সাফ অনূর্ধ্ব–২০: প্রথমার্ধেই তিন গোলে এগিয়ে বাংলাদেশ
Published: 11th, July 2025 GMT
সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে প্রথমার্ধেই ৩-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। আজ ঢাকার কিংস অ্যারেনায় ম্যাচের প্রথম ৪৫ মিনিটে স্বাগতিকদের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি লঙ্কানরা। বাংলাদেশের হয়ে একটি করে গোল করেন স্বপ্না রানী, মুনকি আক্তার ও মোসাম্মাৎ সাগরিকা।
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ২৩ জনের আটজনকেই শুরুর একাদশে রাখেন কোচ পিটার বাটলার। যার ছাপ প্রথম মিনিট থেকেই টের পায় শ্রীলঙ্কা। খেলার সময় মিনিট পার হতেই স্বপ্না রানীর গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। সরাসরি ফ্রি-কিক থেকে স্বাগতিকদের উদ্যাপনের প্রথম উপলক্ষ্য হন ১৯ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার। এর ঠিক তিন মিনিট যেতেই দ্বিতীয় গোলও পেয়ে যায় আফঈদারা। এবার একাই প্রতিপক্ষের রক্ষণ চুরমার করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মুনকি আক্তার।
প্রথমার্ধের ৩০ মিনিটে আরও কয়েকটি আশা জাগানিয়া আক্রমণ করে বাংলাদেশ। যার মধ্যে ১৫ মিনিটে মোসাম্মাৎ সাগরিকার শট রুখে দেয় বেরসিক গোলপোস্ট। ১৯ মিনিটে পোস্টের একেবারে সামনে বল পেয়েও নিশানা ভেদ করতে পারেননি মুনকি। তাতে অবশ্য বাংলাদেশের আক্রমণের গতিতে একটুও ভাটা পড়েনি। শেষমেশ ৩৭ মিনিটে আসে তৃতীয় গোল। ডান প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে ওঠা বাংলাদেশের সিনহা জাহানের ক্রস থেকে আলতো শটে বল জালে জড়ান সাগরিকা। এরপর ৩৮ ও ৪৫ মিনিটে দুই -দুবার প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠালেও অফসাইডের কারণে সেগুলো আর গোলের খাতায় ওঠেনি।
পাঁচটি দেশ এই টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ভারত নাম প্রত্যাহার করে নেয়। সে জন্য বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ভুটান—এই চার দেশ নিয়ে শুরু হয়েছে সাফের এই আসর। টুর্নামেন্টের ফরম্যাটেও এসেছে পরিবর্তন। এখন চার দল রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে একে অন্যের সঙ্গে দুবার করে খেলবে। একটি দল ছয়টি করে ম্যাচ পাবে। আর শীর্ষ পয়েন্টধারী দলের হাতে উঠবে কাঙ্ক্ষিত ট্রফি।
বয়সভিত্তিক সাফে বাংলাদেশের প্রাপ্তির ঝুলি বেশ ভারী। সর্বশেষ ২০২৪ সালে এই প্রতিযোগিতায় ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন হয় তাঁরা। সেই হিসেবে এখন পর্যন্ত পাঁচ আসরে চারবারই শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ।
আজকের পর ১৩ জুলাই নেপালের বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। এরপর ১৫ ও ১৭ জুলাই টানা দুই ম্যাচে মেয়েদের প্রতিপক্ষ ভুটান। ১৯ জুলাই আবার লঙ্কানদের সামনে পড়বেন স্বপ্না-সাগরিকারা। আর ২১ জুলাই নিজেদের শেষ ম্যাচে নেপালকে মোকাবিলা করবে বাংলাদেশ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
এসএসসির পর একসঙ্গে এইচএসসি পাস করলেন বাবা–মেয়ে, ফলে এগিয়ে বাবা
নাটোরের লালপুরে মেয়ে হালিমা খাতুনের (১৮) সঙ্গে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন বাবা আবদুল হান্নান (৪৩)। ফলাফলে মেয়েকে ছাড়িয়ে গেছেন বাবা। জিপিএ-৪.৩ নিয়ে পাশ করেছেন আবদুল হান্নান। অন্যদিকে তাঁর মেয়ে হালিমা পেয়েছেন ৩.৭১।
