Prothomalo:
2025-10-16@18:12:42 GMT

রাতের শেষ ভাগ

Published: 16th, October 2025 GMT

আমি বসি। উঠি। আবার বসি। সময় হয়ে গেছে। বাইরে একজন চালক অপেক্ষা করছে। আমি নড়ি না। আমার পেটের ভেতর মোচড় দেয়। আমি উঠে দাঁড়াই। ঘরটা একটু গুছিয়ে নেব বলে ঠিক করি। চারপাশে ছড়িয়ে আছে কাগজের টুকরা, আঁকিবুঁকি, শব্দ। সময় যেন অসংখ্য টুকরা হয়ে ছড়িয়ে আছে। আমি সেগুলো ফেলে দিই, ভেবে যে হয়তো এর মাধ্যমে একটা শেষ আসবে। কিন্তু রাত থেমে থাকে না। আমি অপেক্ষা করি। চালকও অপেক্ষা করে। মনে হয় আমরা শূন্যতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। সেই শূন্যতা, যা আসলে শুরু। আমি ভাবি, এ কি অস্তিত্বগত উদ্বেগ? নিশ্চয়ই নয়, বাইরে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। আক্রমণকারী তো একই। উদ্বেগের বাইরে কিছু একটা অনুভব করি। হঠাৎ এক মাকড়সা দেখা দেয়। এ-ও তো তার ঘরেই আছে, আমিও যেমন আছি, এখনো সে-ও শিখতে পারেনি দখলের ভাষা।

মনকে অন্যদিকে ফেরাতে আমি বইয়ে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করি। কবিতা, যা বারবার নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করে। মানুষ সত্যিই বিস্ময়কর প্রাণী! ধ্বংস আর সৌন্দর্য এখানে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। যন্ত্রণার ভেতর সৌন্দর্যও অন্য রূপে রূপান্তরিত হয়। অন্তত এ-ই লিখে গেছেন দ্বাদশ শতকের সেই সাধক। আমি প্রাচীন বাণীতে সান্ত্বনা খুঁজি। আকাশে উড়োজাহাজের গর্জন ভাসে, তাদের শিকাররা খুব কাছাকাছি; এমন জায়গায়, যেখানে শব্দ পৌঁছায় না। এখনো আমি লক্ষ্যবস্তু নই। ফোন বাজে। ধরি। এক কণ্ঠ জানায়—শেষ এসে গেছে। তবু রাত স্থায়ী হয়, নির্দয়ভাবে।

আমি জানালায় যাই। নিশ্চিত তারা আসবে। ঘোষণা তো হয়ে গেছে। চালক হর্ন বাজায়। আমি আবার বসি। কিছু একটা অসম্পূর্ণ মনে হয়। হয়তো আমার এখানেই মারা যাওয়া উচিত। অথবা একটি কবিতার পঙ্‌ক্তি লিখে যাওয়া। একদিন এই রাতকে ‘ইতিহাসে’ লেখা হবে। কিন্তু আর ইতিহাস নেই, আছে শুধু সহিংসতা। পচে যাওয়া লাশ পড়ে আছে মাটির ওপরে—যে মাটিতে তারা বানাতে চায় তাদের ‘গ্রীষ্মকালীন বাড়ি’।

প্রতিশোধ অনিবার্য। আর প্রতিশোধের প্রতিশোধও অনিবার্য। সময়ের এই অস্পষ্ট মুহূর্তে ঝুলে থেকে ভাবি—এটাই কি সেই শেষ, যার প্রতিশ্রুতি আমাদের দেওয়া হয়েছিল? যেহেতু অনন্ত ব্যতীত কিছুই অনন্ত নয়, তাই অবশ্যই একটি শেষ আছে। আমি আবার জানালায় যাই। এক বধির নীরবতা। আতঙ্কিত হই। কাগজের একটি টুকরা তুলে লিখি—‘কবরের জীবন থেকে কোনো মুক্তি নেই, আছে শুধু সময়, অনন্ত সময়, যার ওপারে আছে কেবল বিস্তৃত শূন্যতা।’

হয়তো আমার এখানেই মারা যাওয়া উচিত। অথবা একটি কবিতার পঙ্‌ক্তি লিখে যাওয়া। একদিন এই রাতকে ‘ইতিহাসে’ লেখা হবে। কিন্তু আর ইতিহাস নেই, আছে শুধু সহিংসতা। পচে যাওয়া লাশ পড়ে আছে মাটির ওপরে—যে মাটিতে তারা বানাতে চায় তাদের ‘গ্রীষ্মকালীন বাড়ি’।

হেসে ফেলি। আমি মাঝেমধ্যে খুব নাটুকে হয়ে যাই। গাড়ির হর্ন বাজে, এবার ক্ষীণ শোনায়। রান্নাঘরে যাই। এত নাটক কফি ছাড়া কেমন করে চলবে? ফোন বাজে। আমি প্রথম চুমুক দিই। এক ব্যক্তি বলে, ‘খালি করো।’ আমি বসে পড়ি। সিগারেট জ্বালাই। কফিতে আবার চুমুক দিই। দূরে কোনো শব্দ, তারপর নীরবতা। রেডিও চালু করি। ‘স্থল আক্রমণ অনিবার্য।’ আরেক আক্রমণ অনিবার্য সেই আক্রমণের পরে। কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র। অথবা তাদের মতে, নিয়তি। তাদের কাজ আমাদের নিশ্চিহ্ন করা, আমাদের কাজ টিকে থাকা।

