সিলেটের স্কলার্সহোম স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক ছাত্রের মরদেহ উদ্ধারের জেরে উপাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবি ও ছয়টি বিষয়ে সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের মুখে আজ সোমবার শিক্ষার্থীদের দাবি ও সংস্কারের বিষয়গুলো মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি লিখিত আকারে শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে স্কলার্সহোম শাহি ঈদগাহ শাখার অধ্যক্ষ লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.

) মুনীর আহমেদ কাদেরী জানান, শিক্ষার্থীদের দাবি ও সংস্কারের প্রস্তাব মেনে নেওয়া হয়েছে। আজমান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আরও পড়ুনসিলেটে শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় ১০ দফা দাবিতে সহপাঠীদের বিক্ষোভ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে ছিল—উপাধ্যক্ষ আশরাফ হোসেন চৌধুরীর পদত্যাগ, শ্রেণিশিক্ষক শামীম হোসেন ও জ্যেষ্ঠ শিক্ষক তাইবার অপসারণ, এ বিষয়ে কোনো শিক্ষার্থীদের হেনস্তা না করা, সহপাঠীর মৃত্যুর কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শিক্ষার্থীদের ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত না করা এবং আজমানের মৃত্যুর বিষয়ে কলেজের নোটিশ বোর্ডে টানানো বিবৃতির অপসারণ।

এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের সংস্কার প্রস্তাবগুলো হলো, অভিভাবকের সঙ্গে অসদাচরণ যাতে না হয়, সেটি নিশ্চিত; কলেজ কর্তৃপক্ষের নীতি যেন শিক্ষার্থীবান্ধব হয়, তা নিশ্চিত; পরীক্ষার রুটিন তৈরিতে শিক্ষার্থীদের মতামতকে গুরুত্ব আরোপ; রুটিনের ক্ষেত্রে ১৩ কার্যদিবসের সিদ্ধান্তের পরিবর্তন করে ২৬ কার্যদিবসের সিদ্ধান্ত গ্রহণ; শিক্ষকদের ব্যক্তিগত আক্রোশ বন্ধ ও ক্লাস ক্যাপ্টেন নির্বাচনের ব্যবস্থা।

১৭ সেপ্টেম্বর কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আজমান আহমেদের (১৯) মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যার প্ররোচনা’র দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। আজ দুপুরে স্কলার্সহোম শাহি ঈদগাহ শাখায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থী সায়েম হাসনাত বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রথম দাবি কলেজের উপাধ্যক্ষ আশরাফ হোসেনের পদত্যাগ গতকাল রোববার নিশ্চিত করা হয়েছে। পাশাপাশি সুন্দর শিক্ষাব্যবস্থার জন্য অন্য দুই শ্রেণিশিক্ষক শামীম হোসেন ও তাইবাকে অপসারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্য আরও তিনটি দাবিও মেনে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর বাইরে ছয়টি সংস্কারের বিষয়গুলোও মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

১৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে নগরের সুবিদবাজার বনকলাপাড়ার নিজ বাসা থেকে আজমানের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি স্থানীয় বাসিন্দা রাশেদ আহমদের ছেলে। আজমান এইচএসসি প্রাক্‌–নির্বাচনী পরীক্ষায় দুটি বিষয়ে অংশ নিতে পারেননি। ফলাফলে ওই দুটিসহ তাঁকে পাঁচ বিষয়ে অকৃতকার্য দেখানো হয়।

আজমানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন অনেকে। পরে আন্দোলনে নামেন তাঁর সহপাঠীরা। তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় ১৮ সেপ্টেম্বর সিলেট মহানগরের বিমানবন্দর থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করে পরিবার।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স প ট ম বর র পদত য গ কল জ র আজম ন

এছাড়াও পড়ুন:

জুমার দিনের করণীয় ও বর্জনীয়

জুমার দিন—মুসলমানদের জন্য এক বিশেষ বরকতময় দিন।

এটি শুধু সাপ্তাহিক নামাজের দিন নয়, বরং আত্মশুদ্ধি, সামাজিক সংহতি ও আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের মহান সুযোগ।

নবীজি (সা.) বলেছেন—“জুমার দিনই দিনসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনেই আদম (আ.) সৃষ্টি হয়েছেন, এ দিনেই জান্নাতে প্রবেশ করেছেন, এবং এ দিনেই পৃথিবীতে প্রেরিত হয়েছেন।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৪)

অতএব, জুমা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়—এটি ইসলামি সভ্যতার একটি কেন্দ্রবিন্দু।

এই দিনে কিছু কাজকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে, আবার কিছু কাজ থেকে কঠোরভাবে বারণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুনইসলামোফোবিয়া মোকাবিলায় মুসলিম নারীর করণীয়২৬ আগস্ট ২০২৫জুমার দিনের করণীয়

১. গোসল করা

নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করে, উত্তমভাবে পবিত্রতা অর্জন করে, তারপর মসজিদে আসে, নীরবে খুতবা শোনে ও নামাজ পড়ে, তার এক জুমা থেকে পরের জুমা পর্যন্ত গুনাহ মাফ করা হয়।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৮৩)

জুমার দিনের এই গোসল বিশেষ ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়।

২. পরিচ্ছন্ন পোশাক ও সুগন্ধি ব্যবহার

জুমার নামাজে যাওয়ার আগে মুসলমানকে সুন্দর পোশাক পরা ও সুগন্ধি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।

