প্রবাসী কিংবা সম্প্রতি দেশে ফেরা কোনো ব্যক্তি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও থানা বিএনপির পদের জন্য নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না—গত জুন মাসে এমন নির্দেশনা দেয় লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপি। তবে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের কমিটি গঠনে এ নির্দেশনা না মানার অভিযোগ উঠেছে। কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বিদেশফেরত দুই ব্যক্তি নির্বাচিত হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে দলের একটি অংশের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন তোফাজ্জল হোসেন ওরফে সবুজ। তিনি দীর্ঘদিন গ্রিসে ছিলেন। সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন আবুল কাশেম। তিনিও দুবাইপ্রবাসী। গত ২৭ জুন চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির কাউন্সিলে ভোটাভুটিতে দুজন নির্বাচিত হন।

দলের দুঃসময়ে যাঁরা মামলা-হামলা ও ঝুঁকি মাথায় নিয়ে মাঠে ছিলেন, তাঁরা এখন পদবঞ্চিত। বিদেশ থেকে ফিরে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে জেলা বিএনপির দেওয়া নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাইনি।ইমাম হোসেন, বিএনপিকর্মী, চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন–লক্ষ্মীপুর সদর

এর আগে ৮ জুন দলীয় নেতা নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের উদ্দেশে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে একটি বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি ও সদস্যসচিব সাহাব উদ্দিন স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনা বলা হয়, কোনো প্রবাসী কিংবা সাম্প্রতিক সময়ে প্রবাসফেরত কোনো ব্যক্তি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও থানা বিএনপির নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। একই দিনে জেলা বিএনপির দেওয়া পৃথক এক নির্দেশনায় বলা হয়, ৫ আগস্টের আগে যাঁরা প্রবাসে ছিলেন এবং দেশের মাটিতে দলীয় কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ছিলেন না, তাঁরা যেন নেতৃত্বে না আসেন।

স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপিতে সাধারণ সম্পাদক পদে তোফাজ্জল হোসেন ও মনির হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আবুল কাশেমসহ চারজন প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। তোফাজ্জল হোসেন ২০০৪ সালে গ্রিসে যান। গত বছরের ২৫ নভেম্বর তিনি দেশে ফেরেন। অন্যদিকে আবুল কাশেম দেশে ফিরেছেন গত বছরের ২২ আগস্ট। তিনি এর আগে পাঁচ বছর ধরে দুবাইয়ে ছিলেন।

তোফাজ্জল হোসেন ও আবুল কাশেম.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত ফ জ জল হ স ন ব এনপ র প রব স

এছাড়াও পড়ুন:

‘মূল হোতা’ গ্রেপ্তার না হওয়ায় চারদিক থেকে ‘খুনের হুমকি পাচ্ছে’ পরিবার

কুমিল্লার মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ নারীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার পর ‘মূল হোতা’ ও মামলার প্রধান আসামি আকুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ গ্রেপ্তার না হওয়ায় আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন বাদী। তিনি বলেছেন, চারদিক থেকে খুনের হুমকি আসায় আতঙ্কে বাড়িতে যেতে পারছেন না তিনি।

মামলাটির বাদী নিহত রোকসানা বেগমের মেয়ে রিক্তা আক্তার। আজ সোমবার দুপুরে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘খুনিরা চেয়েছিল আমাদের নির্বংশ করার জন্য। আমি খুনিদের প্রত্যেকের ফাঁসি চাই। শিমুল চেয়ারম্যান এখনো গ্রেপ্তার না হওয়ায় আমরা বেশি আতঙ্কে আছি। শিমুল চেয়ারম্যানই মূল হোতা। ঘটনার সময় সে খুনিদের বলেছে, “রুবির বংশ নির্বংশ কইরা দিতে হইবো। ২০টা মামলায়ও যদি তোরারে আসামি করে, আমি তোরারে ছাড়াইয়া আনমু।” শিমুল চেয়ারম্যান ঘটনার সময় নেতৃত্ব দিয়েছে। সে আসামিদের বলেছে, “সবডিরে পিটাইয়া আর কোপাইয়া মাইরালা।” আমরা এখন বাড়িতে যেতেও ভয় পাচ্ছি। চারদিক থেকে খুনের হুমকি আসছে।’

গত বৃহস্পতিবার উপজেলার কড়ইবাড়ি গ্রামে ‘মব’ সৃষ্টি করে একই পরিবারের তিনজনকে হত্যা করা হয়। তাঁরা হলেন কড়ইবাড়ি গ্রামের রোকসানা বেগম ওরফে রুবি (৫৩), তাঁর ছেলে রাসেল মিয়া (৩৫) ও মেয়ে তাসপিয়া আক্তার ওরফে জোনাকি (২৯)। এ ছাড়া গুরুতর আহত হয়েছেন রোকসানার আরেক মেয়ে রুমা আক্তার (২৭)।

এ ঘটনায় ৮ আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ওই আটজন বর্তমানে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। আজ দুপুরে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ১১ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক মমিনুল হকের আদালতে আসামিদের ৫ দিন করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করা হয়। তবে আদালত থেকে এখনো রিমান্ড শুনানির সময় জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. সাদেকুর রহমান।

আজ দুপুরে নিহত তাসপিয়া আক্তার ওরফে জোনাকির স্বামী মনির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘খুনিরা এখন চায় আমাকে আর রিক্তা আপাকে খুন করতে। তাঁরা জানে, আমাদের খুন করলে মামলা নিয়ে লড়ার মতো কেউ থাকবে না। আমরা নিজেদের জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছি। এই তিন খুনের মাস্টারমাইন্ড চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি। এ ছাড়া সব আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা না হলে আমাদের তারা যেকোনো সময় খুন করতে পারে।’

আরও পড়ুনআড়াই ঘণ্টা অপেক্ষার পর আর স্বীকারোক্তি দেননি ‘অন্যতম পরিকল্পনাকারী’২০ ঘণ্টা আগে

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাঙ্গরা বাজার থানার উপপরিদর্শক মো. আবু তাহের ভূঁইয়া আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিমুল চেয়ারম্যানসহ সব আসামি বর্তমানে পলাতক। আসামিদের ধরতে আমরা বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। আর বাদী ও তাঁর স্বজনেরা বর্তমানে বাড়িতে থাকছেন না। পুলিশ ঘটনার শুরু থেকেই নিহত ব্যক্তিদের বাড়িসহ এলাকায় নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে।’

আরও পড়ুনস্থানীয় ইউপি সদস্যের পরিকল্পনায় মুরাদনগরে ‘মব’ সৃষ্টি করে তিনজনকে হত্যা০৫ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