গাজীপুরের আপন দুই ভাই সৌদির দাম্মাম শহরের একটি ফ্ল্যাটে খুন হয়েছেন। বুধবার (২১ মে) দাম্মাম শহরের একটি বাসা থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করেছেন পুলিশ। এ খবর পেয়ে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। 

নিহতরা হলেন- কামরুজ্জামান কাকন (২৬) ও কামরুল ইসলাম সাগর (২২)। তারা উত্তর ভুরুলিয়ার আদর্শপাড়ার ব্যবসায়ী মো. মোশারফ হোসেন লম্বরির ছেলে। 

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, কামরুজ্জামান কাকন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে চাকরির খোঁজ করছিলেন। ঢাকার নয়াপল্টনের সামিয়া ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক বাহার উদ্দিন ২১ লাখ টাকা চুক্তিতে জব ভিসায় কাকনকে কানাডায় পাঠানোর প্রস্তাব দেন বাবা মোশারফ হোসেন লম্বরির কাছে। ৩ লাখ টাকা নিয়ে দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও তিনি কাকনকে কানাডা পাঠাতে পারেননি। 

পরে বাহার উদ্দিন ভালো বেতনে ছোট ছেলে সাগরকে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকায় সৌদি পাঠানোর প্রস্তাব দেন। রাজি হলে গত বছরের অক্টোবর মাসে সৌদি যায় সাগর। কিন্তু কাজের পরিবর্তে তাকে দাম্মামে একটি ঘরে আটকে রেখে আরো ৪ লাখ টাকা দাবি করেন বাবা মোশরফ হোসেনের কাছে। ছেলের কথা ভেবে আরো ৪ লাখ টাকা দিতে বাধ্য হন তিনি। 

টাকা নিয়েও ছেলেকে ভালো চাকরি না দিয়ে খাবার ডেলিভারির কাজ দিয়েছেন তারা। পরে কানাডা পাঠানো জন্য যে ৩ লাখ টাকা দিয়েছিলো তা ফেরত চাইলে বড় ছেলে কাকনসহ দুই ছেলেকে সৌদির মদিনা ইউনিভার্সিটিতে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রস্তাব দেন বাহার উদ্দিন। 

নতুন করে ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর কাকনকে সৌদি নিয়ে যান বাহার। সেখানে কাজ না দিয়ে দুই ভাইকে একটি ঘরে আটকে রাখেন। 

বিষয়টি জানার পর বাহার উদ্দিন কাকান ও সাগরের বাবা মোশারফ হোসেনকে উমরা ভিসায় সৌদি গিয়ে ছেলেদের দেখে আসার প্রস্তাব দেন। 

গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বাহার উদ্দিনের সাথে সৌদি আরব যান মোফারফ হোসেন। এসময় বাবা দুই ছেলেকে কাজের কথা জিজ্ঞেস করলে তারা জানান, তাদের খাবার ডেলিভারির কাজ দেওয়া হয়েছে। ঠিকমত খেতে দেওয়া হয় না। রাখা হয়েছে ছোট্ট ঘরে। 

২২ ডিসেম্বর তিনি দেশে ফেরেন। ছেলেদের কাগজপত্র ঠিক করার কথা বলে থেকে যান বাহার। আসার সময় বাহার একটি পলিথিন মোড়ানো ব্যাগ দিয়ে ঢাকার ঠিকানায় পৌঁছে দিতে বলেন মোশারফ হোসেনকে। ব্যাগে কী ছিল তিনি দেখেননি। 

সৌদি বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশ তল্লাশি করে একটি পুটলি উদ্ধার করে। পরে পুটলি রেখে তাকে ছেড়ে দেয়। তিনি ফিরে আসার পরদিন বাহার উদ্দিন বাংলাদেশে চলে আসেন। এসেই ব্যাগে থাকা পুটলি ফেরত চান। ইমিগ্রেশন পুলিশ রেখে দিয়েছে জানালে পুটলিতে ১৩ লাখ টাকার সোনা ছিল দাবি করে টাকার জন্য চাপ দেন। কয়েক দফা হুমকিও দেন। 

বলেন, টাকা না দিলে সৌদিতে থাকা ছেলেদের ক্ষতি হবে। এসব ঘটনায় তিনি নগরীর সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। 

সর্বশেষ ৯ মে একটি মাইক্রোবাসে করে ঢাকা থেকে একদল গুণ্ডা ও অস্ত্র নিয়ে মোশারফকে খুঁজতে থাকে। মুখ বেঁধে জিম্মি করে মোশারফরের বৃদ্ধ বাবা আবুল কাশেম লম্বরিকে তুলে নিয়ে যায় এবং দুই ছেলেকে হত্যার হুমকি দেয়। 

ঘটনার সময় মোশরফ বাড়িতে ছিলেন না। ৯৯৯ ফোন দিলে সদর থানা পুলিশ আবুল কাশেমকে উদ্ধার করে। 

মোশারফ হোসেন বলেন, “দুই ছেলে ছাড়া তার আর কোন সন্তান নেই। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই তাদের কানাডায় পাঠাতে চেয়েছিলাম। কানাডা পাঠানোর স্বপ্নই কাল হয়েছে তার পরিবারের। বুধবার রাত ১২টার পর এক বাংলাদেশি ফোন করে দুই ছেলের হত্যাকাণ্ডের খবর দিয়েছেন।” 

