এআই ব্যবহারে কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বেড়েছে চার থেকে পাঁচ গুণ: ডুয়োলিঙ্গো সিইও
Published: 22nd, September 2025 GMT
ভাষা শেখানোর প্ল্যাটফর্ম ডুয়োলিঙ্গো চলতি বছরের এপ্রিল মাসে নিজেদের ‘এআই ফার্স্ট’ প্রতিষ্ঠান ঘোষণা করেছিল। তখন অনেকে ধারণা করেছিলেন, এআই ব্যবহারের ফলে প্রতিষ্ঠানটি বড় আকারে কর্মী ছাঁটাইয়ে পথে যাবে।
কিন্তু পাঁচ মাস পরও কোম্পানিটি একজন পূর্ণকালীন কর্মীকেও ছাঁটাই করেনি। বরং এআই ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের কর্মীদের কাজের গুণমান বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন ডুয়োলিঙ্গোর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) লুইস ভন আহন।
গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ফাস্ট কোম্পানি ইনোভেশন ফেস্টিভ্যাল ২০২৫-এ বক্তৃতায় লুইস ভন আহন বলেন, ‘একই সংখ্যক কর্মী দিয়ে আমরা এখন একই সময়ে চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি কনটেন্ট তৈরি করতে পারছি। এখনো মানুষের তত্ত্বাবধান প্রয়োজন হয়, যাতে কম্পিউটার সঠিকভাবে কাজ করতে পারে।’
এআই ব্যবহারে বেড়েছে কনটেন্ট নির্মাণের গতিভন আহন জানান, এআই ব্যবহারের ফলে ডুয়োলিঙ্গোর প্রকৌশলীরা ভাষা, গণিত, সংগীত এবং দাবার মতো পাঠ অনেক দ্রুত তৈরি করতে পারছেন। এপ্রিলের ঘোষণার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি ধীরে ধীরে চুক্তিভিত্তিক কর্মী (কন্ট্রাক্টর) কমিয়ে আনছে। তবে ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখনো একজন পূর্ণকালীন কর্মীকেও ছাঁটাই করা হয়নি। বরং গত এপ্রিলের পর থেকে নতুন কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ডুয়োলিঙ্গোর সিইও জোর দিয়ে বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য টাকা বাঁচানো বা মানব কর্মীদের প্রতিস্থাপন নয়, আমাদের লক্ষ্য হলো সামান্য সংখ্যক কর্মী নিয়ে অনেক বেশি কাজ করা।’
আরও পড়ুনপাঁচ বছর ধরে কেন আটকে আছে মাউশির ৬১০ পদে নিয়োগ৮ ঘণ্টা আগেএআই প্রকল্প এবং নতুন ফিচারডুয়োলিঙ্গোর বেশ কিছু এআইভিত্তিক প্রকল্প ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘লিলি’ (Lily) নামের একটি এআই এজেন্ট, যা ভিডিও কলের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের কথোপকথনের ভাষা অনুশীলনে সাহায্য করে। আরেকটি সফল প্রকল্প হলো দাবা শেখানোর পাঠ। এটি মূলত একজন ডিজাইনার এবং প্রোডাক্ট ম্যানেজারের ‘ভাইব কোডিং’ পরীক্ষামূলক এআই প্রজেক্ট থেকে শুরু হয়েছিল।
অর্থনৈতিক লাভএআই ব্যবহারের ইতিবাচক ফলাফল ইতিমধ্যেই আর্থিক খাতেও দেখা যাচ্ছে। বুধবার বিকেল পর্যন্ত ডুয়োলিঙ্গোর বাজারমূল্য ছিল ১২ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার। আগস্ট মাসে প্রতিষ্ঠানটি ২০২৫ সালের থেকে ১ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলার বেশি আয় করেছে।
আরও পড়ুনপ্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকেরা ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে পাচ্ছেন উচ্চতর স্কেল ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫এআই-এ চাকরি হারানোর ভয়যদিও ডুয়োলিঙ্গো এআই ব্যবহারের মাধ্যমে কর্মসংস্থান ধরে রেখেছে, প্রযুক্তি খাতের অনেক বড় কোম্পানি বিপরীত পথে হেঁটেছে। সেলসফোর্স (Salesforce) এবং ক্রাউডস্ট্রাইক (CrowdStrike)-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এআই ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়ালেও একই সঙ্গে ব্যয় কমাতে কর্মী ছাঁটাই করেছে।
এআই সমর্থকেরা যেমন বিল গেটস এবং ওপেনএআইয়ের সিইও স্যাম অল্টম্যান দাবি করেন, এআই কর্মীদের একঘেয়ে কাজ থেকে মুক্ত করে তাদের সৃজনশীল কাজে মনোযোগী হওয়ার সুযোগ তৈরি করে। কিন্তু বাস্তবে অনেক প্রতিষ্ঠানে এআই ব্যবহারের পরই বড় আকারের ছাঁটাই হয়েছে।
