জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) এখন আর কোনো শক্তি মনে করে না বিএনপি। জামায়াতে ইসলামীকে আর মাথায় উঠতে দেবে না। দলটির যত না শক্তি, বিএনপি অকারণে তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।

ভারতের কলকাতার বাংলা সংবাদপত্র এই সময়–এ প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্ধৃত করে এসব কথা বলা হয়। গতকাল সোমবার পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়।

‘বিএনপি-জামায়াতকে ভারত কেন এক বন্ধনীতে রাখছে, প্রশ্ন মির্জার’ শিরোনামে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারটি নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন ও বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। সাক্ষাৎকারের কিছু বক্তব্য নিয়ে জামায়াতে ইসলামী তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এনসিপি নেতারাও।

যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকা বিএনপির মহাসচিবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সময়–এ সাক্ষাৎকারটি ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর। বিএনপির মহাসচিব এ ধরনের বক্তব্য দেননি।

প্রকাশিত সাক্ষাৎকারের শুরুটা ছিল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের কাছে প্রশ্ন ছিল আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন কি আদৌ হবে? জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি যেভাবে একটার পরে একটা নতুন দাবি তুলছে এবং সেগুলো পূরণ না হলে নির্বাচন হতে দেবে না বলছে, অনেকেই সংশয়ে।

মির্জা ফখরুলের জবাব ছিল, আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতেই ভোট হবে। সংশয়ের কোনো জায়গা নেই। কোনো অশান্তি হবে না। মানুষ ভোটাধিকার ফেরত চাইছেন, নির্বাচন চাইছেন। উৎসবের মতো ভোট হবে ফেব্রুয়ারিতে।

জামায়াত যে বলছে পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি ছাড়া ভোট হবে না, এনসিপি প্রচলিত সংবিধান বাতিল করে আগে গণপরিষদের নির্বাচন চাইছে। না হলে ভোট হতে দেবে না বলছে—এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুলের যে বক্তব্য ছাপা হয়েছে, তাতে বলা হয়, ‘জামায়াত ভোটে আসবে। পিআর-টিআর নয়, মানুষ যে পদ্ধতিতে ভোট বোঝেন, সেই প্রচলিত পদ্ধতিতেই হবে বাংলাদেশের ভোট। জামায়াতও দেখবেন অংশ নেবে। আর এনসিপিকে আমরা কোনো শক্তি বলেই আর মনে করি না। এটা ঠিক, এই ছাত্ররাই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের বারুদে আগুনটা দিয়েছিল। এখন আর তাদের কিছু নেই। ডাকলে লোকও আসে না।’

এনসিপির এখন একমাত্র লক্ষ্য বিএনপিকে সরকার গঠন করতে না দেওয়া—এমন বক্তব্যও এসেছে এই সাক্ষাৎকারে।

জামায়াত ৩০ আসন চেয়েছে

এই সময় সাক্ষাৎকারের এক প্রশ্নে মির্জা ফখরুলের জবাব হিসেবে লেখা হয়েছে, আগামী নির্বাচনে জামায়াত বিএনপির কাছে ৩০টা আসন চেয়েছে। বিএনপি উৎসাহ দেখায়নি।

এই প্রশ্নের জবাবে আরও লেখা হয়েছে, ‘আপনাকে আশ্বাস দিচ্ছি, জামায়াতকে আর আমরা মাথায় উঠতে দেব না। তারা যত বড় না শক্তি, আমরা অকারণে তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। পিআর-টিআর সবই বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল। জামায়াত কিন্তু নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করছে। আসলে দেশে প্রবলভাবেই মানুষ নির্বাচন চাইছেন। সেনাবাহিনী চাইছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসও চাইছেন।’

