পয়েন্টসম্যান আলী ওসমানের বিভিন্ন কীর্তিকলাপে অতিষ্ঠ স্থানীয়রা। তাঁর বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার অভিযোগ দিলেও প্রতিকার মিলছে না। তাই খবর পেয়ে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আটকে ওসমানের বিচার দাবি করেছেন তারা। এ সময় বিস্তারিত শুনে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ছাড়া পান কর্মকর্তারা।
গতকাল শনিবার দুপুরে ময়মনসিংহ-ভৈরব রেললাইনে থাকা নান্দাইল উপজেলার নান্দাইল রোড রেলস্টেশনে এই ঘটনা ঘটে। আলী ওসমান ওই স্টেশনের পয়েন্টসম্যান পদে কর্মরত।
আলী ওসমান নান্দাইল উপজেলার পংকরহাটী গ্রামের বাসিন্দা। ২০০৫ সালে তিনি মাস্টাররোলে পয়েন্টসম্যান পদে চাকরি শুরু করেন। ২০১৭ সালে তাঁর চাকরি স্থায়ী হয়। বর্তমানে নান্দাইল রোড স্টেশনে কর্মরত থাকলেও সেখানে থাকেন না তিনি। কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে বড় বড় নেতাকর্মীর সঙ্গে ওঠাবসা তাঁর, চলেনও রাজকীয়ভাবে।
২০২৩ সালের ১৫ জুলাই ঘোষিত ২০ সদস্যের কিশোরগঞ্জ জেলা রেল শ্রমিক লীগের সভাপতি ছিলেন আলী ওসমান। সরকার পতনের পর শ্রমিক দলের আহ্বায়ক পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নিজের তিন ভাই, বোনজামাইসহ পরিবারের সাতজনকে রেলের গেটম্যান বা পয়েন্টসম্যান পদে চাকরি দিয়েছেন। কিন্তু এ লাইনে মাত্র দুটি ট্রেন চলাচল করে।
অভিযোগ রয়েছে, ওসমান বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার নামে মোটা অঙ্কের টাকা নিলেও কাউকে চাকরি অথবা টাকা ফেরত দিচ্ছেন না। এ কারণে তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। রেলের স্টাফ কোয়ার্টারসহ আশপাশের জায়গা দখলে নিয়ে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। শুধু তাই নয়, স্টেশনে থাকা অনেকগুলো গাছ বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি।
শনিবার স্থানীয়রা জানতে পারেন, একটি গ্যাংকারে (ছোট ট্রেন বিশেষ) করে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি টিম সরকারি কাজে ময়মনসিংহ যাবেন। তাদের থামিয়ে আলী ওসমানের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিচার দাবিতে লাল নিশান টানিয়ে নান্দাইল রোড রেলস্টেশনে অবস্থান নেন শত শত মানুষ। এ খবর পেয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে আসে রেলওয়ে পুলিশের ওসি লিটনের নেতৃত্বে একটি দল। তখন ওসি লিটনের বাইকের পেছনে বসেছিলেন অভিযুক্ত আলী ওসমান। তারা ঘটনাস্থলে এসেই অবস্থানকারীদের ভয়ভীতি দেখান, পরে অবরোধ তুলে নিতে অনুরোধ করেন। দুপুর দেড়টার দিকে গ্যাংকারটি কর্মকর্তাদের নিয়ে নান্দাইল রোড স্টেশনে আসে। তখন লাইনের ওপর লাল নিশান ও লোকজনের ভিড় দেখে কার থামিয়ে নিচে নেমে আসেন ঢাকা বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মহিউদ্দিনসহ অন্য কর্মকর্তারা। স্থানীয়দের কাছে ওসমানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ শোনার পাশাপাশি একটি লিখিত অভিযোগ নেন তারা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর মকর ত দ র ওসম ন র র লওয়

এছাড়াও পড়ুন:

সংকটের গভীরতা সরকার বুঝতে পারছে না

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংস্কার ঘিরে আন্দোলনের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে জানিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলছেন, এনবিআরের অচলাবস্থার কারণে শুধু পোশাক খাতেই দৈনিক ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। সমস্যা সমাধানে দ্রুত সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

গতকাল শনিবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে শীর্ষস্থানীয় ১২টি ব্যবসায়ী সংগঠনের যৌথ জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (আইসিসিবি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান, বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি কামরান টি রহমান, সিরামিক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিসিএমইএর সভাপতি মঈনুল ইসলাম, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, এমসিসিআইর সহসভাপতি ও ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সিমিন রহমান, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিসিসিআইর সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী (পারভেজ)। তিনি বলেন, এনবিআরের চেয়ারম্যানের অপসারণ কোনোমতেই কাম্য নয়। এতে কোনো সফলতা নিয়ে আসবে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করেন না। দেশ ও ব্যবসার স্বার্থে আলোচনার টেবিলে বসতে হবে। আন্দোলনকারীসহ সব পক্ষের আলোচনায় বিদ্যমান সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে।

বিসিসিআই সভাপতি বলেন, রাজস্বনীতি ও বাস্তবায়ন কার্যক্রমকে আলাদাকরণ-সংক্রান্ত বিতর্কিত অধ্যাদেশ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে করা হোক। এরপর তা স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রভাবমুক্ত রেখে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও দেশের বাস্তবতার আলোকে বাস্তবায়ন করতে হবে।

ব্যবসা-বাণিজ্যের সার্বিক উন্নয়নে এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সব জাতীয় প্রতিষ্ঠানে হয়রানিমুক্ত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে এর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে পোশাক খাতের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, এনবিআরের অচলাবস্থার কারণে দৈনিক ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে শুধু পোশাকশিল্পেই। শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষা, তথা সামগ্রিক অর্থনীতির স্বার্থে এ মুহূর্তে এনবিআর ইস্যুর সমাধান প্রয়োজন। এটি আমাদের শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষার বিষয়।

চলমান অচলাবস্থার কারণে যে সংকট তৈরি হয়েছে, সরকার তার সঠিক গুরুত্ব বুঝছে না– এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, স্থানীয় ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা চাপে আছেন। নতুন করে এ আন্দোলনের কারণে ব্যবসায়ীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এর থেকে ফিরে আসা উচিত। তাই মঙ্গলবার নয়, আজই (গতকাল) আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসে আলোচনা করে এর সমাধান করতে হবে।

আন্দোলনের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, কালক্ষেপণ না করে দ্রুত প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নেতৃত্বে অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটিকে (বিডা) যৌথভাবে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসা জরুরি। তারা বলেন, এনবিআরের সব কর্মকর্তাই অসৎ নন। তাদেরও ভবিষ্যৎ আছে। সেই বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। অর্থনীতি যাতে আর ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেই পদক্ষেপও গ্রহণ করতে হবে। এ সময় তারা আন্দোলনকারীদের প্রতি দেশের অর্থনীতির স্বার্থে ‘কলমবিরতি’ ও ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে কোনো শর্ত ছাড়া কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।

সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে আইসিসিবির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, যে কোনো দেশের সরকারের সঙ্গে বেসরকারি খাতের ইন্টারেকশন বা মিথস্ক্রিয়া অতি জরুরি। কিন্তু বর্তমান সরকারের সঙ্গে এই যোগাযোগ বা সংলাপ অনেকটা স্তিমিত। তিনি বলেন, চেয়ারম্যানের অপসারণ কাম্য নয়। কারণ, এরপর হয়তো অন্য কোনো সদস্যের অপসারণের দাবিও উঠবে। তাতে সমস্যা বাড়তে থাকবে।

শাটডাউনের কারণে রপ্তানির ক্ষতির বিষয়টি উল্লেখ করে এলএফএমইএবি সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষা করবে না। যুদ্ধ ছাড়া কোনো দেশের কাস্টমস বন্ধ থাকে কিনা, সেটি জানা নেই। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা এনবিআরের সংস্কার চান। তবে এনবিআরে অনেক সৎ কর্মকর্তা আছেন। সংস্কারের ফলে তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে, সেটি বলার অধিকার তাদের আছে। সেটিও সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে।

বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘যারা ব্যবসা করেন, তাদের সব সময়ই এনবিআর বলেন, কাস্টমস বলেন, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে ব্যবসা পরিচালনা করার চেষ্টা করতে হয়। কারণ, বাস্তবতা হলো ব্যবসায়ীরা তাদের কাছে জিম্মি। এখন ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ ও টাকা-পয়সার বণ্টন নিয়ে ঝগড়া হচ্ছে। মাঝপথে ব্যবসায়ীরা বিপদগ্রস্ত হচ্ছেন। তারা (এনবিআরের কর্মকর্তারা) সারাজীবন ব্যবসায়ীদের জ্বালাইছে, এখন সরকারকে জ্বালাচ্ছে, এখন পুরো জাতিকে জ্বালাচ্ছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