আবদুল হান্নান ও হালিমা লালপুর উপজেলার গোপালপুর পৌরসভার নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা। হান্নান রাজশাহীর বাঘা উপজেলার কাকড়ামারি কলেজ থেকে এবং তাঁর মেয়ে হালিমা লালপুর উপজেলার গোপালপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষা অংশ নেন। এর আগে ২০২৩ সালে একসঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেন তাঁরা।
হালিমা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার জন্মের আগেই আমার বাবা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু পাস করতে পারেননি। পরে ঘটনাটি জানার পর ধরেই নিয়েছিলাম, বাবা পড়ালেখায় ইতি টেনেছেন। কিন্তু ২০২৩ সালে বাবা কাউকে না জানিয়ে আবার এসএসসি পরীক্ষা দিতে বসলে ঘটনাটি আমাদের পরিবারে তো বটেই, দেশে আলোচিত হয়। এরপর বাবা পড়ালেখায় আরও সিরিয়াস (সচেতন) হন। সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি আমার সঙ্গেই পড়ালেখা করেছেন। পরীক্ষা দিয়ে আমার চেয়েও ভালো ফল করেছেন। আমি এতে মন খারাপ করিনি। বরং বাবার ফল আমাকে আরও ভালো করার উৎসাহ জুগিয়েছে।’
পড়ালেখার প্রতি নিজের আগ্রহের কথা প্রকাশ করে আবদুল হান্নান জানান, ছোটবেলা থেকে তিনি পড়ালেখায় ভালো ছিলেন। কিন্তু অভাবের সংসারে পড়ালেখার জন্য তেমন পরিবেশ পাননি। ১৯৯৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিশেষ কারণে অকৃতকার্য হন। পরিবারের প্রয়োজনে পড়ালেখা ছেড়ে গোপালপুর রেলগেটে চায়ের দোকান দিয়ে বসেন। এরপর বিয়ে করে সংসারী হন। কিন্তু মনের মধ্যে শিক্ষিত হওয়ার আগ্রহ দমে যায়নি। মেয়ের এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করার সময় হঠাৎ নিজেরও পরীক্ষায় বসার ভাবনা আসে। কাউকে না জানিয়ে তাই নিজেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। পরীক্ষার সময় হঠাৎ বিষয়টি জানাজানি হয়। তখন আবারও অকৃতকার্য হওয়ার দুঃস্বপ্ন ভর করে।
একটু থেমে আবদুল হান্নান বলেন, তবে সৃষ্টিকর্তা নিরাশ করেননি। এসএসসি পাস করেন। এরপর প্রকাশ্যে পড়ালেখা শুরু করেন। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার কাকড়ামারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেন। মেয়ের সঙ্গে বসে পড়ালেখা করতে থাকেন এবং শেষে কাঙ্ক্ষিত ফলও পান। ফলাফলে মেয়েকে টপকে যাওয়ার ঘটনা অপ্রত্যাশিত হলেও তিনি বিস্মিত হননি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পড়ালেখা যখন নতুন করে শুরু করেছি, তখন শেষ পর্যন্ত (মাস্টার্স) পড়বই। চাকরি করার বয়স হয়তো থাকবে না। তাতে কিছুই আসে–যায় না। আমি এই সমাজের একজন উচ্চশিক্ষিত নাগরিক হয়ে বেঁচে থাকতে চাই।’
আবদুল হান্নানের ভাবনা ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন নাটোরের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রোস্তম আলী হেলালী। তিনি বলেন, শিক্ষালাভের কোনো বয়স নেই। আবদুল হান্নান তাঁর মেয়ে হালিমা খাতুনের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে এ কথা প্রমাণ করেছেন। তিনি চাকরির জন্য নয়, জ্ঞান অর্জনের জন্য পড়ছেন। এটা সমাজের জন্য একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ। তাঁদের উভয়কেই অভিনন্দন।