কারিগরি ত্রুটি বা হ্যান্ডসেটের সমস্যায় নানা কারণে অকার্যকর হতে পারে হোয়াটসঅ্যাপ। সারাবিশ্বে সব ধরনের যোগাযোগে হোয়াটসঅ্যাপ এখন সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। ব্যক্তি কাজে নয়; বরং দাপ্তরিক কাজেও অ্যাপটি এখন অপ্রতিরোধ্য। বিশেষ কিছু কারণে মাঝেমধ্যে অ্যাপ পরিচালনায় ঝুটঝামেলা হয়। সমস্যা সমাধানের কৌশল জানা থাকলে নিজেই দ্রুত অ্যাপটি স্বাভাবিক করতে পারবেন।
ক্যাশ ডিলিট
অ্যান্ড্রয়েড গ্রাহকের জন্য কিছুদিন পরপর হোয়াটসঅ্যাপের ক্যাশ ডিলিট করা প্রয়োজন। কাজটি অবশ্যই নিয়মিত করা শ্রেয়। প্রথমে ডিভাইসের সেটিংস থেকে অ্যাপস অপশন হয়ে হোয়াটসঅ্যাপের স্টোরেজ অপশনে ক্লিক করে ক্যাশ মেমোরি ডিলিট করে নিতে হবে। ফলে অ্যাপে জমে থাকা অস্থায়ী সব ফাইল ক্যাশ মেমোরি থেকে মুছে যাবে। এতে অনেক সমস্যার চমৎকার সমাধান পাওয়া যায়।
ডাউন হয়েছে কিনা
মাঝেমধ্যে প্রযুক্তিগত কারণে হোয়াটসঅ্যাপের প্রধান সার্ভার ডাউন হয়ে যায়। আবার কখনও সমস্যাটি ফোনে নয়, বরং অ্যাপ্লিকেশনজনিত কারণে হয়। তাই অ্যাপে বৈশ্বিক কোনো বিপত্তি ঘটেছে কিনা, তা জানতে ডাউনডিটেক্টর ওয়েবসাইটে
গিয়ে যাচাই করতে হবে।
অ্যাপ্লিকেশন বন্ধ
অ্যাপটি দ্রুত রিস্টার্ট করলে বেশ কিছু প্রযুক্তিগত ত্রুটি নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়। শুধু ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে অ্যাপ বন্ধ করলে হবে না, রিফ্রেশ করে তা আবার সক্রিয় করতে হবে।
সর্বশেষ আপডেট
নির্দিষ্ট সময় পরপর অ্যাপ আপডেট সংস্করণ প্রকাশ করে মেটা। সর্বশেষ সংস্করণে শুধু নতুন ফিচার পাওয়া যায় না; আগের সংস্করণে যেসব নিরাপত্তা ত্রুটি ছিল, তা সমাধান করে তবেই নতুন সংস্করণ আত্মপ্রকাশ করে।
চটজলদি রিস্টার্ট
বিশেষ কোনো কারণ ছাড়াই হোয়াটসঅ্যাপে সমস্যার উদ্ভব হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আগে হ্যান্ডসেটটি রিস্টার্ট করে নিতে হবে, যা অপারেটিং সিস্টেমকে পরিপূর্ণ রিফ্রেশ করতে সহায়ক হয়। অনেক অস্থায়ী ত্রুটি এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিক সমাধান হয়ে যায়।
ইন্টারনেট সংযোগ
ল্যাপটপ বা ব্যবহৃত হ্যান্ডফোনের ইন্টারনেট সংযোগ ঠিকঠাক চলছে কিনা, তা আগে পরীক্ষা করে নেওয়া প্রয়োজন।
কিন্তু নিশ্চিত হতে হবে নিজের সংযোগে থাকা ওয়াইফাই বা মোবাইল ডেটার মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে কিনা বা কাজ করছে কিনা,
তা ঠিকঠাক জেনে নেওয়া।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হ য় টসঅ য প স স করণ সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
মেট্রোরেল চলাচলের সময় বাড়ছে, ট্রেন আসবে আরও ঘন ঘন
যাত্রীচাহিদা মেটাতে মেট্রোরেল রাত ১০টার পরও চলবে। সকালে চালু হবে আরও আগে; অর্থাৎ সকালে চালু ও রাতে বন্ধের সময় আধঘণ্টা করে বাড়বে। এ ছাড়া এখন দুই ট্রেনের মধ্যে বিরতি আরও দুই মিনিট কমে যাবে। এর অর্থ, ব্যস্ত সময়ে (পিক আওয়ারে) ৪ মিনিট ১৫ মিনিট পরপর ট্রেন পাওয়া যাবে। বর্তমানে ব্যস্ত সময়ে সর্বনিম্ন ছয় মিনিট পরপর ট্রেন চলাচল করে।
