শিশুখাদ্য গুঁড়া দুধে ভেজাল আছে কি না, ইনজেকশনের কার্যকারিতা ঠিক কতটা কিংবা ল্যাব রিপোর্ট কতটা নির্ভরযোগ্য— এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে আজও অধিকাংশ ভোক্তাকে নির্ভর করতে হয় আশ্বাসের ওপর, প্রমাণের ওপর নয়। কিন্তু, একটি রাষ্ট্রের নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা ও রপ্তানিযোগ্য শিল্প খাত গড়ে তুলতে হলে চাই স্বীকৃত মান। সেই ঘাটতি পূরণেই নিরলস কাজ করছে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড (বিএবি)। এখন জনগণের কাছে আস্থার আরেক নাম বিএবির স্বীকৃতি।

২০০৬ সালে প্রণীত বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন আইন অনুযায়ী, ২০০৮ সালের ২৮ জানুয়ারি বিএবির যাত্রা শুরু। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানটি দেশের পরীক্ষাগার, পরিদর্শন সংস্থা, সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও প্রশিক্ষণ প্রদানকারী সংস্থাগুলোর মান যাচাই করে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী স্বীকৃতি সনদ দেয়।

আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন
বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড (বিএবি) ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। এটি এশিয়া প্যাসিফিক অ্যাক্রেডিটেশন কো-অপারেশন (এপিএসি) এবং ইন্টারন্যাশনাল ল্যাবরেটরি অ্যাক্রেডিটেশন কো-অপারেশনের (আইল্যাক) সদস্য। একইসঙ্গে এটি মিউচুয়াল রেকগনিশন অ্যারেঞ্জমেন্টে (এমআরএ) স্বাক্ষরকারী প্রতিষ্ঠান।

এই স্বীকৃতির ফলে বিএবি যেসব প্রতিষ্ঠান, ল্যাবরেটরি বা সংস্থাকে মান সনদ বা পরীক্ষণের অনুমোদন দেয়, সেসব সনদ বা রিপোর্ট বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্রহণযোগ্যতা পায়। ফলে, বাংলাদেশি পণ্য ও সেবার আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ সহজ হচ্ছে এবং রপ্তানি খাতে আস্থার জায়গা তৈরি হচ্ছে। এর ফলে বিএবি স্বীকৃত যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা ল্যাবরেটরির দেওয়া পরীক্ষণ রিপোর্ট বা মান সনদ বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা পায়। এতে বাংলাদেশি পণ্য ও সেবার বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ বাড়ে।

স্বীকৃতির সংখ্যা 
এখন পর্যন্ত বিএবি থেকে ১৫৫টি প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতি পেয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৯০টি পণ্য পরীক্ষাগার, ২২টি যন্ত্র পরিমাপ ল্যাব, ৯টি চিকিৎসা পরীক্ষাগার, ৩০টি পরিদর্শন সংস্থা এবং ৪টি সনদ প্রদানকারী সংস্থা। এছাড়া, গুণগত মান নিশ্চিত করতে ২ হাজার ৮৯৩ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে বিএবি।

আস্থা তৈরির যুদ্ধে বিএবি
অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, “খাদ্য ও চিকিৎসার মতো স্পর্শকাতর খাতে গুণগত মানে ছাড় দেওয়া চলে না। বিএবি আজ শুধু প্রতিষ্ঠানকে নয়, জনগণকে আস্থা দেওয়ার কাজ করছে।”

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য স্বীকৃতি মানেই টিকে থাকার টিকিট। এ প্রসঙ্গে এসএমই ফাউন্ডেশনের উপ-মহাব্যবস্থাপক ফাহিম বিন আসমত বলেছেন, রপ্তানি করতে হলে শুধু গুণগত পণ্য যথেষ্ট নয়, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সনদ লাগেই। তা না হলে এসএমই উদ্যোক্তারা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বেন।

মান নির্ধারণে রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.

