দাঁতের জন্য হাতি শিকারের পাশাপাশি দেশে মাংসের জন্যও যে প্রাণীটি শিকার করা হচ্ছে, এই প্রথম তার প্রমাণ পেয়েছেন একদল গবেষক।

মিয়ানমারের সীমান্তসংলগ্ন পার্বত্য অঞ্চলের সাঙ্গু-মাতামুহুরী সংরক্ষিত বনে মাংসের জন্য হাতি শিকার করার একটি স্থানের সন্ধান পেয়েছেন তাঁরা। এই বনেই রয়েছে ‘সাঙ্গু বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য’।

এ বছরের এপ্রিলে এই বনে গবেষণা পরিচালনা করে চার সদস্যের দলটি। তাদের প্রতিবেদন ১৬ অক্টোবর কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

নতুন এই তথ্য নিয়ে হাতিবিশেষজ্ঞ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম এ আজিজ বললেন, এটা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। মাংসের জন্য হাতি শিকারের কথা তিনি আগেও শুনেছিলেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাংসের জন্য পার্বত্য অঞ্চলে হাতি শিকার করা হয়, বহুদিন ধরে এমনটা শোনা গেলেও কোনো প্রমাণ ছিল না। এই প্রথম তার সত্যতা পাওয়া গেল।

এপ্রিলের ২৫ তারিখ সাঙ্গু-মাতামুহুরীর গহিন বনে একটি মাচার ওপর হাতির মাংস শুকানোর প্রমাণ পায় গবেষক দল। স্থানটি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সীমান্তসংলগ্ন এলাকা।

৩৬ ফুট দৈর্ঘ্য ও তিন ফুট উচ্চতার মাচার ওপর হাতির মাংসের শুকনা টুকরা পাওয়া গেছে। গবেষক দলের ধারণা, এ জন্য একটি পূর্ণ বয়স্ক হাতি হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। হাতির মাংসের পাশাপাশি হাতির হাড় ও চামড়া আগুন দিয়ে শুকানো হচ্ছিল।

স্থানীয় লোকজন সম্প্রতি হাতি নিধনের এ রকম কয়েকটি ঘটনা নিশ্চিত করেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

মিয়ানমার সীমান্তে গহিন বনে একটি মাচার ওপর হাতির মাংস শুকানোর প্রমাণ পাওয়া যায়। ৩৬ ফুট দৈর্ঘ্য ও তিন ফুট উচ্চতার মাচার ওপর হাতির মাংসের শুকনা টুকরা পাওয়া গেছে। গবেষক দলের ধারণা, এ জন্য একটি পূর্ণ বয়স্ক হাতি হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও শেরপুর এলাকায় হাতির জন্য যে হুমকি রয়েছে, তা সাঙ্গু অভয়াশ্রমে না থাকলেও এই ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে বলে গবেষকদের মন্তব্য।

গবেষক দলের একজন সদস্য নাম প্রকাশ করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাঙ্গু-মাতামুহুরীর সংরক্ষিত বন এখনো তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিগ্রস্ত এবং প্রাকৃতিক বনের সব বৈশিষ্ট্য এখানে অক্ষত রয়েছে। এ বন হাতির আবাসস্থল হিসেবে বেশ সমৃদ্ধ এখনো। মাংসের জন্য হাতি হত্যা এখানে একটি বড় উদ্বেগ।’

মাংসের জন্য মারা হাতির শুকনা হাড় ও দাঁত মিয়ানমারে পাচার করা হতে পারে বলে তার ধারণা।

বন বিভাগের তথ্য বলছে, গত ৯ বছরে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ১১৪টি হাতি মারা গেছে; কিন্তু বন আদালতে মামলা হয়েছে মাত্র ১৯টি। আর থানায় সাধারণ ডায়েরি হয়েছে ৭৫টি। একই সময়ে নেত্রকোনা, শেরপুর, ময়মনসিংহ ও জামালপুরে ৩২টি হাতি হত্যার শিকার হয়।

বনের মধ্যে বসবাস, এমন একটি স্থানীয় সম্প্রদায়ের বক্তব্য নিয়েছে কেমব্রিজের গবেষক দলটি। স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের কয়েকটি চক্র হাতি শিকারে জড়িত।

