লাশঘরের সামনে মায়ের আর্তনাদ, ছেলের রক্তাক্ত দেহ জড়িয়ে অঝোরে কাঁদলেন বাবা
Published: 7th, July 2025 GMT
‘ছেলে বিকেলে বলল, আম্মা, একটু পর বের হব, কাছেই যাব, মাগরিবের পর ফিরে আসব। আমি আসরের নামাজে বসলাম। নামাজ পড়তে পড়তে সে নেমে গেল। নামাজ শেষ করে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম, ছেলে বাইকের পেছনে উঠেছে। তখন বুঝলাম দূরে কোথাও যাচ্ছে। আমার তামিম...।’
রুমা আকতার আর কিছু বলতে পারলেন না। গতকাল রোববার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের মাইলের মাথা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় সত্যি সত্যিই দূরে চলে গেছে মায়ের আদরের ছেলে আতাউর রহমান তামিম। বন্ধু সাফায়েতের মোটরসাইকেলে চড়ে পতেঙ্গার দিকে যাচ্ছিল উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র আতাউর। সিএনজিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে পড়ে দুজন। ঘটনাস্থলেই মারা যায় তামিম। সামান্য আহত হয় সাফায়েত।
আতাউর রহমানরা দুই ভাই, দুই বোন। দুই বোনের পর আতাউরের জন্ম। ভাইদের মধ্যে বড় আতাউর, তাই পরিবারে তার জন্য ছিল বাড়তি স্নেহ। ছেলে ঘর থেকে বের হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই দুর্ঘটনায় পড়েছে বলে ফোন আসে চান্দগাঁওয়ের বাসায়। ওপার থেকে পুলিশ তাঁদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল যাওয়ার জন্য বলে। তখনো আতাউরের মৃত্যুর কথা ভাবেননি তার পরিবারের সদস্যরা। এক বুক আশা নিয়ে চমেক জরুরি বিভাগে ছুটলেন আতাউরের বাবা নিজামুল ইসলাম, মা রুমা আকতারসহ স্বজনেরা। সেখানে যে লাশঘরে তাঁদের ছেলে নীরব নিথর পড়ে রয়েছে।
আজ (রোববার) আশুরা। সবাই বাসায় ছিলাম। বিকেলে সে বের হলো। প্রতিদিন মাগরিবের সময় কিংবা মাগরিবের পরপর ফিরে আসে। আজ বের হওয়ার ঘণ্টাখানেকের ভেতর ফোন এল। ছেলে দুর্ঘটনায় পড়েছে। তারপর দৌড় দিলাম। আমার ছেলে আল্লাহর কাছে চলে গেছে।নিজামুল ইসলাম, আতাউরের বাবালাশঘরের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন রুমা। ‘আমার ছেলে, আমার তামিম’ বলে আর্তনাদ করছিলেন তিনি। নামাজের আগে ছেলের সঙ্গে বলা কথা যে শেষ কথা হলো সেটিই বারবার আওড়াচ্ছিলেন। আত্মীয়স্বজনেরা তাঁকে বারবার সান্ত্বনা দিচ্ছেন। কী আর সান্ত্বনা! সন্তানের পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার বিপরীতে সব সান্ত্বনাই যে অতি তুচ্ছ।
বাবা নিজামুল ইসলাম একবার লাশঘরে যান তো, একবার জরুরি বিভাগের সামনে। তাঁর পাঞ্জাবিতে রক্তের দাগ লেগে আছে। লাশঘরে ছেলেকে জড়িয়ে অঝোরে কেঁদেছেন তিনি। পাঞ্জাবির এ দাগ যেন তাঁর অতি আপন আজ। নিজামুল বললেন, ‘আজ (রোববার) আশুরা। সবাই বাসায় ছিলাম। বিকেলে সে বের হলো। প্রতিদিন মাগরিবের সময় কিংবা মাগরিবের পরপর ফিরে আসে। আজ বের হওয়ার ঘণ্টাখানেকের ভেতর ফোন এল। ছেলে দুর্ঘটনায় পড়েছে। তারপর দৌড় দিলাম। আমার ছেলে আল্লাহর কাছে চলে গেছে। কারও প্রতি আমার অভিযোগ নেই।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র ঘটন য় স ন ত বন র স মন
এছাড়াও পড়ুন:
চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড
চাকরিতে পুনর্বহালসহ তিন দফা দাবিতে কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নেওয়া চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের ওপর জলকামান নিক্ষেপ, লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ।
সোমবার (৭ জুলাই) সকালে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয় বিভিন্ন সময়ে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা। পরে সেখান থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় যাওয়ার চেষ্টা করেন তারা। পরে কাকরাইল মসজিদের সামনে পুলিশ তাদের বাধা দেয়।
তাদেরকে সরে যেতে ১০ মিনিটের আল্টিমেটাম দেয় পুলিশ। তারা পুলিশের আহ্বানে সাড়া না দিলে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেখান থেকে সরিয়ে দিতে জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পুলিশ। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
রমনা থানার পরিদর্শক আতিকুল ইসলাম বলেন, “সচিবালয়, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন ‘যমুনা’ ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় যেকোনো ধরনের সভা, সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করেছে ডিএমপি। এরপরও যমুনার উদ্দেশে পদযাত্রা করায় তাদের ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে।”
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা চাকরি ফেরত, বিজিবির নাম আবার বিডিআর করাসহ ৩ দাবিতে বেশ কিছু দিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন।
তাদের দাবিগুলো হলো—ক্ষতিপূরণ দিয়ে চাকরিতে পুনর্বহাল, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গঠিত স্বাধীন তদন্ত কমিশনের বিভিন্ন ধারা বাতিল এবং বিডিআর নাম পুনর্বহাল ও কারাগারে বন্দি থাকা সদস্যদের মুক্তি।
ঢাকা/রায়হান/ইভা