বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নাফ নদে অবস্থিত শাহপরীর দ্বীপের জেটিঘাট। এখান দিয়ে যাতায়াতকারী জনসাধারণ বা জেলে নৌকা থেকে নিয়মিত টোল আদায় করা হয়। এ জন্য জেটিঘাটের ইজারা নিতে হয় জেলা পরিষদ থেকে। চলতি বছরের ইজারা না হলেও একটি চক্র তিন মাস ধরে টোল আদায় করে টাকা লুটপাট চালাচ্ছে। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কক্সবাজারের এক জামায়াত নেতা। 
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ৫৫০ মিটার দীর্ঘ জেটিঘাটটি ২ কোটি ১০ লাখ টাকায় নির্মাণ করে। ২০০৬ সালে উদ্বোধনের পর থেকে সেটি জেলা পরিষদ প্রতি বছর (বাংলা সন ধরে) ইজারা দিয়ে আসছে। কিন্তু মামলাসংক্রান্ত জটিলতার কারণে জেটির চলতি বছর ইজারা না দিয়ে খাস আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা পরিষদ। 
এই সুযোগে জেলা পরিষদ কার্যালয়ের পিয়ন মোহাম্মদ শাহ আলমকে ইজারাদার সাজিয়ে একটি চক্র টোল আদায় শুরু করে। সম্প্রতি শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে চার-পাঁচজন ব্যক্তিকে চেয়ার-টেবিল বসিয়ে টোল আদায় করতে দেখা দেয়। সেই রসিদেও ইজারাদার হিসেবে শাহ আলমের নাম আছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুরো বিষয়টিই লোক দেখানো। ওই ঘাটের কোনো ইজারা দেওয়া হয়নি। কিন্তু কক্সবাজার পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি আনোয়ার হোসেন ওই ঘাট নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। তিনি স্থানীয় বাসিন্দা মো.

ইউনুচ ওরফে বাইলার মাধ্যমে সেখান থেকে টোল আদায় শুরু করেন। এপ্রিলের (বৈশাখের শুরু) মাঝামাঝি থেকে এই চক্রটি জেটিতে আসা প্রতিজনের কাছ থেকে ১০-২০ টাকা করে আদায় করছে। এ ছাড়া জেটির অদূরে অবস্থিত জেলেপল্লির জালিয়াপাড়া ঘাট ও দক্ষিণ জালিয়াপাড়া ঘাট থেকেও প্রতি ড্রাম মাছ থেকে তারা ১০০ টাকা করে আদায় করছে বলে জেলেরা জানিয়েছেন। 
একাধিক জেলের ভাষ্য, জামায়াত নেতা আনোয়ার হোসেন জেলা পরিষদ থেকে ঘাটটি ইজারা নিয়েছেন জানিয়ে তিনটি ঘাট আলাদাভাবে বিক্রি করে দেন। তারাই এসব ঘাট থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করছে। তিন মাসের মাথায় তারা জানতে পেরেছেন, শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাট ইজারা দেয়নি জেলা পরিষদ। কাদের প্রশ্রয়ে এভাবে টাকা আদায় চলছে জানতে চান জেলেরা। 
এ বিষয়ে ইউনুচ বাইলা বলেন, ‘আমি কোনো ইজারাদার নই। ফলে কাউকে ইজারা দেওয়ার প্রশ্নও আসে না। আমি এক নেতার অধীনে টোল আদায় করছি। এর বাইরে কোনো কিছুতে জড়িত নই।’
শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটের ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গফুর আলম বলেন, ‘শুধু আমার ঘাটেই মাছ ধরার ট্রলার আছে প্রায় ১০০টি। অধিকাংশ ট্রলার মালিকের সঙ্গে এক বছরের জন্য ট্রলারপ্রতি ৪ হাজার টাকা করে টোল আদায়ে মৌখিকভাবে চুক্তি করেছেন মো. ইউনুছ ওরফে বাইলা। অনেকে টাকা দিয়েছেন, অনেকে দেননি।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, সম্প্রতি টোল আদায় নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। সেটি সমাধানে ইজারাদার দাবিদার আনোয়ারকে নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানে সমাধান না হওয়ায় বিষয়টি ইউএনওর নজরে আনেন। 
আনোয়ার হোসেন শুরুতে জেলা পরিষদ থেকে জেটিঘাট ইজারা নেওয়া দাবি করলেও পরে সেই বক্তব্য থেকে সরে যান। তিনি দাবি করেন, খাস আদায়ের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁকে। তারা জেটিঘাট বা আশপাশের কোনো ঘাট অন্য কাউকে ইজারা দেননি বা বিক্রি করেনি। তাঁর লোকজনই সেখানে খাস আদায় করছে। পরবর্তীকালে সেই টাকা জেলা পরিষদে জমা দেওয়া হবে। 
টেকনাফের ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অবৈধভাবে কেউ যদি চাঁদা বা খাস আদায় করে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ-আল-মারুফ বলেন, শাহপরীর জেটিঘাট ইজারা হয়নি। তাই খাস আদায় চলছে। তাঁর কার্যালয়ের পিয়ন মোহাম্মদ শাহ আলমকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কোনোভাবে অন্য কারও ইজারা দেওয়া সুযোগ নেই। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর যটক শ হপর র দ ব প ইজ র দ র