আরও পড়ুনখাদ্য অধিদপ্তরের ৩য় পর্যায়ে বাছাই পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫উদ্যোক্তাদের জন্য সুযোগযাঁরা নিজেদের বস হতে চান, তাঁদের জন্য স্মার্টার বাই সিএনবিসি মেক ইট (Smarter by CNBC Make It) একটি নতুন অনলাইন কোর্স চালু করেছে, ‘হাউ টু স্টার্ট এ বিজনেস: ফর ফার্স্ট-টাইম ফাউন্ডারস’।
কোর্সের নিয়মিত মূল্য ১২৭ ডলার (কর ব্যতীত)। ১৬ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত EARLYBIRD কুপন কোড ব্যবহার করলে ৩০ শতাংশ ছাড়ে কোর্সটি কেনা যাবে।
এ ছাড়া সিএনবিসি মেক ইট-এর নিউজলেটারে সাইনআপ করে কর্মজীবন, অর্থ ও ব্যক্তিগত সাফল্যের নানা টিপস পাওয়া যাবে এবং লিংকডইনের এক্সক্লুসিভ কমিউনিটিতে বিশেষজ্ঞ ও সহকর্মীদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগও রয়েছে।
আরও পড়ুনবেসরকারি ব্যাংকে চাকরি, ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার৫ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এআই ব যবহ র র স প ট ম বর কর ম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
দিনমজুর বাদশা মিয়াকে আমাদের সাধুবাদ
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের দিনমজুর বাদশা মিয়া তাঁর এলাকায় ‘গাছের বন্ধু বাদশা’ নামে পরিচিত। এই পরিচয় কোনো সরকারি পদক বা ধনাঢ্য প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি থেকে আসেনি; এসেছে বিগত ২০ বছর ধরে ৩০ হাজারের বেশি গাছ লাগিয়ে। তাঁর এ কাজ প্রমাণ করে, পরিবেশপ্রেম ও নিঃস্বার্থ সামাজিক দায়বদ্ধতা কোনো অর্থ বা ক্ষমতার মুখাপেক্ষী নয়, এটি গভীর মানবিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ।
৭২ বছর বয়সী বাদশা মিয়ার স্লোগান—এক মুঠো ভাত নয়, এক মুঠো অক্সিজেন চাই। আজকের পরিবেশ সংকটের যুগে এক শক্তিশালী দার্শনিক বার্তা। বাদশা মিয়ার গাছ লাগানোর গল্পটি কেবল সবুজায়নের নয়, এটি এক পিতার গভীর আবেগের গল্প। ২০০৪ সালের এক বিকেলে, টাকার অভাবে সন্তানদের আমের আবদার মেটাতে না পারার কষ্ট থেকে তিনি উপলব্ধি করেন, তাঁর মতো গরিব প্রতিবেশীর সন্তানেরাও ফল কিনতে পারে না। সেই ব্যক্তিগত বেদনা থেকেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন—তিনি এমন কিছু করবেন, যা তাঁর নিজের ও দরিদ্র প্রতিবেশীদের সন্তানদের জন্য ফলের অধিকার নিশ্চিত করবে।
এই স্বপ্ন পূরণে বাদশা মিয়ার ত্যাগ ছিল হিমালয়সম। প্রাথমিক পুঁজি জোগাতে তিনি মেয়ের কানের সোনার রিং বিক্রি করে গাছের গোড়ায় খুঁটি দেন। এরপর সিদ্ধান্ত নেন, দিনমজুরি করে যা আয় করবেন, তার চার ভাগের এক ভাগ ব্যয় করবেন চারা লাগানো এবং পরিচর্যার পেছনে। একজন ভূমিহীন দিনমজুরের কাছে আয়ের এক-চতুর্থাংশ মানে জীবনধারণের সঙ্গে সরাসরি আপস করা। এই আত্মত্যাগই প্রমাণ করে, তাঁর কাছে এই গাছগুলো নিছক চারা নয়—গভীর মমতায় লালন করা এগুলো যেন তাঁর সন্তানের মতোই।
বাদশা মিয়ার কাজকে সমাজ প্রথম দিকে মোটেই সহজভাবে নেয়নি। উল্টো গ্রামের কিছু মানুষ তাঁকে ‘পাগল’ বলে উপহাস করেছে। গাছের চারা লাগাতে গিয়ে তিনি মানুষের বাধা পেয়েছেন, তাঁর লাগানো গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে এবং একপর্যায়ে তাঁকে মারধরও করা হয়েছে। কিন্তু সেই সমাজের মানুষই এখন বাদশা মিয়ার দীর্ঘ ত্যাগ ও পরিশ্রমের সুফল ভোগ করছে।
বাদশা মিয়ার এই উদ্যোগ কেবল একটি স্থানীয় গল্প নয়, এটি সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি শিক্ষা। কোটি কোটি টাকার বন সৃজন প্রকল্প যেখানে অনেক সময় লোকদেখানো বা অপচয়ের শিকার হয়, সেখানে একজন দিনমজুর দেখিয়ে দিলেন, ভালোবাসা ও সদিচ্ছা থাকলে সামান্য সম্পদ দিয়েই পরিবেশবিপ্লব ঘটানো সম্ভব।
উপজেলা প্রশাসন বাদশা মিয়াকে পুরস্কৃত করেছে, যা প্রশংসনীয়। আমরা আশা করব, স্থানীয় বন বিভাগ ও কৃষি বিভাগ বাদশাকে গাছ লাগানোর কাজে স্থায়ীভাবে সহযোগিতা করবে। বাদশা মিয়ারা আমাদের অনুপ্রেরণা। তাঁর প্রতি আমাদের অভিবাদন।