নদীভাঙনে বিলীনের পথে সিরাজগঞ্জের ৯ গ্রাম
Published: 26th, May 2025 GMT
সিরাজগঞ্জে কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে উজানের ঢল। এতে যমুনা নদীতে হু হু করে পানি বাড়ছে। করতোয়া, ফুলজোড় ও হুরাসাগরসহ অন্যান্য নদীর পানিও বাড়তে শুরু করেছে। ফলে, শুরু হয়েছে নদীভাঙন। প্রতিদিনই ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে।
দ্রুত পানি বাড়ার কারণে নদীভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে সিরাজগঞ্জ সদরসহ শাহজাদপুর উপজেলার নয়টি গ্রাম। ভাঙনের হুমকির মুখে আছে মসজিদ, মাদ্রাসা ও বিদ্যালয়সহ অনেক স্থাপনা। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে যেকোনো সময় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন অনেক মানুষ।
সোমবার (২৬ মে) খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের ভাটপিয়ারী এবং শাহজাদপুরের সোনাতনী ইউনিয়নের মাকড়া, ধীতপুর, কুড়সী, বারপাখিরা, বড় চামতারা ও বানতিয়ার, গালা ইউনিয়নের বৃ-হাতকোড়া, মোহনপুর গ্রাম ও কৈজুড়ি ইউনিয়নের চর-ঠুটিয়া গ্রামে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে এসব গ্রামের অধিকাংশ ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি, মসজিদ, মাদ্রাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
সোনাতনী ইউনিয়নের ধীতপুর গ্রামের মনোয়ারা বেগম (৬৫) বলেছেন, “আমার জীবদ্দশায় ১৪ বার নদীভাঙনের শিকার হয়ে বর্তমানে নিঃস্ব। অন্যের জমিতে ঘর তুলে বসবাস করছি। ভাঙতে ভাঙতে সেই ঘরের পাশে চলে এসেছে আগ্রাসী যমুনা নদী। এবার ভাঙলে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। পরিবার নিয়ে কোথায় থাকব, সেটা ভেবেই দিন-রাত পার করছি।” মনোয়ারা বেগমের মতো ধীতপুর গ্রামের অসংখ্য মানুষ নদীভাঙনের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
একই গ্রামের গ্রামের কালু মোল্লা (৭৫) বলেছেন, “১৯৮৮ সাল থেকে সোনাতনী ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামে নদীভাঙন চলছে। এ পর্যন্ত ১১ বার ভাঙনের কবলে পরেছি। ভাঙনে বাড়ি, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। সব হারিয়ে অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে ঘর তুলে পরিবার নিয়ে বাস করছি। এ চরের জমিতে পটল, বেগুন, ধান, বাদাম, মাসকলাই, বাঙ্গি, সবজি, ধনিয়াসহ সব ধরনের ফসলের ভালো ফলন হয়। এসব ফসল ফলিয়ে ভালোই দিন কাটছিল আমাদের। কিন্তু, এসব জমি ও ভিটা ভাঙনের মুখে পড়েছে। এ ভিটা ভেঙে গেলে কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেব, কী খাব, তা নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় পড়েছি।”
কৃষক ফজর আলী আক্ষেপ করে বলেন, “নদী ভাঙতে ভাঙতে সব শেষ হয়ে গেলেও সরকার কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। আমরা যুবক থেকে বুড়ো হয়ে গেছি, ভাঙন রোধে শুধুই আশ্বাস পেয়েছি, কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
কুড়সি গ্রামের মাওলানা নজরুল ইসলাম বলেছেন, “সোনাতনী ইউনিয়নের মাটি সোনার মতোই উর্বর। এখানে যে ফসলই বোনা হয়, ব্যাপক ফলন হয়। যমুনা নদীর ভাঙনে গরুর হাট, মসজিদ, মাদ্রাসা, বাড়ি, ফসলি জমি সবই হারিয়ে যাচ্ছে। এতে চরের মানুষগুলো দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। ভাঙন রোধে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ইউনিয়নটি মানচিত্র থেকেই হারিয়ে যাবে।”
