ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেছেন, “ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগে ৫-৭টি ব্যাচ চলমান থাকলেও শিক্ষক রয়েছেন মাত্র দুজন, যা শিক্ষার মানকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। এক্ষেত্রে শাহবাগকে প্রতিষ্ঠিত করে, বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, গণহত্যা সমর্থনকারী শিক্ষক থেকে আমরা কোনো শিক্ষা নিতে চাই না। অবশ্যই যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।”

শনিবার (১৮ অক্টোবর) যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগসহ পাঁচ দফা দাবিতে শাখা ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ’

‘সাজিদ হত্যার ৯০তম দিন, এরপর কি আমি?’

মাহমুদুল হাসান বলেন, “ইবি শিক্ষার্থী সাজিদকে হত্যার ৯৩ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত খুনিদের শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করা হয়নি। এটি শুধু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরই নয়, ইন্টেরিম সরকারেরও ব্যর্থতা। যদি দ্রুততম সময়ের মধ্যে সাজিদের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা না হয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।”

ছাত্র সংসদ নিয়ে তিনি বলেন, “প্রশাসন আইনের অজুহাত দেখিয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করছে না। অথচ বেগম রোকেয়া ও জগন্নাথের মতো নবীন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের আইন পাস করে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন ১৫ তারিখের মধ্যে নীতিমালা চূড়ান্ত করার আশ্বাস দিলেও ১৮ তারিখ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এ নিয়ে প্রশাসন কোনো রকম টালবাহানা করলে শিক্ষার্থীরা তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন হলগুলোর দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, “২০১৮ সালে টেন্ডার হওয়া হলের নির্মাণ কাজ ২০২৫ সালেও শেষ হয়নি, যা শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকটকে তীব্রতর করছে। চলতি বছরের মধ্যেই সব হলের নির্মাণ কাজ শেষ করে শিক্ষার্থীদের কাছে হস্তান্তর ও মেধার ভিত্তিতে সিট বণ্টন করতে হবে।”

মাহমুদুল হাসান বলেন, “একটি নির্দিষ্ট মহল আবারো আওয়ামী লীগের শাসনামলের মতো করে বিশ্ববিদ্যালয়ে গণরুম ও গেস্টরুম সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে, যেখানে প্রাধ্যক্ষরাও সহযোগিতা করছেন। কোনোভাবেই হলগুলোকে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দিতে দেওয়া হবে না। যদি এমন কোনো চেষ্টা করা হয়, তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধভাবে তা প্রতিহত করবে।”

সমাবেশে অনতিবিলম্বে সাজিদ হত্যার বিচার, ইকসুর নীতিমালা ও রোডম্যাপ প্রদান, ডিজিটাল পেমেন্ট নিশ্চিতকরণ, এ বছরেই নির্মাণাধীন হলসমূহ চালু এবং মেধা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানায় সংগঠনটি। এছাড়া সাতদিনের মধ্যে পেমেন্ট সিস্টেম ডিজিটালাইজেশনে পদক্ষেপে না নিলে প্রশাসন অচল করে দেওয়া হুঁশিয়ারি দেন সংগঠনটি। 

এর আগে, দুপুর দেড়টার দিকে বটতলা থেকে মিছিল শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। 

মিছিলে তারা ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘সাজিদ মৃত্যুর তদন্ত, দ্রুত করো, করতে হবে’, ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত করো, শিক্ষার্থীদের রক্ষা করো’, ‘হলগুলো চালু করো, ভোগান্তি দূর করো’, ‘ইকসুর তারিখ ঘোষণা করো, ছাত্র সংসদ নিশ্চিত করো’, ‘বিশ্ব যখন আধুনিক, ইবি কেন যান্ত্রিক’, ‘ডিজিটাল পেমেন্ট চালু হোক, ভোগান্তি দূর হোক’, ‘নিয়োগ হবে স্বচ্ছ, শিক্ষক হবে দক্ষ’, ‘মেধা আর স্বচ্ছতা, নিয়োগে চাই ন্যায্যতা’, ‘আবু সাইদের বাংলায়, নিয়োগ বাণিজ্যের ঠাই নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

সমাবেশে সংগঠনের শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি ইউসুব আলী, অফিস সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম রাফি, অর্থ সম্পাদক শেখ আল আমিন, প্রচার সম্পাদক আবসার নবী হামজা, দক্ষতা উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক হাসানুল বান্না অলি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/তানিম/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

নভেম্বরে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ও মৃত্যু বেড়েছে  

নভেম্বর মাসে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা অক্টোবরের তুলনায় বেড়েছে। অক্টোবরে ৪৯টি সহিংসতার ঘটনায় ৫৪৭ জন আহত ও ২ জন নিহত হয়েছিলেন। পরের মাসে ৭২টি রাজনৈতিক সহিংসতায় ৭২৪ জন আহত হয়েছেন আর নিহত হয়েছেন ৯ জন। সেই হিসাবে গত মাসের চেয়ে নভেম্বরে রাজনৈতিক সহিসংতায় মৃত্যু সাতজন বেড়েছে।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) নভেম্বর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে। আজ রোববার গণমাধ্যমে এ প্রতিবেদন পাঠিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনটি। সংবাদপত্রের প্রতিবেদন এবং নিজেদের তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