নতুন এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে সপ্তাহ দুই পর। নতুন ব্যবস্থা আয়ত্ত করতে শুক্রবার থেকে পরীক্ষামূলক চলাচল করা হবে। দুই সপ্তাহ পরীক্ষার পর আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন সময়সূচি মেনে মেট্রোরেল চলাচল করবে। তবে পরীক্ষামূলকভাবে চলার সময়ও সকাল ও রাতের বাড়তি সময়ে চলাচলকারী ট্রেনগুলোতে যাত্রী পরিবহন করা হবে; অর্থাৎ খালি ট্রেন চালানো হবে না।
ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। কোম্পানির সূত্র জানায়, নতুন ব্যবস্থা কার্যকর হলে মেট্রোরেলের সক্ষমতার পূর্ণ সদ্ব্যবহারের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে। বর্তমানে মেট্রোরেলে দৈনিক যাত্রী যাতায়াত করে গড়ে ৪ লাখ ২০ হাজার। এর মধ্যে গত ৬ আগস্ট সর্বোচ্চ যাত্রী পরিবহন হয়, ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৭৪৬। নতুন ব্যবস্থা কার্যকর হলে যাত্রীসংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়াবে বলে কর্তৃপক্ষ মনে করছে।
মেট্রোরেল প্রকল্প নেওয়ার সময় উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দৈনিক পাঁচ লাখ যাত্রী পরিবহন করার কথা বলা হয়েছিল। মেট্রোরেল কমলাপুর পর্যন্ত চালু হলে দৈনিক যাত্রীসংখ্যা ৬ লাখ ৭৭ হাজারে উন্নীত হওয়ার কথা।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফারুক আহমেদ আজ রোববার প্রথম আলোকে বলেন, যাত্রীচাহিদা মেটাতে ট্রেনের সংখ্যা ও সময় বাড়ানোর চিন্তা অনেক দিন ধরেই ছিল, কিন্তু লোকবলের কারণে করা যাচ্ছিল না। এখন তারা প্রস্তুত। নতুন সূচিতে শিগগিরই যাত্রী নিয়ে মেট্রোরেল চলাচল করবে। এতে যাত্রীর সংখ্যা ও আয়—দুটিই বাড়বে। সাধারণ মানুষের ট্রেনের জন্য বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে না। সড়কের ওপরও চাপ কমবে।
সম্ভাব্য নতুন সময়সূচিবর্তমানে সপ্তাহে (শনি থেকে বৃহস্পতিবার) উত্তরা থেকে প্রথম ট্রেন ছাড়ে সকাল ৭টা ১০ মিনিটে। দুই সপ্তাহ পর নতুন সূচিতে চলাচল শুরু হলে উত্তরা থেকে প্রথম ট্রেন ছাড়বে ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে। বর্তমানে উত্তরা থেকে সর্বশেষ ট্রেন ছাড়ে রাত ৯টায়। নতুন সূচি অনুযায়ী, উত্তরা থেকে সর্বশেষ ট্রেন ছাড়বে রাত সাড়ে ৯টায়।
অন্যদিকে মতিঝিল থেকে সকালে প্রথম ট্রেন ছাড়ে সকাল সাড়ে ৭টায়। নতুন সূচিতে মতিঝিল থেকে প্রথম ট্রেন ছাড়বে সকাল ৭টায়। এ ছাড়া রাতে মতিঝিল থেকে সর্বশেষ ট্রেন ছাড়ে রাত ৯টা ৪০ মিনিটে। নতুন সূচি অনুসারে, মতিঝিল থেকে সর্বশেষ ট্রেন ছাড়বে রাত ১০টা ১০ মিনিটে। মতিঝিল থেকে ছাড়া সর্বশেষ ট্রেনটি এখন উত্তরা উত্তর স্টেশনে পৌঁছায় রাত ১০টার পর। এখন শেষ যাত্রী নামবে পৌনে ১১টার দিকে।
এ ছাড়া শুক্রবার বেলা ৩টা থেকে মেট্রোরেলের চলাচল শুরু হয়। নতুন সূচিতে শুক্রবার বেলা আড়াইটায় মেট্রোরেল চলাচল শুরু হবে। রাতেও আধা ঘণ্টা চলাচলের সময় বাড়বে।
