এখন বর্ষাকাল। নতুন পানি এসেছে নদী-নালা, খাল-বিল, খেত, হাওর-বাঁওড়ে। মুক্ত জলাশয়ে এখন পাওয়া যাচ্ছে দারকিনা, পুঁটি, মলা, ঢেলা, চেলা, চান্দা, খলসে, গজার, বোয়াল, চিতল, বাগাড়, আইড়সহ নানা প্রজাতির মাছ। গ্রামগঞ্জ হয়ে এসব মাছ আসছে রাজধানীসহ বড় বড় শহরে।

গত দুদিন ঘুরে ঢাকার কারওয়ান বাজার, মিরপুর-৬ নম্বরের কাঁচাবাজার, মিরপুর-২ নম্বরের বড়বাগ বাজার ও হাতিরপুল বাজারেও মুক্ত জলাশয়ের এসব মাছ দেখা গেছে।

রাজধানীর খুচরায় মাছ বিক্রির বেশ বড় বাজার মিরপুর-৬ নম্বরের কাঁচাবাজার। গত শনিবার দেখা যায়, এই বাজারের হরিদাস রাজবংশীর দোকানে পুঁটি, বোয়াল, ট্যাংরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। পুঁটিগুলো টাটকা, আকারে বেশ বড়। তিনি প্রতি কেজি পুঁটি এক হাজার টাকা দর হাঁকাচ্ছিলেন। তাঁর দোকান থেকে আধা কেজি পুঁটি দর-কষাকষি করে ৪০০ টাকায় কেনেন ব্যবসায়ী মো.

শাহীন। ৬০০ টাকায় আধা কেজি ট্যাংরা, ১ হাজার টাকায় এক কেজি ওজনের একটি বোয়াল কেনেন তিনি।

সাত কেজি ওজনের একটি বাগাড় মাছের দাম চাইছিলেন তিনি সাত হাজার টাকা। কামরুজ্জামানের মতে, যাদের বড় পরিবার তারা বড় আকারের মাছ কেনে। নদ-নদীর এসব বড় মাছ খুব সুস্বাদু।

শাহীন প্রথম আলোকে বলেন, সব সময় ভালো ট্যাংরা, পুঁটি, বোয়াল পাওয়া যায় না। এখন নদী, বিল, হাওরের মাছ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি অল্প অল্প করে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কিনলেন।

বর্ষার এই মৌসুমে দেশি মাছের প্রতি মানুষের আগ্রহও বেশি। মিরপুর-৬ নম্বরের কাঁচাবাজার থেকে বড় আকারে এক কেজি বেলে মাছ ১ হাজার ৩০০ টাকায় কেনেন বেসরকারি চাকরিজীবী মো. টিটু। এ ছাড়া এক হাজার টাকা কেজির চিংড়ি মাছ ৩০০ গ্রাম এবং ২ হাজার ৩০০ টাকা দরের ইলিশ ৭০০ গ্রাম কিনেছেন তিনি। টিটু প্রথম আলোকে বলেন, দেশি মাছের দাম অনেক বেশি। বাসার লোকজন বেলে মাছ খেতে চাচ্ছিল, দাম বেশি সত্ত্বেও এক কেজি কিনলেন।

এই বাজারের হরিদাস রাজবংশীর দোকানে পুঁটি, বোয়াল, ট্যাংরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। পুঁটিগুলো টাটকা, আকারে বেশ বড়। তিনি প্রতি কেজি পুঁটি এক হাজার টাকা দর হাঁকাচ্ছিলেন। তাঁর দোকান থেকে আধা কেজি পুঁটি দর-কষাকষি করে ৪০০ টাকায় কেনেন ব্যবসায়ী মো. শাহীন।বড় মাছের সমাহার

বাজারে নানা প্রজাতির ছোট মাছের পাশাপাশি বড় মাছও লক্ষণীয়। কারওয়ান বাজারের বাচ্চু মিয়ার দোকানে অনেক মাছের মধ্যে একটি রুই মাছ পাওয়া গেল ১২ কেজি ওজনের। প্রতি কেজি ১ হাজার ৬০০ টাকা হিসেবে এই মাছটি ১৯ হাজার ২০০ টাকা হাঁকাচ্ছিলেন তিনি। তাঁর দোকানে চার কেজি ওজনের চিতলও ছিল। প্রতি কেজি এক হাজার টাকা করে চার হাজার টাকা দাম চান একটি চিতল মাছের। তাঁর কাছে ছয় কেজি ওজনের আইড় মাছও দেখা গেল। ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে এই আইড় মাছের দাম ৭ হাজার ২০০ টাকা বলে জানান তিনি। বাচ্চু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, নদীর মাছ এগুলো। সব সময় এমন মাছ পাওয়া যায় না। তাই দাম বেশি।

