ঢাকার বড় সাতটি সরকারি কলেজের জন্য যে প্রক্রিয়ায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে এবার আপত্তি জানিয়েছেন বিসিএস ২৫টি ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সংগঠন ‘বৈষম্যবিরোধী অবসরপ্রাপ্ত ২৫ ক্যাডার সমন্বয় পরিষদ’। তারা বলছে এই সাত কলেজের জন্য একটি অধিভুক্তমূলক বিশ্ববিদ্যালয় (অনেকটা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো) করে বিরাজমান সংকটের সমাধান সম্ভব। শিক্ষা বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সুপারিশের আলোকে এবং অংশীজনদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলেও মনে করেন পরিষদের নেতারা।

আজ শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী অবসরপ্রাপ্ত ২৫ ক্যাডার সমন্বয় পরিষদের নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে সাত কলেজের সমস্যা ছাড়াও ২৫ ক্যাডারের বৈষম্যের শিকার অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি ও সুবিধা দেওয়া, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে অধ্যাদেশ জারি করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে সংগঠনটি।

পরিষদের সমন্বয়ক আহমেদ আলী চৌধুরী ইকবাল সংগঠনটির পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ঢাকা মহানগরীর ঐতিহ্যবাহী সাতটি কলেজ নিয়ে শিক্ষা খাতে নতুন সংকট সৃষ্টি হয়েছে। মূল অংশীজনদের এড়িয়ে গিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করায় সমস্যা আরও ঘনীভূত হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মতভেদ তৈরি হয়েছে। কেউ স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, কেউ বিপক্ষে। এ ছাড়া একটি মহল আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘লোভ দেখিয়ে’ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন বলেও শোনা যায়, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। দেশসেরা কলেজগুলো বন্ধ করে অনুমাননির্ভর বা পরীক্ষামূলক কোর্স পরিচালনা সঠিক নয়। গণভোটে নয়, শিক্ষা বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সুপারিশের আলোকে এবং অংশীজনদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে মনে করে বৈষম্যবিরোধী অবসরপ্রাপ্ত ২৫ ক্যাডার সমন্বয় পরিষদ।

সংবাদ সম্মেলনে সাত কলেজ নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন ঢাকা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির (বর্তমান নাম বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন) সাবেক সভাপতি আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার। তিনি সাত কলেজের ঐতিহ্য তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা চাই সাত কলেজের জন্য একটি অ্যাফিলিয়েটিং (অধিভুক্তমূলক) ইউনিভার্সিটি হোক এবং কলেজগুলোর আর্থিক স্বাধীনতা ও সুযোগ-সুবিধা দিলে শিক্ষার মান অবশ্যই বাড়বে।’ এ ক্ষেত্রে এই কলেজগুলোতে মেধাবী শিক্ষকদের পদায়নের ব্যবস্থা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন উপসচিব পর্যায়ের মোট পদের প্রশাসন ক্যাডারে ৫০ শতাংশ এবং বাকি ২৫ ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ পদ রাখার সুপারিশ করেছে। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে অধ্যাদেশ জারি করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় ২৫ ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সংগঠন।আরও পড়ুনঢাকা কলেজ: এইচএসসিতে উজ্জ্বল, সংকট স্নাতকে২৩ অক্টোবর ২০২৫

২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর এই সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু অধিভুক্ত করার পর থেকে যথাসময়ে পরীক্ষা নেওয়া, ফলাফল প্রকাশসহ বিভিন্ন দাবিতে সময়-সময় আন্দোলন করে আসছিলেন এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত জানুয়ারিতে এই সাত কলেজকে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করার কথা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে এই সাত কলেজের জন্য নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ নিয়ে এখন সংকট চলছে। পক্ষে–বিপক্ষে আন্দোলনও চলছে।

অন্যান্য বিষয়ে পরিষদের দাবি

সংবাদ বৈষম্যবিরোধী অবসরপ্রাপ্ত ২৫ ক্যাডার সমন্বয় পরিষদের পক্ষে বলা হয়, প্রশাসন ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত ও প্রয়াত মিলে প্রায় ৭৭৮ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অথচ বাকি ২৫টি ক্যাডারের বঞ্চিত অবসরপ্রাপ্ত মাত্র ৭২ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় তারা ২৫ ক্যাডারের বঞ্চিত সব কর্মকর্তার আবেদন পুনর্বিবেচনা এবং প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতো ভূতাপেক্ষ বেতন–ভাতাসহ সব আর্থিক সুবিধা দেওয়ার দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশকে আড়াল করে কম গুরুত্বপূর্ণ ও অযৌক্তিক কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে জুলাই সনদকে দুর্বল করা হয়েছে। এর একটি হলো সিভিল সার্ভিসে নিয়োগের জন্য তিনটি পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন—সরকারি কর্মকমিশন (সাধারণ); সরকারি কর্মকমিশন (শিক্ষা) ও সরকারি কর্মকমিশন (স্বাস্থ্য) এবং অপরটি হলো হিসাব বিভাগ থেকে নিরীক্ষা বিভাগ আলাদা করা। যদি হিসাব বিভাগকে নিরীক্ষা বিভাগ থেকে পৃথক করা হয়, তবে প্রি-অডিট কার্যক্রম বিলুপ্ত হবে, যা আর্থিক জবাবদিহি, স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলাকে বিঘ্নিত করবে।