মেট্রোরেলের সময়সূচিতে ব্যস্ত সময় (পিক আওয়ার) এবং কম ব্যস্ত সময় (অফ পিক আওয়ার) কয়েক ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এ ছাড়া শনিবার এবং অন্যান্য সরকারি বন্ধের দিনও পিক ও অফ পিক আওয়ারের সময়ের হেরফের আছে। তবে এখন সর্বনিম্ন ছয় মিনিট পর ট্রেন চলাচল করে। নতুন সূচি চালু হলে পিক আওয়ারে সর্বনিম্ন ৪ মিনিট ১৫ সেকেন্ড পরপর ট্রেন চলাচল করবে। এর বাইরে ৮ ও ১০ মিনিটের ব্যবধানে যে সময় ট্রেন চলাচল করত, সেই সময়গুলোতেও দুই মিনিট করে কমে আসবে।
মেট্রোরেলের প্রকল্প নেওয়ার সময় বলা হয়েছিল, পিক আওয়ারে সর্বনিম্ন সাড়ে ৩ মিনিট পরপর মেট্রোরেল চলবে।
ট্রেনের সদ্ব্যবহার ও যাত্রীসুবিধা বাড়বেডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, মেট্রোরেলের লাইন-৬; অর্থাৎ উত্তরা থেকে মতিঝিল পথের জন্য ২৪ সেট ট্রেন রয়েছে। তবে সার্বক্ষণিক লাইনে চলাচল করে ১৩ সেট ট্রেন। তিন সেট ট্রেন বিশেষ প্রয়োজনে লাগতে পারে, এই বিবেচনায় প্রস্তুত রাখা হয়। লাইন ও সংকেত ব্যবস্থা পুরোপুরি ঠিক আছে কি না, তা যাচাই করার জন্য সকালে একটি ট্রেন যাত্রী ছাড়াই চলে। বাকি সাত সেট ট্রেন অব্যবহৃত থাকে। নতুন সময়সূচি কার্যকর হলে ২০ সেট ট্রেন ব্যবহৃত হবে, এতে ট্রেন অলস পড়ে থাকা কমবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে দিনে ২৩৭ বার ট্রেন চলাচল (ট্রিপ) করে। নতুন সূচিতে প্রতিটি ট্রেনের মধ্যে সময়ের ব্যবধান গড়ে দুই মিনিট করে কমে যাবে। এতে ট্রেন চলাচলের সংখ্যা আরও বাড়বে।
অব্যবহৃত মেট্রোরেলের সেটের ব্যবহার কীভাবে বাড়ানো যায়, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছিল ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ। প্রথমে অব্যবহৃত ট্রেনের সেট থেকে দুটি কোচ এনে জোড়া দিয়ে চালানোর পরিকল্পনা করা হয়। বর্তমানে প্রতিটি সেটে ছয়টি কোচ রয়েছে। প্রকল্প নেওয়ার সময় দুই কোচ বাড়ানো যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কারিগরিভাবে দুরূহ এবং নতুন করে বাড়তি বিনিয়োগ করতে হবে। ফলে এই চিন্তা থেকে সরে আসে কর্তৃপক্ষ। এর বদলে ট্রেন চলাচলের সময় এবং দুই ট্রেনের মধ্যে সময়ের ব্যবধান কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। এর জন্য বাড়তি লোকবলের দরকার। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে লোকবল নিয়োগ এবং তাঁদের প্রশিক্ষণও দিয়েছে।
২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল চালু হয়। শুরুতে চলাচল করত উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত। পর্যায়ক্রমে স্টেশনের সংখ্যা বেড়েছে। মতিঝিল পর্যন্ত সব স্টেশনে যাত্রী ওঠা-নামা শুরু হয় ২০২৩ সালের শেষ দিনে। এখন কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল সম্প্রসারণের কাজ চলছে।
২০১২ সালে অনুমোদনের সময় মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যয় ছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার কাছ থেকে ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে।