ভারত–পাকিস্তানের এই বাগ্যুদ্ধ কি যুদ্ধে গড়াতে পারে
Published: 14th, October 2025 GMT
গত সপ্তাহে ভারতের যুদ্ধংদেহী বক্তব্যের জেরে নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে আবারও শুরু হয়েছে বাগ্যুদ্ধ। গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চার দিনের সংঘাতের পর থেকেই ভারতীয় কর্মকর্তাদের হুমকি ও উসকানিমূলক বক্তব্য থেমে থেমে চলছিল; কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের ধারাবাহিক মন্তব্য পরিস্থিতিকে আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে।
গত সপ্তাহে ভারতের পক্ষ থেকে তিনটি উসকানিমূলক মন্তব্য দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে নিয়ে যায়। সবচেয়ে আগ্রাসী মন্তব্যটি করেন ভারতের সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদী। তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, ‘পাকিস্তান যদি সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদ বন্ধ না করে, তবে তাকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকেই মুছে দেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ভারত এবার ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময়কার মতো সংযম দেখাবে না।
সেনাপ্রধান জানান, ‘ভারত প্রয়োজনে যেকোনো সীমান্ত অতিক্রম করতে পারে।’ তিনি সেনাদের প্রস্তুত থাকতে বলেন। কারণ, তাঁর ভাষায় ‘শিগগিরই যুদ্ধে নামতে হতে পারে।’
আরও পড়ুনভারত ও পাকিস্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন খেলা০৬ আগস্ট ২০২৫এরপর ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং অভিযোগ করেন, পাকিস্তান সির ক্রিক এলাকায় সামরিক স্থাপনা বাড়াচ্ছে। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, পাকিস্তান যদি এখানে কিছু করার সাহস দেখায়, ‘তাহলে এমন জবাব দেওয়া হবে, যা ইতিহাস ও ভূগোল দুটিই বদলে দেবে।’
বলে রাখি, সির ক্রিক হচ্ছে ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সংকীর্ণ খাঁড়ি বা নদীর শাখা। এর পানি জোয়ার-ভাটার সঙ্গে ওঠানামা করে। এটি ভারতের গুজরাট রাজ্যের রণ অব কচ্ছ অঞ্চলে অবস্থিত এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্তের অংশ হিসেবে বহুদিন ধরে বিতর্কিত। দুই দেশই দাবি করে, এই খাঁড়ির নির্দিষ্ট অংশ তাদের নিজেদের ভূখণ্ডের অন্তর্ভুক্ত।
আরও এক ধাপ এগিয়ে ভারতের বিমানবাহিনীর প্রধান অমর প্রীত সিং দাবি করেন, মে মাসের সংঘর্ষে ভারত নাকি ৯-১০টি পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে, যার মধ্যে দুটি এফ-১৬–ও ছিল। তিনি আরও বলেন, ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তানের যেকোনো স্থানে থাকা সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে ‘নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে সক্ষম’ এবং যেকোনো সময় তা করতে পারে।
পাকিস্তানের এখন কোনো ঝুঁকি নেওয়ার সুযোগ নেই। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের গাজা ‘শান্তি পরিকল্পনা’র অধীন মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক অংশগ্রহণের চিন্তা থাকলে তা আপাতত স্থগিত রাখা উচিত। দেশের পূর্ব সীমান্তের নিরাপত্তাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া প্রয়োজন। বাইরে সামরিক সম্পৃক্ততা পাকিস্তানকে আরও ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।পাকিস্তান এই মন্তব্যগুলোর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের সামরিক বৈঠকের পর প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতীয় নেতৃত্ব যদি কোনো ‘নতুন বাস্তবতা’ তৈরি করতে চায়, তবে পাকিস্তান তার ‘দ্রুত ও প্রতিশোধমূলক জবাব’ দেবে।
এর আগে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) ভারতীয় নেতৃত্বের বক্তব্যকে ‘উসকানিমূলক ও যুদ্ধপ্রবণ’ বলে অভিহিত করে। বিবৃতিতে বলা হয়, এসব বক্তব্য আসলে আগ্রাসনের অজুহাত তৈরি করার আরেকটি প্রচেষ্টা। আইএসপিআর আরও সতর্ক করে দিয়ে জানায়, ভবিষ্যতে কোনো সংঘাত শুরু হলে তা ‘বিপর্যয়কর ধ্বংস’ ডেকে আনতে পারে। কারণ, পাকিস্তান তখন আর সংযম দেখাবে না। সেনাপ্রধানের হুমকির জবাবে বলা হয়, যারা ‘মুছে ফেলা’র কথা বলছেন, তাঁদের জানা উচিত ‘মুছে দিতে গেলে মুছে যাওয়ার ঝুঁকিও আছে।’
আরও পড়ুনপাকিস্তানে হামলা করে ভারতের সবচেয়ে বড় যে ক্ষতিটা হলো২৯ মে ২০২৫এখন প্রশ্ন হলো ভারতের এই তীব্র বক্তব্যের পেছনে কারণ কী এবং তা কতটা গুরুত্বসহকারে নেওয়া উচিত। একটি ব্যাখ্যা হলো এসব বক্তব্য মূলত দেশীয় রাজনীতির জন্য, বিশেষত শাসক দলের হিন্দু ভোটব্যাংককে উজ্জীবিত করতে এসে থাকতে পারে। কারণ, পাকিস্তানবিরোধী মনোভাব উসকে দেওয়া বিজেপির বহুদিনের কৌশল।
আগামী বছর বিহারে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য নির্বাচন এবং তার পরপরই পশ্চিমবঙ্গে ভোট। মে মাসের সংঘাতে সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগে যখন মোদি সরকার চাপে, তখন এই যুদ্ধংদেহী ভাষণ দেশীয় রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা হতে পারে।