আরও পড়ুনসাত কলেজ ঘিরে নতুন সংকট২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, একটি মেধাভিত্তিক সিভিল সার্ভিস গঠনে উপসচিব পদে কোটা বাতিল করে সব ক্যাডার থেকে পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছেন অনেকেই। কিন্তু জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন উপসচিব পর্যায়ের মোট পদের প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ এবং বাকি ২৫ ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ পদ রাখার সুপারিশ করেছে। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে অধ্যাদেশ জারি করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় ২৫ ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এই সংগঠন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ কফিল উদ্দিন, বিসিএস ইনফরমেশন অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি স ম গোলাম কিবরিয়া, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক মো.

মাহবুবুর রহমান, গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মাহফুজ আহমেদ প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ২৫ ক য ড র র স ত কল জ র ব স এস সরক র স গঠন সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

অবসরপ্রাপ্ত শতাধিক সামরিক বাহিনীর সদস্যের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ মঙ্গলবার রাতে বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে ওই সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তারেক রহমান। বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে মেজর জেনারেল (অব.) সাদিক হাসান রুমির কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তা প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) মহাপরিচালক ছিলেন।

পূর্বনির্ধারিত এই বৈঠকে ১০১ জন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনীর সদস্য উপস্থিত ছিলেন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সভা পরিচালনা করেন মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর।

অবসরপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের সামনে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেওয়ার পর তারেক রহমান বলেন, ‘স্ক্রিনে এখানে আমি একজনকে দেখতে চাচ্ছি। এটা একান্ত একটু পার্সোনাল ব্যাপার, তারপরেও আমি, সবাই আছেন, একান্ত পার্সোনাল ব্যাপার, তারপরে আমি একটু এখানে উল্লেখ করতে চাচ্ছি। আমাদের সামনে এখানে আম্মার (খালেদা জিয়া) সময় ছিলেন উনি ডিজিএফআইয়ে ছিলেন রুমি সাহেব ছিলেন। রুমি সাহেব উপস্থিত আছেন।’ তখন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের সারিতে থাকা সাদিক হাসান রুমি জবাব দেন, ‘জি আছি।’

এরপর তারেক রহমান বলেন, ‘রুমি সাহেব আপনার নিশ্চয় মনে আছে যে একটা মিছিল হয়েছিল একবার, সেই পুরান ঢাকা থেকে আমিন বাজারে এবং পুরা মিছিলটা আমি হেঁটে এসেছিলাম, আম্মাও (খালেদা জিয়া) ছিলেন সেই মিছিলে। তো সেই মিছিলে অনেক ভিড় হট্টগোল। আপনি আমাকে একটা কোনো কিছু বলেছিলেন। আই অ্যাম ভেরি সরি, আমি সেদিন আপনার সাথে একটু রূঢ় ব্যবহার করেছিলাম। সবকিছু মিলে আই অ্যাম ভেরি সরি ফর দ্যাট। আমি অনেক দিন চেষ্টা করেছি আপনাকে রিচ করার জন্য। আই রিকোয়েস্ট মাই অ্যাপোলজি। আমি সুযোগ পাইনি। আজকে সুযোগ পেয়েছি। আই অ্যাম রিয়েলি সরি ফর দ্যাট।’

এ সময় জবাবে মেজর জেনারেল (অব.) সাদিক হাসান রুমি বলেন, ‘আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। যেটা বলেছেন থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ, আই উইল রিমেম্বার ইট।’

মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী। অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে বক্তব্য দেন মেজর জেনারেল (অব.) জামিল ডি আহসান, মেজর (অব.) রেজা করিম, মেজর (অব.) সামসুজ্জোহা, মেজর (অব.) জামাল হায়দার, মেজর (অব.) আজিজুল হক, কর্নেল (অব.) হারুনুর রশিদ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) শামসুজ্জোহা, এয়ার কমোডর (অব.) শফিক আহমেদ, রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোস্তাফিজ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) জয়নাল আবেদীন, কর্নেল (অব.) জগলুল, লেফটেন্যান্ট (অব.) ইমরান কাজল, মেজর (অব.) গোলাম মান্নান চৌধুরী, ক্যাপ্টেন (অব.) রেজাউর রহমান ও কর্নেল (অব.) হান্নান মৃধা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান