দেশের বাইরে আমসহ নানা কৃষিপণ্য রপ্তানি করে গ্লোবাল ট্রেড লিংক নামের প্রতিষ্ঠানটি। এ বছর ইউরোপের তিন দেশে ৩৫ টন আম রপ্তানি করেছে প্রতিষ্ঠানটি, যা গত বছর মানে ২০২৪ সালের চেয়ে ২০ টন কম। গত বছর সাত দেশে তারা ৫৫ টন আম রপ্তানি করেছে। তবে সেটিও তার আগের বছর, ২০২৩ সালের চেয়ে কম। সেবার প্রতিষ্ঠানটির মোট আম রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭৫ টন।

গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানের সময় টালমাটাল বাংলাদেশে স্বাভাবিকভাবেই রপ্তানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। কিন্তু এবার অনেক বেশি রপ্তানি হবে বলে মনে করেছিলেন গ্লোবাল ট্রেড লিংকের স্বত্বাধিকারী রাজিয়া সুলতানা। তিনি বলছিলেন, ‘এবার আমের উৎপাদন অনেক বেশি ছিল। কিন্তু রপ্তানি হলো অনেক কম। এতে আমি হতাশ।’
ব্যবসায়ীরা জানান, এবার আম রপ্তানির লক্ষ্য ছিল অনেক বেশি। বিশেষ করে চীনে বিপুল পরিমাণ আম রপ্তানি হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। সেই চীনে মাত্র ৫ টন আম রপ্তানি হয়েছে।

একাধিক রপ্তানিকারক জানান, উড়োজাহাজের মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে সম্ভাবনার তুলনায় আম কম রপ্তানি হচ্ছে। এর ওপর চীনে আম রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে মাত্র একটি প্রতিষ্ঠানকে।

আম রপ্তানির হালচাল

কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর বাংলাদেশ থেকে ২ হাজার ১৮৮ টন আম রপ্তানি হয়েছে। গত বছর বিশ্বের অন্তত ২৬ দেশে ১ হাজার ৩২১ টন আম রপ্তানি হয়েছিল। সেই হিসাবে এবার আম রপ্তানি বেশি হয়েছে। তবে তা ২০২৩ সালের ৩ হাজার ১০০ টনের চেয়ে অনেক কম। সেটিই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রপ্তানির রেকর্ড। বাংলাদেশ থেকে ২০১৬ সালে আম রপ্তানি শুরু হয়।

রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গত বছর আম রপ্তানি কম হয়েছিল। কিন্তু এ বছর রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। তাহলে রপ্তানি কম হলো কেন? এর জবাবে বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্ট এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোবাশ্বেরুর রহমান বলেন, উড়োজাহাজের ভাড়া বেড়ে সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এবার এক কেজি আম রপ্তানি করতে অন্তত ৫০০ টাকা ব্যয় হয়েছে। বছর দুয়েক আগে লাগত ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা।

রপ্তানিকারকেরা জানান, প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত, পাকিস্তান ও থাইল্যান্ডের তুলনায় বাংলাদেশের আমের দাম কেজিতে অন্তত ১ ডলার বেশি পড়ে। তা ছাড়া বাংলাদেশের রপ্তানি প্রক্রিয়া বেশি জটিল। যেমন, ৬০–৭০টা কাগজে সই করতে হয় এবং উড়োজাহাজের বুকিং পেতেও ‘অতিরিক্ত ব্যয়’ করতে হয়।

চীনে রপ্তানিতে হতাশা

এ বছর অন্তত ৫০ মেট্রিক টন আম চীনে রপ্তানি হবে বলে কৃষিসচিব মো.

এমদাদ উল্লাহ মিয়ান জানিয়েছিলেন মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। এরপর ২৮ মে থেকে চীনে আম রপ্তানি শুরু হয়। মেরিডিয়ান অ্যাগ্রো নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই অনুমোদন পায়।

রাজধানীর শ্যামপুরের কেন্দ্রীয় প্যাকেজিং হাউস আমসহ রপ্তানিযোগ্য নানা কৃষিপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি দেখভাল করে। তাদের অনুমোদন পেলেই পণ্য বিদেশে যায়।

প্রতিষ্ঠানটির উপপরিচালক আমিনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, যদি বাংলাদেশ থেকে একাধিক প্রতিষ্ঠান চীনে আম রপ্তানির সুযোগ পেত, তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকত। এতে পণ্যের মান অনেকটা ভালো হতো। কিন্তু প্রতিযোগিতা না থাকায় একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান যে ধরনের পণ্য দিয়েছে, তা-ই নিতে হয়েছে আমদানিকারকদের। সে ক্ষেত্রে মানও অক্ষুণ্ন রাখা যায়নি।  

আম রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাভোর ডি অ্যাপেটাইটের পরিচালক রেজাউল ইসলাম বলছিলেন, একাধিক প্রতিষ্ঠানকে চীনে রপ্তানির সুযোগ দিলে এবার এত হতাশ হতে হতো না।

