সালমান শাহর মৃত্যু: মুখ খুললেন মর্গকর্মী সেকান্দার
Published: 25th, October 2025 GMT
ঢাকাই সিনেমার অমর নায়ক সালমান শাহর মৃত্যু নিয়ে আবারও নতুন করে আলোচনার ঝড় উঠেছে। অপমৃত্যুর মামলা এখন রূপ নিয়েছে হত্যা মামলায়। সেই সূত্রেই সামনে আসছে একের পর এক অজানা তথ্য। এবার আলোচনায় এসেছেন সালমান শাহর মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্নকারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৎকালীন মর্গকর্মী সেকান্দার (বর্তমানে রমেশ নামে পরিচিত)।
সেই ভয়াবহ দিনের স্মৃতি এখনও ভোলেননি তিনি। এক সাক্ষাৎকারে আবেগভরে রমেশ বলেন, “আমার প্রিয় নায়কের বুকে আমি নিজেই ছুরি চালাই। ফরেনসিক চিকিৎসকের নির্দেশে সবকিছু করতে হয়েছিল, কিন্তু কাটতে কাটতে বিশ্বাস হচ্ছিল না—সালমান সত্যিই মারা গেছেন।”
সেকান্দার জানান, সালমান শাহর মৃত্যুর দিন ছিল শুক্রবার। “সেদিন মর্গের সামনে হাজারো মানুষ কান্না করছিল। সবাই তাদের প্রিয় নায়কের শেষ দেখা পাওয়ার আশায় ভিড় জমিয়েছিল। আমি নিজেও সালমানের ভক্ত ছিলাম। যখন মরদেহ আনা হলো, মনে হচ্ছিল আমি প্রিয় মানুষকে হারিয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “তখন ঢাকা মেডিকেলের মর্গ আধুনিক ছিল না। পুরনো জায়গাতেই ময়নাতদন্ত করতে হয়েছিল। চিকিৎসকের নির্দেশে কাজ শুরু করি, কিন্তু ছুরি চালানোর সময় হাত কাঁপছিল। মনে হচ্ছিল, যেন নিজের প্রিয় মানুষকে আঘাত করছি।”
৩৫ বছরের চাকরি শেষে এখন অবসর জীবনযাপন করছেন সেকান্দার। তিনি বলেন, “আমার জীবনে হাজার হাজার লাশের ময়নাতদন্ত করেছি, কিন্তু সালমান শাহর মরদেহে হাত দেওয়ার অভিজ্ঞতা আজও ভোলা সম্ভব হয়নি।”
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন সালমান শাহ। প্রথমে ঘটনাটিকে ‘আত্মহত্যা’ বলা হলেও পরিবার শুরু থেকেই দাবি করে আসছিল এটি হত্যাকাণ্ড। দীর্ঘ ২৮ বছর পর, চলতি বছরের ২০ অক্টোবর আদালত সালমান শাহর মৃত্যুকে হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সালমান শাহর মৃত্যু আজও এক অনির্ণেয় রহস্য—যার উত্তর খুঁজে ফিরছেন কোটি ভক্ত, আর যার স্মৃতি আজও তাড়িয়ে বেড়ায় মর্গকর্মী সেকান্দারের মতো মানুষকেও।
ঢাকা/রাহাত
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে অ্যান্টিভেনম ও অ্যান্টি র্যাবিক্স ভ্যাকসিন তৈরি হবে: সায়েদুর
২০৩০ সাল থেকে দেশে সরকারি উদ্যোগে ভ্যাকসিন ও বায়োটেক কোম্পানির উৎপাদন শুরুর কথা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) রাতে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের হলরুমে দুই দিনব্যাপী ১৩তম ন্যাশনাল কনফারেন্স অন ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড টক্সিকোলজির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
পটুয়াখালীতে বরফ কলের গ্যাস ছড়িয়ে অসুস্থ ২০
খাগড়াছড়ি হাসপাতালে ২০ দিনে ১২ শিশুর মৃত্যু
ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘‘আমরা সরকারে না থাকলেও আগামী জানুয়ারি থেকে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে এবং পাঁচ বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে। দেশে তৈরি হবে অ্যান্টিভেনম ও অ্যান্টি র্যাবিক্স ভ্যাকসিন।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকার অ্যান্টিভেনম প্রজেক্ট অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে দেখছে। এটি দেশের সম্মান ও সার্বভৌমত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি বিষয়।’’
অ্যান্টি র্যাবিস ভ্যাকসিন এক ধরনের প্রতিরোধমূলক টিকা, যা র্যাবিস ভাইরাস থেকে মানুষকে রক্ষা করে। র্যাবিস মারণ ভাইরাসজনিত রোগ, যা সাধারণত কুকুর, বিড়াল, বাদুড় বা অন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর কামড়ের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে।
অ্যান্টিভেনম জীববৈজ্ঞানিক ওষুধ, যা বিষধর প্রাণীর বিষ নিরসনে বা প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি সাধারণত সাপ, মাকড়সা, বিচ্ছু, বা অন্যান্য বিষধর প্রাণীর কামড় বা দংশনে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে প্রয়োগ করা হয়।
প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দিয়ে অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘‘যেসব ফার্মেসি প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘ওষুধের গায়ে লাল রঙে অ্যান্টিবায়োটিক না লিখে বাজারে ছেড়ে দেওয়া কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ করা হবে।’’
চিকিৎসা ও গবেষণায় প্রণোদনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষার্থী থেকে চিকিৎসকেরা অনেক সময় কম আকর্ষণীয় বিষয়ে পড়াশোনা করতে চান না। সরকার সংক্রামক রোগ ও বিষ বিজ্ঞানসহ আটটি মৌলিক বিষয়ে শিক্ষার্থীদের শতকরা ৭০ শতাংশ প্রণোদনা দেবে, যা বছরে লাখ টাকারও বেশি হবে।’’
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেকে) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগ, বাংলাদেশ সোসাইটি অফ ইনফেকশাস অ্যান্ড ট্রপিকাল ডিজিজ ও টক্সিকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শজিমেকের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আব্দুস সালাম।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. ওয়াদুদুল হক তরফদার, টিএমএসএস মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. জাকির হোসেন, শজিমেকের সাবেক অধ্যক্ষ ও প্রজেক্ট ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. ইসমাইল পাটোয়ারী, বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম. এ. ফয়েজ, বিএমএ বগুড়ার সভাপতি অধ্যাপক ডা. আজফারুল হাবিব রোজ, সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মাইনুল হাসান সাদিক, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, টিএমএসএস নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপিকা ড. হোসনে আরা বেগম।
কনফারেন্সের সদস্য সচিব ছিলেন শজিমেকের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মামুনুর রশিদ।
দুই দিনব্যাপী এই বৈজ্ঞানিক আয়োজনে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে সাপে কাটা, ডেঙ্গু, জলাতঙ্ক, ধনুষ্টংকারসহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগ ও বিষ বিজ্ঞান সম্পর্কিত সাম্প্রতিক গবেষণা এবং চিকিৎসা অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বক্তারা বলেন, এ ধরনের বৈজ্ঞানিক সম্মেলন চিকিৎসা গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে ও দেশের চিকিৎসা খাতকে আরো সমৃদ্ধ করবে।
ঢাকা/এনাম/বকুল