মৃত্যুসংবাদ শুনলে আমাদের মন কিছুক্ষণের জন্য বিষণ্ন হয়ে পড়ে। হঠাৎ এমন খবর পেলে আমরা কিছু মুহূর্তের জন্য বিমর্ষ বা দুঃখিত হই। যদি মৃত ব্যক্তি আমাদের কাছের কেউ বা আপনজন হন, তবে কান্নাকাটিও করি।

কখনো কখনো এই বিষণ্নতা কয়েক দিন ধরে থাকে। বিশেষ করে খুব কাছের কাউকে চিরতরে হারালে এই দুঃখের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়, যা কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারে।

কিন্তু কিছুদিন পর সবকিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়। আমরা ধীরে ধীরে দুনিয়ার ব্যস্ততায় মগ্ন হয়ে পড়ি। সংসার, চাকরি, ব্যবসা, পড়াশোনা—এসব নিয়ে এতটাই ব্যস্ত হয়ে যাই যে মৃত্যুর কথা দ্রুত ভুলে যাই। কেউ ধনসম্পদ জমাতে ব্যস্ত, কেউ সুনাম অর্জনে, কেউ ভ্রমণ বা আনন্দ-ফুর্তিতে, কেউ নতুন পরিকল্পনায়।

খুব কাছের কাউকে চিরতরে হারালে এই দুঃখের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়, কিন্তু কিছুদিন পর সবকিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়। আমরা ধীরে ধীরে দুনিয়ার ব্যস্ততায় মগ্ন হয়ে পড়ি।

অথচ পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘দুনিয়ার জীবন তো খেলাধুলা ও তামাশা ছাড়া কিছুই নয়, আর পরকালই মুত্তাকিদের জন্য উত্তম। তবে কি তোমরা বোঝো না?’ (সুরা আনআম, আয়াত: ৩২)

এ দুনিয়ার ব্যস্ততায় আমরা ভুলে যাই যে মৃত্যু শুধু অন্যের জন্য নয়, আমাদের জন্যও অবশ্যম্ভাবী। আজ যে সংবাদ আমরা অন্যের জন্য শুনছি, একদিন অন্যরা আমাদের জন্যও শুনবে।

মৃত্যু এক কঠিন সত্য

কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; আর ভালো ও মন্দ দ্বারা আমি তোমাদের পরীক্ষা করে থাকি এবং আমার কাছেই তোমাদের ফিরে আসতে হবে।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৩৫)

রাসুল (সা.

) বলেছেন, ‘তোমরা বেশি বেশি স্বাদ হরণকারী বিষয়, অর্থাৎ মৃত্যুর কথা স্মরণ করো।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২,৩০৭)

মৃত্যুকে স্মরণ করার গুরুত্ব আরেকটি হাদিসে আরও স্পষ্ট হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করো। কারণ, এটি পাপকে ধুয়ে দেয় এবং দুনিয়ার প্রতি মোহ কমায়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪,২৫৮)

আরও পড়ুনজীবন ও মৃত্যু: পরিপূরক নাকি বিপরীত২১ আগস্ট ২০২৫মৃত্যুকে স্মরণের উপকারিতা

মৃত্যুকে স্মরণ করলে মানুষ গুনাহ থেকে দূরে থাকতে পারে এবং কঠিন অন্তর নরম হয়। যে ব্যক্তি মৃত্যুকে বেশি স্মরণ করে, সে তিনটি জিনিস লাভ করে—

১. দ্রুত তওবা করতে পারে: মৃত্যুর কথা মনে পড়লে গুনাহ থেকে ফিরে আসার তাড়না বাড়ে। তওবা মানুষকে আল্লাহর কাছে নিয়ে যায় এবং ক্ষমা পাওয়ার পথ সুগম করে।

২. অন্তর অল্পে সন্তুষ্ট থাকে: দুনিয়ার লোভ-লালসা কমে যায় এবং ভাগ্যে যা আছে, তাতেই সন্তুষ্টি আসে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাগ্যে যা আছে, তাতে সন্তুষ্ট থাকে, আল্লাহ তাকে পর্যাপ্ত করে দেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৪৭১)

৩. ইবাদতে আগ্রহী হয়: মৃত্যুর অনিশ্চয়তা মানুষকে আল্লাহর ইবাদতের প্রতি উৎসাহী করে। নিয়মিত নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত ও জিকিরে মনোযোগ বাড়ে।

দুনিয়ার জীবন তো খেলাধুলা ও তামাশা ছাড়া কিছুই নয়, আর পরকালই মুত্তাকিদের জন্য উত্তম। তবে কি তোমরা বোঝো না?সুরা আনআম, আয়াত: ৩২

অন্যদিকে যে ব্যক্তি মৃত্যুকে ভুলে যান, তিনি তিনটি কষ্টে নিপতিত হন—

১. তওবায় অলসতা: গুনাহ থেকে ফিরে আসতে দেরি করেন, যা তাঁকে আল্লাহর রহমত থেকে দূরে রাখে।

২. অসন্তুষ্টি: ভাগ্যে যা আছে, তাতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন, যা মানসিক অশান্তির কারণ হয়।

৩. ইবাদতে গাফিলতি: আল্লাহর ইবাদত থেকে দূরে সরে যান, যা আখিরাতের জন্য ক্ষতিকর।

মৃত্যুর অনিশ্চয়তা

মৃত্যু এমন এক সত্য, যাকে এড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতা কারও নেই। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যেখানেই থাকো, মৃত্যু তোমাদের ধরবে, এমনকি যদি তোমরা সুরক্ষিত দুর্গে থাকো।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৭৮)

মৃত্যুর কোনো নির্দিষ্ট স্থান, সময় বা ক্রম নেই। যেকোনো মুহূর্তে মৃত্যু আমাদের দরজায় কড়া নাড়তে পারে এবং এর হিমশীতল স্পর্শকে ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা কারও নেই। কেউ হাসতে হাসতে, কেউ গাইতে গাইতে, কেউ কথা বলতে বলতে, কেউ খেলতে খেলতে চলে যায়।

কিন্তু কেউই বোঝে না যে পরবর্তী মুহূর্তে তার সব সক্রিয়তা চিরতরে নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মৃত্যু এমন একটি বিষয়, যা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য যথেষ্ট উপদেশ।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২৩০১)

আরও পড়ুনইমাম বুখারির নিঃসঙ্গ মৃত্যু১৪ আগস্ট ২০২৫মৃত্যুকে স্মরণ করার উপায়

মৃত্যুকে স্মরণ করার জন্য কিছু ব্যবহারিক উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে—

১. কবরস্থান পরিদর্শন: রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, কিন্তু এখন জিয়ারত করো। কারণ, এটি তোমাদের আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৭৬)

২. মৃত্যুসংবাদে ধৈর্যধারণ: মৃত্যুসংবাদ শুনলে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ বলা উচিত। এটি ধৈর্যধারণের মাধ্যম এবং সওয়াব অর্জনের উপায়। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৬)

৩. ইবাদত বৃদ্ধি: নিয়মিত নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির ও দান-সদকার মাধ্যমে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।

বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করো। কারণ, এটি পাপকে ধুয়ে দেয় এবং দুনিয়ার প্রতি মোহ কমায়।সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪,২৫৮

মৃত্যুকে স্মরণ করা আমাদের জীবনকে আল্লাহমুখী করে। এটি আমাদের দুনিয়ার মোহ থেকে মুক্ত করে এবং আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি নিতে উৎসাহিত করে। দয়ালু আল্লাহ তাআলা আমাদের এমন তাওফিক দান করুন, যেন আমরা মৃত্যুকে স্মরণ করি, তাঁর স্মরণ থেকে যেন গাফিল না হই।

তওবা করতে যেন আমরা কখনো ভুলি না। কারণ, তাঁর দয়া ও ক্ষমা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই। মৃত্যুর স্মরণ আমাদের অন্তরকে নরম করুক, আমাদের আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সহায়তা করুক।

আরও পড়ুনপ্রতিদিন কেন মৃত্যুকে স্মরণ করতে হবে৩১ জুলাই ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল ল হ ত দ র জন য বল ছ ন আম দ র ক রআন

এছাড়াও পড়ুন:

ভোলাগঞ্জে সাদাপাথর লুট: ৬ দপ্তর ও বেলার কাছে নথি চেয়েছে দুদক

সিলেটের ভোলাগঞ্জে সাদাপাথর লুটপাটের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের খোঁজে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ নিয়ে ছয়টি সরকারি দপ্তর ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কার্যালয়ের কাছে নথিপত্র চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে সংস্থাটি।

সম্প্রতি দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পৃথকভাবে এসব চিঠি পাঠানো হয়। দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

যে দপ্তরগুলোর কাছে নথি তলব করা হয়েছে, সেগুলো হলো সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়, জেলা প্রশাসন অফিস, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, কোম্পানীগঞ্জ থানা, খনিজ সম্পদ ব্যুরো ও খনিজ সম্পদ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় এবং বেলার সিলেট অফিস।

দুদক সূত্র জানায়, চিঠিগুলোয় যেসব তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ভোলাগঞ্জ এলাকায় খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি) যেসব তদন্ত করেছে, তার সত্যায়িত কপি ও তদন্ত কর্মকর্তাদের বিস্তারিত পরিচয়; কী পরিমাণ পাথর উত্তোলন বা আত্মসাৎ করা হয়েছে এবং কতটা অবশিষ্ট রয়েছে, তার তথ্য; পাথর উত্তোলনের কারণে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতির হিসাব; পাথর লুট নিয়ে বিএমডি থেকে দায়ের করা মামলার এজাহারের কপি, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নাম ও গ্রেপ্তারকৃতদের তালিকা এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ও দায়ী সরকারি–বেসরকারি ব্যক্তিদের নাম।

আরও পড়ুনপাথর তোলায় রাজনৈতিক দলের ‘ঐকমত্য’, পরে লুট, ঘটল কীভাবে ১৪ আগস্ট ২০২৫

এর আগে ৩ সেপ্টেম্বর দুদক জানিয়েছিল, ভোলাগঞ্জে সাদাপাথর লুটপাটে রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তাসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে। উপপরিচালক রাশেদুল হাসানের নেতৃত্বে একটি দল অনুসন্ধানের দায়িত্ব পেয়েছে।

দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, অভিযানে প্রাথমিক সত্যতা মেলায় অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। অপরাধের মাত্রা ও সংশ্লিষ্টতার ধরন বিবেচনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