২৫ বছর ধরে বিএনপির সঙ্গে জামায়াত একসঙ্গে ছিল, সে জন্য দল দুটির নাম একসঙ্গে উচ্চারিত হয় কি না। এমন প্রশ্নের জবাবে বলা হয়, ‘ভুল। আওয়ামী লীগ এই অপপ্রচার ভারতকে বিশ্বাস করিয়েছে। তারা শুধুই নির্বাচনী শরিক। তারা ধর্মীয় রাজনীতি করে, আমরা করি না। আসলে আওয়ামী চশমা দিয়ে ভারত বাংলাদেশকে দেখেই ভুলটা করেছে। বাকিদের সঙ্গে যোগাযোগই রাখেনি। আজ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ক্ষোভের পাহাড় তীব্র ভারত-বিরোধিতায় পর্যবসিত হয়েছে।’

আওয়ামী লীগ, জাসদ বা ওয়ার্কার্স পার্টির মতো দলগুলো আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না? এই প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুলের যে বক্তব্য ছাপা হয়েছে, সেটা হলো ‘আমরা বলেছি আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিকেরা সবাই, এমনকি জাতীয় পার্টিও নির্বাচনে অংশ নিক। একটা সুষ্ঠু ও অবাধ ভোট হোক। এ জন্য অনেকে আমাকে ভারতের এজেন্ট, আওয়ামী দালাল বলে গালাগাল দিচ্ছে। কিন্তু শেখ হাসিনার অপকর্ম আমরাও কেন করব? হাসিনা ১৫ বছর প্রতিপক্ষকে ভোটে দাঁড়াতেই দেননি, তার শাস্তি পেয়েছেন। একই কাজ করলে আমরাও তো প্রতিফল পাব। তবে মানুষ এত রক্ত দেখেছেন, এত প্রাণহানি—তাঁদের মধ্যে আওয়ামী-বিরোধিতা রয়েছে।’

এ ধরনের বক্তব্য দেননি, দাবি বিএনপির মিডিয়া সেল সদস্যের

এই সময়-এর অনলাইনে প্রকাশিত বিএনপির মহাসচিবের সাক্ষাৎকারটির বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হলে এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়।

মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকা মির্জা ফখরুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের বিষয়ে যোগাযোগ করেছেন। মির্জা ফখরুল জানিয়েছেন, এই সময়-এ প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে তিনি এ ধরনের বক্তব্য দেননি। সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ ভুল ও বিভ্রান্তিকর।

৩০ আসন চাওয়ার প্রমাণ চাইল জামায়াত

প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে দেওয়া বক্তব্য ও মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, বিএনপির মহাসচিব জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি এবং সংগঠনের মর্যাদা সম্পর্কে তাচ্ছিল্যের ভাষায় কথা বলেছেন। এ ধরনের সম্পূর্ণ অসত্য, অমর্যাদাকর ও প্রতিহিংসাপরায়ণ বক্তব্য। এই বক্তব্যের সঙ্গে সত্য ও শিষ্টাচারের কোনো মিল নেই।

বিবৃতিতে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘এ বক্তব্য তাঁর (মির্জা ফখরুল) হয়ে থাকে, তবে বাধ্য হয়ে আমরা তার প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করছি। পাশাপাশি এই বক্তব্য যদি তাঁর হয়ে থাকে তাহলে জামায়াতে ইসলামী কার কাছে এই আসনগুলো দাবি করেছে, তার প্রমাণ জাতির কাছে উপস্থাপন করার জন্য দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে আহ্বান জানাচ্ছি।’

বিএনপির কাছে ৩০ আসন চাওয়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করে দিয়ে গোলাম পরওয়ার বিবৃতিতে বলেন, ‘কারও কাছে আসন চাওয়ার রাজনীতির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান সময়ে দূরতম কোনো সম্পর্ক নেই।’ ভবিষ্যতে এ ধরনের অসত্য ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকার জন্য বিএনপির মহাসচিবের প্রতি আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।

এনসিপি কোনো শক্তি কি না, রায় দেবে জনগণ

এদিকে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম তাঁর দলের বিষয়ে সাক্ষাৎকারে দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে বলেছেন, এনসিপি কোনো শক্তি কি শক্তি নয়, এটা রাজপথে, ভোটের মাঠে জনগণই রায় দেবে।

নিউইয়র্কের বিমানবন্দরে আখতার হোসেনকে হেনস্তা করার ঘটনায় মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেন।

আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনার সুযোগ নেই উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, একদিকে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী কার্যক্রম করছে, অন্যদিকে দেশের কোনো কোনো রাজনীতিবিদ আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনার ষড়যন্ত্র করছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনার অথবা আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করার কোনো সুযোগ নেই। যারা এটা করার চেষ্টা করবে, জনগণ তাদের বিরুদ্ধেই দাঁড়াবে। তাদের রাজনীতি বাংলাদেশ থেকে নাই হয়ে যাবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র ম এই সময় এ র র জন ত এ ধরন র ইসল ম র ফখর ল র এনস প আওয় ম আসন চ

এছাড়াও পড়ুন:

চার আসনে বিক্ষোভ, ফরিদপুরে সংঘর্ষ, আহত ২৩

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণার পঞ্চম দিনেও অন্তত চারটি আসনে প্রার্থিতা নিয়ে দলটির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, বিক্ষোভ ও মিছিল হয়েছে। প্রার্থিতা বদল ও মনোনয়ন প্রত্যাশাকে ঘিরে এসব ঘটনা ঘটে।

এর মধ্যে গতকাল শুক্রবার ফরিদপুর ১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পুলিশের তিন সদস্যসহ অন্তত ২৩ জন আহত হয়েছেন। এর বাইরে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে গতকাল পর্যন্ত প্রার্থী বদলের দাবিতে অন্তত তিনটি আসনে বিক্ষোভ হয়েছে।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে গত সোমবার ২৩৭টি আসনে প্রাথমিকভাবে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এরপর থেকে প্রার্থী বদল ও মনোনয়ন প্রত্যাশাকে কেন্দ্র করে দেশের অন্তত ১২টি আসনে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে।

ফরিদপুরে দুই পক্ষের সংঘর্ষ

ফরিদপুর-১ আসনে (বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী) বিএনপি এখনো কাউকে প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী দুটি পক্ষ এখানে মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশায় মাঠে রয়েছে। জেলার বোয়ালমারীতে গতকাল বিকেলে দলটির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশের তিন সদস্যসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২৩ জন আহত হন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ও বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শামসুদ্দীন মিয়ার নেতৃত্বে বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত। দুই নেতাই আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-১ আসন থেকে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী।

গতকাল সংঘর্ষের সময় বিএনপির এক পক্ষের একটি কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। আগুন দেওয়া হয় অন্তত ১০টি মোটরসাইকেলে। এ ছাড়া আশপাশের কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর করা হয়। হামলাকারীদের হাতে রামদা, চাইনিজ কুড়ালসহ বিভিন্ন দেশি অস্ত্র দেখা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বেলা তিনটার দিকে শামসুদ্দীন মিয়ার সমর্থকেরা ওয়াপদার মোড় এলাকায় ও নাসিরুল ইসলামের সমর্থকেরা প্রায় এক কিলোমিটার দূরে কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজ মোড়ে জড়ো হন। তাঁদের হাতে বাঁশের লাঠির মাথায় ধানের শীষ বাঁধা ছিল। বিকেল চারটার দিকে নাসিরুল ইসলামের অনুসারীরা মিছিল নিয়ে ওয়াপদার মোড়ের দিকে এগোতে থাকেন। তখন শামসুদ্দীনের সমর্থকেরা কলেজের দিকে যেতে থাকেন। উভয় পক্ষ বোয়ালমারী পৌরসভার সামনে এলে পরস্পরের দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে। একপর্যায়ে শামসুদ্দীনের সমর্থকেরা পিছু হটে ওয়াপদার মোড়ে হারুন শপিং কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থান নেন।

শামসুদ্দীন মিয়া প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, নাসিরুলের লোকজন আওয়ামী লীগের লোকদের সঙ্গে নিয়ে অতর্কিতে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। ১০টি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে। এতে তাঁর ১৫ জন সমর্থক আহত হয়েছেন। তাদের কার্যালয়ে থাকা বেগম খালেদা জিয়ার ছবি ভাঙচুর করা হয়েছে।

