বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘পাগলেও বোঝে কারা আগামী দিনে ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু কিছু কিছু তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ ও বিশেষ মহল মনে করে তারাই ক্ষমতায় আসবে।’

আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক প্রতিবাদ সভায় এ কথা বলেন শামসুজ্জামান। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী নবীন দলের উদ্যোগে এ সভার আয়োজন করা হয়।

বিএনপিকে অনেকে আমলে নিতে চাচ্ছে না অভিযোগ তুলে শামসুজ্জামান বলেন, ‘নির্বাচন হলে নাকি বোঝা যাবে, কোন দল কোনভাবে কতটা শক্তিশালী। আমরাও মনে করি, নির্বাচনটা খুব জরুরি। নির্বাচন হলে বোঝা যাবে, কারা দুইটা না তিনটা সিট পাবে, অথবা জামানত বাজেয়াপ্ত হয়ে দেশছাড়া হবে। নির্বাচন ছাড়া তো বোঝা যাবে না। কিন্তু তারা কায়দা–কৌশল করছে। সংস্কারের নামে, আরও কী কী সব ফেতনা সামনে এনে, নির্বাচনটা কীভাবে ঠেকানো যায়।’

‘১৫ আগস্ট’ শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া বলে মন্তব্য করেন শামসুজ্জামান। আওয়ামী লীগের আগামী ১০০ বছরের মধ্যেও ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগকে হত্যা করেছে। সেই হত্যাকারী শেখ হাসিনা।’

জনগণের মার কেমন, তা শেখ হাসিনা ও শেখ পরিবার শতভাগ জানে উল্লেখ করে শামসুজ্জামান বলেন, ‘যেদিন জয়নুল আবেদীন ফারুকের ওপর হামলা হয়, সেদিনই শেখ হাসিনার পতন হয়ে যায়। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এক বছর আগে পতন হয়। কিশোর–তরুণসহ বুকের রক্ত দিয়ে যারা হাসিনার পতন ঘটিয়েছে, তাদের স্মৃতির প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই।’

স্বৈরতন্ত্র ফিরে না আসার একমাত্র পথ গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করা বলে জানান শামসুজ্জামান। তারেক রহমান যেকোনো সময় ফিরে আসবেন বলে জানান তিনি। লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পর বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে আশা জেগেছে। সেটা এখন ধরে রাখতে হবে বলেন তিনি।

শামসুজ্জামান আরও বলেন, ‘আমরা সরকারকে বলতে চাই, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে। তাহলে এখন যে অস্থিরতা ও সংকট, আমার মনে হয় সেটাও কেটে যাবে।’

প্রতিবাদ সভা থেকে ২০১১ সালের ৬ জুলাই জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে তৎকালীন বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবেদীন ফারুকসহ বিএনপির জনপ্রতিনিধিদের ওপর পুলিশি হামলার বিচার দাবি করা হয়। সেই হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশীদ এবং সাবেক যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) বিপ্লব কুমার সরকারের বিচার দাবি করেন আয়োজকেরা।

প্রতিবাদ সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ২০১১ সালের সেই হামলা শুধু জয়নুল আবেদীন ফারুক বা বিএনপির নয়, এটা ছিল জাতীয় সংসদের ওপর হামলা। এমন হামলা আওয়ামী লীগের পক্ষেই সম্ভব। যারা বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদকে অপবিত্র করেছে।

সিরাজ শিকদারকে হত্যার মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমান বিচারবহির্ভূত হত্যার স্বীকৃতি দিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি বলেন, ২০১১ সালে বিএনপির জনপ্রতিনিধিদের ওপর হামলার ঘটনায় অনেককে গ্রেপ্তার করার কথা বলা হয়, কিন্তু প্রথমে গ্রেপ্তার করা উচিত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীরকে। যে বিএনপি নেতাদের হামলার পরে পুলিশকে পুরস্কৃত করেছিল।