তাঁর পাশেই মাছ নিয়ে বসে ছিলেন মো. কামরুজ্জামান। সাত কেজি ওজনের একটি বাগাড় মাছের দাম চাইছিলেন তিনি সাত হাজার টাকা। কামরুজ্জামানের মতে, যাদের বড় পরিবার তারা বড় আকারের মাছ কেনে। নদ-নদীর এসব বড় মাছ খুব সুস্বাদু।

দাম বেশি

মুক্ত জলাশয়ের মাছের দাম বেশ চড়া। বাজারভেদে ও আকারভেদে দেশীয় এসব দামের পার্থক্য হয়ে থাকে। ঢাকার চার বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি পুঁটি ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা, প্রতি কেজি ট্যাংরা ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, বেলে ৫০০ থেকে ১ হাজার ৩০০, বাইন ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০, চিংড়ি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৪০০, মলা ৬০০ টাকা, পিয়ালি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, গুলশা ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, বাতাসি ১ হাজার ২০০, কাচকি ৮০০, শোল ১ হাজার টাকা, মাগুর ৫০০ থেকে ৬০০, শিং ৪০০ থেকে ৫০০, পাবদা ৪০০, বাগাড় ১ হাজার টাকা, আইড় ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০, বোয়াল ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, চিতল ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা, বড় রুই ১ হাজার ৬০০ টাকা প্রতি কেজি।

কামরুজ্জামানের মতে, যাদের বড় পরিবার তারা বড় আকারের মাছ কেনে। নদ-নদীর এসব বড় মাছ খুব সুস্বাদু।

মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে উৎপাদিত মোট মাছের ৫৯ শতাংশ চাষের। নদী, খাল, বিল, হাওরের মতো মুক্ত জলাশয়ের মাছ মোট উৎপাদনের মাত্র ১৫-১৭ শতাংশের মতো। অর্থাৎ মুক্ত জলাশয়ের মাছের উৎপাদন কম। তা ছাড়া মুক্ত জলাশয়ের মাছের স্বাদ বেশি। সরবরাহ কম এবং চাহিদা বেশি থাকায় মুক্ত জলাশয়ের মাছের দাম বেশি।

নতুন পানিতে এত মাছ আসে কোত্থেকে

বর্ষার নতুন পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে খেতে, বিলে, হাওরে, নদীতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের দেখা মেলে। মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, মিঠাপানির মাছ প্রায় ২৬১ প্রজাতির। এর মধ্যে বর্ষায় ৩০-৩৫ প্রজাতির ছোট মাছ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে দেখা যায়।

ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মো. আবদুল ওহাব প্রথম আলোকে বলেন, বর্ষা শুরু হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দারকিনা, পুঁটি, মলা, ঢেলা, চেলা, টাকি, শোল, গজার, শিং, মাগুরহ অসংখ্য ছোট প্রজাতির মাছ দেখা যায়। শুষ্ক মৌসুমে অল্প পানিতে কিছু মাছ থাকে। অনেক মাছ বৃষ্টি আসার সঙ্গে সঙ্গে ডিম ছাড়ে। ডিম থেকে পোনা খুব দ্রুত বড় হয়। বৃষ্টির কারণে বিল, খাল ও নদীর সংযোগ হওয়ায় মাছ ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়। মাছের প্রাচুর্য বাড়ে।

সরকারের পদক্ষেপ

মুক্ত জলাশয়ের দেশীয় প্রজাতির মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম। মৎস্য অধিদপ্তরের মৎস্য পরিকল্পনা ও জরিপ বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. সাহেদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, মুক্ত জলাশয়ের মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়ে অধিদপ্তর কাজ করছে। দেশে বর্তমানে ৬৪৯টি অভয়াশ্রম রয়েছে। এর আওতায় নদী বা খাল-বিলের গভীর অংশে মাছ ধরা নিষেধ থাকে সারা বছর। সেখানে মাছ তৈরি হবে এবং বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে যায়। প্রকল্প নিয়ে এ ধরনের অভয়াশ্রমের সংখ্যা বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে।

