‘আরব’ বা ‘মুসলিম ন্যাটো’ এবার কি আলোর মুখ দেখবে
Published: 22nd, September 2025 GMT
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া প্রস্তাব নিয়ে কাতারের দোহায় আলোচনায় বসেন হামাসের নেতারা। এ সময় একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানতে শুরু করে দোহার আবাসিক এলাকায় হামাস নেতাদের ভবনে। কুণ্ডলী পাকিয়ে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায় দোহার আকাশে।
অবশ্য ৯ সেপ্টেম্বরে ওই হামলা থেকে অল্পের জন্য বেঁচে যান দোহায় অবস্থানরত হামাসের রাজনৈতিক শাখার নেতারা। এতে নিহত হন হামাসের শীর্ষ নেতা খলিল আল-হায়ার ছেলেসহ পাঁচজন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে কাতারের একজন নিরাপত্তাকর্মীও রয়েছেন। বাকিরা হামাস নেতাদের নিরাপত্তারক্ষী।
কাতারে ইসরায়েলের এই হামলার পর নড়রচড়ে বসেছে উপসাগরীয় আরব দেশগুলো। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাতারের কৌশলগত সম্পর্ক থাকার পর ইসরায়েলের এমন ‘স্পর্ধা’ হজম করা কঠিন হয়ে উঠেছে উপসাগরীয় নেতাদের জন্য। বিশেষ করে হামলার আগে ইসরায়েল বিষয়টি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জানিয়েছেন, এমন খবর প্রকাশ্যে আসার পর আরব নেতারা ‘বিকল্প’ চিন্তা করতে শুরু করেছেন, এমন গুঞ্জন উঠেছে।
ইসরায়েলের হামলায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় কাতার। ১৫ সেপ্টেম্বর দোহায় ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) ও উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থার (জিসিসি) জরুরি সম্মেলন আহ্বান করা হয়। সেখানে প্রায় ৬০টি দেশের নেতা ও কর্মকর্তারা অংশ নেন। বেশির ভাগ নেতাই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সম্মিলিত ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন।
কাতারে ইসরায়েলের হামলার পর ন্যাটোর আদলে ‘আরব ন্যাটো’ বা ‘মুসলিম ন্যাটো’ ধারণাটি আবার সামনে এসেছে। মিসরের সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল নিউজ জানিয়েছে, কাতারে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে মিসরের পক্ষ থেকে আরব সামরিক জোটের প্রস্তাব দিয়েছে কায়রো। এ ছাড়া ওআইসির সম্মেলনে ইরাকের পক্ষ থেকে ‘মুসলিম ন্যাটো’ গঠনের প্রস্তাব এসেছে।ছয় আরব দেশের সমন্বয়ে গঠিত জিসিসি জোটের বৈঠকে নেতারা যৌথ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সচলের ঘোষণা দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯ সেপ্টেম্বর জোটটির যৌথ প্রতিরক্ষা কাউন্সিল দোহায় এক বিশেষ অধিবেশনে যেকোনো ধরনের বিদেশি হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক যৌথ ব্যবস্থা নিতে সম্মত হয়।
এ ছাড়া সৌদি আরব ও পাকিস্তান ১৭ সেপ্টেম্বর ‘কৌশলগত যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি’ সই করলে নতুন করে পালে হাওয়া পায় ‘আরব ন্যাটো’ বা ‘মুসলিম ন্যাটো’ ধারণাটি।
প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর শেষে আলিঙ্গন করছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স প ট ম বর ইসর য় ল র ত রক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
বুরেভেসতনিক ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাতাদের পুরস্কৃত করলেন পুতিন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পারমাণবিক শক্তিচালিত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ‘বুরেভেসতনিক’ ও সুপার টর্পেডো ‘পোসেইডন’-এর নির্মাতাদের রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে সম্মানিত করেছেন।
সামরিক কিছু বিশ্লেষকদের মতে, ক্রেমলিনের এই পদক্ষেপ আদতে ইউক্রেনকে সমর্থন করা থেকে পশ্চিমাদের নিরুৎসাহিত করতে রুশ প্রচেষ্টার সর্বশেষ সংকেত। খবর সিএনএনের।
আরো পড়ুন:
ইউক্রেনের ৯৮টি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি রাশিয়ার
ট্রাম্পের নির্দেশে ৩০ বছর পর মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা
মঙ্গলবার ক্রেমলিনে পুরস্কার অনুষ্ঠানে পুতিন দাবি করেন, ‘পোসেইডন’ সুপার টর্পেডো ও ‘বুরেভেসতনিক’ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের মতো পারমাণবিক-সক্ষম অস্ত্রগুলো কেবল বর্তমানের জন্য নয়, বরং পুরো একবিংশ শতাব্দীর জন্য রাশিয়ার জন্য কৌশলগত ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির অগ্রগতির প্রশংসা করে পুতিন বলেন, “উড়ার ক্ষমতার দিক থেকে বুরেভেসতনিক বিশ্বের পরিচিত সব দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাকে ছাড়িয়ে গেছে।”