তবে এটিই একমাত্র কারণ নয়, ভারত এখনো মে মাসের সংঘাতে পাকিস্তানের হাতে পরাজয়ের ক্ষত মেনে নিতে পারেনি। পাকিস্তান তখন কয়েকটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান নামিয়ে দেয়, যা ভারতের জন্য ছিল বড় অপমান। তাই এই বক্তব্যগুলো হয়তো সেই পরাজয় ঢাকতে কিংবা প্রতিশোধের মানসিকতা প্রকাশ করার জন্য।
ভারতের এই মানহানির প্রতিকার করতে চাওয়ার মানসিকতা থেকেই আবারও কোনো ধরনের সীমান্ত অতিক্রম বা সামরিক অভিযান হতে পারে, এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। ভারতীয় নেতারা এখন বারবার বলছেন, ‘যুদ্ধের নিয়ম ও সীমারেখা বদলে গেছে।’
আরও পড়ুনভারত হামলা চালিয়ে যেভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি বাড়িয়ে দিল২০ মে ২০২৫বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিবেশ ভারতের জন্য অনুকূল নয়। পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এখন আগের চেয়ে উষ্ণ। অন্যদিকে দিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্ক টানাপোড়েনে। চীনের কূটনৈতিক ও সামরিক সমর্থন পাকিস্তানের প্রতি অটল আর পাকিস্তান-সৌদি কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তি দক্ষিণ এশিয়ার ভারসাম্য নতুনভাবে তৈরি করেছে।
গত মে মাসে পাকিস্তানে ভারতীয় বিমান হামলার সময় ভারত আন্তর্জাতিক সমর্থন পায়নি; এখন পরিস্থিতি আরও প্রতিকূল। তবু কেউ কেউ মনে করেন, বিশ্বে যখন শক্তি প্রয়োগই এখন ‘নতুন স্বাভাবিকতা’, তখন ভারত হয়তো সেই সীমা পরীক্ষা করতে চাইবে।
যাহোক, পাকিস্তানের এখন কোনো ঝুঁকি নেওয়ার সুযোগ নেই। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের গাজা ‘শান্তি পরিকল্পনা’র অধীন মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক অংশগ্রহণের চিন্তা থাকলে তা আপাতত স্থগিত রাখা উচিত। দেশের পূর্ব সীমান্তের নিরাপত্তাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া প্রয়োজন। বাইরে সামরিক সম্পৃক্ততা পাকিস্তানকে আরও ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
আরও পড়ুনইসরায়েল-ভারত যেভাবে পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করতে চেয়েছিল২৬ জুন ২০২৫ভারতের সংবাদমাধ্যম ও সাবেক কূটনীতিকদের মন্তব্য থেকে বোঝা যায়, ভারতের ভেতরেও এখন গভীর উদ্বেগ বিরাজ করছে। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, পাকিস্তান নতুনভাবে তার কৌশল সাজাচ্ছে, নতুন জোট গঠন করছে এবং আঞ্চলিক ভারসাম্য পুনর্গঠন করছে, যা ভারতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
মালিহা লোধি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত
ডন থেকে নেওয়া। অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত র জন য য ক তর আরও প
এছাড়াও পড়ুন:
‘আইএফআইসি শ্রীপুর বন্ডের’ তহবিল ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম তদন্তে বিএসইসি
পুঁজিবাজারে বন্ড খাতে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো গ্রুপের আইএফআইসি গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ডের তহবিল ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, দুর্নীতি ও সার্বিক কার্যক্রম তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বন্ডটির সঙ্গে সম্পৃক্ত সব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম অনুসন্ধান করার লক্ষ্যে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
তবে আইএফআইসি গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ডটির মাধ্যমে সংগৃহীত তহবিল অপব্যবহার হয়েছে কি-না, তা অনুসন্ধানের লক্ষ্যে ইতিপূর্বে জারি করা বিএসইসির তদন্তের আদেশ বাতিল করে নতুন আদেশ জারি করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
কারণ ছাড়াই বাড়ছে ওয়েব কোটসের শেয়ারদর
পুঁজিবাজারে সূচকের পতন, বেড়েছে লেনদেন
সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
২০২৪ সালে আইএফআইসি গ্যারান্টিড শ্রীপুর টাউনশিপ জিরো কুপন বন্ড ইস্যু করে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল। তবে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ নির্ধারিত প্রকল্প ও খাতে বিনিয়োগ হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখবে বিএসইসি। বিনিয়োগকারীদের তহবিল যথাযথ খাতে ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা-তদন্তের মূল লক্ষ্য।
আইএফআইসি গ্যারান্টিড শ্রীপুর টাউনশিপ জিরো কুপন বন্ডের জন্য গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন-বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মাদ রাকিবুর রহমান, উপ-পরিচালক শাহনেওয়াজ এবং সহকারী পরিচালক মো. হাসান।
বিএসইসির তদন্ত আদেশ
