সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক উচ্চপর্যায়ের মার্কিন কর্মকর্তাকে ইসরায়েল সফরে যেতে দেখা গেছে। প্রথমে গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার ইসরায়েল সফরে যান। এরপর গত মঙ্গলবার মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স এবং গত বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও দেশটি সফর করেন।

তাঁদের সবার লক্ষ্য পরিষ্কার—গাজায় যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি যেন ভেঙে না যায়, তা নিশ্চিত করা। এর মানে হলো, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ইসরায়েল সরকার যেন গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি থেকে সরে না আসতে পারে, তা নিশ্চিত করা। দুই বছরের যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে চলতি মাসের শুরুতে ওই যুদ্ধবিরতি হয়।

ইসরায়েলে মার্কিন কর্মকর্তাদের ঘন ঘন সফরকে গাজায় আবারও হামলার অজুহাত খুঁজতে থাকা চরম ডানপন্থী নেতানিয়াহু সরকারকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। গাজায় দুই বছরের যুদ্ধে ৬৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

ইসরায়েলে এ পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বড় ধরনের কূটনৈতিক সাফল্য পেয়েছে। অনেক বিশ্লেষকের মতে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইসরায়েলের আনুগত্যের প্রমাণ দেয়। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, ওয়াশিংটন কিছু করতে বললে, ইসরায়েল শেষ পর্যন্ত তা মেনে নেয়।

সাবেক ইসরায়েলি দূত এবং নিউইয়র্কে নিযুক্ত কনসাল জেনারেল অ্যালন পিনকাস বলেন, ‘অবশ্যই ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বলয়ে থাকা একটি রাষ্ট্র।’

পিনকাস এ ক্ষেত্রে মূলত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সহায়তা পাওয়ার বদৌলতে দেশটির প্রতি ইসরায়েলের যে নির্ভরতা তৈরি হয়েছে, সেটিকে ইঙ্গিত করেছেন। যেমন ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কোটি কোটি ডলার সহায়তা পেয়েছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সমালোচনা বা নিষেধাজ্ঞা প্রতিহত করতে জাতিসংঘে হওয়া ভোটাভুটিতে ওয়াশিংটন বেশ কয়েকবারই ভেটো দিয়েছে। এ ছাড়া সামরিক সুরক্ষা তো আছেই।

মূলত দীর্ঘদিনের সে সহায়তাকেই চাপপ্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে ট্রাম্প প্রশাসন। এটা দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুব বিরল একটি ঘটনা। এবার তারা সরাসরি ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া অনুযায়ী আচরণ করতে বাধ্য করছে এবং প্রকাশ্যেই ওয়াশিংটনের চাপপ্রয়োগের বিষয়টি সামনে আনছে। এই চাপের কিছুটা এসেছে স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকেই।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালে ট্রাম্পও ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়েছিলেন এবং দেশটিতে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফেরার পর ট্রাম্পের সে অবস্থানে বদল দেখা যায়। দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে তুলনামূলক বেশি বিরোধপূর্ণ পথ অনুসরণ করছেন। এখন পর্যন্ত তাঁর এ অবস্থান কাজেও লেগেছে।

টাইম সাময়িকীতে গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি নেতানিয়াহুকে গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া থেকে থামিয়েছেন। ট্রাম্প বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমি তাঁকে থামিয়েছি। না হলে তিনি যুদ্ধ চালিয়েই যেতেন। সেটা হয়তো বছরের পর বছর ধরে চলত।’

একই সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, যদি ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরকে নিজেদের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া চালিয়ে যায়, তবে ইসরায়েলকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া বন্ধ করে দেবে যুক্তরাষ্ট্র। পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবটি গত বুধবার ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটে প্রাথমিকভাবে অনুমোদন পেয়েছে। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সও ইসরায়েলি পার্লামেন্টে এই প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটির বিরোধিতা করেন এবং এটিকে ‘অত্যন্ত বোকামি’ বলে উল্লেখ করেন।

নেতানিয়াহু সে বার্তা বুঝতে পেরেছেন। তাঁর কার্যালয় এ ভোটাভুটিকে ‘রাজনৈতিক উসকানি’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। যদিও তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারের সদস্যরাও প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। নেতানিয়াহু নিজেও আগে পশ্চিম তীরকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টিকে সমর্থন দিয়েছিলেন।

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স এবং ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ইসর য় ল ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

সোনারগাঁয়ে কাবাডি খেলায় হাজারো দর্শক, ফিরে এলো হারানো ঐতিহ্য

 

গ্রামবাংলার মাঠে-মাঠে একসময় জমজমাটভাবে অনুষ্ঠিত হতো কাবাডি বা হাডুডু খেলা। সময়ের পরিক্রমায় আধুনিক খেলাধুলার ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলাদেশের এই জাতীয় খেলা। তবে দীর্ঘদিন পর সেই হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার ঐতিহাসিক চেঙ্গাকান্দী গ্রামের তরুণরা। 

শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) বিকেলে চেঙ্গাকান্দী বালুর মাঠে আয়োজিত হয় এক চমৎকার কাবাডি প্রতিযোগিতা। আশপাশের এলাকা থেকে হাজার হাজার দর্শক মাঠে ভিড় জমান। দর্শকদের উচ্ছ্বাসে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা যেন ফিরে এসেছে গ্রামবাংলার সেই সোনালি দিন।

খেলার আয়োজক শরীফ বলেন, হাডুডু আমাদের জাতীয় খেলা হলেও আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। তাই গ্রামের ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমরা এই আয়োজন করেছি। এলাকাবাসীর সহায়তায় আজ তা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

প্রতিযোগিতায় লাল দল ও নীল দল মুখোমুখি হয়। টানটান উত্তেজনায় ভরপুর এই ম্যাচে দুই দলই সমানভাবে জয় ভাগাভাগি করে নেয়।

খেলা দেখতে আসা স্থানীয় দর্শক মো. সিদ্দিক বলেন, এখন সবাই ক্রিকেট আর ফুটবলে ব্যস্ত। কিন্তু কাবাডিই তো আমাদের শিকড়ের খেলা। আজ এত মানুষ দেখে মনে হলো পুরোনো সময় ফিরে এসেছে।

দর্শক তারা মিয়া বলেন, এই খেলা আমাদের গ্রামের মানুষকে একসাথে করে। আজকে ছেলেমেয়েরা, বৃদ্ধ সবাই মিলে মাঠে এসেছে এটাই তো আসল আনন্দ। এমন আয়োজন বারবার হলে গ্রামের সংস্কৃতি টিকে থাকবে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সোনারগাঁ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক ও বারদী ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক আব্দুল আলী বলেন, কাবাডি আমাদের জাতীয় খেলা হলেও আজ তা হারিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের আয়োজন নিয়মিত করা গেলে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আগ্রহ বাড়বে এবং ঐতিহ্য টিকবে।”

কাবাডি খেলোয়াড় শুক্কুর আলী বলেন, “কাবাডিতে এখনো অনেক প্রতিভা আছে, কিন্তু সুযোগের অভাবে তারা উঠে আসতে পারে না। সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন যদি উদ্যোগ নেয়, কাবাডি আবারও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট সমাজসেবক জাকির সরকার এবং উদ্বোধক ছিলেন এডভোকেট সানাউল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দি বারাকাহ হাসপাতালের পরিচালক ড. আবদুল মালেক।

উল্লেখ্য, এশিয়া মহাদেশেই কাবাডির উৎপত্তি। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয় এবং এটিকে জাতীয় খেলার স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