প্রবাসীদের লেনদেনের সীমা তুলে দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক
Published: 15th, January 2025 GMT
দেশে প্রবাসীরা (নন রেসিডেন্সিয়াল বাংলাদেশি) বিনিয়োগ পরিচালনা করতে নন-রেসিডেন্ট টাকা অ্যাকাউন্টস (এনআরটিএএস) খুলতে হয়। এই অ্যাকাউন্টসে এতদিন লেনদেনের সীমা ছিল। এই লেনদেনের সীমা উঠিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে, এখন থেকে প্রবাসীরা টাকা অ্যাকাউন্টসের মাধ্যমে ইচ্ছেমত লেনদেন করতে পারবেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রবাসীদের জন্য বেশ কিছু সুবিধা দিয়ে সার্কুলার জারি করেছে।
ব্যাংকাররা জানান, প্রবাসীদের বিনিয়োগ পরিচালনার জন্য নন-রেসিডেন্ট টাকা অ্যাকাউন্টস প্রয়োজন হয়। এই অ্যাকাউন্টসের মাধ্যমে প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার, বন্ড ও অন্যান্য আর্থিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে থাকে। এই অ্যাকাউন্টসে আগে অনলাইনে লেনদেনে করা যেত না। একই সঙ্গে লেনদেনের নির্দিষ্ট সীমা ছিল। নতুন সার্কুলারে লেনদেন সীমা উঠিয়ে নন-রেসিডেন্ট টাকা অ্যাকাউন্টস পরিচালনায় সহজ করে নানা সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, অ্যাকাউন্টস পরিচালনাকারী ব্যাংকগুলো কোনো প্রবাসীদের চেক, ইলেকট্রনিক বা অনলাইনে লেনদেনের সুবিধা দিতে পারবে। অ্যাকাউন্টসে প্রবাসীরা বিদেশ থেকে অনলাইন ট্রান্সফারের মাধ্যমে রেমিট্যান্সের অর্থ পাঠাতে পারবেন। এ ছাড়া, টাকা জমা ও উত্তোলন করতে পারবেন ইচ্ছেমত। তবে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে, যেন এসব অ্যাকাউন্টস থেকে কোনো ধরনের প্রতারণামূলক লেনদেন না হয়।
প্রবাসীরা বাংলাদেশে অন্য কোনো ব্যক্তিকে এসব অ্যাকাউন্টস পরিচালনার জন্য মনোনীত করতে পারবেন। মনোনীত ব্যক্তিদের মাধ্যমে যে লেনদেন হবে, তা অ্যাকাউন্টসধারীর অনুমোদিত লেনদেন প্রোফাইল (টিপি) অনুযায়ী করতে হবে।
প্রবাসীদের আয় থেকে জমা হওয়া অর্থে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার বা অনলাইন ব্যাংকিং সেবার ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করা যাবে না। তবে যেসব অ্যাকাউন্টসধারীর স্থানীয় উৎস থেকে অর্থ জমা হচ্ছে, তাদের অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করার আগে ব্যাংকগুলোকে যথাযথ তথ্য যাচাই-বাছাই করতে হবে।
ঢাকা/এনএফ/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
আকাশপথে কিলো ফ্লাইটের আক্রমণ
মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই পাকিস্তানি সেনারা স্থলপথে মুক্তিসেনাদের প্রতিরোধের সম্মুখীন হচ্ছিল। কিন্তু আকাশপথ ছিল আক্রমণের জন্য উন্মুক্ত। এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকারের ১৯৭১: ভেতরে বাইরে বইয়ে জানা যায়, ১৯৭১ সালের মে মাসের মাঝামাঝি তিনিসহ বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ ও অভিজ্ঞ বৈমানিক মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন। তাঁরা মুক্তিবাহিনীর বিমান শাখা গড়ে তোলার জন্য সচেষ্ট হন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান সেনাপতির সঙ্গে আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে আশ্বস্ত করেন যে এ বিষয়ে তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন।
আগস্ট মাসের প্রথম দিকে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকারসহ ভারত সরকারের সচিব কে বি লাল, এয়ার মার্শাল হরি চান্দ দেওয়ান ও ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তা অশোক রায়ের সঙ্গে বিমানবাহিনী গঠন বিষয়ে সভা করেন।
ভারতীয়দের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়, বাঙালি বৈমানিকেরা ভারতীয় বিমানবাহিনীতে যোগ দিতে পারেন। গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার বিকল্প প্রস্তাব হিসেবে কয়েকটি বিমান, কিছু যুদ্ধ সরঞ্জাম আর প্রশিক্ষণ ও অভিযানের জন্য একটি বিমানঘাঁটি দেওয়ার জন্য ভারতীয়দের অনুরোধ করেন।
কিলো ফ্লাইটের অভিযান শুরুর কথা ছিল ২৮ নভেম্বর। অভিযানের জন্য দুটি বিমান ডিমাপুর থেকে সীমান্তসংলগ্ন বিমানঘাঁটিগুলোতে চলে আসে। জোরহাটে নিয়ে বৈমানিকদের প্রয়োজনীয় ব্রিফিং দেওয়া হয়। তবে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে অভিযানের আগমুহূর্তে সেটি স্থগিত হয়।সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রধান সেনাপতি কর্নেল আতাউল গনি ওসমানী, উপপ্রধান গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার এবং ভারতীয় প্রতিনিধিদল মিলিত হয়ে বিমানবাহিনী গঠনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। সভায় ভারত বাংলাদেশকে তিনটি বিমান দিতে রাজি হয়। বিমানবাহিনীর ঘাঁটি হিসেবে নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরকে নির্বাচন করা হয়।
ডিমাপুরে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় তৈরি একটি পরিত্যক্ত বিমানঘাঁটি ছিল। সেখানে ছিল ৫ হাজার ফুটের রানওয়ে ও এটিসি ভবন। সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে সেখানে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। শুরুতেই ৯ জন বৈমানিক আর ৪৭ জন বিমানসেনা বিমানবাহিনীর নতুন ইউনিটে যোগ দেন। তাঁদের সঙ্গে প্রশিক্ষক হিসেবে যুক্ত হন ভারতীয় বিমানবাহিনীর চারজন কর্মকর্তা।
২৮ সেপ্টেম্বর ডিমাপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকারসহ বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বৈমানিক ও গ্রাউন্ড ক্রুরা উপস্থিত ছিলেন। এ কে খন্দকার তাঁর ১৯৭১: ভেতরে বাইরে বইয়ে এ ঘটনাকে এভাবে বলেছেন, তিনটি বিমান নিয়ে বিশ্বের ক্ষুদ্রতম বিমানবহর জন্মলাভ করল।
কিলো ফ্লাইট ছিল মুক্তিবাহিনীর বিমান উইংয়ের প্রথম ইউনিট। এখানে কিলো নামটি এসেছে বিমানবাহিনীর তৎকালীন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকারের নামের খন্দকার থেকে।
কিলো ফ্লাইটের অভিযান শুরুর কথা ছিল ২৮ নভেম্বর। অভিযানের জন্য দুটি বিমান ডিমাপুর থেকে সীমান্তসংলগ্ন বিমানঘাঁটিগুলোতে চলে আসে। জোরহাটে নিয়ে বৈমানিকদের প্রয়োজনীয় ব্রিফিং দেওয়া হয়। তবে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে অভিযানের আগমুহূর্তে সেটি স্থগিত হয়।
২০১৪ সালে ‘১৯৭১: ভেতর বাইরে’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এ কে খন্দকার