Prothomalo:
2025-08-18@01:21:16 GMT

গ্যাসের অপেক্ষা আর শেষ হয় না

Published: 3rd, July 2025 GMT

ময়মনসিংহের ত্রিশালে ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সুতার কারখানা করেছে লান্তাবুর গ্রুপ। কাজ শেষ হয়েছে ছয় মাস আগে। কিন্তু গ্যাস–সংযোগ না পাওয়ায় কারখানাটি এখনো চালু করা যায়নি। যদিও তারা গ্যাস–সংযোগের চাহিদাপত্র (ডিমান্ড নোট) পেয়েছে ২০২২ সালের নভেম্বরে।

লান্তাবুর অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সালমান প্রথম আলোকে বলেন, কারখানাটি চালু হলে দেড় হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু গ্যাসের অভাবে চালু করা যাচ্ছে না। ওদিকে ব্যাংকঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হয়ে গেছে।

গ্যাস–সংযোগের অভাবে উৎপাদন শুরু করতে না পারা কারখানার উদাহরণ আরও আছে। পেট্রোবাংলা ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তিতাসসহ ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানির কাছে শিল্প সংযোগের এক হাজারের বেশি আবেদন জমা আছে। এর মধ্যে চার শর বেশি গ্রাহক সব প্রক্রিয়া শেষ করে সংযোগের (প্রতিশ্রুত সংযোগ) অপেক্ষায় রয়েছে। মানে হলো, তারা গ্যাস–সংযোগের জন্য টাকাও জমা দিয়েছে। বাকি ৬০০ কারখানা আবেদন করেছে। তবে প্রতিশ্রুতি পায়নি।

যে চার শর বেশি গ্রাহক সব প্রক্রিয়া শেষ করে সংযোগের (প্রতিশ্রুত সংযোগ) অপেক্ষায় রয়েছে, তাদের কেউ নতুন কারখানা, কেউ সম্প্রসারিত কারখানা, কেউ লোড বৃদ্ধির (সরবরাহের পরিমাণ) আবেদনকারী।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের কথা বলে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে শিল্পে ১৫০ থেকে ১৭৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয় শিল্পে গ্যাসের দাম। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে গত ১৩ এপ্রিল নতুন সংযোগ ও লোড বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়িয়ে দেয় বিইআরসি।

সমস্যাটি তৈরি হয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে। বিগত সরকার দেশে গ্যাস উত্তোলনে নজর না দিয়ে আমদানির পথে হেঁটেছে। ২০২২ সালের দিকে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমতে থাকায় গ্যাস আমদানি কঠিন হয়ে পড়ে। বিশ্ববাজারে দামও ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। জ্বালানি খাতে আওয়ামী লীগ সরকার বিপুল দেনা তৈরি করেছিল, যা এখন অন্তর্বর্তী সরকার শোধ করছে। নতুন সরকার দেশে গ্যাস উত্তোলনে জোর দিয়েছে; কিন্তু সংকট দূর করা যায়নি। সব মিলিয়ে চলমান কারখানাগুলো যেমন সংকটে রয়েছে, তেমনি নতুন সংযোগ চাইলেই দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে ভুগছে শিল্পকারখানাগুলো।

কুমিল্লার মাটিয়ারা এলাকায় রপ্তানিমুখী একটি প্লাস্টিক কারখানা করেছে দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। কারখানাটি উৎপাদনে এলেও পুরো সক্ষমতা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ক্যাপটিভ গ্যাস–সংযোগের জন্য পাইপলাইন বসানো, দুটি জেনারেটর বসানো—সবই শেষ। তবে গ্যাস–সংযোগের জন্য অপেক্ষা শেষ হচ্ছে না। তাঁদের ভাষ্য, কারখানাটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে অন্তত পাঁচ হাজার নতুন কর্মসংস্থানের আশা। বাখরাবাদ গ্যাস কোম্পানি থেকে তারা চাহিদাপত্র পেয়েছে ২০২১ সালের ২৩ জুন। এর বাইরে তিতাসের অধীন তাদের আরও একটি প্যাকেজিং কারখানায় গ্যাস–সংযোগের চাহিদাপত্র পেয়েছে। সেটিও এখন পর্যন্ত সংযোগ পায়নি। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে চাহিদাপত্র পেয়েছে তারা।

শিল্পগোষ্ঠীটির চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে দুটি কারখানায়। অথচ শেষ মুহূর্তে সংযোগ আটকে গেছে।

দাম বাড়ানোর আগে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হয়। সংযোগের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিনিয়োগ করানো—এটা প্রতারণা। নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, সংযোগের অনুমোদন নিয়ে জটিলতা বাড়লে ঘুষ, দুর্নীতি বা বৈষম্য সৃষ্টির সুযোগ থাকে।ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম

দাম বেড়েছে, সংকট যায়নি

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গ্যাসের দাম বারবার বেড়েছে। কিন্তু সংকট কখনোই যায়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের কথা বলে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে শিল্পে ১৫০ থেকে ১৭৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয় শিল্পে গ্যাসের দাম। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে গত ১৩ এপ্রিল নতুন সংযোগ ও লোড বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়িয়ে দেয় বিইআরসি।

এদিকে গত জানুয়ারি থেকে নতুন সংযোগ দেওয়া পুরোপুরি বন্ধ আছে। তবে সরকারের অগ্রাধিকারে আছে প্রতিশ্রুত সংযোগ। এসব গ্রাহক আবেদন করে গ্যাস কোম্পানির বোর্ড থেকে অনুমোদন পেয়েছেন। এরপর জামানতের টাকা জমা দিয়ে ডিমান্ড নোট (চাহিদাপত্র) নিয়েছেন। গত ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত যারা চাহিদাপত্র পেয়েছে, তাদের প্রতিশ্রুত গ্রাহকের তালিকায় রাখা হয়েছে।

গত ১৬ এপ্রিল জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ নির্দেশনা দেয়, গ্যাস–সংযোগের আবেদনগুলো তিন ভাগে ভাগ করতে—নতুন সংযোগ, লোড বৃদ্ধি ও প্রতিশ্রুত সংযোগ। ১৮ জুন পাঁচ সদস্যের একটি যাচাই কমিটি গঠিত হয় অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে। কমিটির কাজ আবেদন যাচাই করে অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি করা; শিল্প স্থাপনের প্রস্তুতি পর্যালোচনা এবং মাঠপর্যায়ে পরিদর্শন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কোম্পানি আইন অনুসারে সর্বোচ্চ ক্ষমতা বোর্ডের হাতে। তাই গ্যাস–সংযোগ দিতে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজনে গ্যাস–সংযোগ নিয়ে আলাদা বিধিমালা বা নীতিমালা করে দিতে পারে সরকার। যেসব কারখানা গ্যাস পেলেই সঙ্গে সঙ্গে কারখানা চালু করতে পারবে, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, সংযোগের অনুমোদন মন্ত্রণালয় দেবে না, কোম্পানির বোর্ড থেকেই হবে। তবে টাকার বিনিময়ে সংযোগ দেওয়ার অভিযোগ আছে কোম্পানির বিরুদ্ধে। তাই সংযোগের যৌক্তিকতা ও অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তালিকা তৈরিতে কাজ করছে কমিটি।

‘সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে’

বর্তমানে দেশে গড়ে ২৮০ থেকে ২৯০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে, যেখানে চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। শিল্প খাতে যাচ্ছে ১২০ কোটির কিছু বেশি। এক হিসাবে দেখা গেছে, প্রতিশ্রুত সংযোগগুলো দেওয়া হলে আরও ১০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে হবে।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, দাম বাড়ানোর আগে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হয়। সংযোগের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিনিয়োগ করানো—এটা প্রতারণা। নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, সংযোগের অনুমোদন নিয়ে জটিলতা বাড়লে ঘুষ, দুর্নীতি বা বৈষম্য সৃষ্টির সুযোগ থাকে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র আমল ল গ সরক র র প রথম আল ক নত ন স য গ সরবর হ গ র হক আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্নীতি ও অপচয়ের কারণে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারছি না: জ্বালানি উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, ‘আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ খুব একটা নেই। কিছু প্রাকৃতিক গ্যাস ছিল। সেটাও ফুরিয়ে আসছে। এমনকি দুর্নীতি ও অপচয়ের কারণে আমরা সীমিত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারছি না। প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না, ব্যয়ও বাড়ে। এসব থামাতে হবে।’

আজ শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম–ঢাকা জ্বালানি তেল সরবরাহের পাইপলাইন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা এ কথাগুলো বলেন। চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গায় অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, ‘বড় সমস্যা হলো, আমাদের প্রকল্পের ব্যয় বেশি। আমাদের সড়ক নির্মাণ ব্যয় অন্য দেশের তুলনায় বেশি। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায়ও অনেক বেশি। সুতরাং ব্যয় কমাতে হবে।’

পাইপলাইনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল পরিবহনে ২০১৬ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। তিন দফা মেয়াদ বাড়িয়ে গত মার্চে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। এতে প্রায় ৩ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। গত ২২ জুন পরীক্ষামূলকভাবে পাইপে ডিজেল সরবরাহের কাজ শুরু হয়। ৪ আগস্ট পর্যন্ত ৪ কোটি ৮২ লাখ লিটার ডিজেল সরবরাহ করা হয়েছে। আজ উদ্বোধনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে ডিজেল সরবরাহ শুরু হয়।

সরবরাহ উদ্বোধন করে উপদেষ্টা বলেন, পাইপলাইনে ডিজেল সরবরাহের মাধ্যমে অপচয় কমবে। চুরিও ঠেকানো যাবে। এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প। যদিও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হয়নি। এখন প্রকল্পটি ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।

দেশের প্রকল্প–সংস্কৃতির সমালোচনা করে অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের শুধু ব্যয় বেশি এমনটা নয়, বিলম্বেও কাজ শেষ হয়। কোনো কোনো প্রকল্প ১৭ থেকে ১৮ বছর ধরেও চলেছে। এসব প্রকল্প আমরা আর টানতে পারব না।’

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রকল্পগুলোয় নিজস্ব ভ্যালু যুক্ত করতে হবে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক নিয়ে নেগোসিয়েশন (দর–কষাকষি) হলো। সেখানেও ভ্যালু যুক্ত করা নিয়ে কথা হয়েছে। সামনের দিনে ভ্যালু বাড়াতে না পারলে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হব। আমাদের অসংখ্য প্রকৌশলী বেকার। এমনকি বুয়েট থেকে পাস করা প্রকৌশলীকেও বেকার থাকতে হচ্ছে। অন্য দেশের ঠিকাদারের ওপর আমরা অতি নির্ভরশীল। এ নির্ভরশীলতা কমাতে হবে।’

চট্টগ্রাম-ঢাকা জ্বালানি তেল সরবরাহের পাইপলাইন প্রকল্পের উদ্বোধন করছেন জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান । আজ শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় না খাইয়ে মানুষ মারা ও আমাদের বৈশ্বিক লজ্জা
  • বেসরকারি সংস্থায় ম্যানেজার নিয়োগ
  • ঝালকাঠিতে পানির দাবিতে পৌরবাসীর বিক্ষোভ 
  • এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম ৩০০ টাকা ছাড়াল
  • গাজার ১০ লাখ নারী ও কিশোরী চরম অনাহারে: জাতিসংঘের সংস্থা
  • গাজায় দিনে ত্রাণ দরকার হাজার ট্রাক, যাচ্ছে ১০০টি
  • দুর্নীতি ও অপচয়ের কারণে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারছি না: জ্বালানি উপদেষ্টা
  • গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে ১,৭৬০ ফিলিস্তিনি নিহত: জাতিসংঘ
  • মেঘনায় ইলিশের দেখা নেই, বিপাকে অর্ধলক্ষাধিক জেলে পরিবার
  • চট্টগ্রাম থেকে পাইপে ঢাকায় গেল ৫ কোটি লিটার ডিজেল