লাল চাঁদকে নৃশংসভাবে হত্যা বিচারহীনতার সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা: এইচআরএসএস
Published: 12th, July 2025 GMT
রাজধানীর পুরান ঢাকায় ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে মনে করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)। সংগঠনটি বলেছে, এ হত্যাকাণ্ড বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং বিচারহীনতার সংস্কৃতি, দণ্ডহীনতার চলমান ধারারই ধারাবাহিকতা।
আজ শনিবার এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন এইচআরএসএসের নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম। লাল চাঁদকে হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন তিনি।
বিবৃতিতে বলা হয়, লাল চাঁদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে, কুপিয়ে এবং শরীর থেঁতলে হত্যা করা হয়েছে। এটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এ ঘটনা দেশের সামাজিক ও বিচারিক ব্যবস্থার ওপর একটি ভয়াবহ প্রশ্নবোধক চিহ্ন তৈরি করেছে।
এ হত্যাকাণ্ডে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীর সরাসরি জড়িত থাকা অত্যন্ত উদ্বেগজনক উল্লেখ করে এইচআরএসএস বলেছে, এটি প্রমাণ করে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র কীভাবে দণ্ডমুক্তির সংস্কৃতিকে পুঁজি করে নিরীহ নাগরিকদের জীবন বিপন্ন করছে। এ ঘটনার ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হলে মানুষের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার রক্ষায় সরকারের প্রতিশ্রুতি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে।
বিবৃতিতে এইচআরএসএস কয়েকটি দাবি জানিয়েছে। সেগুলো হলো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের আওতায় এ ঘটনার নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও সময়োপযোগী বিচার নিশ্চিত করা; ঘটনার সঙ্গে জড়িত সব অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বহীনতা ও ব্যর্থতার বিষয়েও তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ; গণপ্রতিরোধ ও নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ; ভুক্তভোগীর পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর তাদের সদস্যদের জবাবদিহির আওতায় আনতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।
আরও পড়ুনশরীর থেঁতলে পিটিয়ে হত্যা করা হয় লাল চাঁদকে১৮ ঘণ্টা আগেগত বুধবার সন্ধ্যায় পুরান ঢাকার মিটফোর্ড (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালের সামনের সড়কে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) নামের এক ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ীকে হত্যা করে একদল ব্যক্তি। এ ঘটনায় যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল চারজনকে সংগঠন থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের কথা জানানো হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম নব ধ ক র এ ঘটন ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
আইনশৃঙ্খলার উন্নতিতে দৃঢ় পদক্ষেপ চাই
রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়ে যাওয়া এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর খুলনায় প্রকাশ্য হত্যাকাণ্ড সামগ্রিকভাবে একটি বার্তাই দেয়—দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ ধরনের সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ড নিরাপত্তা নিয়ে জনমনে গভীর শঙ্কার জন্ম দিতে বাধ্য।
মানবাধিকার সংস্থা এনএসএফের প্রতিবেদনের বরাতে প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, নভেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার সংখ্যা অক্টোবরের ৪৯ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২-এ। আহত ব্যক্তির সংখ্যা একলাফে ৫৪৭ থেকে ৭২৪ এবং নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ২ থেকে ৯—এই ঊর্ধ্বগতি শুধু পরিসংখ্যান নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতার প্রতিফলন। রাজনৈতিক সহিংসতা যখন মাসে মাসে বাড়ে, তখন তা নির্দেশ করে যে ক্ষমতার প্রতিযোগিতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা মিলেমিশে সমাজে একধরনের সহিংসতার পরিবেশ তৈরি করেছে।
গণপিটুনির পুনরুত্থান ভয়াবহ সংকটের ইঙ্গিত দেয়। আইনকে পাশ কাটিয়ে সংঘবদ্ধ জনতা বিচার করছে—এমন প্রবণতা যেকোনো সভ্য সমাজের জন্য লজ্জাকর। নভেম্বর মাসে ৪৩টি ঘটনায় ১৯ জনের মৃত্যু; অক্টোবরে নিহত হয়েছেন ১২ জন—এ সংখ্যাগুলো শুধু হত্যার পরিসংখ্যান নয়; এ সংখ্যা আইনের শাসনের প্রতি মানুষের আস্থা হারানোর ইঙ্গিত। চুরি, ছিনতাই বা ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগেই হোক, আইনের শাসন ভেঙে পড়লে সাধারণ মানুষ নিজেরাই আইন হাতে তুলে নেয়। অথচ অপরাধীদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনা, গণপিটুনি ঠেকাতে তৎপরতা দেখানো—এসব দায়িত্ব সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।
নভেম্বরে কারা হেফাজতে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসব মৃত্যুর ক্ষেত্রে অসুস্থতার কথা বলা হলেও সেটা কতটা বিশ্বাসযোগ্য, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারাগারের অভ্যন্তরে প্রাতিষ্ঠানিক অবহেলা কি এই মৃত্যুর কারণ? বারবার তদন্তের দাবি উঠলেও দায় নির্ধারণ বা কাঠামোগত সংস্কারের কোনো অগ্রগতি নেই।
সীমান্ত পরিস্থিতিও সমানভাবে নাজুক। ভারতীয় কোস্টগার্ড কর্তৃক ১০৮ জেলে আটক, আরাকান আর্মির হাতে ৪৭ জেলে, বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশির মৃত্যু—এসব মিলিয়ে সীমান্তবাসী আজ অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে। প্রতিবাদ বা কূটনৈতিক অনুরোধে তেমন ফল না হওয়া বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির সীমাবদ্ধতাকেই সামনে নিয়ে এসেছে।
নভেম্বর মাসে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যেভাবে একের পর এক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেগুলো নিরাপত্তা নিয়ে মানুষের উদ্বেগ বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত রোববার খুলনায় দিনদুপুরে আদালত চত্বরে হাজিরা শেষে বের হওয়ার সময় দুজনকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আদালত প্রাঙ্গণ, যেখানে মানুষের নিরাপত্তা সবচেয়ে বেশি থাকার কথা, সেখানে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা যেভাবে প্রবেশ করেছে ও হত্যা করে বেরিয়ে গেছে, তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা ও গোয়েন্দা নজরদারির ব্যর্থতা তুলে ধরেছে। খুলনায় ১৫ মাসে ৪৬টি হত্যাকাণ্ড এ শহরকে ধীরে ধীরে সহিংসতার কেন্দ্রে পরিণত করছে।
রাজনৈতিক সহিংসতা ও সংগঠিত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নেওয়া পদক্ষেপ এখনো জোরালো ও দৃশ্যমান নয়। আমরা মনে করি, রাজনৈতিক সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কগুলোর বিরুদ্ধে সমন্বিত অভিযান—এখনই এসব পদক্ষেপ নিতে হবে।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের আগে যেকোনো মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এ রকম অবনতি চলতে থাকলে নির্বাচনী পরিবেশে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির বিষয়টিকে সরকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।