স্থানীয়রা জানান, গত এক বছরে সোনাতনী ইউনিয়নের শ্রীপুর থেকে বারোপাখিয়া পর্যন্ত পাঁচ-ছয়টি গ্রামের তিন শতাধিক বাড়ি যমুনা নদীতে চলে গেছে। ভাঙন রোধে এখানে দ্রুত বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
কথা হয় সদর উপজেলার ভাটপিয়ারী গ্রামের আমজাদ আলী, আব্দুল হামিদ, হাবিবুর রহমানসহ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে। তারা বলেন, যমুনার ভাঙনে ভাটপিয়ারী গ্রামের পুরোটাই নদীগর্ভে চলে গেছে। দফায় দফায় বাড়ি-ঘর ভেঙে এখানকার কৃষকরা ওয়াপদা’র পাশে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছেন। কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা ভাঙনে কৃষকরা আতঙ্কে আছেন। ইতোমধ্যে বেশকিছু কৃষিজমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন রোধ না হলে শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ শতাধিক বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হবে।
শাহজাদপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা জেরিন আহমেদ বলেন, দীর্ঘ ছয় বছর ধরে তিনটি ইউনিয়নের গ্রামগুলোর কমপক্ষে ২৮০ হেক্টর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এর বিপরীত পাশে ৯০ হেক্টরের বেশি জমি জেগে উঠেছে। যেসব ফসলি জমি নতুন করে নদীগর্ভে যাচ্ছে, সেসব জমির মালিক তাৎক্ষণিকভাবে কিছুটা হলেও ক্ষতির মধ্যে পড়ছেন।
শাহজাদপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান বলেন, নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে সোনাতনী ইউনিয়নসহ চরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.
চরাঞ্চলের উন্নয়নে একটি প্রকল্প চালু হওয়ার কথা রয়েছে, জানিয়ে তিনি বলেন, প্রকল্পটি চালু হলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
ঢাকা/অদিত্য/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র উপজ ল র স র জগঞ জ ব ল ন হয় ব যবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
ডিবি পরিচয়ে যুবলীগ নেতাকে অপহরণ, উদ্ধার করল পুলিশ
ঝিনাইদহের শৈলকুপা থেকে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্য পরিচয়ে যুবলীগের এক নেতাকে অপহরণ করেছিল দুর্বৃত্তরা। শনিবার রাতে তাকে তুলে নেওয়া হয়। আজ রোববার ভোরে পুলিশের একটি দল তাকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে উদ্ধার করে। এ সময় চারজনকে আটক করা হয়।
ভুক্তভোগী শামীম হোসেন মোল্লা শৈলকুপার গাড়াগঞ্জের বাসিন্দা। তিনি উপজেলা যুবলীগের সভাপতি।
শামীম হোসেনের ভাষ্য, ‘শনিবার রাতে কুষ্টিয়া থেকে কাজ শেষে আমি শৈলকুপার গাড়াগঞ্জ নিজের গ্যাস পাম্পে বসে ছিলাম। রাত ১১টার দিকে দুটি মাইক্রোবাসে কয়েকজন লোক সাদা পোশাকে এসে ডিবি পরিচয়ে আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়। গাড়িতে বিভিন্ন পথ ঘুরে তারা অচেনা জায়গায় ফেলে চলে যায়। এর মধ্যে তারা আমার পরিবারের কাছে ৫০ লাখ টাকা দাবি করে। পরে পুলিশের সহযোগিতায় আমি বাড়ি ফিরেছি।’
শৈলকুপা থানার ওসি মাসুম খানের ভাষ্য, শনিবার রাতে যুবলীগ নেতা শামীম মোল্লাকে তার সিএনজি পাম্প থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যায়। পরে তার বাবা সাব্দার হোসেন মোল্লার কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করে চক্রটি। বিষয়টি জানার পর জেলা পুলিশের একাধিক দল তাকে উদ্ধারে অভিযান শুরু করে। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে রোববার ভোরে তাকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় চার অপহরণকারীকে আটক করা হয়।