চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার উপাদী উত্তর ইউনিয়নের বহরী গ্রামে এমন এক জায়গা আছে, যেখানে নেই কোনো উড়োজাহাজ, নেই রানওয়ে, নেই উড়োজাহাজের শব্দ বা যাত্রীদের কোলাহল, তবু জায়গাটির নাম ‘এয়ারপোর্ট’। প্রায় ৫০ বছর ধরে স্থানীয় লোকজনের কাছে এই জায়গা এ নামেই পরিচিত। এখানে আছে কয়েকটি দোকান, একটি মসজিদ, একটি মাদ্রাসা আর পাশে বিস্তীর্ণ বিল।

উপজেলার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বহরী গ্রামের মাঝামাঝি তিন রাস্তার মোড়ে এই জায়গার অবস্থান। দক্ষিণে পিংড়াবাজার, পশ্চিমে মুন্সিরহাটবাজার আর উত্তরে বহরী আড়ংবাজার। উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের নথিতে জায়গাটি ‘বহরী’ নামেই আছে, তবে স্থানীয় লোকজনের মুখে এখন এটি এয়ারপোর্ট। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে সড়কের পাশে বহরী উচ্চবিদ্যালয়। সেখান থেকে সামান্য এগোলেই তিন রাস্তার সেই মোড়, যেখানে গড়ে উঠেছে এয়ারপোর্ট এলাকা।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে দু-একটি অটোরিকশা। উত্তর পাশে একটি মহিলা মাদ্রাসা, সাইনবোর্ডে লেখা‘খাদিজাতুল কুবরা মহিলা মাদ্রাসা, এয়ারপোর্ট বাজার, বহরী।’ তার ঠিক উত্তরে মসজিদ। পশ্চিমে বিস্তীর্ণ বিল। পূর্ব পাশে একটি দোকান, সামনে কয়েকজনের জটলা। দোকানটি মোহাম্মদ ব্যাপারীর কনফেকশনারি ও চায়ের দোকান। সেখানে কথা হয় এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা ও আসবাবপত্র মিস্ত্রি শফিকুল ইসলাম (৮০), আবদুল মান্নান (৭৫), মো.

ইসমাইল (৬৫), প্রবাসী মো. আলী, স্বাস্থ্যকর্মী মো. মেজবাহ উদ্দিন (৪৫), আবদুর রহমানসহ (৫০) আরও কয়েকজনের সঙ্গে।

স্থানীয় লোকজন জানান, ব্রিটিশ আমলের আগ থেকেই জায়গাটি বহরী নামে পরিচিত ছিল, তবে ১৯৭৫ সালের দিকে নামটি বদলে যায়। তখন খালেক বকাউল নামে বহরী গ্রামের এক রিকশাচালক প্রতিদিন রিকশা চালিয়ে তিন রাস্তার মোড়ে এসে রিকশাটি রাখতেন। তখন সব রাস্তা ছিল কাঁচা। রিকশা রেখে তিনি হাসতে হাসতে বলতেন, ‘প্লেন (রিকশা) চালাইয়া এয়ারপোর্টে আইসা নামলাম। এয়ারপোর্টে নাইমা এখন বিশ্রাম করব।’ তাঁর এই কথায় মজা পেতেন আশপাশের লোকজন। একদিন রফিক ঢালী নামের এক ব্যক্তি রসিকতার ছলে মোড়ের পাশে একটি তালগাছে এয়ারপোর্ট নামে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন। এর পর থেকেই জায়গাটি এয়ারপোর্ট নামেই পরিচিতি পায় এবং সেই নাম আজও টিকে আছে প্রায় ৫০ বছর ধরে।

উপাদী উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শহীদ উল্লাহ প্রধান বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের এয়ারপোর্ট নামের জায়গাটি এখন খুবই পরিচিত। অনেকে দূর থেকে এসে নাম শুনে অবাক হন, জানতে চান কেন এমন নাম। তবে এটি জেলা শহর, হাজীগঞ্জ ও কুমিল্লার দাউদকান্দি-গৌরীপুরসহ আশপাশের এলাকায় যাতায়াতের সহজ ও সময়সাশ্রয়ী পথ। এ কারণেও এটি গুরুত্বপূর্ণ। চমকপ্রদ নামের কারণে এর পরিচিতি আরও বেড়েছে।’

মতলব দক্ষিণ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমজাদ হোসেন বলেন, ‘উপজেলায় “এয়ারপোর্ট” নামে একটি এলাকা আছে, বিষয়টি আমি জেনেছি। খুব শিগগির সেখানে গিয়ে সবকিছু দেখব।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর চ ত কজন র উপজ ল ল কজন

