কোরবানির মাংস সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয়: এক ভাগ পরিবারের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়-বন্ধুদের জন্য এবং এক ভাগ গরিব-দুস্থদের জন্য। অনেকে ভাবেন, কোরবানির মাংস ঈদের পরে বা তিন দিনের বেশি সময় ধরে সংরক্ষণ করা বৈধ নয়। ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী, কোরবানির মাংস তিন দিনের বেশি সময় ধরেও সংরক্ষণ করা জায়েজ। ফিলিস্তিনের আল-কুদস বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি ফিকহের অধ্যাপক হুসাম আল-দিন ইবনে মুসা আফানা বলেছেন, ‘বেশির ভাগ আলেমের মতে, কোরবানির মাংস তিন দিনের বেশি সময় ধরে সংরক্ষণ করা বৈধ।’ এই মতামতের ভিত্তি হলো রাসুলুল্লাহ (সা.

)-এর হাদিস, যেখানে প্রাথমিকভাবে মাংস সংরক্ষণের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও পরে তা রহিত করা হয়েছে।

হাদিসে কী আছে

কোরবানির মাংস সংরক্ষণসংক্রান্ত কয়েকটি বিশুদ্ধ হাদিস: আয়েশা (রা.) বলেন, ‘ঈদুল আজহার সময় মরুভূমির দরিদ্র মানুষ শহরে আসত। তখন রাসুল (সা.) বলেছিলেন, ‘তিন দিনের জন্য প্রয়োজনীয় মাংস রাখো, বাকিটা দান করে দাও।’ পরে মুসলিমরা বললেন, ‘আল্লাহর রাসুল, লোকেরা তাদের কোরবানির পশুর চামড়া দিয়ে মশক তৈরি করে এবং মাংসের চর্বি গলায়।’ তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কেন?’ তারা বললেন, ‘আপনি তো তিন দিনের বেশি মাংস খাওয়া নিষেধ করেছেন।’ তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘আমি এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলাম কারণ সেই সময় দরিদ্ররা এসেছিল। এখন তোমরা খেতে পারো, সংরক্ষণ করতে পারো এবং দান করতে পারো।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৯৭১)।

আরও পড়ুনকাবা শরিফের মাতাফে মার্বেল পাথরের অপূর্ব কাহিনি১৮ জুন ২০২৪রাসুল (সা.) বললেন, ‘আমি এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলাম কারণ সেই সময় দরিদ্ররা এসেছিল। এখন তোমরা খেতে পারো, সংরক্ষণ করতে পারো এবং দান করতে পারো।’(সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৯৭১)

সালামা ইবনে আল-আকওয়া (রা.)-এর বর্ণিত আরেকটি হাদিসে আছে: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরবানির পশু জবাই করেছে, সে যেন তিন দিনের বেশি তার মাংস রাখা থেকে বিরত থাকে।’ পরের বছর মুসলিমরা জিজ্ঞাসা করলেন, আল্লাহর রাসুল, আমরা কি গত বছরের মতো করব?’ তিনি বললেন, ‘না। সেই বছর মানুষের কষ্ট ছিল, তাই আমি চেয়েছিলাম তোমরা (অভাবীদের) সাহায্য করো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,৫৬৯)

আবু সাঈদ আল-খুদরি (রা.) বর্ণিত একটি হাদিসে আছে: রাসুল (সা.) বলেছিলেন, ‘হে মদিনার অধিবাসীরা, কোরবানির মাংস তিন দিনের বেশি খেয়ো না।’ পরে মুসলিমরা অভিযোগ করলেন যে তাদের পরিবারে শিশু ও সেবকেরা আছে, যাদের খাওয়ানো প্রয়োজন। তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘খাও, অন্যদের খাওয়াও এবং সংরক্ষণ করো।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৯৭২)

ওপরের হাদিসের ভিত্তিতে বেশির ভাগ আলেম (হানাফি, শাফিঈ, হানবালি ও মালিকি মাজহাবের পণ্ডিতেরা) একমত যে কোরবানির মাংস তিন দিনের বেশি সংরক্ষণ করা জায়েজ। এই অনুমতি রাসুল (সা.)-এর পরবর্তী নির্দেশনার ওপর ভিত্তি করে, যেখানে তিনি মাংস সংরক্ষণের অনুমোদন দিয়েছেন। আধুনিক সময়ে ফ্রিজার ও সংরক্ষণ প্রযুক্তির সুবিধার কারণে মাংস দীর্ঘদিন নিরাপদে রাখা সম্ভব এবং এটি শরিয়াহর দৃষ্টিকোণে বৈধ। 

