আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশের আরগুন জেলায় বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন তিন স্থানীয় ক্রিকেটার। এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে আসন্ন ত্রিদেশীয় সিরিজে না খেলার ঘোষণা দিয়েছে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি)। সিরিজটি শুরু হওয়ার কথা ১৭ নভেম্বর, পাকিস্তানে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে এই টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার কথা শ্রীলঙ্কারও।

বিমান হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করার পর আফগানিস্তানকে নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি। আফগানিস্তানের জন্য পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের ত্যাগ ও সমর্থনের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।

নিজের এক্স হ্যান্ডলে আফ্রিদি লিখেছেন, ‘পাকিস্তান সব সময় আফগান ভাইদের পাশে থেকেছে, তাদের দুঃখ-কষ্টকে নিজেদের দুঃখ হিসেবে দেখেছে। সীমান্ত খুলে দিয়েছে ভাইদের জন্য। ৪০ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী আমিও ৩৫০টি আফগান পরিবারের দেখাশোনা করি। তবু খুব দুঃখের সঙ্গে আমাকে বলতে হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে আফগানিস্তান এসব উপকার ভুলে সীমান্তে প্রকাশ্য আগ্রাসন চালিয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সেনারা যথাযথ জবাব দিয়েছে। আফগানিস্তানের ভাবা উচিত, পাকিস্তান তার ভাইপ্রতিম ইসলামি দেশ। সুতরাং আফগানিস্তান এমন কোনো দেশের হাতে যেন ব্যবহৃত না হয়, যে দেশ ইতিমধ্যে পাকিস্তানের ভেতরে সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা করছে।’

আরও পড়ুনপাকিস্তানের ‘কাপুরুষোচিত হামলা’য় তিন আফগান ক্রিকেটার নিহতের ঘটনাকে ‘বর্বরতাপূর্ণ’ বললেন রশিদ খান৫ ঘণ্টা আগে

অন্যদিকে তিন ক্রিকেটার নিহত হওয়ার পর নিজেদের এক্স হ্যান্ডলে দেওয়া বিবৃতিতে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড জানিয়েছে, ‘আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড পাকতিকা প্রদেশের আরগুন জেলার সাহসী ক্রিকেটারদের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছে, যাঁরা সন্ধ্যায় পাকিস্তানি বাহিনীর কাপুরুষোচিত হামলার শিকার হয়েছেন।’

ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েও একই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মর্মান্তিক এ ঘটনার প্রতিবাদে ও নিহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড আসন্ন ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাকিস্তানকে নিয়ে নভেম্বরের শেষ দিকে এটি খেলার কথা ছিল।’

তবে ভারতের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, আফগানিস্তান না খেললেও সিরিজ নির্ধারিত সময়েই (১৭ থেকে ২০ নভেম্বর) আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তারা ইতিমধ্যে বিকল্প দল খুঁজতে অন্য দেশের ক্রিকেট বোর্ডগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। পিসিবির এক কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমটিকে বলেছেন, ‘আফগানিস্তান সরে দাঁড়ানোর পরও ত্রিদেশীয় সিরিজ নির্ধারিত সময়েই হবে। আমরা বিকল্প খুঁজছি, চূড়ান্ত হলে ঘোষণা দেওয়া হবে।’

আরও পড়ুনহামলায় নিহত তিন আফগান ক্রিকেটার, পাকিস্তানে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলবে না আফগানিস্তান৭ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আফগ ন স ত ন ক র ক ট ব র ড আফগ ন স ত ন র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদে সই না করে এনসিপির ‘একলা চলা’র ঝুঁকি ও সম্ভাবনা

এনসিপি কেন জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেনি, এ প্রশ্নে দলের নেতারা বিপ্লবী ভঙ্গিতে অবস্থান ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, আর সমালোচকেরা আশঙ্কা করছেন এতে এনসিপির ভবিষ্যৎ সংকটমুখী হতে পারে। একই সময়ে জামায়াত তাদের কৌশল নিয়ে সন্তুষ্ট; মঞ্চে ওঠার আগমুহূর্ত পর্যন্ত সাসপেনস ধরে রেখেছিল। বিএনপি আপাতত স্বস্তিতে আছে। কারণ, প্রধান দলগুলোর মধ্যে অন্তত একটি ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। তবু এনসিপির অবস্থান স্পষ্টভাবে বোঝা জরুরি।

