মাদক বিক্রিতে বাধা দেওয়ায় গ্রাম পুলিশকে মারধরের অভিযোগ
Published: 14th, October 2025 GMT
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার দক্ষিণ হিরণ গ্রামে মাদক বিক্রিতে বাধা দেওয়ায় মুমিন গাজী (২৬) নামে গ্রাম পুলিশের এক সদস্যকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। মুমিন গাজী বাদী হয়ে কোটালীপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
মুমিন গাজী উপজেলার হিরণ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ সদস্য। তিনি বর্ষা পাড়া গ্রামের মো.
আরো পড়ুন:
ঝিনাইদহে মা-মেয়েকে মারধর, থানায় অভিযোগ
মুন্সীগঞ্জে সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ
হিরণ ইউনিয়নের মৃত আবুল বাশার মোল্লার ছেলে হৃদয় হক রাব্বি (২৮) প্রায়ই মাদক বিক্রি করতে বর্ষা পাড়া গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় যান। কিছুদিন আগে বর্ষা পাড়া গ্রামে রাব্বি মাদক বিক্রি করতে গেলে মুমিন গাজী লোকজন নিয়ে তাকে মাদক বিক্রিতে বাধা দেন। এতে রাব্বি ক্ষিপ্ত হয়ে তার চাচাত ভাই মশিউর রহমান মোল্লাকে সঙ্গে নিয়ে দক্ষিণ হিরণ সেতুর ওপর মুমিন গাজীকে মারধর করেন।
মুমিন গাজী বলেছেন, হৃদয় হক রাব্বি প্রায়ই মাদক বিক্রির জন্য আমাদের বর্ষা পাড়া গ্রামে আসে। কিছুদিন আগে তাকে মাদক বিক্রির সময় আমি লোকজনসহ বাধা দিই। এ ঘটনার পর সোমবার (১৩ অক্টোবর) আমি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বাড়ি ফেরার সময় রাব্বি তার চাচাত ভাই মশিউর মোল্লাকে নিয়ে তাদের বাড়ির সামনে আমাকে মারধর করে।
এ বিষয়ে জানার জন্য হৃদয় হক রাব্বিদের বাড়িতে গিয়ে তাদেরকে পাওয়া যায়নি। তবে, তার চাচা জাবেদ মোল্লা বলেছেন, আমার ভাতিজা রাব্বি বিয়ে করার জন্য বর্ষা পাড়া গ্রামে একটি মেয়ে দেখেছিল। গ্রাম পুলিশ মুমিন সেই বিয়ে ভেঙে দিয়েছে। এজন্য ক্ষিপ্ত হয়ে আমার ভাতিজা রাব্বি তাকে দুই-একটি চড়-থাপ্পর দিয়েছে। বিষয়টি আমরা সামাজিকভাবে মীমাংসা করার চেষ্টা করছি।
কোটালীপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক ও তদন্ত কর্মকর্তা আল-আমিন বলেছেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা/বাদল/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম রধর ম রধর
এছাড়াও পড়ুন:
কারাবন্দী সাংবাদিকদের মুক্তির আহ্বান জানিয়ে মুহাম্মদ ইউনূসকে সিপিজের চিঠি
বাংলাদেশে কারাবন্দী সাংবাদিকদের মুক্তি দিতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা অলাভজনক আন্তর্জাতিক সংগঠনটি মুহাম্মদ ইউনূসকে লেখা এক চিঠিতে এ আহ্বান জানিয়েছে। সিপিজের ওয়েবসাইটে চিঠিটি প্রকাশ করা হয়েছে।
১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসকে সামনে রেখে সিপিজের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় পরিচালক বেহ লি ইয়ি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠিটি লিখেছেন।
চিঠিতে বলা হয়, সিপিজের কাছে থাকা তথ্য-উপাত্ত অনুসারে বাংলাদেশে বর্তমানে হত্যার অভিযোগে চার সাংবাদিক কারাগারে বন্দী আছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর সপক্ষে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণের ঘাটতি আছে। মনে হচ্ছে, তাদের সংবাদ প্রতিবেদন ও সম্ভাব্য রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কারণে প্রতিহিংসামূলকভাবে এসব মামলা করা হয়েছে।