নবীজি (সা.) বলেছেন, “জুমার দিনে তোমাদের জন্য সুন্দর পোশাক পরা এবং সুগন্ধি ব্যবহার করা উত্তম।” (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৫২৪৮)

এটি সামাজিক মর্যাদা ও আধ্যাত্মিক পবিত্রতার প্রতীক।

৩. তাড়াতাড়ি মসজিদে যাওয়া

জুমার নামাজে আগে পৌঁছানোর জন্য বড় ফজিলত রয়েছে।

নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রথম ঘণ্টায় জুমার জন্য যায়, সে যেন উট কোরবানি করল; দ্বিতীয় ঘণ্টায় গেলে গরু কোরবানি করল; তৃতীয় ঘণ্টায় গেলে ভেড়া কোরবানি করল; চতুর্থ ঘণ্টায় গেলে মুরগি কোরবানি করল; আর পঞ্চম ঘণ্টায় গেলে ডিম দান করল।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৮১)

অর্থাৎ, যত আগে যাবে, তত বেশি সওয়াব।

৪. খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা

নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি খুতবা চলাকালীন তার সঙ্গীকে বলে ‘চুপ করো’, সে-ও অনর্থক কথা বলল।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৩৪)

খুতবা চলাকালীন কথা বলা, ফোন ব্যবহার করা বা অমনোযোগ হওয়া নিষিদ্ধ।

৫. সুরা কাহফ তেলাওয়াত করা

জুমার দিনে সূরা কাহফ পড়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে।

নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিনে সূরা কাহফ তেলাওয়াত করবে, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময় আলোকিত হয়ে যাবে।” (মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস: ৩৩৯২)

৬. দোয়া করা ও দরুদ পাঠ করা

জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন দোয়া কবুল হয়।

নবীজি (সা.) বলেন, “জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যেখানে কোনো মুসলমান নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে আল্লাহ তা অবশ্যই কবুল করেন।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৩৫)

অনেক আলেমের মতে, এই সময়টি আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।

এছাড়া, জুমার দিনে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করার নির্দেশও এসেছে, “তোমরা জুমার দিনে আমার প্রতি বেশি দরুদ পাঠ করো, কারণ তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১৫৩১)

আরও পড়ুনপ্রাকৃতিক দুর্যোগে করণীয় আমল২২ আগস্ট ২০২৪জুমার দিনের বর্জনীয়

১. জুমার নামাজ ত্যাগ করা

নবীজি (সা.) কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন, “যে ব্যক্তি অলসতা বা উদাসীনতার কারণে তিনটি জুমা ত্যাগ করে, আল্লাহ তার হৃদয় সিল করে দেন।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১০৫২)

অর্থাৎ, ইচ্ছাকৃতভাবে জুমা বাদ দেওয়া ইমানের জন্য ভয়ংকর বিপদ।

২. জুমা বাদ দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকা

কোরআনে আল্লাহ বলেন, “হে মুমিনগণ! যখন জুমার আহ্বান দেওয়া হয়, তখন আল্লাহর স্মরণে ছুটে যাও এবং ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করো।” (সুরা আল-জুমা, আয়াত: ৯)

জুমার সময় ব্যবসা-বাণিজ্য, অনলাইন কেনাকাটা বা অন্য ব্যস্ততা বড় গোনাহ।

৩. উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা

মসজিদে অন্যদের বিরক্ত করা, ফোনে কথা বলা, এমনকি নামাজের আগে অপ্রয়োজনে গল্প করা জুমার আদববিরোধী কাজ।

৪. খুতবার সময় চলাফেরা করা

খুতবা চলাকালে যেকোনো অযথা নড়াচড়া বা সামনে যাওয়া, নবীজি (সা.) বলেছেন, এতে “সওয়াব নষ্ট হয়।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৭)

৫. নামাজ শেষে গাফেল থাকা

জুমার পরপরই নামাজ বা দোয়া না করে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যাওয়া উচিত নয়। আল্লাহ বলেন, “যখন নামাজ শেষ হবে, তখন পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অন্বেষণ করো, কিন্তু আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো।” (সুরা জুমা, আয়াত: ১০)

অর্থাৎ, কাজ করবে ঠিকই, কিন্তু মনে যেন আল্লাহর স্মরণ থাকে।

জুমার দিনের তাৎপর্য

জুমা মুসলমানদের জন্য সামাজিক ঐক্যের প্রতীক। এদিনে মসজিদগুলোতে ধনী-গরিব, নেতা-জনতা, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাই এক কাতারে দাঁড়ায়।

নবীজি (সা.) বলেছেন, “জুমার দিনে একবার নামাজ আদায় করা সাত দিনের গোনাহ মাফের সমান।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৬)

জুমার দিন আমাদের আত্মার পরিশুদ্ধি, সমাজের ঐক্য এবং আল্লাহর রহমত লাভের সোনালি সুযোগ।

এই দিনে গোসল, পরিষ্কার পোশাক, সময়মতো নামাজে যাওয়া, খুতবা শোনা, সূরা কাহফ পাঠ ও দোয়া করা—সবই মুসলিম জীবনের সৌন্দর্য বাড়ায়।

অন্যদিকে অলসতা, ব্যবসা, ও অমনোযোগিতা আমাদের ইমানকে দুর্বল করে।

অতএব, প্রতিটি মুসলমানের উচিত জুমাকে কেবল ছুটির দিন নয়, বরং “আত্মার নবজাগরণের দিন” হিসেবে পালন করা।

আরও পড়ুনসাহাবিদের প্রতি মহানবী (সা.)-এর শেষ উপদেশ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