যুক্তরাষ্ট্রই কি আসলে ইসরায়েলের স্বাধীনতার সীমা নির্ধারণ করে দিচ্ছে
Published: 25th, October 2025 GMT
সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক উচ্চপর্যায়ের মার্কিন কর্মকর্তাকে ইসরায়েল সফরে যেতে দেখা গেছে। প্রথমে গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার ইসরায়েল সফরে যান। এরপর গত মঙ্গলবার মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স এবং গত বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও দেশটি সফর করেন।
তাঁদের সবার লক্ষ্য পরিষ্কার—গাজায় যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি যেন ভেঙে না যায়, তা নিশ্চিত করা। এর মানে হলো, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ইসরায়েল সরকার যেন গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি থেকে সরে না আসতে পারে, তা নিশ্চিত করা। দুই বছরের যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে চলতি মাসের শুরুতে ওই যুদ্ধবিরতি হয়।
ইসরায়েলে মার্কিন কর্মকর্তাদের ঘন ঘন সফরকে গাজায় আবারও হামলার অজুহাত খুঁজতে থাকা চরম ডানপন্থী নেতানিয়াহু সরকারকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। গাজায় দুই বছরের যুদ্ধে ৬৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলে এ পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বড় ধরনের কূটনৈতিক সাফল্য পেয়েছে। অনেক বিশ্লেষকের মতে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইসরায়েলের আনুগত্যের প্রমাণ দেয়। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, ওয়াশিংটন কিছু করতে বললে, ইসরায়েল শেষ পর্যন্ত তা মেনে নেয়।
সাবেক ইসরায়েলি দূত এবং নিউইয়র্কে নিযুক্ত কনসাল জেনারেল অ্যালন পিনকাস বলেন, ‘অবশ্যই ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বলয়ে থাকা একটি রাষ্ট্র।’
পিনকাস এ ক্ষেত্রে মূলত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সহায়তা পাওয়ার বদৌলতে দেশটির প্রতি ইসরায়েলের যে নির্ভরতা তৈরি হয়েছে, সেটিকে ইঙ্গিত করেছেন। যেমন ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কোটি কোটি ডলার সহায়তা পেয়েছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সমালোচনা বা নিষেধাজ্ঞা প্রতিহত করতে জাতিসংঘে হওয়া ভোটাভুটিতে ওয়াশিংটন বেশ কয়েকবারই ভেটো দিয়েছে। এ ছাড়া সামরিক সুরক্ষা তো আছেই।
মূলত দীর্ঘদিনের সে সহায়তাকেই চাপপ্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে ট্রাম্প প্রশাসন। এটা দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুব বিরল একটি ঘটনা। এবার তারা সরাসরি ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া অনুযায়ী আচরণ করতে বাধ্য করছে এবং প্রকাশ্যেই ওয়াশিংটনের চাপপ্রয়োগের বিষয়টি সামনে আনছে। এই চাপের কিছুটা এসেছে স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকেই।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালে ট্রাম্পও ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়েছিলেন এবং দেশটিতে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফেরার পর ট্রাম্পের সে অবস্থানে বদল দেখা যায়। দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে তুলনামূলক বেশি বিরোধপূর্ণ পথ অনুসরণ করছেন। এখন পর্যন্ত তাঁর এ অবস্থান কাজেও লেগেছে।টাইম সাময়িকীতে গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি নেতানিয়াহুকে গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া থেকে থামিয়েছেন। ট্রাম্প বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমি তাঁকে থামিয়েছি। না হলে তিনি যুদ্ধ চালিয়েই যেতেন। সেটা হয়তো বছরের পর বছর ধরে চলত।’
একই সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, যদি ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরকে নিজেদের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া চালিয়ে যায়, তবে ইসরায়েলকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া বন্ধ করে দেবে যুক্তরাষ্ট্র। পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবটি গত বুধবার ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটে প্রাথমিকভাবে অনুমোদন পেয়েছে। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সও ইসরায়েলি পার্লামেন্টে এই প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটির বিরোধিতা করেন এবং এটিকে ‘অত্যন্ত বোকামি’ বলে উল্লেখ করেন।
নেতানিয়াহু সে বার্তা বুঝতে পেরেছেন। তাঁর কার্যালয় এ ভোটাভুটিকে ‘রাজনৈতিক উসকানি’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। যদিও তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারের সদস্যরাও প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। নেতানিয়াহু নিজেও আগে পশ্চিম তীরকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টিকে সমর্থন দিয়েছিলেন।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স এবং ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ইসর য় ল ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন পুনর্বহালের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলের ওপর শুনানি শুরু
