মাদকের টাকা জোগাতে দেড় মাস বয়সী নিজের শিশুপুত্রকে প্রতিবেশীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন এক বাবা। গতকাল সোমবার দুপুরে শরীয়তপুর সদর উপজেলার চরপালং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে পুলিশ রাতে শিশুটিকে উদ্ধার করে তার দাদা-দাদির জিম্মায় দেয়।

শিশুটির বাবার নাম ইব্রাহীম হাওলাদার। তিনি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ফতেজঙ্গপুর গ্রামের বাসিন্দা শওকত হাওলাদারের ছেলে। পরিবার নিয়ে শহরের চরপালং এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, ইব্রাহীম মাদক বিক্রি ও সেবনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এতে পরিবারে দেনা হয়। সেই দেনা পরিশোধে তিনি ছেলেকে প্রতিবেশী ইকবাল হোসেন ও তাঁর স্ত্রী মুক্তা আক্তারের কাছে ৩১ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় একজন জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে ফোন করেন। এরপর পালং মডেল থানার পুলিশ স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় রাতে শিশুটিকে উদ্ধার করে। আটক করা হয় ইব্রাহীম ও তাঁর স্ত্রী শ্রাবণীকে। শিশুটির দাদা শওকত হাওলাদার ও দাদি ঝর্ণা বেগম থানায় গিয়ে মুচলেকা দিয়ে ইব্রাহীম ও শ্রাবণীকে ছাড়িয়ে নেন।

এ বিষয়ে ইব্রাহীম হাওলাদার বলেন, ‘আমি মাদক সেবন ও বিক্রি করতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। ওই ঋণ পরিশোধের টাকা পরিবারের কাছে চেয়েছিলাম। টাকা না পেয়ে ছেলেকে বিক্রি করার জন্য স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করেছি। তাঁর সম্মতি পেয়ে ৩১ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিই।’

শিশুটির দাদা শওকত হাওলাদার বলেন, ‘একজন বাবার সন্তান মাদকসেবী হলে ওই বাবার দুঃখকষ্টের শেষ থাকে না। ওর যন্ত্রণায় আমরা অতিষ্ঠ ছিলাম। সে তার সন্তানকে বিক্রি করে দেবে, তা কল্পনাও করতে পারিনি। আমার নাতিকে বিক্রি করে দেওয়ার খবর প্রতিবেশীদের কাছে শুনে পুলিশের সহায়তা নিয়ে নাতিকে উদ্ধার করেছি।’

শিশুটিকে নেওয়া প্রতিবেশী ইকবাল হোসেন বলেন, তাঁর তিন কন্যাসন্তান। স্ত্রী ছেলেসন্তানের জন্য আকুতি জানাতেন। ইব্রাহীম দম্পতি তাঁদের ছেলেকে লালন-পালনের জন্য ইকবাল হোসেনের কাছে দিতে রাজি হলে তাঁরা কিছু টাকা দিয়ে শিশুটিকে নেন। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধার মুখে পুলিশের হাতে শিশুটিকে তুলে দেন বলে জানান।

পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি শিশুকে তার বাবা-মা বিক্রি করে দিয়েছে—জরুরি সেবা ৯৯৯-এ এমন অভিযোগ পাই। এরপর সন্ধ্যায় শিশুটিকে উদ্ধার করে তার বাবা-মাকে থানায় নিয়ে আসি। পরে তাঁদের অভিভাবকেরা মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়েছেন। শিশুর বাবা মাদকাসক্ত। তাই তিনি এমন কাজ করেছেন বলে পরিবার জানিয়েছে। কোনো পক্ষ লিখিত অভিযোগ না দেওয়ায় মামলা করা হয়নি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

নষ্ট করতে বলার পরও মোবাইল ফোন রেখে দিয়েছিলেন প্রেমিক, সেই ভুলে ফাঁস স্বামী খুনের রহস্য

মাদকাসক্ত স্বামীর উপর্যুপরি নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন এক নারী। একপর্যায়ে ৩০ পেরোনো এই নারী নিজের স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। ভাড়াটে খুনির মাধ্যমে তাঁকে হত্যা করান। মরদেহ ফেলা হয় অন্য রাজ্যের এক নর্দমায়। এরপর প্রেমিকের সঙ্গে নতুন জীবনের প্রস্তুতি শুরু করেন। কিন্তু খুন হওয়া স্বামীর মুঠোফোন এবং প্রেমিকের একটি ভুলে সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

খুন হওয়া ব্যক্তির নাম প্রিতম প্রকাশ। একাধিক মামলা থাকায় দিল্লি পুলিশের অপরাধ বিভাগ তাঁকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল। এক মামলায় তাঁকে পলাতক অভিযুক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। পলাতক প্রিতমকে খুঁজতে গিয়ে লোমহর্ষক এক ষড়যন্ত্রের হদিস পায় পুলিশ।

পুলিশের অনুসন্ধানে উঠে আসে, স্ত্রী সোনিয়া প্রিতমকে হত্যার জন্য ‘সুপারি’ দিয়েছিলেন, অর্থাৎ টাকা দিয়ে খুনি ভাড়া করেছিলেন। নতুন করে জীবন শুরুর আশায় তিনি প্রিতমকে হত্যা করেছিলেন। গ্রেপ্তারের পর সোনিয়া ও রোহিত পুলিশের কাছে এ কথা বলেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে দুজনেই প্রিতমকে হত্যার কথা স্বীকারও করেছেন।

শুরু

জিজ্ঞাসাবাদে ৩৪ বছর বয়সী সোনিয়া পুলিশকে বলেন, ১৬ বছর বয়সে পরিবারের আপত্তি উপেক্ষা করে তিনি আট বছরের বড় প্রিতমকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। তাঁরা দিল্লির আলিপুর এলাকায় থাকতেন।

পুলিশকে সোনিয়া আরও বলেন, প্রিতম মাদকাসক্ত ছিলেন। একাধিক অপরাধে জড়িয়ে পড়েছিলেন। তিনি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রাখা, ডাকাতি ও অপহরণের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়েছিলেন। অনেকবার চেষ্টা করেও সোনিয়া স্বামীকে মাদক ছাড়ানো বা অপরাধের পথ থেকে ফেরাতে পারেননি। বরং মাদক নিয়েই প্রায় সময় বাড়ি ফিরতেন প্রিতম এবং তাঁর ওপর শারীরিক নির্যাতন চালাতেন।

২০২৩ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রোহিত নামের এক ক্যাবচালকের সঙ্গে সোনিয়ার পরিচয় হয়। রোহিতও অতীতে নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ধীরে ধীরে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একসময় তাঁরা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সোনিয়ার নতুন জীবনের পথে স্বামী প্রিতম সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ান। তাই নতুন জীবন শুরু করতে প্রিতমকে মেরে ফেলারই সিদ্ধান্ত নেন সোনিয়া।

হত্যার পরিকল্পনা

সোনিয়া পুলিশকে জানান, গত বছরের ২ জুলাই প্রিতমের সঙ্গে তাঁর ঝগড়া হয়। এরপর তিনি দিল্লির পাশের হরিয়ানা রাজ্যের সোনিপতে বোন দীপার বাসায় চলে যান। রোহিতই তাঁকে সেখানে পৌঁছে দেন।

হরিয়ানাতে যাওয়ার পথে রোহিতের কাছে প্রিতমকে হত্যার প্রস্তাব দেন সোনিয়া, যাতে তাঁরা একসঙ্গে থাকতে পারেন। রোহিতের বিরুদ্ধে আগে থেকেই চারটি ফৌজদারি মামলা ছিল। এর মধ্যে একটি ছিল খুনের মামলা। পরে তিনি দিল্লি-সোনিপত রুটে ক্যাব (ভাড়ায়চালিত কার) চালানোর কাজ শুরু করেন।

গাড়িতে করে দিল্লি ছেড়ে যেতে যেতে রোহিত সোনিয়াকে বলেন, তিনি নিজে প্রিতমকে খুন করতে পারবেন না। তবে ছয় লাখ রুপি জোগাড় করতে পারলে একজন ভাড়াটে খুনি নিয়োগ করা সম্ভব। কিন্তু সোনিয়ার কাছে এত টাকা ছিল না। এর ফলে সেদিন বিষয়টি আর এগোয়নি। রোহিত তাঁকে সোনিপতে বোনের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে ফিরে আসেন।

খুন

গত বছরের ৫ জুলাই সোনিয়াকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে সোনিপতে যান প্রিতম। কিন্তু সেখানে তাঁদের মধ্যে আবারও ঝগড়া হয়। তখন সোনিয়া প্রিতমকে খুন করার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। এরপর তিনি বোন দীপার স্বামীর ভাই বিজয়ের শরণাপন্ন হন। বিজয় বলেন, এক লাখ রুপি দিলে তিনি প্রিতমকে খুন করতে পারবেন। সোনিয়া জানান, তিনি সর্বোচ্চ ৫০ হাজার রুপি দিতে পারবেন। শেষ পর্যন্ত এই টাকাতেই তাঁদের মধ্যে রফা হয়।

সেদিন সন্ধ্যায় প্রিতম আবারও সোনিয়াকে তাঁর সঙ্গে বাড়িতে ফেরার অনুরোধ করেন। কিন্তু সোনিয়া আসতে রাজি হননি। উল্টো প্রিতমকে ওই রাতে বোন দীপার বাসায় থাকতে বলেন। এরপর সোনিয়া বিজয়কে ওই রাতে প্রিতমকে শেষ করে দেওয়ার সংকেত দেন।

রাতে ঘরের নিচতলায় প্রিতম ও বিজয়ের ঘুমানোর ব্যবস্থা করা হয়। সোনিয়া ও অন্যরা চলে যান ছাদে। বিজয় রাতের কোনো এক সময় প্রিতমকে খুন করেন। প্রিতমের মরদেহ সাদা চাদরে মুড়িয়ে অদূরে একটি নর্দমায় ফেলে দেওয়া হয়।

প্রিতমের মুঠোফোন ঘরে পড়ে ছিল। পেয়ে তা নিজের সঙ্গে রেখে দেন সোনিয়া। নর্দমায় পড়ে থাকা প্রিতমের মরদেহ কয়েক দিন পর মানুষের নজরে আসে। কিন্তু পুলিশ তা সঙ্গে সঙ্গে শনাক্ত করতে পারেনি। এ অবস্থায় ঘটনাটি ওখানেই ধামাচাপা পড়ে যায়।

কিন্তু নিজের অপরাধ ঢাকতে সোনিয়া দিল্লির আলিপুর থানায় প্রিতমকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মর্মে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি লেখেন, তাঁর স্বামী প্রিতমকে ৫ জুলাই থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে প্রিতমের ফোনটি তিনি রোহিতকে দিয়ে সেটি নষ্ট করে ফেলতে বলেন।

পুলিশের রহস্য উন্মোচন

প্রিতমের বিরুদ্ধে যেহেতু একাধিক ফৌজদারি মামলা ছিল, তাই পুলিশ নিয়মিতভাবে তাঁকে খুঁজছিল। পুলিশের গোয়েন্দা শাখার কাছে তথ্য ছিল, প্রিতম কয়েক মাস ধরে নিখোঁজ। এরপর তারা লক্ষ করে, স্ত্রী সোনিয়া প্রিতমের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন। তারপরও পুলিশের অনুসন্ধানী দল নিখোঁজ প্রিতমের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বিশেষ কোনো তথ্য পায়নি।

এ পরিস্থিতিতে পুলিশ প্রিতমের ফোন ট্র্যাক বা ফোনের অবস্থান অনুসরণ করে দেখতে পায়, ফোনটি ব্যবহৃত হচ্ছে। সর্বশেষ তা সোনিপত এলাকায় ব্যবহৃত হয়েছে। সোনিয়ার নির্দেশনা সত্ত্বেও ধ্বংস না করে তখনো প্রিতমের ফোনটি ব্যবহার করে যাচ্ছিলেন রোহিত।