প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী নবীন দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হুমায়ুন আহমেদ তালুকদার। তিনি বলেন, এই সংগঠনটি বিএনপির দুঃসময়ের সঙ্গী। যখন ব্যানার ধরার লোক পাওয়া যেত না, তখন প্রেসক্লাবের সামনে পুলিশের বন্দুকের নলের সামনে নবীন দলের নেতা–কর্মীরা আন্দোলন চালিয়ে গেছেন।

জাতীয়তাবাদী নবীন দলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সোহেল রানার সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির নেতা মাহবুবুর রহমান, মোহাম্মদ ইসহাক সরকার, রফিকুল ইসলাম প্রমুখ। এতে অংশ নেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন জেলা–উপজেলা পর্যায়ের নেতা–কর্মীরা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র রহম ন আওয় ম র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

ফরজে কিফায়া: একের পালন, সবার মুক্তি

ফরজে কিফায়া এমন দায়িত্ব, যা সম্প্রদায়ের কেউ পালন করলে সবাই মুক্ত হয়, কিন্তু কেউ না করলে সবাই দায়বদ্ধ।

ইমাম তাজউদ্দিন সুবকি এটিকে এমন একটি অপরিহার্য কাজ বলেছেন, যা আইনপ্রণেতা নির্দিষ্ট কাউকে নির্ধারণ না করে সম্প্রদায়ের জন্য বাধ্যতামূলক করেছেন। (আল-আশবাহ ওয়ান-নাযায়ির, বৈরুত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, ১৯৯১, ২/৮৯)

কোরআন বলে, ‘তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে, সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজে বাধা দেবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৪)

ইমাম ইবনে দাকিক আল-ঈদ বলেন, এটি কল্যাণ অর্জন বা ক্ষতি প্রতিরোধের জন্য, নির্দিষ্ট কাউকে লক্ষ্য করে নয়। (শরহুল ইলমাম বিআহাদিসিল আহকাম, দামেস্ক: দারুন নাওয়াদির, ২০০৯, ২/৪৫-৪৬)

মজলুমের সাহায্য একটি সর্বজনীন ফরজে কিফায়া।ইমাম ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.), ফাতহুল বারী ফি শরহি সহিহিল বুখারিআরও পড়ুনইসলামের ফরজ বিধান জাকাত০৩ মে ২০২১ফরজে কিফায়ার উদাহরণ

আনুষ্ঠানিক কাজ: জানাজার ব্যবস্থা, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জামাত, জুমার নামাজ, তারাবিহ, সূর্যগ্রহণের নামাজ—যেগুলো আমাদের ধর্মীয় ঐক্যের অংশ। মসজিদ নির্মাণ, কিবলার দিক নির্ধারণ, হজের ব্যবস্থা আমাদের ভালোবাসার প্রকাশ। ইমাম বায়জাভি বলেন, মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণ জ্ঞানী ও ধার্মিকদের দায়িত্ব। (আনওয়ারুত তানযিল ওয়া আসরারুত তাওয়িল, বৈরুত: দারু ইহইয়াইত তুরাসিল আরাবি, ২০০৩, ৩/৭৫)

সামাজিক সেবা ও কল্যাণ: অনাথদের লালন-পালন, দরিদ্রদের খাদ্য ও বস্ত্র প্রদান, অসুস্থদের সেবা, বিবাহের ব্যবস্থা ইত্যাদি। মজলুমের পাশে দাঁড়ানো, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের সম্প্রদায়কে পরিবারের মতো কাছে নিয়ে আসে। ইমাম ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, ‘মজলুমের সাহায্য একটি সর্বজনীন ফরজ কিফায়া।’ (ফাতহুল বারী ফি শরহি সহিহিল বুখারি, দামেস্ক: আর-রিসালাতুল আলামিয়্যাহ, ১৮৮৪, ৮/১২)

সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বাধা: সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বাধা আমাদের সমাজের আত্মা সমতুল্য। কোরআন বলে, ‘হে মুমিনগণ, ন্যায়ের জন্য অবিচল থাকো, আল্লাহর সাক্ষী হিসেবে।’ (সুরা নিসা ১৩৫)

ফরজে কিফায়া এমন দায়িত্ব, যা সম্প্রদায়ের কেউ পালন করলে সবাই মুক্ত হয়, কিন্তু কেউ না করলে সবাই দায়বদ্ধ।

ইমাম আল-জুয়াইনি বলেন, ‘ইসলামের শুরু থেকে শেষ পুরোটা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বাধার ওপর নির্ভরশীল।’ (আল-গিয়াসী, জেদ্দা: দারুল মিনহাজ, ২০১১, ৩৬৫)

শিক্ষা ও দাওয়া: কোরআন ও হাদিস সংরক্ষণ, তাজবিদ, ফিকহ অধ্যয়ন, ধর্মীয় জ্ঞান ছড়ানো আমাদের ইমানি দায়িত্ব। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমার কাছ থেকে একটি আয়াত হলেও পৌঁছে দাও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১২৮)

জীবন, সম্পদ, বুদ্ধি ও ধর্ম রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব জ্ঞান ফরজে কিফায়ার অংশ। (আল-গাজালি, ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন, জেদ্দা: দারুল মিনহাজ, ২০১১, ৪:৬২-১০৯)

নাগরিক দায়িত্ব: জিহাদের কিছু রূপ, সীমান্ত রক্ষা, বন্দী মুক্তি, বিচারক নিয়োগ, সাক্ষ্য দেওয়া সমাজের শৃঙ্খলার প্রতীক। ইমাম ইবনে আবিদিন বলেন, ‘অমুসলিম শাসনের অধীনে মুসলিমরা জামাতে নামাজ ও বিচারক নিয়োগ করতে পারে।’ (রদ্দুল মুহতার আলাদ দুররিল মুখতার, বৈরুত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, ২০১১, ৮/৪৩)

আরও পড়ুনঅনুরাগী বান্দাদের আল্লাহর প্রতিদান১৮ মে ২০২৩ফরজে কেফায়া হলো, যা আইনপ্রণেতা নির্দিষ্ট কাউকে নির্ধারণ না করে সম্প্রদায়ের জন্য বাধ্যতামূলক করেছেন।ইমাম তাজউদ্দিন সুবকি, আল-আশবাহ ওয়ান-নাযায়িরসম্প্রদায়ের দায়িত্বের অগ্রাধিকার

ইমাম আল-শিরাজি বলেন, ফেরেশতা বা জিনরা ফরজ কিফায়া পালন করলেও মানুষের দায়িত্ব মুক্ত হতে পারে। (আল-বাহরুল মুহিত, কুয়েত: মিনিস্ট্রি অব এন্ডোমেন্টস অ্যান্ড ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স, ১৯৯২, ১/২৪৯-৫০)

ইমাম আল-জুয়াইনি মনে করেন, ফরজ কিফায়া ফরজ আইনের চেয়ে উচ্চতর, কারণ এর ফলাফল পুরো সম্প্রদায়ের ওপর প্রভাব ফেলে। (আল-গিয়াসী, জেদ্দা: দারুল মিনহাজ, ২০১১, ১৩৭-৩৮)

ফরজ কিফায়া ব্যক্তিগত দায়িত্বে রূপান্তরিত হতে পারে, যদি উপযুক্ত আর কেউ না থাকে। (আল-আশবাহ ওয়াল-নাযায়ির, কায়রো: দারুস সালাম, ২০১৮, পৃষ্ঠা ৩৭৪-৭৫)

সূত্র: ইয়াকিন ইনস্টিটিউট

আরও পড়ুননামাজের ১৩টি ফরজ০৫ এপ্রিল ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফরজে কিফায়া: একের পালন, সবার মুক্তি