সিপিজের চিঠিতে নাম উল্লেখ করা চার সাংবাদিক হলেন ফারজানা রূপা, শাকিল আহমেদ, মোজাম্মেল বাবু ও শ্যামল দত্ত। এতে বলা হয়েছে, বারবার এই সাংবাদিকদের জামিনের আবেদন নাকচ করা হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের পরিবারের সদস্যরা কাশিমপুর কারাগারের পরিস্থিতি নিয়ে যে ধরনের বর্ণনা দিয়েছেন, তাতে বন্দীদের মানবাধিকার নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তাঁরা (বন্দী সাংবাদিকেরা) ৩৬ বর্গফুট (৩ দশমিক ৩৪ বর্গমিটার) আকারের অত্যন্ত ছোট কক্ষে বন্দী আছেন। কক্ষগুলোতে দরজার পরিবর্তে ধাতব বেষ্টনী দেওয়া। এতে তাঁদের ঠান্ডা আবহাওয়ার মধ্যে থাকতে হয়, সঙ্গে রয়েছে মশার উপদ্রব। তাঁরা কংক্রিটের মেঝেতে ঘুমান, কোনো ম্যাট্রেস নেই। কারাগার থেকে সরবরাহ করা খাবারের পরিমাণ অপর্যাপ্ত। প্রায়ই সেগুলো খাওয়ার উপযোগী থাকে না।
কারাগারের চিকিৎসাসেবা পর্যাপ্ত নয় উল্লেখ করে চিঠিতে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, কারাগারে কোনো স্থায়ী চিকিৎসক নেই, নিয়মিত পরীক্ষার সুবিধা নেই এবং পরিবার থেকে সরবরাহ করা না হলে বন্দীরা ওষুধ পান না। যাঁরা ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ এবং স্লিপ অ্যাপনিয়ার (ঘুমের সময় শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা) মতো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের কয়েক মাস ধরে কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি।
২০২৪ সালের নভেম্বরে দ্য ডেইলি স্টারকে মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারের কথা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ওই সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, বাংলাদেশে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নির্বিচার হত্যা মামলা দেওয়া হয়েছে এবং তাঁর সরকার তা বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। অথচ গত বছর প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্ব নেওয়ার পরই ওই চার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৯ নং অনুচ্ছেদ এবং ইন্টারন্যাশনাল কনভেনেন্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটসে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সুরক্ষিত রাখার কথা বলা হয়েছে। বিষয়টির উল্লেখ করে সিপিজের চিঠিতে বলা হয়, বিচারব্যবস্থা বারবারই গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা এবং দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে স্বাধীন সাংবাদিকতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার–সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতা পূরণ করার জন্য বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দিয়েছে সিপিজে।
আরও পড়ুনসাংবাদিকদের নিরাপদে দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করার আহ্বান সিপিজের১৭ জুলাই ২০২৪চিঠিতে মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ করে বলা হয়, ‘আমরা আপনাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি, যা বাংলাদেশে কারাবন্দী সব সাংবাদিককে তাঁদের পরিবারের কাছে ফেরার এবং নতুন করে কাজ শুরু করার সুযোগ দেবে।’
সিপিজে মনে করে, বাস্তব সংস্কার নিশ্চিত করার জন্য অতীতের চর্চাগুলো থেকে একেবারে বের হয়ে আসা প্রয়োজন। অতীতের দমনমূলক কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি করা যাবে না।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যখন আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে, তখন সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে সংবাদ সংগ্রহের অধিকারের প্রতি সম্মান রাখাটা সব রাজনৈতিক দলের জন্য জরুরি।
আরও পড়ুনঅধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে০১ আগস্ট ২০২৫