বর্ষা শুরু হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দারকিনা, পুঁটি, মলা, ঢেলা, চেলা, টাকি, শোল, গজার, শিং, মাগুরহ অসংখ্য ছোট প্রজাতির মাছ দেখা যায়।ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মো. আবদুল ওহাব

সাহেদ আলী বলেন, বিল নার্সারিও করা হচ্ছে। বিলের একটি গভীর অংশে রেণুপোনা ছাড়া হয়। তাদের খাদ্য দিয়ে দুই-তিন মাস মাছ লালন-পালন করা হয়। বর্ষার পানিতে তারা খাল-বিলে ছড়িয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে জুলাই-আগস্টে বিভিন্ন সরকারি জলাশয়ে পোনা ছাড়া হয়। হাওর এলাকায় যেসব শত শত বিল আছে, প্রতিটি হাওরের ১০ শতাংশ বিল ইজারামুক্ত রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যাতে পানি সেচে দিয়ে সব মাছ ধরে ফেলা না হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ১ হ জ র ২০০ ট ক এক হ জ র ট ক প রথম আল ক ৬০০ ট ক বড় ম ছ মৎস য র এসব র একট ওজন র উৎপ দ

এছাড়াও পড়ুন:

স্কুলে ভর্তিতে লটারি আজ, ফল দেখবেন যেভাবে

সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির ডিজিটাল লটারি আজ বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর ২০২৫) অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এ লটারি অনুষ্ঠান সকাল ১০টায় শুরু হবে। লটারিতে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে ভর্তি কমিটির সভা আহ্বান করে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শিক্ষার্থীদের ভর্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। এর সঙ্গে লটারির ফল দেখার প্রক্রিয়াও জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুনবাংলাদেশ–চীন–ভিয়েতনামে আইইএলটিএসের প্রশ্নফাঁস, ৮০ হাজার শিক্ষার্থীর ভুল ফল ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫

গতকাল মঙ্গলবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে সারা দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি (মহানগরী, জেলার সদর উপজেলা এবং অন্যান্য উপজেলা সদরে অবস্থিত) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ভর্তিপ্রক্রিয়া ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি (মহানগরী, জেলার সদর উপজেলা এবং অন্যান্য উপজেলা সদরে অবস্থিত) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (কেন্দ্রীয় ডিজিটাল লটারির অন্তর্ভুক্ত) ডিজিটাল লটারি অনুষ্ঠান আগামী বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট, সেগুনবাগিচা, ঢাকা-১০০০-এ অনুষ্ঠিত হবে।

আরও পড়ুন৬৫৫০২ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ এখন ১০ম গ্রেড১৩ ঘণ্টা আগে

এদিকে ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। লটারি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর প্রতিষ্ঠান প্রধান/অভিভাবক/শিক্ষার্থী লিংক থেকে তাদের নির্ধারিত আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে ফলাফল ডাউনলোড করতে পারবেন। ডাউনলোডকৃত ফলাফল প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠান প্রধানেরা সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা ভর্তি কমিটির সভাপতি বরাবর ই-মেইলে প্রেরণ করে মাউশিকে অবহিত করতে হবে। নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে ভর্তি কমিটির সভা আহ্বান করে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণপূর্বক শিক্ষার্থীদের ভর্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

মাউশি জানিয়েছে, এবার সরকারি-বেসরকারি ৪ হাজার ৪৮টি বিদ্যালয়ে আসন আছে ১১ লাখ ৯৩ হাজার ২৮১টি। কেন্দ্রীয়ভাবে লটারির মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। মোট আসনের মধ্যে ৩ হাজার ৩৬০টি বেসরকারি বিদ্যালয়ে আছে ১০ লাখ ৭২ হাজার ২৫১টি আসন। এ ছাড়া সরকারি ৬৮৮টি স্কুলে সিট রয়েছে ১ লাখ ২১ হাজার ৩০টি।

আরও পড়ুনশিক্ষক-কর্মচারীরা আইন পেশা, সাংবাদিকতাসহ একই সঙ্গে অন্য চাকরি করতে পারবেন না, নীতিমালা জারি০৯ ডিসেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