রুশ প্রেসিডন্ট আরো দাবি করেন, এই অনন্য অস্ত্রগুলো কোনো দেশের কাছে নেই এবং এগুলো যেকোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে সক্ষম।
পুতিন আরো জানান, রাশিয়া আরেকটি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র ওরেশনিকের ধারাবাহিক উৎপাদন শুরু করেছে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে ইউক্রেনের ডিনিপ্রোতে অঞ্চলে এক হামলায় ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল রাশিয়া, যা ইতিহাসে কোনো যুদ্ধে মধ্যম-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম হামলা।
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে পুতিনের গড়িমসির কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মাসে রাশিয়ার শীর্ষ দুটি তেল কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং হাঙ্গেরিতে পুতিনের সঙ্গে প্রস্তাবিত বৈঠক বাতিল করার পর, মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে এই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার কয়েকদিন পর, পুতিন গত ২৬ অক্টোবর ঘোষণা করেন যে, রাশিয়া বুরেভেসতনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। ক্রেমলিন কর্তৃক প্রকাশিত একটি ভিডিওতে, সামরিক পোশাক পরা পুতিনকে রুশ সামরিক বাহিনীর প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেখা যায়। ওই বৈঠকে পুতিনকে জেনারেল ভ্যালেরি গেরাসিমভ জানান, বুরেভেসতনিক ১৪ হাজার কিলোমিটার (৮ হাজার ৭০০ মাইল) দূরত্ব অতিক্রম করেছে এবং প্রায় ১৫ ঘণ্টা ধরে আকাশে ছিল।
এর ঠিক দুইদিন পর গত ২৮ অক্টোবর পুতিন দাবি করেন, সুপার টর্পেডো ‘পোসেইডন’ এর সফল পরীক্ষা চালিয়েছে রাশিয়া।
পারমাণবিক শক্তি চালিত ‘বুরেভেসতনিক’ কিংবা ‘পোসেইডন’- দুটির কোনোটিই নতুন অস্ত্র নয়। পুতিন ২০১৮ সালে দুটি অস্ত্রই উন্মোচন করেছিলেন। এমনকি বুরেভেসতনিকের সফল পরীক্ষার কথা ২০২৩ সালেই ঘোষণা করেছিলেন।
তবে, সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, ‘রাশিয়া আগে উন্মোচিত ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির নতুন পরীক্ষা চালিয়ে পশ্চিমা বিশ্বে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন পারমাণবিক হুমকি পাঠাচ্ছে।’
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (সিএসআইএস) মঙ্গলবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলেছে, ‘ক্ষেপণাস্ত্রের দূরত্বের ক্ষমতার উপর বারবার জোর দেওয়া এবং যেকোনো ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভাঙার ক্ষমতার উপর জোর দেওয়া ইঙ্গিত দেয় যে, লক্ষ্যবস্তু হবে যুক্তরাষ্ট্র; কোনো আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ নয়, যা রাশিয়া অনেক সস্তা স্বল্প-পাল্লার সিস্টেম দিয়ে হামলা করতে পারে।’
প্রতিবেদনে বিদেশি হামলা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষা করার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের ‘গোল্ডেন ডোম’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরির পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করা হয়।
রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ২৬ অক্টোবর বুরেভেসতনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষার ঘোষণায় স্পষ্টভাবে গোল্ডেন ডোমের নাম উল্লেখ করেননি। কিন্তু তিনি তার বক্তব্যে বিশ্বের যেকোনো ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উড়িয়ে দিতে বার বার ক্ষেপণাস্ত্রটির সক্ষমতার প্রশংসা করেছেন।
সিএসআইএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘পুতিন দূরপাল্লার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে ভয় দেখাতে চাইছেন, যাতে করে মার্কিন সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের রাশিয়ার স্বার্থের জন্য হুমকিমূলক নীতি অনুসরণ করতে নিরুৎসাহিত করা যায়।’
ট্রাম্প মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার নির্দেশ দেওয়ার কয়েকদিন পর ক্রেমলিনে এই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি ‘অন্যান্য দেশের পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের কারণে’ এই আদেশ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার পুতিন তার ভাষণে দাবি করেন, রাশিয়া ‘কাউকে হুমকি দিচ্ছে না’।
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, “অন্যান্য সব পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মতো রাশিয়াও তার পারমাণবিক সক্ষমতা ও কৌশলগত সক্ষমতা বিকাশ করছে। আমরা এখন যা কিছু করছি তা অনেক আগেই ঘোষণা করা কাজের ধারাবাহিকতা।”
ঢাকা/ফিরোজ