আমি দরজা খুলি। একটি মৃতদেহ পড়ে আছে। তার মাথা কাটা। আর রাতের বাতাসে ভেসে আসে ল্যাভেন্ডারের ঘ্রাণ, যা মনে করিয়ে দেয়—নবীরা একসময় এ ভূমিতেই হেঁটেছিলেন। আমি দরজা বন্ধ করি। বসে পড়ি। হঠাৎ গাড়ি চলে যাওয়ার শব্দ নীরবতা ভেঙে দেয়। আমি কফিতে চুমুক দিই। তখন মনে পড়ে—আমি বিয়েতে দেরি করে ফেলেছি। সিগারেট নেভাই। দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ দ্বিধায় ভুগি—আরেকটা ধরাব কি না। আমি যদি যাই, তারা হয়তো হামলা করবে। আর হামলা হলে আমি আর ফিরতে পারব না। আলমারি খুলে আমার সেরা মখমলের পোশাকটি পরি; শেষ পর্যন্ত, এটা তো উৎসবের জন্যই তুলে রাখা। রান্নাঘরে ফিরে দরজা খুলি। মৃতদেহটা এখনো আছে, তবে মাথাটি আর কাটা নেই। আমি দরজা বন্ধ করি। আবার বসি। পরিস্থিতির বিদ্রূপ আমাকে অস্বস্তিতে ফেলে। কীভাবে সম্ভব—আমরা জীবিতদের রক্ষা করার জন্য মৃতদের ওপর নির্ভর করি?

আমি কবিতার বই খুঁজি—দ্বাদশ শতকের সাধকের লেখা। পৃষ্ঠা ১৬৭, অস্তিত্বগত ক্ষত সম্পর্কে। আমি কি গণহত্যাকে ‘অস্তিত্বগত ক্ষত’ বলতে পারি? নাকি এ-ই তার চূড়ান্ত রূপ, যা বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে? মৃত্যু যখন একেবারে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে, তখন কি এসব প্রশ্ন করা অবান্তর নয়? নাকি আমরাই কেবল এই সত্যের বাহক? আমরাই একমাত্র, যারা এই অসীমের বৈপরীত্য বহন করার সামর্থ্য রাখি? হয়তো তাতে কিছু যায়–আসে না। হয়তো এ-ই আল্লাহর ফয়সালা, তাঁর বিশাল পৃথিবীতে আমাদের চূড়ান্ত মুহূর্ত। কিন্তু যাঁরা সাধকের রচনা পড়েছেন, তাঁরাও হয়তো বুঝবেন না। মানুষ হওয়ার সীমা অতিক্রম করার যন্ত্রণার মধ্য দিয়েই কেবল এটা বোঝা যায়। কষ্ট সহ্য করা, কারাবাস, অবরোধে সৃষ্ট রোগ, অবশ করা ছাড়াই অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে ফেলা, মৃত্যু সহ্য করা—এ সবকিছু পেরিয়ে যেতে পারলেই মানুষ সাধুত্ব অর্জন করে। মৃতরাই জীবিতদের রক্ষা করে।

আমি ভাবি, কবে এখান থেকে বেরোনো সম্ভব হবে এবং অবশ্যই ফিরে আসাও। আমি ফিরতে পারব, তা নিশ্চিত না হলে বের হব না। কিন্তু এখানে তো কোনো কিছুই নিশ্চিত নয়, ঔপনিবেশিকরা ভীষণ অনিশ্চিতভাবে আচরণ করে।

রাতের বাতাসে ভেসে আসে ল্যাভেন্ডারের ঘ্রাণ, যা মনে করিয়ে দেয়—নবীরা একসময় এ ভূমিতেই হেঁটেছিলেন। আমি দরজা বন্ধ করি। আমি কফিতে চুমুক দিই। তখন মনে পড়ে—আমি বিয়েতে দেরি করে ফেলেছি। সিগারেট নেভাই। দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ দ্বিধায় ভুগি—আরেকটা ধরাব কি না।দিয়া বারঘুতি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ব র য আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

আগারকারের ওপর শামি কেন ক্ষুব্ধ

ভারতের জার্সিতে মোহাম্মদ শামির অধ্যায় কি শেষ? ৩৫ বছর বয়সী এই পেসার অনেক দিন ধরে জাতীয় দলের বাইরে। অস্ট্রেলিয়া সফরের স্কোয়াডেও তাঁকে রাখেননি ভারতীয় নির্বাচকেরা।

ঠিক কী কারণে শামিকে দলে নেওয়া হচ্ছে না, এর জুতসই ব্যাখ্যা দিতে পারেননি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) প্রধান নির্বাচক অজিত আগারকার। শামি চোটে ভুগছেন কি না, এ নিয়েও ‘কোনো আপডেট নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন আগারকার। এরপর আগারকারকে রীতিমতো ধুয়ে দিয়েছেন শামি।

চোট শামিকে লম্বা সময় ভুগিয়েছে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালের পর এক বছরের বেশি সময় ভারতের হয়ে খেলতে পারেননি। বিশ্বকাপের পর অ্যাঙ্কেলের অস্ত্রোপচার করিয়েছিলেন। ভুগেছেন হাঁটুর সমস্যাতেও।

শামি দলে ফিরেছিলেন এ বছরের জানুয়ারিতে, ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড সিরিজে। এরপর ভারতের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলেও ছিলেন। সেখানে ৫ ম্যাচে নেন ৯ উইকেট, যা যৌথভাবে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর পর থেকে শামিকে আর বিবেচনা করছেন না নির্বাচকেরা।

তাহলে কি শামি আবারও চোটে ভুগছেন? না, সেটাও না। শামি এরপর আইপিএল খেলেছেন। আগস্টে দুলীপ ট্রফিতে চার দিনের ম্যাচে খেলেছেন। এখন খেলছেন রঞ্জি ট্রফিতেও।

দলে সুযোগ পাচ্ছেন না ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ শামি

সম্পর্কিত নিবন্ধ