এছাড়াও পড়ুন:

রাউজানে যুবদল কর্মীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তাঁর সহযোগী গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামের রাউজানে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে যুবদল কর্মী আলমগীর আলমকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় এক যুবককে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার যুবক আলমগীর আলমের সহযোগী ছিলেন। গতকাল শনিবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার যুবকের নাম মুহাম্মদ রাজু (২৮)। তিনি পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রহমতপাড়ার মৃত নুর নবীর ছেলে। পুলিশ জানিয়েছে, আলমগীর আলমকে গুলি করার সময় তাঁর পেছনে একটি মোটরসাইকেলে ছিলেন মুহাম্মদ রাজু।

গত ২৫ অক্টোবর বিকেলে রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চারাবটতল বাজারসংলগ্ন কায়কোবাদ জামে মসজিদের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় আলমকে। এ সময় তাঁর স্ত্রী ও সন্তান পেছনে একটি অটোরিকশায় ছিলেন। পাশের গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে দাওয়াত খেয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন তাঁরা। আলমের বাড়ি পার্শ্ববর্তী ঢালারমুখ এলাকায়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কবরস্থানে লুকিয়ে থাকা আটজন অস্ত্রধারী আলমকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এ সময় মোটরসাইকেলে থাকা আলম ঘটনাস্থলেই নিহত হন। অস্ত্রধারীরা তাঁকে হত্যার পর রাঙামাটি সড়ক দিয়ে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে পালিয়ে গেছেন। নিহত আলমের শরীরে পাঁচটি গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়।

রাউজান থানা-পুলিশ জানায়, আলম নিহত হওয়ার দুই দিন পর তাঁর বাবা আবদুস সাত্তার বাদী হয়ে ২১ জনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৬ থেকে ৭ জনকে আসামি করে রাউজান থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারে রাজুর নাম নেই। তবে ঘটনার তদন্তে হত্যাকাণ্ডে তাঁর সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে।

এর আগে এ মামলায় এজাহারভুক্ত দুই আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁরা হলেন রাউজান কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ রাসেল খান (৩২) ও পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রহমতপাড়ার বাসিন্দা ও যুবদল কর্মী মুহাম্মদ হৃদয় (৩০)।

রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, যখন অস্ত্রধারীরা আলমগীর আলমকে গুলি করার জন্য কবরস্থানে লুকিয়ে ছিলেন, তখন আলমগীর আলমের পেছনে একটি মোটরসাইকেলে ছিলেন রাজু। তিনি আলমগীরের সহযোগী হিসেবে পরিচিত। তবে হত্যাকাণ্ডে তাঁর সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে। রোববার তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অস্ত্র-মাদকসহ বিভিন্ন মামলায় ১২ বছর কারাগারে ছিলেন আলম। তিনি গত বছরের ৫ আগস্টের পর জামিনে মুক্তি পান। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেখ রেহানার বিরুদ্ধে করা প্লট দুর্নীতির তিন মামলায় রাজউকের সদস্য খুরশীদ গ্রেপ্তার
  • রাউজানে যুবদল কর্মীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তাঁর সহযোগী গ্রেপ্তার