এখন পর্যন্ত এনসিপির যে নেতার বক্তব্য আমার কাছে সবচেয়ে পরিণত ও যৌক্তিক লেগেছে, তিনি খালেদ সাইফুল্লাহ। খালেদ লিখেছেন, এনসিপি জুলাই সনদ প্রণয়নের উদ্যোগকে সম্মান জানালেও আজকের অনুষ্ঠানটিকে তারা ঐকমত্যের ঘোষণা হিসেবে দেখছে না। অতীতের ‘স্বাক্ষর, কিন্তু বাস্তবায়ন নয়’ অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলছেন, সইয়ের আগে একটি স্পষ্ট ও প্রকাশ্য বাস্তবায়ন-রূপরেখা দরকার।

আরও কিছু মৌলিক বিষয়ে মতভেদ রয়েছে এনসিপির। যেমন উচ্চকক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিয়োগপ্রক্রিয়া এবং অ্যান্টি–করাপশন কমিশন (এসিসি) ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) স্বাধীনতা, যা ভবিষ্যৎ জবাবদিহির কেন্দ্রে অবস্থান করে।

এনসিপির মতে, জুলাই আন্দোলনের মর্ম ছিল অনুষ্ঠান নয়, বাস্তব পরিবর্তন। তাই স্পষ্টতা না আসা পর্যন্ত অপেক্ষাই সেই মর্মকে রক্ষা করে। বাস্তবায়নকাঠামো চূড়ান্ত হয়ে মৌলিক সংস্কার সুরক্ষিত হলেই তারা সই করবে বলে খালেদ লিখেছেন। তিনি লেখেন, কে আগে সই করল তা নয়, সনদটি জনগণের সম্মিলিত ইচ্ছা কতটা ধারণ করে, সেটিই মুখ্য। একই সঙ্গে যারা শুভ বিশ্বাসে সই করেছে, তাদের সিদ্ধান্তকে তিনি সম্মান করে প্রসেসকেন্দ্রিক রাজনীতির কথা বলেছেন।

‘স্বাক্ষর, কিন্তু বাস্তবায়ন নয়’ অভিজ্ঞতার বিষয়ের একটি ঐতিহাসিক বাস্তবতা আছে। বাংলাদেশে ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে প্রবল গণ-আন্দোলনের মুখে এককালের সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পদত্যাগ ও ক্ষমতা হস্তান্তরের ‘দালিলিক ভিত্তি হিসেবে’ আন্দোলনরত তিন জোট একটি রূপরেখা ঘোষণা করে। এটি ছিল ‘ক্ষমতা হস্তান্তর, রাজনীতি ও  রাষ্ট্র পরিচালনার দলিল’।

যে তিনটি জোট ওই রূপরেখা প্রণয়ন ও ঘোষণা করেছিল, সেগুলো হলো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন আটদলীয় জোট, বিএনপির নেতৃত্বাধীন সাতদলীয় জোট এবং বাম ঘরানার দলগুলোর সমন্বয়ে পাঁচদলীয় জোট। এর বাইরে একই দাবিতে জামায়াতে ইসলামী যুগপৎ আন্দোলন করেছিল, তবে তারা কোনো জোটে ছিল না। যা–ই হোক, এনসিপির সংশ্লিষ্ট একাধিক বুদ্ধিজীবী গত এক বছরে অনেকবারই এই রূপরেখার উদাহরণ টেনেছেন ও বলেছেন, এই রূপরেখা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে জুলাই সনদও বাস্তবায়িত হবে না।

আরও পড়ুনজুলাই সনদ কি পর্বতের মূষিক প্রসব২ ঘণ্টা আগে

আমি এ ঘটনার ব্যাখ্যার সঙ্গে আংশিকভাবে একমত। ‘একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচনের মাধ্যমে সার্বভৌম সংসদ গঠনের লক্ষ্যে এরশাদের পতন’ ছিল এই রূপরেখার কেন্দ্রীয় দাবি। এই দাবি আংশিকভাবে পূরণ হয়েছিল। আমরা দেখেছি ১৯৯০, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করা হয়।

