সেনা আইন সংশোধন করে অভিযুক্তদের সুষ্ঠু বিচার দাবি এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশনের
Published: 14th, October 2025 GMT
সেনা সদরে হেফাজতে থাকা অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের সুষ্ঠু বিচারের জন্য সেনা আইন সংশোধনের দাবি জানিয়েছে এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন।
আজ মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। ‘গুজব নয়, দেশপ্রেমে ঐক্য: সেনাবাহিনী ও জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা প্রতিহত করণ প্রসঙ্গে’ শিরোনামে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজক এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক লেফটেন্যান্ট (অব.
সেনাবাহিনীর সাবেক এই কমর্কতা বলেন, আইসিটি আইন ও সংবিধানের মধ্যে কিছু ধারা পারস্পরিক সাংঘর্ষিক। এমনকি আইসিটি অ্যাক্টের একটি ধারা আছে, যা সাংঘর্ষিক হলে আইসিটি অ্যাক্ট প্রাধান্য পাবে। ১০ থেকে ১৫ বছর পর অভিযুক্ত ব্যক্তিরা সংবিধানের আর্টিকেল ৩৫,৩৬, ৬৫, ৫২-এর ফাঁকফোকর থেকে পার পেতে পারেন। এ জন্য তাঁরা সংশোধনের মাধ্যমে সেনা আইনে বিচার চেয়েছেন।
সাইফুল্লাহ খান সাইফ আরও বলেন, সেনা আইনে বিচার হলে, পরবর্তী সময়ে তাঁদের (অপরাধীরা) পার পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। প্রয়োজনে সে সেনাবাহিনী কী ধরনের বিচার করছে, সেটি সারা বাংলাদেশের জনগণ লাইভ দেখবে। যেভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালেরটা দেখেছে। বিচার করতে গিয়ে কোনো ধরনের তাড়াহুড়া যেন না করা হয়, বিচার যেন সুষ্ঠুভাবে হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) রোকন উদ্দিন বলেন, জুলাই বিপ্লবের পূর্ববর্তী ফ্যাসিবাদের সময় যাঁরা সহযোগিতা করেছিলেন, যাঁরা অপরাধ করেছেন, বিভিন্ন গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাঁদের বিচারের আওতায় আনা হবে; কিন্তু বিচারকাজটা যেন সেনা আইন ও সাধারণ আইনের মধে৵ সমন্বয় করে করা হয়।
অতীতের মতো তড়িঘড়ি করে আইসিটি আইন পরিবর্তন করে ব্যক্তিগত আক্রোশ বা পুঞ্জীভূত ক্ষোভের কারণে একচেটিয়াভাবে বিচার করা হলে তা ফ্যাসিবাদের আমলের বিচারকাজের মতো ত্রুটিপূর্ণ ও প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে একটি ভবনকে জেল ঘোষণার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক সেনা কমর্কতা রোকন উদ্দিন বলেন, এটা প্রথমবার নয়। সাবজেলে এর আগেও অনেককে রাখা হয়েছে। কোনো বিশেষ কারণ নেই। সরকার যখন যেখানে চাইবে, অপরাধীকে রাখবে। এখন সরকার এটা রাজি হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এ কারণে তাঁরা ভবন খালি করেছে। সরকার যদি তাঁদের অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে চায়, নিয়ে যাবে; কিন্তু কেউ অপরাধী প্রমাণিত না হওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁকে জেলে নেওয়া তো সঠিক নয়।
লিখিত বক্তব্যে লেফটেন্যান্ট (অব.) সাইফুল্লাহ খান সাইফ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ভেতরে ও বাইরে কিছু কুচক্রী মহল বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। তারা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ও জাতীয় ঐক্য বিনষ্টের ষড়যন্ত্রে জড়িত। তাঁরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, এই অপতৎপরতা কোনোভাবেই দেশপ্রেমী জনগণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্বাধীন বাংলাদেশে বিশ্বাসী সেনা সদস্যদের বিপথে নিতে পারবে না।
সাবেক এই সেনা কমর্কতা বলেন, এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন সুস্পষ্টভাবে জানাতে চায়, বাংলাদেশের সংবিধান সেনা আইনের বৈধতা দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আদালতও সংবিধান স্বীকৃত। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের সঙ্গে সেনাবাহিনী সমন্বয় করে একটি দৃষ্টান্তমূলক বিচারের উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারে, যা ভবিষ্যতে আর কারও মায়ের বুক খালি করবে না, কোনো স্ত্রীকে বিধবা করবে না, কোনো সন্তানকে বাবা ডাক থেকে বঞ্চিত করবে না।
আরও পড়ুনপরোয়ানা থাকা ১৫ কর্মকর্তা ‘সেনা হেফাজতে’, একজন লাপাত্তা১১ অক্টোবর ২০২৫লিখিত বক্তব্য আরেও উল্লেখ করেন, তাঁরা অপরাধীদের বিচারের পক্ষে, তবে সেই বিচার হতে হবে স্বচ্ছ, সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে এবং সংবিধান ও মানবাধিকারের মূলনীতির আলোকে যেখানে কোনো ফুলস্টপ থাকবে না। রাষ্ট্র ও সংবিধান স্পষ্টভাবে বলেছে, কোনো ব্যক্তি চূড়ান্তভাবে অপরাধী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে অপরাধী বলা যাবে না এবং তিনি যদি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হন, তাহলে তাঁর চাকরি আইনিভাবে বহাল থাকবে।
