মাদকের টাকা জোগাতে দেড় মাসের সন্তানকে বিক্রি, পরে দাদা-দাদির কাছে দিল পুলিশ
Published: 24th, June 2025 GMT
মাদকের টাকা জোগাতে দেড় মাস বয়সী নিজের শিশুপুত্রকে প্রতিবেশীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন এক বাবা। গতকাল সোমবার দুপুরে শরীয়তপুর সদর উপজেলার চরপালং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে পুলিশ রাতে শিশুটিকে উদ্ধার করে তার দাদা-দাদির জিম্মায় দেয়।
শিশুটির বাবার নাম ইব্রাহীম হাওলাদার। তিনি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ফতেজঙ্গপুর গ্রামের বাসিন্দা শওকত হাওলাদারের ছেলে। পরিবার নিয়ে শহরের চরপালং এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, ইব্রাহীম মাদক বিক্রি ও সেবনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এতে পরিবারে দেনা হয়। সেই দেনা পরিশোধে তিনি ছেলেকে প্রতিবেশী ইকবাল হোসেন ও তাঁর স্ত্রী মুক্তা আক্তারের কাছে ৩১ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় একজন জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে ফোন করেন। এরপর পালং মডেল থানার পুলিশ স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় রাতে শিশুটিকে উদ্ধার করে। আটক করা হয় ইব্রাহীম ও তাঁর স্ত্রী শ্রাবণীকে। শিশুটির দাদা শওকত হাওলাদার ও দাদি ঝর্ণা বেগম থানায় গিয়ে মুচলেকা দিয়ে ইব্রাহীম ও শ্রাবণীকে ছাড়িয়ে নেন।
এ বিষয়ে ইব্রাহীম হাওলাদার বলেন, ‘আমি মাদক সেবন ও বিক্রি করতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। ওই ঋণ পরিশোধের টাকা পরিবারের কাছে চেয়েছিলাম। টাকা না পেয়ে ছেলেকে বিক্রি করার জন্য স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করেছি। তাঁর সম্মতি পেয়ে ৩১ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিই।’
শিশুটির দাদা শওকত হাওলাদার বলেন, ‘একজন বাবার সন্তান মাদকসেবী হলে ওই বাবার দুঃখকষ্টের শেষ থাকে না। ওর যন্ত্রণায় আমরা অতিষ্ঠ ছিলাম। সে তার সন্তানকে বিক্রি করে দেবে, তা কল্পনাও করতে পারিনি। আমার নাতিকে বিক্রি করে দেওয়ার খবর প্রতিবেশীদের কাছে শুনে পুলিশের সহায়তা নিয়ে নাতিকে উদ্ধার করেছি।’
শিশুটিকে নেওয়া প্রতিবেশী ইকবাল হোসেন বলেন, তাঁর তিন কন্যাসন্তান। স্ত্রী ছেলেসন্তানের জন্য আকুতি জানাতেন। ইব্রাহীম দম্পতি তাঁদের ছেলেকে লালন-পালনের জন্য ইকবাল হোসেনের কাছে দিতে রাজি হলে তাঁরা কিছু টাকা দিয়ে শিশুটিকে নেন। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধার মুখে পুলিশের হাতে শিশুটিকে তুলে দেন বলে জানান।
পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি শিশুকে তার বাবা-মা বিক্রি করে দিয়েছে—জরুরি সেবা ৯৯৯-এ এমন অভিযোগ পাই। এরপর সন্ধ্যায় শিশুটিকে উদ্ধার করে তার বাবা-মাকে থানায় নিয়ে আসি। পরে তাঁদের অভিভাবকেরা মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়েছেন। শিশুর বাবা মাদকাসক্ত। তাই তিনি এমন কাজ করেছেন বলে পরিবার জানিয়েছে। কোনো পক্ষ লিখিত অভিযোগ না দেওয়ায় মামলা করা হয়নি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