তবে খন্দকার নাসিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ছিলাম মধুখালী। আমাদের লোকজনের ওপর হামলা করা হয়েছে। একজনকে কুপিয়ে জখম করেছে। ওরা হারুন শপিং কমপ্লেক্সের ওপরে উঠে আমার সমর্থদের ওপর ইট ছুড়ে মারলে চার-পাঁচজন আহত হন। এতে জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে শপিং কমপ্লেক্সে হামলা করে।’

বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান সন্ধ্যা ছয়টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

আরও বিক্ষোভ

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরীকে সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর) আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার দাবিতে মিছিল ও সমাবেশ করেছেন স্থানীয় বিএনপির একাংশের নেতা-কর্মীরা। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে তিন উপজেলার অন্তত ১৫টি স্থানে পৃথকভাবে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

সিলেট জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে সিলেট-৪ ও সিলেট-৫ ছাড়া অন্য চারটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছিল। এর মধ্যে সিলেট-১ আসনে প্রার্থী করা হয় দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরকে। ওই আসনে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরীও মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। আরিফুলের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, ঢাকায় ডেকে গত বুধবার রাতে আরিফুলকে সিলেট-৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আরিফুল হক চৌধুরী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেটে ফেরেন। তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘তিন মাস লাগবে না। আগামী তিন দিনেই সিলেট-৪ আসনে আওয়াজ উঠে যাবে। কাজ দিয়েই নিজেকে জনগণের কাছে প্রমাণ করব।’

দিনাজপুর-২ আসনে (বিরল-বোচাগঞ্জ) বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে গতকাল বেলা ১১টার দিকে উপজেলা শহরে কাফনের কাপড় পরে মৌন মিছিল করেছেন মনোনয়ন না পাওয়া তিন নেতার অনুসারীরা।

‘মনোনয়নবঞ্চিত’ তিনজন হলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ, সহসভাপতি মোজাহারুল ইসলাম এবং শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম। এই আসনে প্রার্থী করা হয়েছে সাদিক রিয়াজকে। তিনি জেলা বিএনপির নির্বাহী সদস্য।

দুপুরে উপজেলার শহীদ মিনার চত্বরে ‘বিপ্লব ও সংহতি’ দিবসের আলোচনা সভায় উপস্থিত হন মনোনয়নবঞ্চিত ওই তিন নেতা। পরে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে বক্তব্য দেন তাঁরা। এ সময় বজলুর রশিদ বলেন, ‘সাদিক রিয়াজ রাজনীতির মাঠে কোনো আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন না। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে সব আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন। তাঁকে বাদ দিয়ে বিরল-বোচাগঞ্জের যে কাউকে মনোনয়ন দিলে আমরা মেনে নেব।’

রাজশাহীর পবা উপজেলায় গতকাল ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ এর এক অনুষ্ঠান থেকে রাজশাহী-৩ আসনের প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি উঠেছে। রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয় সম্পাদক শফিকুল হক মিলন।

মাদারীপুরে স্থগিতের প্রতিবাদ

মাদারীপুর-১ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী কামাল জামান মোল্লার মনোনয়ন স্থগিত করার প্রতিবাদ ও প্রার্থিতা পুনর্বহালের দাবিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বিকেলে উপজেলার হাতির মাঠে এ সমাবেশ হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কামাল জামান মোল্লা নিজে। মনোনয়ন ঘোষণার পরদিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁর মনোনয়ন স্থগিত করেছিল বিএনপি।

জামান মোল্লা জেলা বিএনপির এক নেতাকে ইঙ্গিত করে বলেন, তিনি আওয়ামী লীগের দোসরের লোক। তাঁর নির্দেশেই অপপ্রচার চালিয়ে তাঁর (জামান মোল্লা) ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা চলছে।

গতকাল বিকেলে কুমিল্লার হোমনা সদরে ঝাড়ু মিছিল করেছে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের একাংশের নেতা-কর্মীরা। কুমিল্লা-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী বিভাগীয় এক নেতার বিরুদ্ধে এ মিছিল হয়। এ আসনে বিএনপি এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