ওবায়দুর রহমান বলেছেন, দেশীয় পণ্য তখনই আন্তর্জাতিক বাজারে গ্রহণযোগ্যতা পায়, যখন সেটির মান নিরপেক্ষভাবে যাচাই ও স্বীকৃত হয়। এজন্য সরকার বিএবিকে আরো শক্তিশালী করছে বাজেট, জনবল ও প্রযুক্তি সহায়তা বাড়িয়ে।

চ্যালেঞ্জ কোথায়
বিএবির কাজের প্রসার ঘটলেও এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। অনেক ল্যাব এখনো মান অর্জনে সক্ষম নয়। বহু প্রতিষ্ঠান সনদের গুরুত্ব বোঝে না। কিছু ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, বিএবিকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে এবং জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। ভোক্তা যেন জানে, কোন প্রতিষ্ঠান পরীক্ষিত, কোনটি নয়।

তারা বলেন, দেয়ালে ঝোলানো সনদ নয়, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানের নিশ্চয়তা চাই। একমাত্র মান নিরীক্ষা ও স্বীকৃতির মাধ্যমেই সে নিশ্চয়তা আসে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের মাধ্যমে এখন দেশের প্রতিটি সেক্টর খাদ্য, চিকিৎসা, নির্মাণ, রপ্তানি আন্তর্জাতিক মানে উত্তীর্ণ হওয়ার পথে। এই পথচলা সহজ নয়। কিন্তু, ভোক্তার আস্থা ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ যাত্রা এখন সময়ের দাবি।

তিনি বলেন, আমি যা খাচ্ছি, যা ব্যবহার করছি, তা পরীক্ষিত ও স্বীকৃত—এ বার্তা যখন প্রতিটি নাগরিক বিশ্বাস করতে পারবে, তখনই আমরা হবো নিরাপদ ও মানসম্পন্ন বাংলাদেশ।

ঢাকা/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বল ছ ন পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচিত সরকারই দেশ চালাবে: মির্জা ফখরুল

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশনা দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত ইতিবাচক ব্যাপার। আমরা উদার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতার পরিবর্তন হবে। সেই নির্বাচিত সরকারই একমাত্র দেশ চালাবে এবং সমস্যাগুলোর সমাধান করবে। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সাংবাদিকের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা সভা ও শহীদ সাংবাদিক পরিবারের সম্মাননা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।

নির্বাচন কমিশন দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব কাজ শেষ করে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের জনগণ নির্বাচন ও ভোটাধিকারের জন্য প্রাণ দিয়েছে। আশা করছি- নির্বাচন কমিশন এই কাজ (নির্বাচনের প্রস্তুতি) খুব দ্রুততার সঙ্গে শেষ করে একটা নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবেন, যেন এই নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। তাহলে নির্বাচন নিয়ে আর কোনো সমস্যা হবে না।

অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ঐকমত্য কমিশনে প্রত্যেকটি বিষয়ে মতামত দেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগ বিষয়ের সঙ্গে বিএনপি একমত হয়েছে। কতগুলো মৌলিক বিষয়ে বিএনপি একমত হতে পারেনি। ভবিষ্যতে সংসদে বিতর্কের মাধ্যমে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।

বিএনপি সংস্কারে বাধা দিচ্ছে, এমন খবর পত্রিকায় এসেছে উল্লেখ করে বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে তাঁর দল তিন দিন আগে সংবাদ সম্মেলন করেছে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, তাঁদের জন্ম সংস্কারের জন্য। আজ যদি বলা হয়, বিএনপি সংস্কার আটকে দিচ্ছে, তাহলে এটি অন্যায়ভাবে বলা হবে।

যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত ট্যারিফের বিষয়টি উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করার দরকার ছিল। এই সময় এখনও পার হয়ে যায়নি।

সীমান্তে হত্যা ও পুশইনের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, পুশইনকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। সরকারকে এটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। জনমত সৃষ্টি করা দরকার। সরকার যেন ভারতের সঙ্গে দর কষাকষিতে চূড়ান্ত পর্যায়ে যায়। এ ছাড়া পানির হিস্যার বিষয়টি জোরালোভাবে দেখতে হবে। পানি বণ্টনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন বলেও জানান মির্জা ফখরুল।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি মো. শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই সিকদার, দৈনিক আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল রহমান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান প্রমুখ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচিত সরকারই দেশ চালাবে: মির্জা ফখরুল