পরে সৌদি দূতাবাসের মাধ্যমে জানতে পারেন, মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে দুই ভাই। দুপুরের পর দরজার নিচ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়তে দেখে ফ্ল্যাট মালিক পুলিশে খবর দেয়। সিসি ফুটেজ দেখে মঞ্জু নামে বাংলাদেশি এক যুবকে পুলিশ সনাক্ত করেছেন। তাকে দিয়েই বাহার তার দুই সন্তানকে খুন করিয়েছেন বলে ধারণা মোশারফ হোসেনের। তিনি দ্রুত সন্তানদের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সাহায়তা কামনা করেন।

এদিকে দুই সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা ও স্বজনরা। পরিবারের দাবি পরিকল্পিতভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছে।

ঢাকা/রেজাউল/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র প রস ত ব দ ন পর ব র র পর ব

এছাড়াও পড়ুন:

জিসানের মুক্তির দাবিতে যুব ফেডারেশন’র মানববন্ধন

‘আদালত প্রাঙ্গনে মব নিয়ে সাংবাদিক, শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক সদস্য জান্নাতুল ফেরদৌস জিসানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাকে 'মিথ্যা' আখ্যা দিয়ে এবং তাকে গ্রেপ্তারের ঘটনায়, তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ যুব ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা। 

শুক্রবার (২৩ মে) বিকেলে জেলা যুব ফেডারেশন আহ্বায়ক সাকিব হোসেন হৃদয়ের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রাকিবুল ইসলাম ইফতির সঞ্চালনায় এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক জাহিদ সুজন।

মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন যুব নারায়ণগঞ্জ এর দপ্তর সম্পাদক হারুন অর রশিদ আকাশ, মুখপাত্র গাজি রাকিবুল ইসলাম হিমেল, শ্রমিক সংহতি নারায়ণগঞ্জ এর সদস্য সচিব মেহেদী হাসান উজ্জ্বল, ছাত্র ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ এর সভাপতি ফারহানা মানিক মুনা, যুব নারায়ণগঞ্জ এর যুগ্ম আহ্বায়ক রুবেল মোল্লা এবং গণসংহতি জেলার অন্যতম নেতা আলমগীর ইসলাম আলম সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

মানববন্ধনে জাহিদ সুজন বলেন, "নারায়ণগঞ্জের ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক সদস্য ও সাংবাদিক জান্নাতুল ফেরদৌস জিসানকে ভুয়া মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে।"

তিনি পুলিশকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, "আমরা পুলিশকে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম জিসানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগের প্রমাণ থাকলে হাজির করুন। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেননি।" 

তার দাবি, পুলিশ জানিয়েছে জিসানের গ্রেপ্তারের পেছনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ রয়েছে। সুজন অভিযোগ করেন, "স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে একই রকমভাবে প্রশাসনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করা হতো। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধ বনাম ইসলামের নামে ভূয়া দ্বন্দ্ব তৈরি করে মানুষকে বিভাজিত করে স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করেছিলো।"

জাহিদ সুজন দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, "আমরা গত ১৭ বছর লড়াই-সংগ্রাম করে বলেছি, বাংলাদেশের মানুষ যদি ঐক্যবদ্ধ না থাকে, তাহলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে।"

তিনি আন্তর্জাতিক প্রভাবের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, "একদিকে আমাদের পাশের দেশ ভারত অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের স্বার্থে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করছে।"

২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান প্রসঙ্গে আলমগীর হোসেন আলম বলেন, "২৪'এর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করতে চেয়েছিলাম। ন্যায় বিচার ব্যবস্থা দেখতে চেয়েছিলাম।"

তবে তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, "গণঅভ্যুত্থানের পরে আদালত-প্রশাসনে মব হাজির করে কিছু গোষ্ঠী তাদের স্বার্থ আদায় করেছে।"  

তিনি আরও দাবি করেন, "আমরা জানতে পেরেছি ১৮ নং ওয়ার্ডের এক মাদকাসক্ত ব্যক্তি বিএনপির নেতা বন্যায় ত্রাণ দুর্নীতি করেছিল, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কারণে জিসানকে প্রতিহিংসাবশত মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছে।"

এদিকে সভাপতির বক্তব্যে জেলা যুব ফেডারেশন আহ্বায়ক সাকিব হোসেন হৃদয় বলেন, আমরা আজকে এখানে দাঁড়িয়েছি জান্নাতুল ফেরদৌস জিসানের পক্ষে। জিসানকে যে কারণে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এটা একেবারে একটি বানোয়াট।

মেয়র আইভীকে গ্রেপ্তারের সময় জিসান নাকি পুলিশকে অবরুদ্ধ করেছে। আদতে সে সেদিন সেখানে ছিলোই না। 

প্রশানকে বলতে চাই আপনাদের উপর নাগরিকদের অনাস্থা তৈরী হয়েছিলো, কিন্তু আপনাদের ক্ষমা করে নাগরিকরা আপনাদের প্রতি আস্থা তৈরী করেছে।

আপনারা পুনরায় আবার অনাস্থা ফিরিয়ে আনবেন না। আবার যদি আনেন তাহলে মাফ তো পাবেই না। আমরা সাংবাদিক ও আমাদের সবযোদ্ধা জান্নাতুল ফেরদৌস জিসানের নিঃশর্ত মুক্তি চাই।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