তহবিল কাটছাঁটের পর যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আরও কঠোর হলো ট্রাম্প প্রশাসন। প্রশাসনের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে আর বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি করতে পারবে না দেশটির সবচেয়ে পুরোনো এ বিশ্ববিদ্যালয়। এতে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ ও ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে চলমান টানাপোড়েন আরও তীব্র হলো। এদিকে এ পদক্ষেপ অন্য মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্যও এক সতর্কবার্তা বলে জানাচ্ছেন শিক্ষাবিদেরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, হার্ভার্ড আর কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না। বর্তমানে যেসব বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি রয়েছেন, তাঁদের অবশ্যই স্থানান্তর করতে হবে। না হলে তাঁরা আইনগত বৈধতা হারাবেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন এ সিদ্ধান্তের বিষয় নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি লিখেছেন, আইন মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করতে দেওয়া হবে না। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য একটি সতর্কবার্তা।

গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসার পর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিলে কাটছাঁট শুরু করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, গত শিক্ষাবর্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় সাত হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিলেন। এটি গত শিক্ষাবর্ষে ভর্তি মোট শিক্ষার্থীর ২৭ দশমিক ২ শতাংশ।

সরকারের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতিতে হার্ভার্ড বলেছে, এটি বেআইনি পদক্ষেপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র জেসন নিউটন বলেন, ‘আমরা আমাদের সদস্যদের দিকনির্দেশনা ও সহায়তা দেওয়ার জন্য দ্রুত কাজ করছি। প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হার্ভার্ডের সদস্য ও আমাদের দেশের জন্য গুরুতর ক্ষতির হুমকি তৈরি করেছে।’

গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসার পর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিলে কাটছাঁট শুরু করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্ববিদ্যালয়টি বৈষম্যমূলক ‘গভীর সমস্যায়’ জর্জরিত উল্লেখ করে এরই মধ্যে তাদের ২৬৫ কোটি ডলারের তহবিল কমিয়েছে তাঁর প্রশাসন। বিষয়টি আদালতে তুলেছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য তহব ল

এছাড়াও পড়ুন:

হঠাৎ করে তালেবানকে কাছে টানছে কেন ভারত?

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে তালেবানের প্রথম শাসনামলে ভারত সরকার আফগানিস্তানের এই গোষ্ঠীটির সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল এবং তাদের শাসনকে স্বীকৃতি দেয়নি। ওই সময় তালেবানের পাশে ছিল পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরব। তবে সম্প্রতি ভারত তালেবানকে কাছে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তালেবান সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছে, সম্পর্ক জোরদার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ ভারতের এমন পরিবর্তন কেন?

আল-জাজিরা অনলাইন শুক্রবার জানিয়েছে, ১৯৯৬ সালের আগে ভারত সোভিয়েত-সমর্থিত মোহাম্মদ নাজিবুল্লাহর সরকারকে সমর্থন করেছিল। ১৯৯৬ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর কাবুলে তাদের দূতাবাস বন্ধ করে দেয় ভারত। তারা তালেবানকে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর একটি প্রক্সি হিসেবে দেখতে শুরু করে।

২০০১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে তালেবানদের উৎখাতের পর ভারত কাবুলে তাদের দূতাবাস পুনরায় চালু করে এবং আফগানিস্তানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার হয়ে ওঠে। আফগানিস্তানের অবকাঠামো, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং জল প্রকল্পে তিন বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করে ভারত।

২০২১ সালের আগস্টে তালেবান ক্ষমতায় ফিরে আসার পর নয়াদিল্লি তাদের দূতাবাস খালি করে এবং আবারো এই গোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তবে এবার ভারত প্রথমে গোপনে তালেবানের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ গড়ে তোলে এবং পরবর্তীতে এই সম্পর্কের কথা প্রকাশ করতে শুরু করে।

তালেবানের ক্ষমতায় ফিরে আসার এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ২০২২ সালের জুনে ভারত কাবুলে তার দূতাবাস পুনরায় চালু করে এবং এটি পরিচালনার জন্য ‘প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞদের’ একটি দল প্রেরণ করে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে তালেবান মুম্বাইয়ের আফগান কনস্যুলেটে একজন ভারপ্রাপ্ত কনসাল নিয়োগ করে। গত জানুয়ারিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি এবং তালেবানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি একটি বৈঠকের জন্য দুবাই যান।

পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি হওয়ার পাঁচ দিনের মাথায় ১৫ মে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর তার এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে জানালেন, “সন্ধ্যেবেলায় ভারপ্রাপ্ত আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে খুব ভালো কথাবার্তা হলো।”

তালেবান ইস্যুতে হঠাৎ ভারতের এমন পরিবর্তন কেন?

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের সিনিয়র ফেলো তানভি মদান বিবিসিকে জানিয়েছেন, এই যে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা টেলিফোনে নিজেদের মধ্যে কথা বললেন এর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা যদি কারো থেকে থাকে সেটি অবশ্যই পাকিস্তানের!

মূলত পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতিকেই যে ভারত কূটনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে চাইছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

পাকিস্তান বহুদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে আফগান তালেবানই আসলে ‘তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান’ বা টিটিপি-কে মদত দিয়ে আসছে এবং আফগানিস্তানের ভেতরে তালেবান নাকি তাদের জন্য বেশ কিছু মুক্তাঞ্চল পর্যন্ত বানিয়ে দিয়েছে। এই ইস্যুতে গত বছরের ডিসেম্বরে আফগানিস্তানের ভেতরে বেশ কিছু এলাকায় পাকিস্তান আকাশপথে হামলা পর্যন্ত চালিয়েছে, পাকতিকা প্রদেশে এমন একটি হামলায় প্রায় ৫০জন নিহতও হয়েছেন। পাল্টা জবাব দিয়েছে তালেবানও। এরপর থেকেই তালেবান ও পাকিস্তানের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। আর ইসলামাবাদ ও কাবুলের মধ্যে এই ক্রমবর্ধমান দূরত্বকেই ভারত কাজে লাগাতে চাইছে। এই মুহূর্তে ভারত চাচ্ছে আফগানিস্তানকে পাকিস্তানের চেয়ে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে।
 

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