গণপিটুনিতে মৃত্যু বেড়েছে

এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নভেম্বর মাসেও একই ধারাবাহিকতায় গণপিটুনি বা মব (উচ্ছৃঙ্খল জনতার সংঘবদ্ধ আক্রমণ) সন্ত্রাসে হতাহতের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে ঘটেই চলেছে। নভেম্বরে কমপক্ষে ৪৩টি গণপিটুনির ঘটনায় ১৯ জন নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন ৩৮ জন। গণপিটুনির শিকার ২৩ জনকে আহত অবস্থায় পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। গণপিটুনিতে নিহতের মধ্যে ১ জনকে ছিনতাইয়ের অভিযোগে, ১৪ জনকে চুরির অভিযোগে, ২ জনকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে, ১ জনকে ডাকাতি ও ১ জনকে সালিসে হত্যা করা হয়।

অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছিল ৪৪টি। ওই মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।

এমএসএফ বলছে, আইন অবজ্ঞা করে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ। এ ক্ষেত্রে গণপিটুনির সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব।

কারা হেফাজতে মৃত্যু

এমএসএফের পরিসংখ্যান বলছে, নভেম্বরে কারা হেফাজতে মোট ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আগের মাসে এর সংখ্যা ছিল ১৩। চলতি মাসে ১ জন কয়েদি ও ১০ জন হাজতির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মী বলে জানা গেছে।

মানবাধিকার সংগঠনটি বলছে, কারা অভ্যন্তরে চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি বন্দীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে হেফাজতে মৃত্যুর কারণ যথাযথভাবে তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এ ছাড়া সরকারকে অবশ্যই যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত সমাধান খুঁজে বের করে বন্দীদের চিকিৎসাসেবার সুযোগ দিতে হবে। চিকিৎসাসেবা থেকে কোনোভাবেই কারাবন্দীদের বঞ্চিত করা যাবে না।

নাজুক সীমান্তে পরিস্থিতি

এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নভেম্বরে সীমান্ত পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত নাজুক। এ মাসে ভারতীয় জলসীমার কাছে বঙ্গোপসাগর থেকে ১০৮ জেলেকে ধরে নিয়ে যায় ভারতীয় কোস্টগার্ড। এ ছাড়াও নাফ নদী থেকে নৌকাসহ ৪৭ জেলেকে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি।

এ ছাড়া নভেম্বরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে এক বাংলাদেশি নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন। ভারতীয় নাগরিকের গুলিতে নিহত হয়েছেন আরও একজন। ভারতীয় সীমান্তে অজ্ঞাত আরও এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। চোরাকারবারিদের হামলা ঠেকাতে গিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) গুলিতেও এক যুবক নিহত হয়েছেন।

এমএসএফ বলছে, সীমান্তে পরিস্থিতির বিষয়ে প্রতিবাদ করা সত্ত্বেও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে আশাব্যঞ্জক প্রতিকার হচ্ছে না। সীমান্তে এ ধরনের ঘটনা কখনোই কাম্য হতে পারে না। অপর দিকে প্রতিবাদ সত্ত্বেও মিয়ানমার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে চলেছে। সীমান্তে এমন ঘটনা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।

অজ্ঞাতনামা মরদেহ উদ্ধার

এমএসএফ বলছে, নভেম্বরেও আগের ধারাবাহিকতায় অজ্ঞাতনামা মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা বাড়ছে। অজ্ঞাতনামা মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।

এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১৩ জন নারী ও ৪৫ জন পুরুষসহ মোট ৫৮টি অজ্ঞাতনামা মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। অল্পসংখ্যক ঘটনা ছাড়া সব কটি মরদেহের পরিচয় অজ্ঞাতই থেকে যাচ্ছে। আগের মাসে ৬৬টি অজ্ঞাতনামা মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল।

উদ্ধার হওয়া মরদেহের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। কিছু মরদেহ গলা কাটা, বস্তাবন্দী, হাত-পা বাঁধা ও রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাদিক কায়েম সাইবার মামলা করায় ছাত্রদলের নিন্দা
  • আরো বাড়ল স্বর্ণের দাম, মঙ্গলবার থেকে কার্যকর
  • খলাপাড়ার গণহত্যা দিবস: স্বাধীনতার প্রান্তে শহীদ হন ১০৬ জন
  • গণহত্যায় সূচিত হলো মুক্তির সংগ্রাম
  • নভেম্বরে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ও মৃত্যু বেড়েছে