মাচার ওপর পাওয়া হাতির মাংসের শুকনা টুকরো।.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম চ র ওপর হ ত র ম র জন য হ ত স র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

খুবির হল ও ক্যাফেটেরিয়ার খাবারে টেস্টিং সল্ট ব্যবহারের অভিযোগ

নিম্নমানের খাবার, অতিরিক্ত দাম ও ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) ক্যাফেটেরিয়া, হল, ক্যান্টিন ও আশপাশের দোকানগুলোর বিরুদ্ধে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম অসন্তোষ ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

বাসি ‌ও অরুচিকর খাবারকে মুখরোচক করতে ‘টেস্টিং সল্ট’ ব্যবহারের অভিযোগও রয়েছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

আরো পড়ুন:

জিএস পদে হারলেও সিনেটে নির্বাচিত ফাহিম

রাকসুতে ছাত্রদলের প্যানেলে খেলোয়াড় নার্গিস নির্বাচিত 

চিকিৎসাবিজ্ঞান অনুযায়ী, ‘স্নায়ু বিষ’ হিসেবে পরিচিত ‘টেস্টিং সল্ট’ নামে এই রাসায়নিক ব্যবহারে মস্তিষ্কের ক্যান্সারসহ নানা ভয়াবহ রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। অথচ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ক্যান্টিন ও খাবারের দোকানে নিয়মিতই এটি ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

প্রায় ৯ হাজার শিক্ষার্থীর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য তিনটি এবং ছাত্রীদের জন্য দুইটি আবাসিক হল থাকলেও, ছাত্রীদের হলগুলোতে নেই কোনো ক্যান্টিন। ডাইনিং-ব্যবস্থাও অনিয়মিত। ফলে অধিকাংশ ছাত্রীকে বাধ্য হয়ে নিজেদের হলে রান্না করে খেতে হয় কিংবা পাশের হল রোডের দোকানগুলো থেকে অতিরিক্ত দামে খাবার কিনতে হয়। ওইসব দোকানে একটি ডিম ২৫ টাকা, একটি পিস মুরগি বা মাছ ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্টিনে মানহীন খাবারকে মুখরোচক করতে ব্যবহৃত হচ্ছে টেস্টিং সল্ট। তারা একাধিকবার ক্যান্টিন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানালেও কোনো পরিবর্তন আসেনি। গত ২ অক্টোবর বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন হলের রান্নাঘর থেকে শিক্ষার্থীরা প্রায় ২৫০ গ্রাম টেস্টিং সল্ট উদ্ধার করে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আবাসিক শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান বলেন, “আমি কৌতূহলবশত রান্নাঘরে ঢুকে একটি ময়লা কৌটায় টেস্টিং সল্ট দেখতে পাই। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গেই হল প্রাধ্যক্ষকে জানাই।”

তবে হলের ক্যান্টিন ম্যানেজার সাগর দাবি করেন, বিশেষ কিছু রান্নার জন্য মাঝেমধ্যে সামান্য পরিমাণে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করা হয়।

শিক্ষার্থীরা জানান, খিচুড়ি, পোলাও, মাংস, রোস্ট, মাছ, ডাল ও সবজিসহ প্রায় সব খাবারেই টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করা হয়। খাবারের স্বাদে ভিন্নতা থাকলেও শরীরে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপরাজিতা হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশের বদলে প্রতিনিয়ত পচা-বাসি খাবার আর অসুস্থতার সঙ্গে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। খাবারে টেস্টিং সল্ট মেশানো হয় বলেই প্রায়ই আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. কানিজ ফাহমিদা বলেন, “নিয়মিত টেস্টিং সল্ট গ্রহণে শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে। শরীরে তাৎক্ষণিক প্রভাব না পড়লেও দীর্ঘমেয়াদে এটি মারাত্মক ক্ষতি করে।”

এ নিয়ে প্রাধ্যক্ষ কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক ড. খসরুল আলম বলেন, “মাছ-মাংসের দাম বাড়ায় কিছুটা খাবারের মূল্য বেড়েছে। তবে ক্যান্টিনে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার না করার বিষয়ে আমাদের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের সচেতন থেকে এসব বিষয়ে আমাদের অবহিত করা প্রয়োজন। তারা খাবারের মান বা মেন্যু নিয়ে নিয়মিত জানালে প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে।”

ঢাকা/হাসিব/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