ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলা হলে তার দায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বর্তাবে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফারজান মনসুর আব্বাস আরাগচি।

ইসরাইল ইরানে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সিএনএন-এ প্রকাশিত এমন এক রিপোর্টের প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন।

ইরান এবং ইসরায়েলের নিকটতম মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুক্রবার (২৩ মে) ইতালির রোমে পঞ্চম দফার পারমাণবিক আলোচনায় বসবে। যেখানে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ নিয়ে গভীর মতবিরোধ রয়েছে। ওয়াশিংটনের মতে, এর ফলে পারমাণবিক বোমা প্রস্তুত করা হতে পারে। যদিও ইরান তা অস্বীকার করেছে।

এদিকে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে পাঠানো এক বার্তায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফারজান মনসুর আব্বাস বলেন, “ইসরায়েলের ইহুদিবাদী সরকারের যেকোনো দুঃসাহসিকতার বিরুদ্ধে ইরান সতর্ক রয়েছে এবং যেকোনো হুমকি বা বেআইনি কাজের প্রতি শক্ত জবাব দেবে।”

তিনি বলেন, “ইরান এই ধরনের যেকোনো আক্রমণে ওয়াশিংটনকে দায়ী করবে এবং হুমকি অব্যাহত থাকলে তেহরানকে তার পারমাণবিক স্থাপনা এবং উপকরণ রক্ষার জন্য ‘বিশেষ ব্যবস্থা’ গ্রহণ করতে হবে।”

যদিও আরাকচি কোন ধরনের পদক্ষেপ নেবে তা নির্দিষ্ট করে বলেননি।

ঢাকা/নাসিম/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

পাথর কোয়ারী থেকে নীলাদ্রি লেক

নিজস্ব স্বকীয়তা হারিয়ে ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্পের পাথর কোয়ারী পর্যটকদের কাছে এখন নীলাদ্রি লেক নামে পরিচিত। নীলাদ্রি লেকের অবস্থান ভারতের মেঘালয় সীমান্তবর্তী উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের ট্যাকেরঘাটে। প্রতি দিন শতশত পর্যটক ভিড় জমান এ লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে।

১৯৪০ সালে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলায় নির্মাণ করা হয় আসাম বাংলা সিমেন্ট ফ্যাক্টরি। ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে চুনাপাথর সংগ্রহ করে এর চাহিদা মেটানো হত। ১৯৪৭ সালে পাক-ভারত বিভাজনের পর বিভিন্ন সমস্যা ও ব্যয় বৃদ্ধির কারণে ভারত থেকে পাথর সংগ্রহ বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় সিমেন্ট ফ্যাক্টরিটি চালু রাখার জন্য চুনাপাথরের প্রয়োজনে তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তে ট্যাকেরঘাটে ৩২৭ একর ভূমির ওপর জরিপ চালিয়ে ১৯৬০ সালে চুনাপাথরের সন্ধান পায় বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ।

পরবর্তীতে ১৯৬৬ সাল থেকে খনিজ প্রকল্পটি চালু করা হয় এবং মাইনিংয়ের মাধ্যমে দীর্ঘদিন পাথর উত্তোলন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে প্রকল্পটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় কোয়ারী থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। ভারতের মেঘালয় সীমান্তে দৃষ্টিনন্দন স্থানে এ পাথর কোয়ারীটির অবস্থান হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে দর্শনার্থীদের কাছে অধরাই থেকে যায় এর সৌন্দর্য।

পরবর্তীতে ২০০০ সালের পরবর্তী দশকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এ লেকটির ছবি ভাইরাল হলে ভ্রমণ পিপাসীদের কাছে এ লেকটি দিন দিন আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। ভ্রমণ পিপাসীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ লেকটিকে বিভিন্ন নামে উপস্থাপন করে। ভ্রমণ বিষয়ক একাধিক পেইজে দেখা যায় বাংলার কাশ্মীর, ভূ-স্বর্গ, নীলাদ্রী লেকসহ ইত্যাদি নামে। এতে করে দিন দিন স্বকীয়তা হারিয়ে ট্যাকের ঘাট চুনাপাথর খনিজ প্রকল্পের পরিত্যক্ত পাথর কোয়ারী দেশের অধিকাংশ ভ্রমণ পিপাসীদের কাছে নীলাদ্রি লেক হিসেবে অধিক পরিচিতি লাভ করে।

ভাটি তাহিরপুর গ্রামের ভাই ভাই পরিবহনের সত্ত্বাধিকারী দিলশাদ মিয়া বলেন, তিনি দীর্ঘ দিন ধরে টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের গাইড হিসেবে কাজ করেন। প্রথম দিকে পর্যটকরা এসে যখন নীলাদ্রি লেকের কথা জানতে চাইতো তখন কিছু বলতে পারতাম না।

মোটরসাইকেল চালক মিয়া হোসেন বলেন, প্রথম প্রথম পর্যটকরা তাহিরপুর এসে যখন নীলাদ্রি লেক যাওয়ার কথা বলতো তখন মোটর সাইকেল চালকরা কিছুই বুঝত না এখন সবাই নীলাদ্রি লেক বললে ট্যাকের ঘাট চুনাপাথর খনিজ প্রকল্পের পাথর কোয়ারীতে বহন করে নিয়ে যায়।

এ লেকটির নাম নীলাদ্রি কবে কে কখন দিয়েছে তা বিস্তারিত কিছুই জানা যায়নি। তবে অনলাইন ভিত্তিক ট্রাভেল গ্রুপ বিন্দাসের এডমিন রেদওয়ান খান দাবি করেন, তিনিই ২০১৩ সালে সর্বপ্রথম এ লেকটির নাম নীলাদ্রি দিয়ে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেইজে একটি পোস্ট দেন। পরবর্তীতে একাধিক পত্রিকায় নীলাদ্রি লেক হিসেবে সংবাদটি ছাপা হওয়ায় লেকটি নীলাদ্রি পরিচিতি পায়।

ট্যাভেলার্স নেস্ট এডমিন খাইরুন আক্তার পিয়া বলেন, ট্যাকেরঘাট খনিজ প্রকল্পের পাথর কোয়ারীটি নীলাদ্রি লেক হিসেবে ভ্রমণ পিপাসীদের কাছে পরিচিত, ট্যাকেরঘাট খনিজ প্রকল্পের পাথর কোয়ারী বললে অনেক পর্যটক স্থানটি চিনে না।

ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনিজ প্রকল্প উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র বর্তমানে খাদ্য পরিদর্শক শরিফুল ইসলাম টিফিন বলেন, তার বাবার চাকরির সূত্রে তিনি ৩০ বছরের মত সময় পার করেছেন ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনিজ প্রকল্প এলাকায় তিনি এ লেকটিকে চিনতেন পাথর কোয়ারী হিসেবে। এখন অনেক বন্ধু বান্ধবদের কাছ থেকে চিনছেন নীলাদ্রি লেক হিসেবে। তার মতে পাথর কোয়ারী নামটি পরিবর্তন করে নীলাদ্রী নাম দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় নামটি ভাইরাল হওয়ার কারণে তার স্বকীয়তা হারাচ্ছে।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবুল হাসেম বলেন, শুধুমাত্র পর্যটকরাই এ লেকটিকে নীলাদ্রি নামে চেনেন স্থানীয়রা পাথর কোয়ারী ,নীলাদ্রি লেক ও শহীদ সিরাজ লেক বলে থাকে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