চুয়াডাঙ্গার জমিজমা নিয়ে বিরোধে প্রতিপক্ষের হামলায় কৃষক নিহত, আহত ৩
Published: 14th, October 2025 GMT
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় এক কৃষক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তিনজন। আজ মঙ্গলবার সকালে উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোবিন্দহুদা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর ১২টার দিকে ওই কৃষক মৃত্যু হয়।
নিহত জয়নুর হোসেনের (৫৩) বাড়ি গোবিন্দহুদা গ্রামে। আহত ব্যক্তিরা হলেন, তাঁর দুই ভাই খাজা আহমেদ (৫৫), জাহির আহমেদ (৫০) এবং খাজা আহমেদের ছেলে দিপু আহমেদ (১৮)। খাজা আহমেদ ও দিপুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৫০ বিঘা জমি নিয়ে নুরুল হক ও মাসুদ বিল্লাহ ওরফে মন্টু পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে আদালতে একাধিক মামলা চলমান।
নিহত জয়নুরের চাচাতো ভাই আবদুল লতিফ প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকালে জয়নুর, জাহির, খাজা আহমেদ ও দিপু কৃষিকাজের জন্য গোবিন্দহুদা গ্রামের মাঠে যায়। জয়নুর পেঁপে খেতে আর বাকিরা মরিচখেতে কাজ করছিল। এ সময় নুরুল হকসহ কয়েকজন ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়। হামলার পর তারা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হলে বেলা ১১টার পর তাঁদের চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে দুপুর ১২টার দিকে জয়নুর মারা যান। হতাহত ব্যক্তিরা মাসুদ বিল্লাহর পক্ষের লোক।
হামলার বিষয়ে জানতে নুরুল হকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শাপলা খাতুন বলেন, বেলা সোয়া ১১টার দিকে চারজনকে হাসপাতালে আনা হয়। বড় ধরনের আঘাত ও রক্তক্ষরণের কারণে জয়নুর মারা যান। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনকে ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ময়নাতদন্তের জন্য নিহত ব্যক্তি মরদেহ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
দামুড়হুদা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনোয়ারুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, হামলাকারীদের ধরতে অভিযান চলছে। এ ঘটনায় দুপুর পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের মামলায় প্রতিবেশীর যাবজ্জীবন
পঞ্চগড়ে চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে ভাতের লোভ দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তার প্রতিবেশী চাচা নজরুল ইসলামকে (৫৩) যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে পঞ্চগড় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মাসুদ পারভেজ আসামির উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন। নজরুল ইসলামের বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলায়।
আদালত সূত্রে জানা যায়, চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ওই শিশুটি অভাবের মধ্যে বেড়ে উঠছিলেন। বাবা মারা যাওয়ায় তার এক চাচা তার মাকে বিয়ে করেন। অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটত শিশুটির। ২০২২ সালের ১৫ মার্চ ওই শিশুকে ভাত খাওয়ানোর কথা বলে রাস্তা থেকে ডেকে নিয়ে যায় প্রতিবেশী চাচা নজরুল ইসলাম। বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে ঘরে নিয়ে মুখ চেপে ধর্ষণ করা হয় তাকে। এ সময় শিশুটির রক্তক্ষরণ হলে তার হাতে ৫০০ টাকার একটি নোট গুঁজে দেয় নজরুল। বিষয়টি কাউকে জানালে ছুরি দেখিয়ে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়। এভাবে ভয় দেখিয়ে এক মাস ধরে শিশুটিকে ধর্ষণ করে নজরুল। একপর্যায়ে শিশুটি ২৩ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে শারীরিক পরিবর্তন দেখে পরিবারের সদস্যদের সন্দেহ হয়। পরে শিশুটির মা তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলে সব ঘটনা খুলে বলে সে। বিষয়টি জানাজানি হলে নজরুল ইসলামের ছেলে হামিদার রহমান ১ লাখ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা ও জোর করে স্ট্যাম্পে সাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করে। এমনকি গর্ভপাত করানোর জন্য চাপ দিতে থাকে। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও সমঝোতার জন্য চাপ দিতে থাকেন। একপর্যায়ে ন্যায়বিচারের আশায় আদালতে নজরুল ও তার ছেলে হামিদারকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন শিশুটির মা। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে মঙ্গলবার আদালত রায় ঘোষণা করেন। তবে, রায়ে নজরুলের ছেলে হামিদারকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর জাকির হোসেন বলেছেন, আমরা ওই শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ আদালতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আদালত আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। এই রায়ে আমরা এবং বাদী সন্তুষ্ট।
ঢাকা/নাঈম/রফিক