পুলিশ তখন রোহিতের ওপর নজরদারি শুরু করে। এতে করে তাঁর আগের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সামনে চলে আসে। অবশেষে তাঁকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রথমে রোহিত স্বীকার করেননি। রোহিত বলেন, অচেনা এক ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি ফোনটি কিনেছেন।

কিন্তু পুলিশ রোহিতের ওপর চাপ প্রয়োগ করে। তখন একপর্যায়ে সোনিয়ার সঙ্গে নিজের সম্পর্ক, প্রিতমকে খুন করার পরিকল্পনা, সোনিয়ার আত্মীয়কে দেওয়া ‘সুপারি’এবং হত্যার পর প্রিতমের মরদেহ নর্দমায় ফেলা নিয়ে পুলিশকে বিস্তারিত তথ্য দেন রোহিত।

স্ত্রীর স্বীকারোক্তি

রোহিতের পর পুলিশ সোনিয়াকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে অপরাধ স্বীকার করেন তিনি। প্রিতমকে খুন করার জন্য বিজয়কে টাকা দেওয়ার কথাও তিনি পুলিশকে জানান।

সোনিয়া আরও বলেন, প্রিতমের মরদেহ ফেলে দেওয়ার পর সেটার ভিডিও ক্লিপও বিজয় তাঁকে পাঠিয়েছিল। এসব তথ্য উদ্‌ঘাটনের পর দিল্লি পুলিশের অপরাধ শাখা হরিয়ানার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। হরিয়ানার পুলিশ জানায়, নর্দমায় পাওয়া মরদেহটি শনাক্ত করা যায়নি, তবে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

সোনিয়া পুলিশকে বলেন, প্রিতমকে খুন করার পর তিনি বিজয়কে ৫০ হাজার রুপি দিয়েছেন। এরপর তিনি প্রিতমের একটি গাড়ি ২ লাখ ৮০ হাজার রুপিতে বিক্রি করেন। ওখান থেকে কিছু অর্থ রোহিতকে দিয়েছেন আর কিছু অর্থ নিজে খরচ করেছেন। এই সময়টাতে সোনিয়া রোহিতের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, প্রিতমের ফোন ধ্বংস করা হয়েছে কি না? রোহিত মিথ্যা বলেছিলেন। সেই মিথ্যাই তাঁদের জীবনে বড় বিপদ ডেকে আনে।

রোহিত ও সোনিয়া এখন কারাগারে। আগের একটি চুরির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বিজয়ও কারাগারে। পুলিশের তথ্যমতে, সোনিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক চলাকালে এপ্রিল মাসে বিয়ে করেন রোহিত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাংবাদিক তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা : নারায়ণগঞ্জ টেলিভিশন জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশনের নিন্দা
  • হুমা কুরেশির ভাই খুন
  • ফ্রিজের বরফ দূর করার ৭টি সহজ উপায়
  • প্রথমে প্রবাসীদের তথ্য সংগ্রহ, এরপর অনুসরণ করে ডাকাতি
  • এনবিআরের আন্দোলনে ব্যবসায়ীদের ক্ষয়ক্ষতি জানতে চেয়েছে সরকার
  • এনসিএল টি-টোয়েন্টি দিয়ে ফিরবেন তামিম, থাকবেন মুশফিকুর-মাহমুদউল্লা
  • ‘তুমি কাজ করবে নাকি?’, একটা প্রশ্ন বদলে দিল জীবনের গল্প
  • কান দিয়ে পানি পড়লে কী সার্জারির দরকার আছে?
  • জন্মের পর হাসপাতালে নবজাতককে রেখে পালিয়ে যান দম্পতি, অতঃপর
  • নষ্ট করতে বলার পরও মোবাইল ফোন রেখে দিয়েছিলেন প্রেমিক, সেই ভুলে ফাঁস স্বামী খুনের রহস্য