এছাড়াও পড়ুন:

মতলবে দুধ দিয়ে গোসল করে রাজনীতি ছাড়লেন যুবদল নেতা 

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার কলাকান্দা ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. হোসেন মিয়া হঠাৎ করেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। 

শনিবার (৬ ডিসেম্বর) রাত ১২টার দিকে ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করে তিনি এ ঘোষণা দেন। ভিডিওতে তাকে দুধ দিয়ে গোসল করতে দেখা যায়। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

ভিডিওর সাথে দেওয়া স্ট্যাটাসে ক্ষোভ, হতাশা ও বঞ্চনার কথা প্রকাশ করেছেন হোসেন মিয়া। তিনি লিখেছেন: আমার এই ভিডিওটা দেখার পর সবার কাছে আমি হাসির পাত্র হিসেবে থাকবো, এমনিতেই আমি আজ সবার হাসির পাত্র। আমি ধ্বংস হইনি। আমাকে ধ্বংস করা হয়েছে, আর সেটা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সিস্টেমের কাছে যে সিস্টেমটার নাম হচ্ছে টাকা আর ষড়যন্ত্র।

তিনি আরও লেখেন, আমার কাছের মানুষগুলো আমার সাথে ষড়যন্ত্র করেছে। আমার মতো মানুষের রাজনীতিতে দুই-চারটা না থাকলে কিছুই হবে না। কিন্তু একটা প্রশ্ন রেখে যাই আমার লড়াইটা কিসের জন্য ছিল? আমার লড়াইটা ছিল বিএনপির জন্য, যুবদলের জন্য, চাঁদপুর-২ আসনের মনোনীত প্রার্থী জালাল সাহেবের জন্য।

হোসেন মিয়া দাবি করেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ‘দোসরদের যোগসাজশে’ তাকে রাজনীতি থেকে সরানো হয়েছে। আজ বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের দোসররা মিলেমিশে ষড়যন্ত্র করে, টাকার পাওয়ারে, ক্ষমতার পাওয়ারে আমার মত ক্ষুদ্র কর্মীকে ধ্বংস করেছে- লেখেন তিনি।

পোস্টে তিনি আরো উল্লেখ করেন, সকল প্রকার রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলাম। বলার মতো অনেক কথা আছে কিন্তু ভাষা নেই। সবাই ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।

হোসেন মিয়ার ভিডিও ও বক্তব্য ঘিরে স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ তার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন, অনেকে এ ঘটনাকে ‘আবেগী সিদ্ধান্ত’ বা ‘অতিরঞ্জন’ হিসেবে দেখছেন।

কলাকান্দা ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মো. মহসিন ও সাধারণ সম্পাদক রফিক তাতী এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, কলাকান্দা ইউনিয়ন যুবদলের অন্যতম সক্রিয় সদস্য মোহাম্মদ হোসেনের প্রতি গ্রাম্য সালিশে অপমানজনক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। যা শুধু তার প্রতি নয় কলাকান্দা ইউনিয়ন যুবদলসহ সংগঠনের মর্যাদা ও আত্মসম্মানের ওপর প্রকাশ্য আঘাত।

তারা আরও বলেন, রাজনৈতিক কর্মীদের উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপমান ও অসম্মান করার এই আচরণ অগ্রহণযোগ্য, নিন্দনীয় এবং পরিকল্পিত। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

যুবদল নেতারা দাবি করেন, এই সালিশ বিচারের মাধ্যমে যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত এবং যারা অপমানজনক রায় প্রদান করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

এ বিষয়ে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রাশেদ জামান টিপু বলেন, ‘‘আমরা হোসেন মিয়ার ভিডিওটি দেখেছি। রাজনীতি হচ্ছে আদর্শ ও সংগঠনের জন্য কাজ করার জায়গা। ব্যক্তিগত হতাশা বা চাপের কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া দুঃখজনক। তিনি আমাদের কর্মী ছিলেন, ভুল বোঝাবুঝি বা অভিমান থাকলে আলোচনা ও সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যেই সমাধান হতে পারত। আমরা তাকে পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাই।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘যুবদলে কাউকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত কখনো ব্যক্তিগতভাবে নেয় না। দলের নিয়ম, কমিটি ও মূল্যায়নের ভিত্তিতেই সব সিদ্ধান্ত হয়। যদি তিনি মনে করেন কেউ অন্যায় করেছে সংগঠন তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।’’

ঢাকা/অমরেশ//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মতলবে দুধ দিয়ে গোসল করে রাজনীতি ছাড়লেন যুবদল নেতা