‘বাংলাদেশ ক্রিকেটের অসাধারণ দূত’ তামিমকে মুশফিকদের বিদায়ী বার্তা
Published: 11th, January 2025 GMT
বাংলাদেশের হয়ে আর না খেলার সিদ্ধান্ত গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন তামিম ইকবাল। দীর্ঘ ১৮ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষে তামিমকে বিভিন্নভাবে শুভেচ্ছা, অভিনন্দন ও বিদায় জানিয়েছেন জাতীয় দলে তাঁর সতীর্থরা।
তামিমের সঙ্গে দীর্ঘ ৯ বছর জাতীয় দলে একসঙ্গে ১০৬ ম্যাচ খেলেছেন সৌম্য সরকার। ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৮১ ইনিংসে ওপেন করেছেন দুজন। সৌম্যর চোখে তামিমের এই অবসর মানে সবকিছুর শেষ নয়; বরং নতুন এক শুরুও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সৌম্যর ভেরিফায়েড ফ্যান পেজে তামিমের অবসর নিয়ে লেখা, ‘নতুন শুরুর জন্য শুভকামনা। অবসর মানে শেষ নয়, এটা সুন্দর এক নতুন অধ্যায়ের শুরুও। সামনের অভিযাত্রা উপভোগের। অবসর শুভ হোক, ভাই। মাঠে আপনাকে মিস করব।’
আরও পড়ুনযত রেকর্ড নিয়ে বিদায় নিলেন তামিম২ ঘণ্টা আগেজাতীয় দলে তামিমের আগে এসেছেন মুশফিকুর রহিম। তামিমের পুরো ক্যারিয়ারই তাঁর চোখের সামনে। তামিমের সঙ্গে ৭২ ইনিংসে একসঙ্গে ব্যাট করা মুশফিক তাঁর বিদায়বেলায় ভেরিফায়েড ফ্যান পেজে লিখেছেন, ‘তামিম, তোমার এই অবসরের সময়ে তোমার অর্জনের জন্য আমি কতটা গর্বিত, সেটি বলছি। দোস্ত, তুমি বাংলাদেশ ক্রিকেটের অসাধারণ এক দূত এবং বিশ্বমানের ব্যাটার। দুবাইয়ে আমাদের জুটিটি আমি সব সময় মনে রাখব, বিশেষ করে তুমি যখন ভাঙা আঙুল নিয়ে ব্যাট করেছিলে। এতে দেশের প্রতি তোমার নিবেদন ও খেলার প্রতি ভালোবাসাটা বোঝা যায়। অবসর শুভ হোক, দোস্ত। মাঠে তোমাকে মিস করব। তবে ক্রিকেটের মাধ্যমে অসাধারণ এক বন্ধু পাওয়ার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।’
তামিমের সঙ্গে ৩৮ ইনিংসে ব্যাট করা মাহমুদউল্লাহর পেজে লেখা হয়, ‘তামিম, দীর্ঘ এবং দুর্দান্ত আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে সুন্দর সব অর্জনের জন্য তোমাকে অনেক অভিনন্দন। তোমার অর্জন অনেক এবং বাংলাদেশ দলে অবদানও প্রচুর। আমার মনে হয়, বাংলাদেশ দলের হয়ে এটাই আমাদের শেষবার একসঙ্গে ব্যাট করার ছবি (পোস্টের ছবি)। তোমার সঙ্গে খেলাটা ছিল আনন্দের এবং মাঠ ও মাঠের বাইরে অনেক স্মৃতি আমাদের। অবসর সুখের হোক এই কামনা করি এবং ভবিষ্যতের জন্যও শুভকামনা রইল। তোমার অবদান সব সময় মনে রাখা হবে।’
আরও পড়ুনবিপিএলে পিচেও বল রাখতে পারছেন না—এরা কারা, কোত্থেকে এল এরা১ ঘণ্টা আগেজাতীয় দলের বাইরে থাকা ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম তামিমের অবসর নিয়ে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘আপনার অবসরের মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্রিকেটে একটি যুগের অবসান ঘটল। দেশের অন্যতম সেরা ওপেনার হিসেবে নিজের দক্ষতা, নিবেদন ও নেতৃত্বগুণ দিয়ে আপনি এই খেলায় অমোচনীয় ছাপ রেখে গেলেন। বড় সেঞ্চুরি কিংবা চাপের মুখে দারুণ সব পারফরম্যান্সের অবদান আপনাকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সত্যিকারের আইকন বানিয়েছে।’
জাতীয় দলের হয়ে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৩৮৭ ম্যাচে ১৫১৯২ রান করা তামিম গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবসর ঘোষণায় লেখেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে আছি অনেক দিন ধরেই। সেই দূরত্ব আর ঘুচবে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমার অধ্যায় শেষ।’ তিন সংস্করণ মিলিয়ে বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তামিমের। ৪৬৮ ম্যাচে ১৫৩০০ রান নিয়ে শীর্ষে মুশফিক। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান তামিমের। ২৪৩ ম্যাচে করেছেন ৮৩৫৭ রান।
আরও পড়ুনসিলেটের প্রথম জয় ১০০তম ম্যাচে কেড়ে নিল লিটনের হাসি১২ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এনবিআর আন্দোলন: ক্ষমা চাইলেন দুই শতাধিক কর্মকর্তা
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) সাম্প্রতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকা দুই শতাধিক কর্মকর্তা সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁও রাজস্ব ভবনে চেয়ারম্যানের সঙ্গে ব্যাচভিত্তিক দেখা করে এ ক্ষমা চান তারা। এদের মধ্যে ২৮ থেকে ৪০ ব্যাচের কর্মকর্তারা ছিলেন। তারা আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের’ কমিটিতে যুক্ত ছিলেন। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে এনবিআরের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, নিজ উদ্যোগে চেয়ারম্যানের কাছে ক্ষমা চাওয়া ও দুঃখ প্রকাশ করা ইতিবাচক পদক্ষেপ। এতে আন্দোলন ও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ থেকে সৃষ্ট অস্বস্তিকর পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হবে। কর্মকর্তারাও নিজেকে নিরাপদ বোধ করবেন। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়বে ও কাজে মনোযোগ দিতে পারবেন। মাঠ পর্যায়েও ফিরে আসবে আগের মতো কাজের পরিবেশ ও শৃঙ্খলা।