লোকসানে বগুড়ার ‘মধুবন সিনেপ্লেক্স’ বন্ধ
বগুড়ার ‘মধুবন সিনেপ্লেক্স’ লোকসানের কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) থেকে সিনেপ্লেক্সটি বন্ধ রাখা হয়েছে।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সিনেপ্লেক্সটির স্বত্বাধিকারী রোকনুজ্জামান ইউনূস রুবেল সাংবাদিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে এটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ এবং বন্ধের কারণ জানান।
আরো পড়ুন:
কাজাখস্তানে আফরান নিশোর ‘দম’
আশির দশকের বাংলা সিনেমা ও সিনেমাকেন্দ্রিক সমাজ
রোকনুজ্জামান ইউনূস বলেন, ‘‘সিনেপ্লেক্স চালাতে গিয়ে সব মিলিয়ে মাসে প্রায় তিন লাখ টাকার মতো খরচ হচ্ছে। কিন্তু সেটা তুলতে পারছি না দর্শকদের টানতে পারবে এমন সিনেমার অভাবে। 'তাণ্ডব’ সিনেমার পর আর কোনো ব্যবসা সফল সিনেমা আসেনি। অনেক ছবি মুক্তি পেলেও দর্শকের সাড়া মেলেনি। আমাদের দেশের সিনেমা ঈদ ছাড়া দর্শক টানতে পারছে না।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘বিদেশি সিনেমা চালাতে পারলে দর্শক আসত। প্রতিযোগিতায় আমাদের সিনেমাও ভালো চলত। কিন্তু বাইরের সিনেমা আমদানি একেবারে বন্ধ। তাই টানা লোকসান আর সম্ভব নয়। মূল কথা হচ্ছে, আমাদের ব্যবসা আমাদের মতো করে চালাতে দিতে হবে।’’
রোকনুজ্জামান ইউনূস বলেন, ‘‘সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ, আমরা আপনাদের সঙ্গে দেখা করতে চাই। আমাদের কথা আপনারা শোনেন। আমাদের কথা যদি পছন্দ হয়, ভালো লাগে; তাহলে সেটা গ্রহণ করেন। আমাদের কথা যদি অগ্রহণযোগ্য হয়, আমাদের বলে দেন; এটা হবে না। তাহলে আমরা আমাদের হল একেবারে বন্ধ করে দেব। আর যদি আমাদের সহযোগিতা করেন, তাহলে এটি আমরা আরো সুন্দরভাবে করব এবং আমরা কথা দেব, মধুবনের মতো আরো ২০০ সিনেপ্লেক্স আমরা বাংলাদেশে তৈরি করব।’’
‘মধুবন সিনেপ্লেক্সের’ স্বত্বাধিকারী বলেন, ‘‘২০১৫ সালে শাকিব খানের ‘লাভ ম্যারেজ’ মুক্তির সময় ভাঙা চেয়ার, ছারপোকার কামড়, গরমের মধ্যেও হলভর্তি দর্শক হয়। এরপর ২০১৬ সালে ‘আয়নাবাজি’ প্রদর্শনের সময় শিক্ষিত শ্রেণির দর্শকের ঢল নামে। এমন পরিবেশেও দর্শকদের আগ্রহ দেখে সিনেপ্লেক্স তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সময় দর্শকদের সঙ্গে কথা বলে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করা হয়। এরপর ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২০২১ সালে বগুড়ার প্রথম সিনেপ্লেক্স হিসেবে যাত্রা শুরু করে মধুবন।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘মধুবন সিনেপ্লেক্সের জন্য বেলজিয়াম থেকে ‘প্রজেকশন মেশিন’ আনা হয়। আমেরিকা থেকে ‘সাউন্ড সিস্টেম’ এবং মুম্বাই থেকে ‘গ্যালালাইট মেটাল কোডেড পর্দা’ আনা হয়। সেই সিনেপ্লেক্স আজ বন্ধ করে দিতে হচ্ছে।’’
ঢাকা/এনাম/বকুল