সিলেটে আন্দোলনের মুখে উপাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ ৫ দফা মেনে নিল স্কলার্সহোম স্কুল
Published: 22nd, September 2025 GMT
সিলেটের স্কলার্সহোম স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক ছাত্রের মরদেহ উদ্ধারের জেরে উপাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবি ও ছয়টি বিষয়ে সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের মুখে আজ সোমবার শিক্ষার্থীদের দাবি ও সংস্কারের বিষয়গুলো মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি লিখিত আকারে শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে স্কলার্সহোম শাহি ঈদগাহ শাখার অধ্যক্ষ লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.
শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে ছিল—উপাধ্যক্ষ আশরাফ হোসেন চৌধুরীর পদত্যাগ, শ্রেণিশিক্ষক শামীম হোসেন ও জ্যেষ্ঠ শিক্ষক তাইবার অপসারণ, এ বিষয়ে কোনো শিক্ষার্থীদের হেনস্তা না করা, সহপাঠীর মৃত্যুর কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শিক্ষার্থীদের ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত না করা এবং আজমানের মৃত্যুর বিষয়ে কলেজের নোটিশ বোর্ডে টানানো বিবৃতির অপসারণ।
এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের সংস্কার প্রস্তাবগুলো হলো, অভিভাবকের সঙ্গে অসদাচরণ যাতে না হয়, সেটি নিশ্চিত; কলেজ কর্তৃপক্ষের নীতি যেন শিক্ষার্থীবান্ধব হয়, তা নিশ্চিত; পরীক্ষার রুটিন তৈরিতে শিক্ষার্থীদের মতামতকে গুরুত্ব আরোপ; রুটিনের ক্ষেত্রে ১৩ কার্যদিবসের সিদ্ধান্তের পরিবর্তন করে ২৬ কার্যদিবসের সিদ্ধান্ত গ্রহণ; শিক্ষকদের ব্যক্তিগত আক্রোশ বন্ধ ও ক্লাস ক্যাপ্টেন নির্বাচনের ব্যবস্থা।
১৭ সেপ্টেম্বর কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আজমান আহমেদের (১৯) মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যার প্ররোচনা’র দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। আজ দুপুরে স্কলার্সহোম শাহি ঈদগাহ শাখায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থী সায়েম হাসনাত বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রথম দাবি কলেজের উপাধ্যক্ষ আশরাফ হোসেনের পদত্যাগ গতকাল রোববার নিশ্চিত করা হয়েছে। পাশাপাশি সুন্দর শিক্ষাব্যবস্থার জন্য অন্য দুই শ্রেণিশিক্ষক শামীম হোসেন ও তাইবাকে অপসারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্য আরও তিনটি দাবিও মেনে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর বাইরে ছয়টি সংস্কারের বিষয়গুলোও মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
১৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে নগরের সুবিদবাজার বনকলাপাড়ার নিজ বাসা থেকে আজমানের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি স্থানীয় বাসিন্দা রাশেদ আহমদের ছেলে। আজমান এইচএসসি প্রাক্–নির্বাচনী পরীক্ষায় দুটি বিষয়ে অংশ নিতে পারেননি। ফলাফলে ওই দুটিসহ তাঁকে পাঁচ বিষয়ে অকৃতকার্য দেখানো হয়।
আজমানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন অনেকে। পরে আন্দোলনে নামেন তাঁর সহপাঠীরা। তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় ১৮ সেপ্টেম্বর সিলেট মহানগরের বিমানবন্দর থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করে পরিবার।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স প ট ম বর র পদত য গ কল জ র আজম ন
এছাড়াও পড়ুন:
পরিবেশ রক্ষায় জাতি হিসেবে আমরা ব্যর্থ হয়েছি: রিজওয়ানা হাসান
পরিবেশ রক্ষায় জাতি হিসেবে আমরা ব্যর্থ হয়েছি বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, পরিবেশ রক্ষায় আমাদের অগ্রাধিকার প্রকৃতিকেন্দ্রিক বা প্রকৃতিবান্ধব হয়নি।
বাংলাদেশের নদীগুলো ঘিরে সংকট রয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেছেন, ‘নদীগুলো মূলত জৈবিকভাবে মৃত। যখন ১৮০টি দেশের মধ্যে আপনার পরিবেশগত কার্যক্ষমতার র্যাংক ১৭৯; তখন সেটাকে ৫০ পর্যন্ত এগিয়ে নেওয়া অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। ১৭৯ থেকে ৫০, ৬০ বা ৭০-এ যাওয়া আসলেই খুব কঠিন। কিন্তু একবার আপনি এটিকে ৭০ পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারলে, সেখান থেকে দ্রুত অগ্রসর হওয়া সম্ভব। আমরা এখন ১৭৯-এ আছি, এটা দেখায়, আমরা ব্যর্থ হয়েছি, একটি জাতি হিসেবে সমষ্টিগতভাবে।’
‘রিভাইভিং ঢাকা’স রিভার্স: পলিসি অপশনস ফর সাসটেইনেবল ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক নীতি সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। আজ সোমবার বেলা ১১টায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) সিন্ডিকেট হলে এ সংলাপের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি)। সংলাপে নদীদূষণ নিয়ে একটি নিবন্ধ তুলে ধরা হয়। তাতে রাজধানীর নদীদূষণের কারণ, প্রতিকারসহ নানা বিষয় তুলে ধরা হয়।
উন্নয়ন চিন্তায় মৌলিক পরিবর্তন আনার ওপর জোর দেন পরিবেশ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমরা ইকোসিস্টেম হত্যা করছি। আপনি যা হত্যা করছেন, সেটিকে আপনি জন্ম দিতে পারবেন না। আপনি সেটিকে পুনঃসৃষ্টি করতে পারবেন না। আপনি শত শত ট্যানারি কারখানা বানাতে পারবেন। আপনি আরেকটি বুড়িগঙ্গা তৈরি করতে পারবেন না।’
নদীব্যবস্থা পুনরুদ্ধার দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্ভব নয় উল্লেখ করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘এক-দেড় বছরের মধ্যে সমাধান খুঁজে পাওয়া আমাদের পক্ষে অসম্ভব।’ এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সরকারের আলোচনা চলছে বলেও জানান তিনি।
আজকের সংলাপে পরিবেশ উপদেষ্টা নদী রক্ষায় সরকারের কিছু কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে নদী পুনরুদ্ধার কাঠামো প্রণয়ন; নদীর তলদেশ পরিষ্কার করা, দূষক অপসারণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা; নদীর পানি ও পরিবেশের গুণমান নিয়মিত নজরদারি এবং মানোন্নয়ন এবং পরিবেশগত সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করা। পাশাপাশি ভারত এবং নেপালের নদী পুনরুদ্ধারে উদাহরণ দিয়ে নদী এবং পরিবেশ রক্ষায় রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি নিশ্চিতের আহ্বান জানান তিনি।
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন একেবারেই জরুরি কি না, এমন প্রশ্ন তুলে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘এগুলো রাজনৈতিক নেতাদের তৈরি করা হাইপ এবং আমরা শুধু শিখেছি সেই হাইপের বিপরীতে ডেলিভার করতে, যা তারা তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক স্বার্থে তৈরি করেছে।’ এর ফলে প্রাকৃতিক বন এবং হাতির করিডর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আজকের সংলাপে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন। এসআইপিজির পরিচালক অধ্যাপক শেখ তৌফিক এম হকের সঞ্চালনায় সংলাপে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা প্রমুখ।