রাজনৈতিক দলগুলো সংসদীয় গণতন্ত্র চালু করে; কিন্তু পরে দুই প্রধান দলই অর্থাৎ বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নিজেদের রূপরেখাকে শুধু উপেক্ষাই করেনি; বরং অনেক ক্ষেত্রে উল্টো কাজ করেছে। গবেষক ও লেখক মহিউদ্দিন আহমদ এ বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছেন। এত বড় ব্যাখ্যা দেওয়ার কারণ হলো এনসিপির এই আশঙ্কার একটি ঐতিহাসিক ভিত্তি আছে। তবে এনসিপির এই ব্যর্থতার অভিযোগ আংশিকভাবে সত্য, পুরোপুরি নয়।

আমার মনে হয়েছে, এনসিপি নেতা খালেদ সেখান থেকেই বলেছেন ‘স্বাক্ষর, কিন্তু বাস্তবায়ন নয়’ অভিজ্ঞতা দিয়ে তাদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হয়েছে। খালেদের এই মতামত আমি যৌক্তিক বলব, একেবারে অস্বীকার করছি না। বিশেষ করে যখন তিনি লেখেন, ‘আওয়ার ডিফারেন্সেস লাই ইন অ্যাপ্রোচ, নট ইন পারপাস’, তখন তাদের অবস্থান স্পষ্ট হয়।

রাজনৈতিক কারণে আমি জুলাই সনদে স্বাক্ষরের পক্ষে, তা যেমন দুর্বলই হোক না কেন। আমি নিশ্চিত নই, এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্র উত্তরণে কতটা বড় ভূমিকা রাখবে। তবু নির্বাচনের আগমুহূর্তে রাজনৈতিক ঐকমত্য গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছিল এই সনদ। সনদে স্বাক্ষর হওয়ায় আপাতত নির্বাচনের পথে বড় বাধা থাকল না। বাস্তব কথা, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে স্থিতির দিকে যেতে দ্রুত নির্বাচন এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিকল্প নেই। অবশ্য নির্বাচন হলেই গণতন্ত্র আসবে, এটা নয়; কিন্তু শুরুটা জরুরি।

এই মতামতের পাশাপাশি আরেকটি মতামতও দেখলাম। এই মতামতটি আপাতদৃষ্টে শক্তিশালী মনে হয়েছে ও একাধিক এনসিপি নেতা পোস্ট করেছেন। এর বয়ানের মূল বক্তব্য হলো জুলাই সনদ দেখে তাদের মনে হয়েছে, সেখানে তাদের প্রত্যাশিত নানা সুরক্ষার গ্যারান্টি নেই। তাই তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, ‘মরবে এনসিপি, বিএনপিরও কিছু হবে না, জামায়াতেরও কিছু হবে না।’ গত এক বছরে অনেকে এ ধরনের কথা বহুবার বলেছেন।

এনসিপির এই ধারাবাহিক ‘নিজেকে ভিকটিম’ দেখানোর প্রবণতার সঙ্গে আমি একমত নই। প্রথমত, ভিকটিমহুড-নির্ভর রাজনীতির সমালোচক আমি; এই রাজনীতি আমাদের ভালো কিছু দেয়নি। আওয়ামী লীগের উদাহরণই যথেষ্ট, যারা ভিকটিম ন্যারেটিভ দেখিয়ে রাজনীতি করেছেন, অনেক সময় নিজেরাই ‘জালিম’ হয়ে ওঠেন এবং নিজেদের ভিকটিম ন্যারেটিভ দিয়ে তা বৈধতা দেন।

জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫–এ স্বাক্ষরের পর সনদের কপি তুলে ধরেন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। যদিও এনসিপিসহ আরও কয়েকটি দল এ সনদে স্বাক্ষর করেনি। দলগুলোর নেতারাও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেননি। শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