এর আগে সোমবার কর ক্যাডারের আন্দোলনকারীদের কয়েকজন কর্মকর্তা এনবিআরের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে ক্ষমা চেয়েছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, মঙ্গলবার ক্ষমা চাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন বিসিএস (কর) ক্যাডারের। এর মধ্যে ৪০, ৩৮, ৩৩, ৩১, ৩০, ২৯, ২৮ ব্যাচের কর্মকর্তারা ছিলেন বেশি। কর ক্যাডারে পাশাপাশি বিসিএস (শুল্ক) ক্যাডারের কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তাও চেয়ারম্যানের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, কর্মকর্তারা ক্ষমা চাইতে গেলে চেয়ারম্যান তাদের সঙ্গে সৌহার্দপূর্ণ আচরণ করেন। ভয়ভীতিতে না থেকে দেশের স্বার্থে উদ্বুদ্ধ হয়ে রাজস্ব আদায়ে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন।
ওই সময়ে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা জানান, আয়কর বিভাগের প্রায় ৬০ জন কর্মকর্তা ব্যাচভিত্তিকভাবে চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে নিজেদের কর্মকাণ্ডের জন্য দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তখন চেয়ারম্যান তাদের বলেছেন, ‘আমার পক্ষে ক্ষমা করতে সমস্যা নেই। কিন্তু রাষ্ট্রীয় বিষয়ে ক্ষমা করা বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার আমার নেই।’
সদ্য উপকর কমিশনার থেকে যুগ্ম কর কমিশনার হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা। তারাও চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি আন্দোলন পরবর্তী সময়ে কাজের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে দেশের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
প্রায় দুই মাসের আন্দোলনের ইতি টেনে গত ২৯ জুন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ কমপ্লিট শাটডাউন ও মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি প্রত্যাহার করে। ৩০ জুন এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান নিজ দপ্তরে ফিরে আসেন। ওইদিন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, যা কিছু হয়েছে সব কিছু ভুলে গিয়ে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে, দেশের স্বার্থে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ভবিষ্যতে এনবিআরকে আর এমন সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে না।
এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ সংশোধন ও এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণসহ চার দাবিতে ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আন্দোলনে নামেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে শুরুর দিকে এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ সংশোধনসহ কয়েকটি দাবিতে তারা সোচ্চার থাকলেও শেষ পর্যায়ে এসে ‘চেয়ারম্যানের অপসারণের’ এক দফা দাবিতে তীব্র আন্দোলন শুরু করেন তারা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে আন্দোলনে অনড় থাকলে সরকার কঠোর হতে শুরু করে।
গত ২৯ জুন ৬ জন কর্মকর্তার অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ওইদিন রাতেই ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে। এদিকে আন্দোলনের নামে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র ছিল- গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এমন তথ্য সরবরাহ করে সরকারকে। জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ৮৪৫ পৃষ্ঠার মেসেজ আদান-প্রদানের বিশদ তথ্য এখন গোয়েন্দা সংস্থার হাতে রয়েছে বলে জানা গেছে। এরপর গত কয়েকদিনে এখন পর্যন্ত আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ১৬ জন কর্মকর্তার অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। এছাড়া আন্দোলনে উস্কানি দেওয়ার তথ্য-প্রমাণ পাওয়ায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে এনবিআরের তিনজন সদস্য ও একজন কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। একইসঙ্গে কাস্টম হাউস বন্ধ রেখে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত ও রাজস্ব আহরণে ব্যাঘাত ঘটানোর দায়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বিভিন্ন স্তরের কয়েকজন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়।
অবসর, বদলি ও বহিষ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে মঙ্গলবার এনবিআরের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, এসব কিছু সরকারের সিদ্ধান্ত। এনবিআরের নয়। এনবিআর শুধু সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে।