মানসম্মত গণপরিবহনের অভাবে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার দিন দিন বেড়ে চলছে। ফলে সড়কে বাড়ছে যানজট। তাই ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমাতে বিকল্প মানসম্পন্ন গণপরিবহন বাড়ানো প্রয়োজন।

আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশনে এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন বক্তারা। তাঁরা বলেন, শহরে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করে টেকসই পরিবহন ও যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস ২০২৫ উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ), ওয়ার্ক ফর আ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। আলোচনা সভার শিরোনাম ‘সমাজ, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ সুরক্ষায় ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার সীমিত করি’।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন। তিনি বলেন, পরিবহন ও যানজট সমস্যা এই পর্যায়ে আসার মূল কারণ সঠিক পরিকল্পনার অভাব। বর্তমান সরকার পরিবহন খাতের সব অংশীজনকে নিয়ে কিছু কার্যকর নীতি প্রণয়নে কাজ করছে। তবে দায়ভারটা জনগণেরও। জনগণকে সোচ্চার হতে হবে। যেন পরবর্তী যে সরকারই আসুক না কেন, কার্যকর নীতিগুলোর বাস্তবায়ন চলমান থাকে।

ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমাতে হলে সবার প্রথমে বিকল্প নিয়ে ভাবতে হবে বলে উল্লেখ করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নিখিল কুমার দাস। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর জন্য গণপরিবহনকে ব্যক্তিমালিকানা থেকে কোম্পানিতে নিয়ে যেতে হবে। এটা করা না গেলে মানসম্পন্ন গণপরিবহন নিশ্চিত করা যাবে না।

সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবসের মূল উদ্দেশ্য সড়কে ছোট গাড়ির সংখ্যা কমানো, বড় গাড়ি বাড়ানো। যেন একটি গাড়িতে অধিক জনসাধারণ যাতায়াত করতে পারে। মানসম্পন্ন গণপরিবহন নিশ্চিত করতে নাগরিকদের বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কেননা, কল্যাণচিন্তা শুধু সরকারের একার কাজ নয়, এতে সবার অংশগ্রহণ জরুরি।

আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ঢাকায় মানসম্পন্ন সরকারি গণপরিবহনের অভাবে মধ্যম আয়ের মানুষও গাড়ি কিনতে বাধ্য হয়েছেন। একই সঙ্গে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার সামাজিক মর্যাদার প্রতীক হয়ে উঠেছে। দুর্বল প্রশাসনিক কাঠামো ও নীতিনির্ধারকদের উদাসীনতার কারণে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার বেড়েই চলেছে।

মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর এই রুটের সড়কে গাড়ির গতি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয় মূল প্রবন্ধে। এতে আরও বলা হয়, বিকল্প মানসম্পন্ন গণপরিবহন নিশ্চিত করা গেলে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। পাশাপাশি শহরগুলোতে গাড়ি বহন ক্ষমতা নির্ধারণ করা, গাড়ির নিবন্ধন নিয়ন্ত্রণ, একক পরিবারের জন্য দ্বৈত নিবন্ধন নিয়ন্ত্রণ, পার্কিং ফি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর মতো পরামর্শ দেওয়া হয়।

সভায় আরও বক্তব্য দেন মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ, ওয়ার্ক ফর আ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারি, ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) সুফিয়ান আহমেদ প্রমুখ।

ব্যক্তিগত গাড়ি বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট সমস্যা ও ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছর ২২ সেপ্টেম্বর ‘বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস’ পালন করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘সমাজ, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ সুরক্ষায় ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার সীমিত করি’।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর বহন উল ল খ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জামায়াতসহ সাতটি দলের আন্দোলনে এনসিপি কেন নেই, জানালেন নাহিদ

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি দলের আন্দোলনের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টি নেই বলে জানিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেছেন, ‘আমরা নিম্নকক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) চাই না, আমরা শুধু উচ্চকক্ষে পিআর চাই। এ ছাড়া আমরা মনে করি, এখনো সম্পূর্ণভাবে ঐকমত্য কমিশনকে প্রত্যাখ্যান করে রাজপথে যাওয়ার সময় আসেনি।’

রাজধানীর শাহবাগের শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে আজ শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জাতীয় সমন্বয় সভা করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এই সভা শেষে সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সেখানে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তেই কোনো বড় দলের সঙ্গে জোটভিত্তিক চিন্তাভাবনা আমরা করছি না; বরং এনসিপি তার স্বতন্ত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে এগোবে।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, যেসব ইস্যুতে আন্দোলনগুলো হচ্ছে, সেই ইস্যুগুলো সামগ্রিকভাবে সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। সমাধান করতে পারত গণপরিষদ নির্বাচন ও নতুন সংবিধানের দাবি। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির জন্য গণপরিষদ ছাড়া আর কোনো বিকল্প পাওয়া যাচ্ছে না, যেটা সবাই গ্রহণ করছে। ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করছে এনসিপি।

এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা ধরে নিচ্ছি, গণপরিষদ ও আইনসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি আমাদের একসঙ্গে নিতে হবে।’

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও আগামী নির্বাচনে সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা; ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবিতে ৭টি দল বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে। দলগুলো হলো জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও খেলাফত আন্দোলন।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জাতীয় সমন্বয় সভায় উপস্থিত দলটির নেতারা। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগের শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জামায়াতসহ সাতটি দলের আন্দোলনে এনসিপি কেন নেই, জানালেন নাহিদ