিলেন তিনি সাত হাজার টাকা। কামরুজ্জামানের মতে, যাদের বড় পরিবার তারা বড় আকারের মাছ কেনে। নদ-নদীর এসব বড় মাছ খুব সুস্বাদু।
দাম বেশিমুক্ত জলাশয়ের মাছের দাম বেশ চড়া। বাজারভেদে ও আকারভেদে দেশীয় এসব দামের পার্থক্য হয়ে থাকে। ঢাকার চার বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি পুঁটি ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা, প্রতি কেজি ট্যাংরা ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, বেলে ৫০০ থেকে ১ হাজার ৩০০, বাইন ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০, চিংড়ি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৪০০, মলা ৬০০ টাকা, পিয়ালি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, গুলশা ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, বাতাসি ১ হাজার ২০০, কাচকি ৮০০, শোল ১ হাজার টাকা, মাগুর ৫০০ থেকে ৬০০, শিং ৪০০ থেকে ৫০০, পাবদা ৪০০, বাগাড় ১ হাজার টাকা, আইড় ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০, বোয়াল ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, চিতল ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা, বড় রুই ১ হাজার ৬০০ টাকা প্রতি কেজি।
কামরুজ্জামানের মতে, যাদের বড় পরিবার তারা বড় আকারের মাছ কেনে। নদ-নদীর এসব বড় মাছ খুব সুস্বাদু।মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে উৎপাদিত মোট মাছের ৫৯ শতাংশ চাষের। নদী, খাল, বিল, হাওরের মতো মুক্ত জলাশয়ের মাছ মোট উৎপাদনের মাত্র ১৫-১৭ শতাংশের মতো। অর্থাৎ মুক্ত জলাশয়ের মাছের উৎপাদন কম। তা ছাড়া মুক্ত জলাশয়ের মাছের স্বাদ বেশি। সরবরাহ কম এবং চাহিদা বেশি থাকায় মুক্ত জলাশয়ের মাছের দাম বেশি।
নতুন পানিতে এত মাছ আসে কোত্থেকেবর্ষার নতুন পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে খেতে, বিলে, হাওরে, নদীতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের দেখা মেলে। মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, মিঠাপানির মাছ প্রায় ২৬১ প্রজাতির। এর মধ্যে বর্ষায় ৩০-৩৫ প্রজাতির ছোট মাছ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে দেখা যায়।
ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মো. আবদুল ওহাব প্রথম আলোকে বলেন, বর্ষা শুরু হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দারকিনা, পুঁটি, মলা, ঢেলা, চেলা, টাকি, শোল, গজার, শিং, মাগুরহ অসংখ্য ছোট প্রজাতির মাছ দেখা যায়। শুষ্ক মৌসুমে অল্প পানিতে কিছু মাছ থাকে। অনেক মাছ বৃষ্টি আসার সঙ্গে সঙ্গে ডিম ছাড়ে। ডিম থেকে পোনা খুব দ্রুত বড় হয়। বৃষ্টির কারণে বিল, খাল ও নদীর সংযোগ হওয়ায় মাছ ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়। মাছের প্রাচুর্য বাড়ে।
সরকারের পদক্ষেপমুক্ত জলাশয়ের দেশীয় প্রজাতির মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম। মৎস্য অধিদপ্তরের মৎস্য পরিকল্পনা ও জরিপ বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. সাহেদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, মুক্ত জলাশয়ের মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়ে অধিদপ্তর কাজ করছে। দেশে বর্তমানে ৬৪৯টি অভয়াশ্রম রয়েছে। এর আওতায় নদী বা খাল-বিলের গভীর অংশে মাছ ধরা নিষেধ থাকে সারা বছর। সেখানে মাছ তৈরি হবে এবং বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে যায়। প্রকল্প নিয়ে এ ধরনের অভয়াশ্রমের সংখ্যা বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে।
বর্ষা শুরু হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দারকিনা, পুঁটি, মলা, ঢেলা, চেলা, টাকি, শোল, গজার, শিং, মাগুরহ অসংখ্য ছোট প্রজাতির মাছ দেখা যায়।ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মো. আবদুল ওহাবসাহেদ আলী বলেন, বিল নার্সারিও করা হচ্ছে। বিলের একটি গভীর অংশে রেণুপোনা ছাড়া হয়। তাদের খাদ্য দিয়ে দুই-তিন মাস মাছ লালন-পালন করা হয়। বর্ষার পানিতে তারা খাল-বিলে ছড়িয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে জুলাই-আগস্টে বিভিন্ন সরকারি জলাশয়ে পোনা ছাড়া হয়। হাওর এলাকায় যেসব শত শত বিল আছে, প্রতিটি হাওরের ১০ শতাংশ বিল ইজারামুক্ত রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যাতে পানি সেচে দিয়ে সব মাছ ধরে ফেলা না হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ১ হ জ র ২০০ ট ক এক হ জ র ট ক প রথম আল ক ৬০০ ট ক বড় ম ছ মৎস য র এসব র একট ওজন র উৎপ দ
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার টি-টোয়েন্টি দল: ফিরলেন শানাকা ও করুনারত্নে
বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য ১৭ জনের দল ঘোষণা করেছে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট (এসএলসি)। দলে ফিরেছেন সাবেক অধিনায়ক দাসুন শানাকা ও অলরাউন্ডার চামিকা করুনারত্নে।
সিরিজের সূচিসিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ১০ জুলাই পাল্লেকেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে, দ্বিতীয়টি ১৩ জুলাই ডাম্বুলায় এবং তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ ১৬ জুলাই কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে।
দলে রদবদলএক বছর পর জাতীয় দলে ফিরছেন দাসুন শানাকা, সর্বশেষ তিনি খেলেছিলেন ২০২৪ সালের জুলাই মাসে। তাঁর সঙ্গে বিতর্কিত ক্রিকেটার চামিকা করুনারত্নেও দলে ফিরেছেন। এই সিরিজে দলকে নেতৃত্ব দেবেন চারিত আসালাঙ্কা।
শানাকা ফেরায় দল থেকে বাদ পড়েছেন ভানুকা রাজাপক্ষে। নিউজিল্যান্ড সফরে তিনি একেবারেই ভালো খেলতে পারেননি, দুই ম্যাচে রান করেছিলেন মাত্র ১৪। ৩৩ বছর বয়সী এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকেই ছন্দহীন। ৮ ইনিংসে রান মাত্র ৬৭, গড় ১১.১৬।
বাংলাদেশ সিরিজের জন্য শ্রীলঙ্কার টি-টোয়েন্টি দলচারিত আসালাঙ্কা (অধিনায়ক), পাতুম নিশাঙ্কা, কুশল মেন্ডিস, দিনেশ চান্ডিমাল, কুশল পেরেরা, কামিন্দু মেন্ডিস, আভিষ্কা ফার্নান্ডো, দাসুন শানাকা, দুনিত ভেল্লালাগে, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, মহীশ তিকশানা, জেফ্রি ভ্যান্ডারসে, চামিকা করুনারত্নে, মাতিশা পাতিরানা, নুয়ান তুষারা, বিনুরা ফার্নান্ডো, ঈশান মালিঙ্গা।