চীনে আম রপ্তানির ক্ষেত্রে রপ্তানিকারকদের আরেকটি বিষয় নিরুৎসাহিত করেছে তা হলো দাম, এ তথ্য দিয়েছেন রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, চীনে এক কেজি আম রপ্তানি করে পাওয়া যায় ৭১ টাকা। অথচ ইউরোপের বাজারে এক কেজি আম ২ ডলারে (২৪০ টাকা সমমূল্য) বিক্রি করতে পারে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের পরিচালক আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এবার মেরিডিয়ান ছাড়া আর কোনো প্রতিষ্ঠান চীনে আম রপ্তানির সুযোগ পায়নি। একাধিক প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছিল। কিন্তু তারা যথাযথভাবে শর্ত পূরণ করতে পারেনি। সে জন্য একটি প্রতিষ্ঠানই অনুমোদন পেয়েছে।

তবে রপ্তানিকারকদের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠান বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এক রপ্তানিকারক বলেই ফেললেন, ‘আমরা যদি ইউরোপ ও আমেরিকায় আম পাঠানোর যোগ্যতা রাখি, তবে চীনে পারব না কেন?’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গত বছর এক ধ ক র আম র এ বছর

এছাড়াও পড়ুন:

বীকন ফার্মার মুনাফা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ

দেশের ওষুধ খাতের কোম্পানি বীকন ফার্মার মুনাফা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত জুনে শেষ হওয়া ২০২৪–২৫ অর্থবছরে কোম্পানিটির মুনাফা করেছে ৯৫ কোটি টাকা। তার আগের বছর, অর্থাৎ ২০২৩–২৪ অর্থবছরে কোম্পানিটি মুনাফা করেছিল ৫২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির মুনাফা বেড়েছে ৪৩ কোটি টাকা বা প্রায় ৮৩ শতাংশ।

গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত অর্থবছরের আর্থিক হিসাব চূড়ান্ত করে মুনাফার এই হিসাব দিয়েছে কোম্পানিটি। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে মুনাফার এই তথ্য বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

এদিকে গতকালের পর্ষদ সভায় মুনাফার হিসাব চূড়ান্ত করার পাশাপাশি গত অর্থবছরের জন্য বিনিয়োগকারীদের ২১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটি। বীকন ফার্মার উদ্যোক্তা–পরিচালকদের বাইরে ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারী ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাই শুধু এই লভ্যাংশ পাবেন। কোম্পানির উদ্যোক্তা–পরিচালকেরা এ বছর কোনো লভ্যাংশ পাবেন না বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি।

ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগের ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকারী দেশীয় এই ওষুধ কোম্পানি জানিয়েছে, চলতি বছর লভ্যাংশ বাবদ তারা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ২৯ কোটি টাকা বিতরণ করবে, যার মধ্যে ১৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা পাবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। কারণ, গত সেপ্টেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের প্রায় সোয়া ৩৮ শতাংশই ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে। ওই শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশবাবদ এই অর্থ পাবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। আর গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ছিল কোম্পানিটির প্রায় ২২ শতাংশ শেয়ার। তার বিপরীতে এসব সাধারণ বিনিয়োগকারী ১০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা লভ্যাংশবাবদ পাবেন।

চলতি বছর ঘোষিত লভ্যাংশের জন্য কোম্পানিটি রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করেছে আগামী ১৬ নভেম্বর। ওই দিন যাঁদের হাতে কোম্পানিটির শেয়ার থাকবে, তাঁরাই ঘোষিত লভ্যাংশ পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন। ২০২৩–২৪ অর্থবছরে কোম্পানিটি সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ২০ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দিয়েছিল। আর উদ্যোক্তা–পরিচালকদের লভ্যাংশ দেওয়া হয়েছিল ১০ শতাংশ হারে।

সর্বশেষ ২০২৪–২৫ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব চূড়ান্ত করা হলেও পুরো হিসাববছরে কোম্পানিটি কত টাকার ব্যবসা করেছে, তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য এখনো প্রকাশ করেনি। বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএমে এ তথ্য তুলে ধরা হবে। তবে গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ—এই ৯ মাসে কোম্পানিটি ৮৯৯ কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল। তার বিপরীতে মুনাফা করেছিল সাড়ে ৮৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে অর্থবছরের বাকি তিন মাসে, অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন—এই সময়ে কোম্পানিটি মুনাফা করেছে ১০ কোটি টাকার মতো।

এদিকে মুনাফা ও লভ্যাংশের খবরে শেয়ারবাজারে আজ বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কিছুটা বেড়েছে। ঢাকার শেয়ারবাজারে দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম দেড় টাকা বা প্রায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৯ টাকায়। এ সময় পর্যন্ত কোম্পানিটির প্রায় এক লাখ শেয়ারের হাতবদল হয়, যার বাজারমূল্য ছিল এক কোটি টাকার বেশি।

ক্যানসারের ওষুধ তৈরির জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত বীকন ফার্মা তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে ২০০৬ সালে। ২০১০ সালে এটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ২৩১ কোটি টাকা মূলধনের এই কোম্পানি বর্তমানে শেয়ারবাজারে ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানি হিসেবে ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চবির হলে মাদকের রমরমা কারবার
  • অর্থ আত্মসাতে ‘আওয়ামী লীগ-বিএনপি’ জোট
  • বীকন ফার্মার মুনাফা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ
  • ভারতের এত টস হারের রহস্য কী
  • ২,৩৯৭ কোটি টাকার রেকর্ড মুনাফা স্কয়ার ফার্মার
  • সেন্টমার্টিন দ্বীপে পরিবেশবান্ধব পর্যটনের লক্ষ্যে নতুন নির্দেশনা