বাগেরহাটে আগের মতো চারটি সংসদীয় আসন পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) ওপর শুনানি শুরু হয়েছে। পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকাল বুধবার দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ।
শুনানি নিয়ে আজ মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ এ দিন ধার্য করেন।
এর আগে বাগেরহাটে সংসদীয় আসন চারটি থেকে কমিয়ে তিনটি করা–সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গেজেটের বৈধতা নিয়ে করা এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ১০ নভেম্বর হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন পুনর্বহাল করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গেজেট প্রকাশ করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পরপরই তা স্থগিত চেয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এবং গাজীপুর-৬ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী মো. সালাহ উদ্দিন সরকার আপিল বিভাগে পৃথক আবেদন করেন। গত ১২ নভেম্বর আবেদন দুটি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে ওঠে। সেদিন আদালত আবেদন দুটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে ১৬ নভেম্বর শুনানির জন্য ধার্য করেন। পাশাপাশি এ সময়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলা হয়।
আগের ধারাবাহিকতায় আবেদন দুটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে। এদিকে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় ৩ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর নির্বাচন কমিশন ও গাজীপুর-৬ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী টঙ্গী পূর্ব থানা বিএনপির সভাপতি সরকার জাবেদ আহমেদ পৃথক লিভ টু আপিল করেন। গাজীপুর–৬ আসন থেকে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী হাফিজুর রহমান এর আগে আপিল বিভাগে একটি আবেদন করেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা পৃথক লিভ টু আপিল ও আবেদনগুলো একসঙ্গে শুনানির জন্য ওঠে।
আদালতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে আজ শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, সঙ্গে ছিলেন কমিশনের আইনজীবী কামাল হোসেন মিয়াজী। সরকার জাবেদ আহমেদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম বদরুদ্দোজা বাদল আর সালাহ উদ্দিন সরকারের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান শুনানি করেন। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন। হাফিজুর রহমানের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ৩০ জুলাই নির্বাচন কমিশন প্রাথমিকভাবে বাগেরহাটের চারটি আসন থেকে একটি কমিয়ে তিনটি করার প্রস্তাব দেয়। ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে নামে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তারা সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি গড়ে তোলে এবং হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।
নির্বাচন কমিশন গত ৪ সেপ্টেম্বর এ-সংক্রান্ত চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে। এতে চারটি আসন থেকে একটি কমিয়ে বাগেরহাটকে তিন আসনে ভাগ করা হয়। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বাগেরহাট প্রেসক্লাব, বাগেরহাট জেলা বিএনপি, জেলা জামায়াতে ইসলামী, বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতি, সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশন, বাগেরহাট জেলা ট্রাক ট্যাংকলরি কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে বাগেরহাট-১ আসন থেকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মো. শেখ মাসুদ রানা রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল যথাযথ (অ্যাবসলিউট) ঘোষণা করে ১০ নভেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট।
রিট আবেদনকারী পক্ষ জানায়, বাগেরহাটে আগে চারটি আসন ছিল, একটি কমিয়ে গাজীপুরে একটি আসন বাড়ানো হয়েছিল। বাগেরহাট-৪ আসন কেটে গাজীপুর-৬ আসন করা হয়েছিল। ১৯৭২ সাল থেকে বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসনে নির্বাচন হয়ে আসছিল। সে অনুযায়ী বাগেরহাট-১ ছিল চিতলমারী-মোল্লাহাট-ফকিরহাট উপজেলা নিয়ে গঠিত; বাগেরহাট-২ ছিল বাগেরহাট সদর-কচুয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত; বাগেরহাট-৩ ছিল রামপাল-মোংলা উপজেলা নিয়ে এবং বাগেরহাট-৪ ছিল মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা উপজেলা নিয়ে।
হাইকোর্টের রায়ে বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন পুনর্বহাল করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গেজেট প্রকাশ করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়। রায়ে বলা হয়, সর্বশেষ ২০২২ সালের আদমশুমারির ভিত্তিতে ২০২৩ সালের ১ জুলাই উল্লেখিত গেজেট অনুসারে আগের মতো সংসদীয় আসন নম্বর ৯৫ (বাগেরহাট-১), আসন নম্বর ৯৬ (বাগেরহাট-২), আসন নম্বর ৯৭ (বাগেরহাট-৩) এবং আসন নম্বর ৯৮ (বাগেরহাট-৪) পুনর্বহাল করে গেজেট প্রকাশ করতে নির্দেশ দেওয়া হলো।
রায়ে বলা হয়, রিট আবেদনে সংযুক্ত গত ৪ সেপ্টেম্বরের গেজেট নোটিফিকেশনের (ইসির প্রজ্ঞাপন) সংসদীয় আসন নম্বর ৯৫ (বাগেরহাট-১), আসন নম্বর ৯৬ (বাগেরহাট-২), আসন নম্বর ৯৭ (বাগেরহাট-৩) এবং আসন নম্বর ১৯৮ (গাজীপুর-৬) গঠনসম্পর্কিত অংশটুকু অবৈধ, আইনগত কর্তৃত্ববর্হিভূত ঘোষণা করা হলো।