আরও পড়ুনমদিনায় গাড়ি চালকেরা ডাকেন জিয়ারা, জিয়ারা...২৩ জুন ২০২৪বেশির ভাগ আলেম একমত যে কোরবানির মাংস তিন দিনের বেশি সংরক্ষণ করা জায়েজ। এই অনুমতি রাসুল (সা.)-এর পরবর্তী নির্দেশনার ওপর ভিত্তি করে, যেখানে তিনি মাংস সংরক্ষণের অনুমোদন দিয়েছেন।

সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ব্যবহারিক পরামর্শ

 কোরবানির মাংস সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কিছু ব্যবহারিক বিষয় মাথায় রাখা উচিত:

 ১. নিয়তের বিশুদ্ধতা: মাংস সংরক্ষণের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত পরিবারের প্রয়োজন মেটানো বা পরে গরিবদের মধ্যে বিতরণ করা। এটি শুধু অপচয় বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যের জন্য হওয়া উচিত নয়।

 ২. স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা: মাংস সঠিকভাবে পরিষ্কার করে, সঠিক তাপমাত্রায় ফ্রিজে বা ফ্রিজারে সংরক্ষণ করতে হবে, যাতে এটি নষ্ট না হয়।

 ৩. দানের গুরুত্ব: কোরবানির মাংসের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অভাবীদের মধ্যে বিতরণ করা উচিত, কারণ এটি কোরবানির অন্যতম উদ্দেশ্য। সংরক্ষণের আগে এই দায়িত্ব পালন করা জরুরি।

 ৪. অপচয় এড়ানো: ইসলাম অপচয় নিষিদ্ধ করেছে। তাই এমন পরিমাণ মাংস সংরক্ষণ করা উচিত, যা যুক্তিসংগতভাবে ব্যবহার করা সম্ভব।

এই ঈদে আমরা যেন কোরবানির মাংস সঠিকভাবে বিতরণ ও সংরক্ষণের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করি এবং সমাজে মানবিকতার বন্ধন জোরদার করি।

সূত্র: অ্যাবাউট ইসলাম ডটনেট 

আরও পড়ুনহজযাত্রীদের জন্য বিনা মূল্যে প্রথম আলোর হজ গাইড১০ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক রব ন র ম র জন য ইসল ম বলল ন

এছাড়াও পড়ুন:

ইকো-ট্যুরিজমে তুরস্কের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবে বাংলাদেশ

বন পুনরুদ্ধার ও পরিবেশবান্ধব পর্যটন (ইকো-ট্যুরিজম) উন্নয়নে তুরস্কের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। মঙ্গলবার রাজধানীর পানি ভবনে ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেনের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ আগ্রহের কথা জানান। 

বৈঠকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, হাতি-মানুষ দ্বন্দ্বপ্রবণ এলাকায় বন পুনরুদ্ধার এখন সময়ের দাবি। বনভূমি সংকোচন, খাদ্যঘাটতি এবং অনুপ্রবেশের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে হাতি মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। টেকসই বন ব্যবস্থাপনায় এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নিলে পরিস্থিতি আরও সংকটাপন্ন হয়ে উঠবে। তুরস্কের অভিজ্ঞতা ও কারিগরি জ্ঞান কাজে লাগিয়ে এ সংকট মোকাবিলায় যুগান্তকারী সহযোগিতার সূচনা হতে পারে বলেও তিনি মত দেন। বিশেষ করে, উপযুক্ত গাছ রোপণ এবং স্থানীয় পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ইকো-ট্যুরিজম অবকাঠামো গড়ে তুলতে কারিগরি সহায়তার ওপর উপদেষ্টা জোর দেন। 

উপদেষ্টা জানান, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যবেষ্টিত অঞ্চলে ইকো-ট্যুরিজম সাইট গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে পরিবেশের ওপর কম প্রভাব পড়বে। 

রাষ্ট্রদূত রামিস সেন বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি জানান, তুরস্কের সরকারি সহযোগিতা ও সমন্বয় সংস্থা টিকা ঢাকায় সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। পরিবেশবান্ধব খাতে মধ্যম পরিসরের প্রকল্পে সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত আছে তারা। 

রাষ্ট্রদূত সেন বলেন, বাংলাদেশে টেকসই পর্যটনের ক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর বিপুল সুযোগ আছে। আমরা টিকার ঢাকা অফিসের মাধ্যমে উপদেষ্টার দপ্তরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করে সম্ভাব্য প্রকল্প চিহ্নিত ও বাস্তবায়নে কাজ করব। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