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইএফআইসি গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ডের ইস্যুয়ার শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেড, ট্রাস্টি সন্ধানী লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেড ও নিরীক্ষক এম.জে. আবেদীন অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টসের ওপর উক্ত বন্ড সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সম্পকিত বিষয় এবং আইএফআইসি গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ডের মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থের ব্যবহারের বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদশ, ১৯৬৯ এর ধারা ২১ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ আন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ এর ধারা ১৭ক এ প্রদন্ত ক্ষমতাবলে তিন জন কর্মচারীর সমন্বয়ে একটি অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটির সদস্যরা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৬০ দিবসের মধ্যে অনুসন্ধান ও তদন্ত সম্পন্ন করে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করবে।
আগে এ বিষয়ে বিএসইসির চলতি বছরের ২৭ আগস্ট জারি করা তদন্তের আদেশ বাতিল করা হলো।
যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি
গঠিত তদন্ত কমিটি আইএফআইসি গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ডের ইস্যুয়ার শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেড, ট্রাস্টি সন্ধানী লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেড ও নিরীক্ষক এম.জে. আবেদীন অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টসের সকল কার্যক্রম অনুসন্ধান করে দেখবে।
শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ডের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ প্রকল্প অনুযায়ী ব্যবহার করা হয়েছে কি না, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়েছে কি না, কিংবা কোনো অনিয়ম বা তথ্য গোপন করা হয়েছে কি না-তা যাচাই করবে গঠিত তদন্ত কমিটি।
বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
‘আইএফআইসি গ্যারান্টিড শ্রীপুর টাউনশিপ জিরো কুপন বন্ড’ শীর্ষক ১৫০০ কোটি টাকা অভিহিত মূল্যের ও ১০০০ কোটি টাকা ইস্যু মূল্যের বন্ড ২০২৩ সালের ৪ জুন ৮৭১তম কমিশন সভায় অনুমোদিত হয়েছিল। ওই বছরের ১২ জুলাই সেটার সম্মতিপত্র ইস্যু করা হয়েছিল। ওই বন্ডটির ইস্যুয়ার ছিল শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেড, যা ওই বছরের ২ মার্চ নিবন্ধিত একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি। কোম্পানিটি নিবন্ধিত হওয়ার পরপরই ২০২৩ সালের ১১ এপ্রিল ওই বন্ড ইস্যুর আবেদন করেছিল। ওই কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ছিল ৫০০ কোটি টাকা ও পরিশোধিত মূলধন ছিল ৩৩৫ কোটি টাকা, যার মধ্যে মাত্র ৪ দিনের ব্যবধানে ২৪৮ কোটি টাকার নগদ অর্থ ভূমি ক্রয় বা উন্নয়ন সংক্রান্ত কারণে উত্তোলন করা হয়েছিল, যেটি কমিশনের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল।
এছাড়া ওই বন্ডটির জামিনদার (গ্যারান্টার) হিসেবে আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি, অ্যাডভাইজার ও অ্যারেঞ্জার হিসেবে আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড, ট্রাস্টি হিসেবে সন্ধানী লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেড, ক্রেডিট রেটিং প্রদানকারী হিসেবে ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেড, নিরীক্ষক হিসেবে এমজে আবেদীন অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট দায়িত্ব পালন করেছে। আইএফআইসি ব্যাংক ওই বন্ড ইস্যু করেনি, মূলত রিয়েল এস্টেট কোম্পানি শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেড (এসটিএল) ওই বন্ডের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করেছে। কিন্তু বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে বন্ডের নাম হিসেবে ‘আইএফআইসি আমার বন্ড’ নামটি ব্যবহার করা হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীকে ধারণা দেয় যে, এ বন্ড আইএফআইসি ব্যাংক ইস্যু করেছে। কিন্তু আইএফআইসি ব্যাংক ছিল মূলত বন্ডটির জামিনদার (গ্যারান্টার)। এভাবে বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত করে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা হয়।
এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার কারণে বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার ও আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এবং বিএসইসির তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে পুঁজিবাজারে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে বিএসইসি। পাশাপাশি একইসঙ্গে সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ সায়ান ফজলুর রহমানকে আজীবন, বিএসইসির সাবেক কমিশনার শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ ও আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টের সাবেক সিইও ইমরান আহমেদকে ৫ বছর পুঁজিবাজারে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া সালমান এফ রহমানকে ১০০ কোটি টাকা, তার ছেলে আহমেদ সায়ান ফজলুর রহমানকে ৫০ কোটি টাকা ও ক্রেডিট রেটিং প্রদানকারী ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিংকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে।
ঢাকা/এনটি/এসবি