এশিয়ায় নয়, বিশ্বমঞ্চেও বাংলাদেশকে দেখতে চান ঋতুপর্ণারা
Published: 7th, July 2025 GMT
বাহরাইন, মিয়ানমার আর তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে দাপট দেখিয়ে এশিয়ান কাপে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। আর এই সাফল্যের বড় নায়িকা ঋতুপর্ণা চাকমা, তিন ম্যাচে ৫ গোল করে দলকে এনে দিয়েছেন ইতিহাস। রোববার দিবাগত রাতে ইতিহাস গড়া নারীদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। সেখানেই ঋতুপর্ণা বলেন, তাদের লক্ষ্য শুধু এশিয়ায় আটকে নেই। বিশ্ব ফুটবলেও বাংলাদেশের পতাকা ওড়াতে চান তারা।
রাত তিনটার কিছু পর সংবর্ধনার মঞ্চে পা রাখে আফিদা-ঋতুপর্ণারা। ক্লান্ত ভ্রমণসঙ্গী মেয়েরা হাতিরঝিল অ্যাম্ফিথিয়েটারে বাফুফের আয়োজনে ফুলেল অভ্যর্থনা পান। সেখানে বক্তব্য দিতে উঠে আবেগ ছুঁয়ে যায় ঋতুর কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘আজকের এই অর্জন আমাদের দলীয় প্রচেষ্টার ফল। ফুটবল কোনো ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের খেলা নয়। বাংলাদেশের মেয়েরা জানে কঠিন সময়েও লড়াই করতে হয়। আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখুন, আমরা কখনো নিরাশ করব না। আমরা শুধু এশিয়ায় নয়, বিশ্বমঞ্চেও বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে চাই।’
সফর আর ম্যাচ মিলিয়ে ব্যস্ত দিন শেষে দেশের মাটিতে পা রেখেই সেই রাতেই সংবর্ধনা নিতে হয়েছে দলকে। কারণ, পরদিন ভোরেই ভুটানে লিগ খেলতে যাওয়ার কথা কয়েকজনের। তাই এই মধ্যরাতের আয়োজন।
দলের অধিনায়ক আফঈদা খন্দকারও দিয়েছেন আবেগমাখা বার্তা, ‘এই সাফল্য একদিনে আসেনি। অনেক পরিশ্রম আর সময় লেগেছে। আজকের মুহূর্তটা কখনও ভুলবো না। আমাদের জন্য দোয়া করবেন, যেন সামনে আরও ভালো কিছু করতে পারি। শুধু এশিয়া নয়, বিশ্ব ফুটবলেও যেন আমরা দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারি।’
মেয়েদের এই ইতিহাস গড়ার কৃতিত্ব দিয়েছেন কোচ পিটার বাটলারও, ‘এটা শুধু কঠিন একটা সপ্তাহ নয়, বরং ৯ থেকে ১২ সপ্তাহের কঠোর পরিশ্রমের ফল। আমাদের পথটা সহজ ছিল না। অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে এই মেয়েরা অসম্ভবকে সম্ভব করেছে।’
সংবর্ধনার আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী, সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক, উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ, বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালসহ দলের সদস্যরা। সবাই একবাক্যে জানিয়েছেন, এই দল আমাদের গর্ব।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী
আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। আর প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প নিয়েও কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না।
রোববার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) ‘সংকটে তিস্তা নদী: সমাধানের পথ কী?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জমান। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের সঙ্গে কোনো পানিবণ্টন চুক্তি না থাকায় এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে আর বর্ষাকালে নিয়ন্ত্রণহীন পানিনির্গমনের ফলে বাংলাদেশ অংশে বন্যা ও ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে।
মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা তিস্তা সমস্যার সমাধানে ভারতের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পৃক্ততা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং প্রকল্পে স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণের ওপর জোর দেন। তাঁরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান।
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনো তথ্য নেই। বিগত বছরগুলোতে উন্নয়নের নামে দেশের নদীগুলোকে সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা আর সংকুচিত করার উন্নয়ন চাই না। নদীকে নদীর মতোই রাখতে হবে।’
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থকে উপেক্ষা করে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। যেসব প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদি, সেসব প্রকল্প গ্রহণের আগে অবশ্যই জনগণের মতামত নিতে হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী প্রকল্প নেওয়া উচিত। নদীকে রক্ষা করতে হবে কিন্তু তাকে খালে পরিণত করে নয়। এই প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।
বাপার প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাপা কখনো উন্নয়নবিরোধী নয়। আমরাও চাই দেশের উন্নয়ন হোক। কিন্তু সেই উন্নয়ন হতে হবে দেশের প্রাণপ্রকৃতি, পরিবেশ ও নদীকে ঠিক রেখে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে সংবেদনশীল হওয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।’
বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পরিবেশবিদ, গবেষক ও তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা অংশ নেন।