সাইফুল্লাহ খান জোর দিয়ে বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিয়োজিত সদস্যদের মনোবল ভেঙে দেওয়া বা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সম্মান ক্ষুণ্ণ করা, কোনো দেশপ্রেমীর কাজ হতে পারে না। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী দেশগুলোর সামনে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে মাথা নিচু করে দাঁড়াতে হবে, এমন কোনো পরিস্থিতি তাঁরা মেনে নিতে পারেন না।
সংবাদ সম্মেলনে সার্জেন্ট (অব) মুশফিকুর রহিম রনি ও সাবেক সৈনিক হানিফ হাওলাদার উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুনগ্রেপ্তার করবে পুলিশ, গ্রেপ্তারের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে আনতে হবে: তাজুল২০ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এক স ফ র স স অ য স স আইস ট
এছাড়াও পড়ুন:
এমন কোনো পণ্য নেই যা নকল হয় না: ক্যাব সভাপতি
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, কোনো পণ্য কেনার আগে আমরা ভাবি যে এটি আসল নাকি নকল। বিদেশে গেলে আমরা এমন ভাবি না যে কোনো পণ্য নকল কি না। দেশে এমন কোনো পণ্য নেই, যা নকল হয় না।
আজ মঙ্গলবার বিশ্ব মান দিবস উপলক্ষে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে এক আলোচনা সভায় ক্যাব সভাপতি এ এইচ এম সফিকুজ্জামান এ কথা বলেন। এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)।
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আরও বলেন, একটা শিল্পপ্রতিষ্ঠান করতে ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়। সেই প্রতিষ্ঠানে যে তার (কেব্ল) ব্যবহার করা হয়, তাতে এক নম্বর, দুই নম্বর, তিন নম্বর ও চার নম্বর মানের তার আছে। সেই নকল তারে যখন রাতের বেলা বিদ্যুতের লোড নিতে না পেরে আগুন ধরে যায়, তখন সেই শিল্পপ্রতিষ্ঠান শেষ হয়ে যায়। ওই প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকেরা কাজ হারায়।
আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপউপাচার্য আবদুল হাসিব চৌধুরী। প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী। আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের হেড অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স মো. জাফর ইকবাল। আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম।
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান তাঁর বক্তব্য আরও বলেন, দেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একটি হালাল পণ্যের পরীক্ষাগার আছে। আমি নিজে সেই ল্যাব পরিদর্শন করেছি। উপজেলা পর্যায়ের একটা কলেজের রসায়ন বিভাগের পরীক্ষাগারে যেমন ধুলাবালি পড়ে থাকে, সে রকম একটা পরীক্ষাগার। সেখানে উৎপাদিত পণ্যের খুঁটিনাটি পরীক্ষা করার ক্ষমতা নেই। তবে বিশ্বের হালাল পণ্যের বাজারে রপ্তানি শুরু করতে পারলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি সম্ভব হবে।
বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম বলেন, মান শুধু পণ্যের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়। এটি মানুষের দৈনন্দিন জীবন ও সেবার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, পবিত্র রমজান মাস এলেই ব্যবসায়ীদের মধ্যে বেশি মুনাফা করার প্রবণতা তৈরি হয়। বিশ্বের বিভিন্ন অমুসলিম দেশেও পণ্যের মূল্য কমায়, আমরা কমাতে পারি না। আমাদের সেই নৈতিকতা এখনো তৈরি হয়নি। তাঁর মতে, বাজারে নকল কিংবা ভেজাল পণ্য ঠেকাতে আমাদের নজরদারি করার সক্ষমতা সীমিত।
মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তেমনি শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে বর্তমানে ১৪টি প্রধান প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান কার্যত লোকসানে রয়েছে।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, বেসরকারি খাতের পক্ষে উচ্চমূল্যের যন্ত্রপাতি কিনে পণ্যের মান সনদ দেওয়া সম্ভব নয়। ইতিমধ্যে সরকার জাতীয় মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থায় বিনিয়োগ করেছে। মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশি হালাল পণ্যের স্বীকৃতি এখনো সীমিত। তাই বেসরকারি ও সরকারি খাতকে যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশের হালাল সনদপ্রক্রিয়া আরও সহজ করতে হবে।